ঢাকা ০৫:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




হকার থেকে ওয়ালমার্টের মালিক

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০১৯ ১১৯ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক;

বর্তমানে বিশ্বের সব থেকে ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস- এ কথা সবাই জানেন। তার আগে ছিলেন বিল গেটস। কিন্তু তার আগে কে ছিলেন সেটা কি জানেন? তিনি স্যাম ওয়ালটন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিশ্বের সব থেকে ধনী ব্যক্তি। তার মৃত্যুর পর বিল গেটস তার জায়গা দখল করেন। ওয়ালটন প্রতিষ্ঠা করেন বিখ্যাত ওয়ালমার্ট। সাধারণ একজন মানুষ থেকে তার বিলিয়নেয়ার হওয়ার গল্প নিয়ে এবারের আয়োজন।

হার না মানা ছেলেটি

পুরো নাম স্যামুয়েল মুর ওয়ালটন। ওকলোহামার কিংফিশার এলাকায় ১৯১৮ সালে তার জন্ম। শৈশবে তিনি অর্থকষ্টের মধ্যে বড় হয়েছেন। তার বাবার ছিল একটি খামার। কিন্তু সেটা দিয়ে তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ ঠিক মতো করতে পারবেন না তার বাবা। পরে সেটা বন্ধক রেখে বিভিন্ন জায়গায় পরিবার নিয়ে ঘুরেছেন। শেষ পর্ন্ত তিনি থিতু হন কলম্বিয়ার মিসৌরিতে। শৈশব থেকেই অর্থকষ্ট দেখে বড় হয়েছেন স্যাম ওয়ালটন আর তাই তিনি খুব হিসেব করে টাকা-পয়সা খরচ করতেন। সেই থেকে তার মধ্যেও একটা হিসেবি প্রবণতা লক্ষ করা যায় ছোটবেলা থেকেই। শৈশবে তিনি খুব মেধাবী ছিলেন। দুধ বিক্রি, হকারসহ নানা ধরনের কাজ করেছেন স্কুলে থাকাকালীন।

এত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরি থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে তিনি প্রথম চাকরি নিলেন একটি দোকানের সেলসম্যান হিসেবে। তারপর করেছেন ব্যবসাও। হার না মানা এক ছেলে তিনি সব সময় তার নিজের সেরাটা দিতে চাইতেন। আর সেই জন্যই কখনো হার মানতেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি চেষ্টা করতেন। আর শুধুমাত্র এই কারণেই তিনি ব্যর্থ হননি। সদিচ্ছাকে পুঁজি করে শুরু করেছিলেন ওয়ালমার্ট। শৈশব থেকেই তার সব কাজের ক্ষেত্রে এই সদিচ্ছাটাই ছিল। পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন, তিনি হার মানতেন না। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে একবার বাজি ধরেছিলেন যে তিনি সবার আগে বয়স্কাউটের ‘ঈগল ব্যাচ’ জিতবেন। এবং ১৩ বছর বয়সে ঈগল ব্যাচ জিতে নেন তিনি। সেই সময়ের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে ঈগল ব্যাচ জেতা ছাত্র ছিলেন তিনি। যখন তিনি স্কুলে পড়তেন তখন এক পত্রিকায় হকারের কাজ করতেন। পত্রিকার নাম ছিল কলম্বিয়া ডেইলি নিউজ পেপার। একবার কোম্পানি থেকে বলা হলো, যে বিক্রেতা এক দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যাগাজিন সাবক্রিপশন করাতে পারবে তাকে ১০ ডলার দেওয়া হবে। ১৯৩০ সালের দিকে ১০ ডলার মানে অনেক টাকা ছিল তার কাছে। স্যাম সেই ১০ ডলার না জিতে ঘরে ফেরেননি।

অল্প দাম, বেশি বিক্রি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সুপারস্টোর ওয়ালমার্ট। বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এটি। এ ছাড়া আয়ের দিক থেকেও খুচরা পণ্য বিক্রি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। এই স্টোরে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায়। সপ্তাহে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ আমেরিকার ওয়ালমার্ট স্টোরগুলোতে আসে। তাছাড়া পণ্য বিক্রির মাধ্যমে সব থেকে বেশি রেভিনিউ করা কোম্পানির তালিকায় রয়েছে এর নাম। ২০১৭ সালে ওয়ালমার্টের রেভিনিউ ছিল ৪৮৬ বিলিয়ন ডলার। ওই একই বছর স্টিভ জবসের এ্যাপলের আয় ছিল ২৫৫ বিলিয়ন ডলার। ভাবতে পারেন ওয়ালমার্টের জনপ্রিয়তা তাহলে কতটুকু।

