ঢাকা ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




শুভ জন্মদিন পদ্মা নদীর মাঝির অমর স্রষ্টা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪২:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০১৯ ১০০ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদ; 

পদ্মা নদীর মাঝির কুবের-গণেশ-মালা, প্রাগৈতিহাসিকের ভিখু-পাঁচীর মতো দারিদ্র্যপীড়িত অসাধারণ চরিত্রগুলো নিয়ে জীবনঘনিষ্ঠ গল্পে পাঠকহৃদয় কেড়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক তিনি।

আজ এ প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকের জন্মদিন। ১৯০৮ সালের ১৯ মে বিহারের সাঁওতাল পরগনা, বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম রাখা হয়েছিল অধরচন্দ্র। বাবার দেয়া নাম ছিল প্রবোধকুমার আর ডাকনাম মানিক।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তার রচনায় ফুটে উঠেছে।

তার নাটক, গল্প, সাহিত্যের সব বিখ্যাত চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজের ওপর পড়া দারিদ্র্যের কষাঘাত ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি পাঠকের কাছে।

মানিক বন্দোপাধ্যায়ের বাবা ছিলেন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাবরেজিস্ট্রার। বাবার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন কেটেছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার বিভিন্ন জেলা শহরে।

তার মায়ের আদি নিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এ গ্রামের পটভূমিতেই তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস পুতুলনাচের ইতিকথা।

১৯২৬ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯২৮ সালে বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ান মিশন থেকে আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। কিন্তু সাহিত্যের পোকা মাথায় ঢোকার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।

সাহিত্যের পথে যাত্রাটা ছিল তার বেশ আত্মবিশ্বাসী। প্রথম ছাপা গল্প ‘অতসী মামি’ এ আত্মবিশ্বাসেরই ফসল। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অনার্সে পড়ার সময় এক বন্ধুর সঙ্গে অনেকটা চ্যালেঞ্জ ধরেই লিখেছিলেন গল্পটি। ‘বিচিত্রা’য় ছাপা হয়েছিল সেটি।

পদ্মানদীর মাঝি এ সাহিত্যিকের কালজয়ী উপন্যাস। নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনবসতির সঙ্গে মানিক অনুভব করতেন এক আত্মিক বন্ধন। মাঝি-জেলেদের সঙ্গে গল্পে মজে থাকতেন, খাওয়া-দাওয়াও করতেন। সেই আত্মীয়তা থেকেই সৃষ্টি করেছিলেন তার সবচেয়ে জনপ্রিয় রচনা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’।

পারিবারিক জীবনে সংগ্রামের কথাও তিনি লিখে গেছেন তার ‘অপ্রকাশিত মানিক’ গ্রন্থে। স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করার পর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘বাচ্চা মরে যাওয়ায় ডলি (স্ত্রী) অখুশি নয়। অনেক হাঙ্গামা থেকে বেঁচেছে। বলল, বাঁচা গেছে বাবা, আমি হিসেব করেছি বাড়ি ফিরে মাসখানেক বিশ্রাম করে রাঁধুনী বিদায় দেব। অনেক খরচ বাঁচবে।’

চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন মানিক বন্দোপাধ্যায়। কিছুদিন নবারুণ পত্রিকায় চাকরি করেন সহ-সম্পাদক হিসেবে। এরপর বঙ্গশ্রী পত্রিকায়ও একই পদে কাজ করেন। নিজের একটি প্রেস চালু করেছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়।

মানিক বন্দোপাধ্যায় জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে চল্লিশটি উপন্যাস ও তিনশ ছোটগল্প রচনা করেছেন। পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসী মামি, প্রাগৈতিহাসিক, ছোট বকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজি ছাড়াও তার রচনাগুলো বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

ক্ষুধা, দারিদ্রে পিষ্ট হয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ক্লান্ত-শ্রান্ত এ সাহিত্যযোদ্ধা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘দেখো, দুটি ডাল-ভাতের সংস্থান না রেখে বাংলাদেশে কেউ যেন সাহিত্য করতে না যায়।’

বেঁচে থাকতে দিনের পর দিন ক্ষুধার তাড়নায় ছটফট করেছিলেন তিনি। কিন্তু মৃত্যুর পর রাশি রাশি ফুলের ভারে নুয়ে পড়ে তার মরদেহ।

১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী এ কথাসাহিত্যিক না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




