ঢাকা ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo কুবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, মারধরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’!




ইয়াবা বাণিজ্যের নেপথ্যে ওসি প্রদীপের ভূমিকা নিয়ে ডকুমেন্টারি করাই কাল হয় মেজর সিনহার!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ অগাস্ট ২০২০ ১০৮ বার পড়া হয়েছে
অনুসন্ধানী প্রতিবেদক সাইদুর রহমান রিমন’র অনুসন্ধান:- মেজর সিনহা রাশেদ খান খুনের রহস্য উদঘাটন। ওসি প্রদীপের ভিডিও সাক্ষাৎকারেই সর্বনাশ ঘটে!
“এসপির ত্রিমুখী নিশ্ছিদ্র ছকেই মেজর সিনহার নৃশংস হত্যাকান্ড”!!

সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা টানা কয়েকদিন ইয়াবা বাণিজ্যের নেপথ্য কাহিনী নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরিকালেও ‌বিপদমুক্ত’ ছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমারের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করাটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ক্রসফায়ারের নামে নৃশংসভাবে খুন করা অসংখ্য মানুষের রক্তে রঞ্জিত প্রদীপ কুমারও ভিডিও সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় বারবারই কেঁপে উঠেন। মেজর সিনহা’র তথ্যবহুল প্রশ্নের পর প্রশ্নে চরম অস্বস্তিতে পড়েন ওসি। নানা অজুহাতে ভিডিও সাক্ষাৎকার এড়ানোর সব কৌশল খাটিয়েও ব্যর্থ ওসি প্রদীপ বাধ্য হয়েই প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে থাকেন, ভিডিওচিত্রে মেজরের উদঘাটন করা নানা তথ্যের সামনে সীমাহীন নাস্তানাবুদ হন তিনি।
মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের দিন বিকেল চারটার দিকে টেকনাফের বহুল বিতর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাস ওই ডকুমেন্টারি ভিডিও সাক্ষাৎকারের ফাঁদে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়, ক্রসফায়ারে অতিমাত্রায় উৎসাহী ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগিরা ইয়াবা বাজারজাত ও পাচারের ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকার কথা স্বীকার করতেও বাধ্য হন। সফল সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেই মেজর সিনহা আর একদণ্ড সময় ক্ষেপণ করেননি। ঝড়ের বেগে থানা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের গাড়িতে উঠে বসেন। তার সঙ্গে ভিডিও রেকর্ডিংয়ে ব্যস্ত থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতও ক্যামেরা, ট্রাইপড, ব্যাগ গোছাতে গোছাতেই ছুটে গিয়ে গাড়িতে উঠতেই টেকনাফ সদর ছেড়ে গাড়িটি ছুটতে থাকে উত্তর দিকে, বাহারছড়ার পথে। বাহারছড়া সংলগ্ন মারিসঘোণা এলাকাতেই বসবাস করেন চলচ্চিত্রের ফাইটিং গ্রুপ পরিচালনাকারী ইলিয়াস কোবরা। হঠাত তার টেলিফোনে করা আমন্ত্রণ পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারেননি মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এদিকে থানা থেকে মেজর সিনহা বেরিয়ে যেতেই ওসি প্রদীপ অচিরেই বড় রকমের বিপদের আশঙ্কায় তৎক্ষনাত কক্সবাজারের এসপি মাসুদকে ফোন করে বিস্তারিত জানিয়ে দেন। সব শুনে এসপি নিজেও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কয়েক মিনিটেই এসপির নির্দেশনায় তৈরি হয় ‌মেজর সিনহা’র নৃশংস হত্যার নিশ্ছিদ্র পরিকল্পনা।
আলাপ আলোচনা শেষে এসপি-ওসি এমনভাবেই ত্রিমুখী মার্ডার মিশন সাজিয়েছিল- সেই ফাঁদ থেকে মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের প্রাণে বাঁচার কোন সুযোগই ছিল না।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রের ফাইটিং গ্রুপের পরিচালক ইলিয়াস কোবরএক দায়িত্ব দেওয়া হয়, আতিথেয়তার নামে নানা কৌশলে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেজর সিনহাকে তার নিভৃত পাহাড়ি গ্রামে আট্কে রাখার। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরিচিতি থাকলেও ইলিয়াস কোবরা ইদানিং ‌‍’ক্রসফায়ার মিট মিমাংসার দালালি’ কাজেই সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ক্রসফায়ারের তালিকায় নাম থাকার গুজব ছড়িয়ে অসংখ্য মানুষকে গোপনে ওসি প্রদীপের সঙ্গে সমঝোতা করিয়ে দিয়ে টেকনাফের শীর্ষ দালাল হিসেবে বেশ নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে কোবরার। তবে ক্রসফায়ারের কবল থেকে জীবন বাঁচানোর সমঝোতায় ওসি প্রদীপ হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে দালালির কমিশন হিসেবে ইলিয়াস কোবরাকেও মাথাপিছু এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পাইয়ে দিয়েছেন প্রদীপ।
ওসিসহ পুলিশ প্রশাসনের কাছে পরীক্ষিত দালাল ইলিয়াস কোবরা ঠিকই তার উপর অর্পিত দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। মারিসঘোণায় নিজের বাগানবাড়ি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখার নামে ইলিয়াস কোবরা সেদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত নির্জন পাহাড়েই নিজ হেফাজতে রেখেছিলেন মেজর সিনহাকে। এ সময়ের মধ্যে মেজরের অবস্থান, কতক্ষণ পর কোন রাস্তায় কোথায় যাবেন সেসব তথ্য জানিয়ে কোবরা ৯টি এসএমএস পাঠান ওসিকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ইয়াবা বাণিজ্যের নেপথ্যে ওসি প্রদীপের ভূমিকা নিয়ে ডকুমেন্টারি করাই কাল হয় মেজর সিনহার!