কিন্তু ওয়ালটন যখন ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন তখন কিন্তু পুঁজি বলতে সদিচ্ছা আর চেষ্টা ছাড়া তেমন কিছুই ছিল না। প্রাথমিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পণ্য ক্রয়ের জন্য স্যাম ওয়ালটন তার শ্বশুরের থেকে ২৫ হাজার ডলার ঋণ নেন। তারপর নানা ধাপ পেরিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ওয়ালমার্ট। ১৯৬২ সালে চালু হওয়ার পর ১৯৭৬ সালের মধ্যেই এই প্রতিষ্ঠানটির মূল্য দাঁড়ায় ১৭৬ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তার সাফল্যের মূলমন্ত্র ছিল অল্প দাম, বেশি বিক্রি।

ভালো লাগেনি চাকরি

পড়াশুনা শেষ করে তিনি একটি দোকানের সেলসম্যানের চাকরি নেন। চাকরিতে তিনি ভালোই করছিলেন। সেখানে বেতন পেতেন মাসে ৭৫ ডলার। কিছুদিন চাকরি করার পর ১৯৪২ সালে তিনি সেখান থেকে ইস্তফা দিলেন। ইচ্ছে ছিল স্বাধীন কিছু করার। আর সেই জন্য শুরু করলেন ব্যবসা।

সেই সময় বেন ফ্রাঙ্কলিন খুবই জনপ্রিয় চেইন শপ ছিল। ১৯৪৫ সালে তিনি সেই চেইনশপের একটি দোকানের ফ্র্যাঞ্চাইজি ভাড়া নেন কয়েক বছরের জন্য। দোকানটি যখন তিনি ভাড়া নেন তখন সেটি এত জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু তিনি নিজের চেষ্টায় সেটা দাঁড় করালেন। কিন্তু দোকানটি যখন ভাড়া নেন তখন ওয়ালটনের সঙ্গে একটু চাতুরী করা হয়েছিল। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল লাভ হোক বা না হোক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ওয়ালটনকে প্রতিমাসে ভাড়ার বাইরেও দিতে হবে। আর দোকানের ৮০ শতাংশ পণ্য কিনতে হবে তাদের কাছ থেকেই। কিন্তু ওয়ালটন দেখলেন তাদের কাছ থেকে পণ্য না নিয়ে বাইরে থেকে পণ্য নিলে আরও বেশি লাভ হচ্ছে। তাই তিনি বাইরে থেকেই পণ্য নিচ্ছিলেন বেশিরভাগ কিন্তু ফ্রাঙ্কলিনকে টাকা ঠিকই পরিশোধ করছিলেন।

মাত্র তিন বছরের মধ্যে আরকানসের নিউ পোর্ট এলাকার দোকানটি থেকে মাসে আয় হতে লাগল আশি হাজার ডলারের কাছাকাছি। ততদিনে দোকান ভাড়া নেওয়ার মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে। তিনি গেলেন দোকানের চুক্তি নবায়ন করতে। কিন্তু

কর্তৃপক্ষ আর রাজি হলেন না। দোকানের এত জনপ্রিয়তা দেখে তারা নিজেরাই সেটা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।

ওয়ালটন তখন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি আরেকটি ফ্রাঞ্চাইজি ভাড়া নেবেন। তবে সেটা শহর থেকে দূরে আরকানসের বেনটনভিলে। ১৯৫০ সালে বেন ফ্রাঙ্কলিনের আরেকটি চেইন খুললেন তিনি আগের দোকান থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে। সেই দোকানও জনপ্রিয় হতে লাগল। ১৯৫৪ সালে ওয়ালটন তার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে খুলে ফেললেন আরও একটি শাখা। এরপর ঠিক করলেন আর ভাড়া নয় এবার নিজেই কিনে নেবেন দোকান।

ওয়ালমার্ট

আগের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপলব্ধি করেন বড় শহরের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না। তাই তিনি বেছে নেন ছোট শহরগুলোকে। ৪২ বছর বয়সে আরকানসাস অঙ্গরাজ্যে আরকানসাস অঙ্গরাজ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন ওয়ালমার্ট। সেটা ১৯৬২ সালে। ওয়ালমার্টের প্রথম শাখা আরকানসাসের আউটপোস্টে সফলতা পেলে কানসাস সিটিতে আরেকটি আউটপোস্ট চালু করেন তিনি। এক বছরের মধ্যে তিনি মোট ১৬টি দোকান চালু করেন আর এই সবগুলোকে একটি চেইনের আওতায় নিয়ে আসলেন। নাম দিলেন ‘ওয়ালমার্ট ডিসকাউন্ট সিটি স্টোর’। তারপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। সফলতার একের পর এক ধাপ পেরিয়েছেন। স্থাপন করেছেন নজিরবিহীন ইতিহাস। ১৯৯২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওয়ালটন। তার আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিশে^র সেরা ধনী। ব্যক্তিগত জীবনে চার সন্তানের জনক ওয়ালটন। এর মধ্যে জন থমাস নামে এক ছেলে ২০০৫ সালে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যায়।