শুভ জন্মদিন পদ্মা নদীর মাঝির অমর স্রষ্টা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

আপডেট সময় : ১০:৪২:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০১৯

সকালের সংবাদ; 

পদ্মা নদীর মাঝির কুবের-গণেশ-মালা, প্রাগৈতিহাসিকের ভিখু-পাঁচীর মতো দারিদ্র্যপীড়িত অসাধারণ চরিত্রগুলো নিয়ে জীবনঘনিষ্ঠ গল্পে পাঠকহৃদয় কেড়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক তিনি।

আজ এ প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকের জন্মদিন। ১৯০৮ সালের ১৯ মে বিহারের সাঁওতাল পরগনা, বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম রাখা হয়েছিল অধরচন্দ্র। বাবার দেয়া নাম ছিল প্রবোধকুমার আর ডাকনাম মানিক।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তার রচনায় ফুটে উঠেছে।

তার নাটক, গল্প, সাহিত্যের সব বিখ্যাত চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজের ওপর পড়া দারিদ্র্যের কষাঘাত ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি পাঠকের কাছে।

মানিক বন্দোপাধ্যায়ের বাবা ছিলেন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাবরেজিস্ট্রার। বাবার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন কেটেছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার বিভিন্ন জেলা শহরে।

তার মায়ের আদি নিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এ গ্রামের পটভূমিতেই তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস পুতুলনাচের ইতিকথা।

১৯২৬ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯২৮ সালে বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ান মিশন থেকে আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। কিন্তু সাহিত্যের পোকা মাথায় ঢোকার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।

সাহিত্যের পথে যাত্রাটা ছিল তার বেশ আত্মবিশ্বাসী। প্রথম ছাপা গল্প ‘অতসী মামি’ এ আত্মবিশ্বাসেরই ফসল। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অনার্সে পড়ার সময় এক বন্ধুর সঙ্গে অনেকটা চ্যালেঞ্জ ধরেই লিখেছিলেন গল্পটি। ‘বিচিত্রা’য় ছাপা হয়েছিল সেটি।

পদ্মানদীর মাঝি এ সাহিত্যিকের কালজয়ী উপন্যাস। নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনবসতির সঙ্গে মানিক অনুভব করতেন এক আত্মিক বন্ধন। মাঝি-জেলেদের সঙ্গে গল্পে মজে থাকতেন, খাওয়া-দাওয়াও করতেন। সেই আত্মীয়তা থেকেই সৃষ্টি করেছিলেন তার সবচেয়ে জনপ্রিয় রচনা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’।

পারিবারিক জীবনে সংগ্রামের কথাও তিনি লিখে গেছেন তার ‘অপ্রকাশিত মানিক’ গ্রন্থে। স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করার পর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘বাচ্চা মরে যাওয়ায় ডলি (স্ত্রী) অখুশি নয়। অনেক হাঙ্গামা থেকে বেঁচেছে। বলল, বাঁচা গেছে বাবা, আমি হিসেব করেছি বাড়ি ফিরে মাসখানেক বিশ্রাম করে রাঁধুনী বিদায় দেব। অনেক খরচ বাঁচবে।’

চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন মানিক বন্দোপাধ্যায়। কিছুদিন নবারুণ পত্রিকায় চাকরি করেন সহ-সম্পাদক হিসেবে। এরপর বঙ্গশ্রী পত্রিকায়ও একই পদে কাজ করেন। নিজের একটি প্রেস চালু করেছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়।

মানিক বন্দোপাধ্যায় জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে চল্লিশটি উপন্যাস ও তিনশ ছোটগল্প রচনা করেছেন। পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসী মামি, প্রাগৈতিহাসিক, ছোট বকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজি ছাড়াও তার রচনাগুলো বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

ক্ষুধা, দারিদ্রে পিষ্ট হয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ক্লান্ত-শ্রান্ত এ সাহিত্যযোদ্ধা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘দেখো, দুটি ডাল-ভাতের সংস্থান না রেখে বাংলাদেশে কেউ যেন সাহিত্য করতে না যায়।’

বেঁচে থাকতে দিনের পর দিন ক্ষুধার তাড়নায় ছটফট করেছিলেন তিনি। কিন্তু মৃত্যুর পর রাশি রাশি ফুলের ভারে নুয়ে পড়ে তার মরদেহ।

১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী এ কথাসাহিত্যিক না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।