আপডেট সময় : ০৯:০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ অগাস্ট ২০২০
অনুসন্ধানী প্রতিবেদক সাইদুর রহমান রিমন’র অনুসন্ধান:- মেজর সিনহা রাশেদ খান খুনের রহস্য উদঘাটন। ওসি প্রদীপের ভিডিও সাক্ষাৎকারেই সর্বনাশ ঘটে!
“এসপির ত্রিমুখী নিশ্ছিদ্র ছকেই মেজর সিনহার নৃশংস হত্যাকান্ড”!!

সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা টানা কয়েকদিন ইয়াবা বাণিজ্যের নেপথ্য কাহিনী নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরিকালেও ‌বিপদমুক্ত’ ছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমারের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করাটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ক্রসফায়ারের নামে নৃশংসভাবে খুন করা অসংখ্য মানুষের রক্তে রঞ্জিত প্রদীপ কুমারও ভিডিও সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় বারবারই কেঁপে উঠেন। মেজর সিনহা’র তথ্যবহুল প্রশ্নের পর প্রশ্নে চরম অস্বস্তিতে পড়েন ওসি। নানা অজুহাতে ভিডিও সাক্ষাৎকার এড়ানোর সব কৌশল খাটিয়েও ব্যর্থ ওসি প্রদীপ বাধ্য হয়েই প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে থাকেন, ভিডিওচিত্রে মেজরের উদঘাটন করা নানা তথ্যের সামনে সীমাহীন নাস্তানাবুদ হন তিনি।
মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের দিন বিকেল চারটার দিকে টেকনাফের বহুল বিতর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাস ওই ডকুমেন্টারি ভিডিও সাক্ষাৎকারের ফাঁদে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়, ক্রসফায়ারে অতিমাত্রায় উৎসাহী ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগিরা ইয়াবা বাজারজাত ও পাচারের ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকার কথা স্বীকার করতেও বাধ্য হন। সফল সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেই মেজর সিনহা আর একদণ্ড সময় ক্ষেপণ করেননি। ঝড়ের বেগে থানা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের গাড়িতে উঠে বসেন। তার সঙ্গে ভিডিও রেকর্ডিংয়ে ব্যস্ত থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতও ক্যামেরা, ট্রাইপড, ব্যাগ গোছাতে গোছাতেই ছুটে গিয়ে গাড়িতে উঠতেই টেকনাফ সদর ছেড়ে গাড়িটি ছুটতে থাকে উত্তর দিকে, বাহারছড়ার পথে। বাহারছড়া সংলগ্ন মারিসঘোণা এলাকাতেই বসবাস করেন চলচ্চিত্রের ফাইটিং গ্রুপ পরিচালনাকারী ইলিয়াস কোবরা। হঠাত তার টেলিফোনে করা আমন্ত্রণ পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারেননি মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এদিকে থানা থেকে মেজর সিনহা বেরিয়ে যেতেই ওসি প্রদীপ অচিরেই বড় রকমের বিপদের আশঙ্কায় তৎক্ষনাত কক্সবাজারের এসপি মাসুদকে ফোন করে বিস্তারিত জানিয়ে দেন। সব শুনে এসপি নিজেও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কয়েক মিনিটেই এসপির নির্দেশনায় তৈরি হয় ‌মেজর সিনহা’র নৃশংস হত্যার নিশ্ছিদ্র পরিকল্পনা।
আলাপ আলোচনা শেষে এসপি-ওসি এমনভাবেই ত্রিমুখী মার্ডার মিশন সাজিয়েছিল- সেই ফাঁদ থেকে মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের প্রাণে বাঁচার কোন সুযোগই ছিল না।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রের ফাইটিং গ্রুপের পরিচালক ইলিয়াস কোবরএক দায়িত্ব দেওয়া হয়, আতিথেয়তার নামে নানা কৌশলে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেজর সিনহাকে তার নিভৃত পাহাড়ি গ্রামে আট্কে রাখার। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরিচিতি থাকলেও ইলিয়াস কোবরা ইদানিং ‌‍’ক্রসফায়ার মিট মিমাংসার দালালি’ কাজেই সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ক্রসফায়ারের তালিকায় নাম থাকার গুজব ছড়িয়ে অসংখ্য মানুষকে গোপনে ওসি প্রদীপের সঙ্গে সমঝোতা করিয়ে দিয়ে টেকনাফের শীর্ষ দালাল হিসেবে বেশ নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে কোবরার। তবে ক্রসফায়ারের কবল থেকে জীবন বাঁচানোর সমঝোতায় ওসি প্রদীপ হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে দালালির কমিশন হিসেবে ইলিয়াস কোবরাকেও মাথাপিছু এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পাইয়ে দিয়েছেন প্রদীপ।
ওসিসহ পুলিশ প্রশাসনের কাছে পরীক্ষিত দালাল ইলিয়াস কোবরা ঠিকই তার উপর অর্পিত দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। মারিসঘোণায় নিজের বাগানবাড়ি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখার নামে ইলিয়াস কোবরা সেদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত নির্জন পাহাড়েই নিজ হেফাজতে রেখেছিলেন মেজর সিনহাকে। এ সময়ের মধ্যে মেজরের অবস্থান, কতক্ষণ পর কোন রাস্তায় কোথায় যাবেন সেসব তথ্য জানিয়ে কোবরা ৯টি এসএমএস পাঠান ওসিকে।