ঢাকা ০৬:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস ধূমপানের চেয়েও মারাত্মক

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:১৯:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০১৯ ১০২ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক; নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস মানুষের আয়ু কমাচ্ছে। ছবি: এএফপি
নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস আমাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। আয়ু কমাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এক গবেষণা বলছে, আমরা প্রতিদিন যে নিম্নমানের বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই, এতে প্রতিবছর বিশ্বে এক কোটির বেশি মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণামূলক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ধূমপানের চেয়ে দৈনন্দিন খাবারই আমাদের মৃত্যুর বড় কারণ। বিশ্বে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ এই দৈনন্দিন খাবার।

গবেষকেরা বলছেন, লবণ সবচেয়ে ক্ষতিকর। রুটি, সয়া সস বা প্রক্রিয়াজাত মাংস—যার মধ্যে লবণ থাক না কেন, তা সবচেয়ে বেশি মানুষের আয়ু কমিয়ে দেয়।

গবেষকেরা বলেছেন, তাঁদের গবেষণাটি স্থূলতা নিয়ে নয়। নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস (পুওর কোয়ালিটি ডায়েট) কীভাবে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি করছে, কীভাবে ক্যানসারের কারণ হচ্ছে, তা এই গবেষণায় উঠে এসেছে।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলস মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের পরিচালক অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মুর বলেন, বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকাই তার স্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান নির্ধারক।

কোন খাবার নিয়ে বেশি চিন্তা?
বিপজ্জনক হিসেবে যেসব খাবার বা খাদ্য–উপাদানের কথা গবেষণায় উঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত লবণ। অতিরিক্ত লবণের কারণে ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

আস্ত দানার শস্যজাতীয় খাদ্য কম খাওয়ার বিষয়টিও বিপজ্জনক। এই ধরনের খাদ্য কম খাওয়ার কারণে মারা যায় ৩০ লাখ লোক।

আর ফল কম খাওয়ার কারণে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বাদাম, বীজ, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার থেকে পাওয়া ওমেগা-৩ ও আঁশজাতীয় খাবার কম খাওয়াও মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ।

কীভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে?
গবেষণা বলেছ, নিম্নমানের খাবারে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এর মধ্যে ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে হৃদ্‌রোগে। এ ক্ষেত্রে লবণ মারাত্মক ভূমিকা রাখছে। অতিরিক্ত লবণ রক্তের চাপ বাড়িয়ে দেয়। যা স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তা ছাড়া হার্ট ও রক্তনালির ওপর লবণ সরাসরি প্রভাবও ফেলে। যা হার্ট ফেইলরের ঝুঁকি তৈরি করে।

আস্ত দানার শস্যজাতীয় খাদ্য, ফল ও সবজি ঠিক উল্টো কাজ করে। তারা হৃদ্‌যন্ত্রের সুস্থতার জন্য কাজ করে। হৃদ্‌যন্ত্রের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়।

ক্যানসার ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে খাদ্যের ভূমিকা। এ কারণেও বিশ্বে মারা যায় বহু লোক।

তাহলে কী খাব?
আমরা কি প্রতিদিন ঠিক খাবার ঠিক ঠিক পরিমাণে খাচ্ছি? উত্তর—না। সারা বিশ্বেই দেখা গেছে, মানুষের খাদ্যের অধিকাংশ তালিকা থেকে স্বাস্থ্যকর খাবার বাদ পড়ছে। এই তালিকায় বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার রয়েছে।

বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার দিনে ২৫ গ্রাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ দিনে গড়ে মাত্র ৩ গ্রাম এই খাবার খাচ্ছে।

দিনে দুধ খাওয়া উচিত ৪৪৩ গ্রাম। মানুষ খাচ্ছে ৭১ গ্রাম। একইভাবে আস্ত দানার শস্যজাতীয় খাবার ১২৬ গ্রামের জায়গায় মাত্র ২৯ গ্রাম খাচ্ছে মানুষ।

লাল মাংস (রেড মিট) ২২ গ্রাম খাওয়া উচিত। মানুষ গড়ে খাচ্ছে ২৭ গ্রাম করে। লবণ ৩ দশমিক ২ গ্রামের ওপরে খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু মানুষ খাচ্ছে ৬ গ্রাম করে। প্রক্রিয়াজাত মাংস ২ দশমিক ১ গ্রামের জায়গায় মানুষ খাচ্ছে ৪ গ্রাম করে।

বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার সম্পর্কে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিতা ফারাউহি বলছেন, এই খাবারগুলোতে উপকারী ফ্যাট আছে। বেশির ভাগ মানুষই এগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসেবে দেখে না।

অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মুর বলেছেন, লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস ক্ষতিকর। কিন্তু আস্ত দানার শস্যজাতীয় খাদ্য, ফল, বাদাম, বীজ ও সবজি কম খাওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি।

অধ্যাপক মুর বলেন, ওজনের চেয়ে বরং ভালো খাবারের বিষয়টিই আসল কথা। আস্ত দানার শস্য, ফল, বাদাম, সবজি, বীজ ও সবজি জাতীয় খাবার খাওয়া বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। আর কমাতে বলেছেন লবণ খাওয়ার পরিমাণ। তথ্যসূত্র: বিবিসি অনলাইন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস ধূমপানের চেয়েও মারাত্মক

আপডেট সময় : ০৩:১৯:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক; নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস মানুষের আয়ু কমাচ্ছে। ছবি: এএফপি
নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস আমাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। আয়ু কমাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এক গবেষণা বলছে, আমরা প্রতিদিন যে নিম্নমানের বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই, এতে প্রতিবছর বিশ্বে এক কোটির বেশি মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণামূলক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ধূমপানের চেয়ে দৈনন্দিন খাবারই আমাদের মৃত্যুর বড় কারণ। বিশ্বে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ এই দৈনন্দিন খাবার।

গবেষকেরা বলছেন, লবণ সবচেয়ে ক্ষতিকর। রুটি, সয়া সস বা প্রক্রিয়াজাত মাংস—যার মধ্যে লবণ থাক না কেন, তা সবচেয়ে বেশি মানুষের আয়ু কমিয়ে দেয়।

গবেষকেরা বলেছেন, তাঁদের গবেষণাটি স্থূলতা নিয়ে নয়। নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস (পুওর কোয়ালিটি ডায়েট) কীভাবে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি করছে, কীভাবে ক্যানসারের কারণ হচ্ছে, তা এই গবেষণায় উঠে এসেছে।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলস মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের পরিচালক অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মুর বলেন, বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকাই তার স্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান নির্ধারক।

কোন খাবার নিয়ে বেশি চিন্তা?
বিপজ্জনক হিসেবে যেসব খাবার বা খাদ্য–উপাদানের কথা গবেষণায় উঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত লবণ। অতিরিক্ত লবণের কারণে ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

আস্ত দানার শস্যজাতীয় খাদ্য কম খাওয়ার বিষয়টিও বিপজ্জনক। এই ধরনের খাদ্য কম খাওয়ার কারণে মারা যায় ৩০ লাখ লোক।

আর ফল কম খাওয়ার কারণে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বাদাম, বীজ, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার থেকে পাওয়া ওমেগা-৩ ও আঁশজাতীয় খাবার কম খাওয়াও মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ।

কীভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে?
গবেষণা বলেছ, নিম্নমানের খাবারে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এর মধ্যে ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে হৃদ্‌রোগে। এ ক্ষেত্রে লবণ মারাত্মক ভূমিকা রাখছে। অতিরিক্ত লবণ রক্তের চাপ বাড়িয়ে দেয়। যা স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তা ছাড়া হার্ট ও রক্তনালির ওপর লবণ সরাসরি প্রভাবও ফেলে। যা হার্ট ফেইলরের ঝুঁকি তৈরি করে।

আস্ত দানার শস্যজাতীয় খাদ্য, ফল ও সবজি ঠিক উল্টো কাজ করে। তারা হৃদ্‌যন্ত্রের সুস্থতার জন্য কাজ করে। হৃদ্‌যন্ত্রের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়।

ক্যানসার ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে খাদ্যের ভূমিকা। এ কারণেও বিশ্বে মারা যায় বহু লোক।

তাহলে কী খাব?
আমরা কি প্রতিদিন ঠিক খাবার ঠিক ঠিক পরিমাণে খাচ্ছি? উত্তর—না। সারা বিশ্বেই দেখা গেছে, মানুষের খাদ্যের অধিকাংশ তালিকা থেকে স্বাস্থ্যকর খাবার বাদ পড়ছে। এই তালিকায় বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার রয়েছে।

বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার দিনে ২৫ গ্রাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ দিনে গড়ে মাত্র ৩ গ্রাম এই খাবার খাচ্ছে।

দিনে দুধ খাওয়া উচিত ৪৪৩ গ্রাম। মানুষ খাচ্ছে ৭১ গ্রাম। একইভাবে আস্ত দানার শস্যজাতীয় খাবার ১২৬ গ্রামের জায়গায় মাত্র ২৯ গ্রাম খাচ্ছে মানুষ।

লাল মাংস (রেড মিট) ২২ গ্রাম খাওয়া উচিত। মানুষ গড়ে খাচ্ছে ২৭ গ্রাম করে। লবণ ৩ দশমিক ২ গ্রামের ওপরে খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু মানুষ খাচ্ছে ৬ গ্রাম করে। প্রক্রিয়াজাত মাংস ২ দশমিক ১ গ্রামের জায়গায় মানুষ খাচ্ছে ৪ গ্রাম করে।

বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার সম্পর্কে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিতা ফারাউহি বলছেন, এই খাবারগুলোতে উপকারী ফ্যাট আছে। বেশির ভাগ মানুষই এগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসেবে দেখে না।

অধ্যাপক ক্রিস্টোফার মুর বলেছেন, লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস ক্ষতিকর। কিন্তু আস্ত দানার শস্যজাতীয় খাদ্য, ফল, বাদাম, বীজ ও সবজি কম খাওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি।

অধ্যাপক মুর বলেন, ওজনের চেয়ে বরং ভালো খাবারের বিষয়টিই আসল কথা। আস্ত দানার শস্য, ফল, বাদাম, সবজি, বীজ ও সবজি জাতীয় খাবার খাওয়া বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। আর কমাতে বলেছেন লবণ খাওয়ার পরিমাণ। তথ্যসূত্র: বিবিসি অনলাইন