বর্তমানে এমন কোনো জিনিস নেই যেটা ওয়ালমার্টে পাওয়া যায় না। ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪.৭ শতাংশ মুদি মালামাল একাই বিক্রি করেছে ওয়ালমার্ট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিক্রি করেছে ৭ শতাংশ।

প্রচ- রকম মেধাবী ও বিনয়ী ওয়ালটন প্রতিনিয়ত শিখেছেন। দোকানকে জনপ্রিয় করতে তিনি বেছে নিতেন নানা ধরনের কৌশল। যেমন বিভিন্ন বিক্রয় সম্পর্কিত সেমিনারে তিনি প্রতিনিয়তই যেতেন। সেখান থেকে যা শিখতেন তা তার ব্যবসায় কাজে লাগাতেন। পড়তেন ব্যবসার ওপর বিভিন্ন বই। একবার এক দোকানের সামনে বসিয়েছিলেন পপকর্ন আর আইসক্রিমের মেশিন। এতে করে প্রচুর মানুষ ভিড় করত। সেই সঙ্গে তিনি পণ্য বিক্রিও করতে লাগলেন অন্য দোকানের থেকে অনেক কম দামে। এর ফলে বিক্রি হতো বেশি। এতো কম দাম আর বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফারের কারণেই এক সময় শহরের সব থেকে জনপ্রিয় চেইনশপে পরিণত হয়ে গেল ওয়ালমার্ট। বর্তমানে বিশ্বের ২৭টা দেশে এর প্রায় ১১ হাজার ৩০০ স্টোর রয়েছে। তবে সব দেশে ওয়ালমার্ট নামে স্টোর নেই। ৫৮টি ভিন্ন ভিন্ন নামে রয়েছে এই শাখা। যেমনÑ ব্রিটেনে আসডা, ভারতে বেস্ট প্রাইস, জাপানে সেইয়ু। বতর্মানে ২২ লাখেরও বেশি মানুষ কাজ করছে এই ওয়ালমার্টে।

বেলজিয়ামের চেয়েও সম্পদ বেশি

একটি দেশ ছোট হলেও কোনো একটি কোম্পানির চেয়ে এর সম্পদ কম হবে এটা শুনতে অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। বিশ্বাস করতে কঠিন হলেও ওয়ালমার্টের বাৎসরিক আয় এত বেশি যা বেলজিয়ামের জিডিপিকেও ছাড়িয়ে যায়। ২০১৭ সালে এই কোম্পানিটির বার্ষিক মুনাফা ছিল ৪৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সম্পদের দিক থেকে এই কোম্পানি বেলজিয়ামকে (জিডিপি ৪৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পেছনে ফেলে দেয়। যদি ওয়ালমার্ট কোনো দেশ হতো, তাহলে বৈশ্বিক সূচকে এটি ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হতো।

যুক্তরাষ্ট্রের ধনী পরিবার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী পরিবারের তালিকায় রয়েছে ওয়ালটন পরিবারের নাম। ওয়ালমার্টই তাদের আয়ের মূল উৎস। ওয়ালটন পরিবার এই সংস্থার প্রায় ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এতেই তাদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫২ বিলিয়ন ডলারে। স্যাম ওয়ালটনের মেয়ে অ্যালিস ওয়ালটন ও ছেলে জিম ওয়ালটন ছিলেন ফোর্বস ম্যাগাজিনের সেরা ধনীর তালিকায়। বর্তমানে অ্যালিস ওয়ালটনের সম্পদের পরিমাণ ৪৬. ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর তার ভাই জিম ওয়ালটনের সম্পদ রয়েছে ৪৭. ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বর্তমানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী নারীও অ্যালিস। স্যান অনটোনিওর ট্রিনিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যালিস অর্থনীতি ও ফিন্যান্স বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তাছাড়া অ্যালিস বেশ কয়েকটি জাদুঘর ও চিত্র সংগ্রহশালার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

জাদুঘরে ওয়ালমার্টের দরজা

ওয়ালমার্ট প্রথমে এত বড় ছিল না। ওয়ালমার্টের প্রথম যুগে চালু হওয়া স্টোরের মধ্যে আরাকানসাসের আউটপোস্ট ছিল অন্যতম। সেখানে ব্যবহৃত দরজাগুলো দান করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান’স ন্যাশনাল মিউজিয়ামে। সেখানেই প্রদর্শিত হচ্ছে মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম সফল এ প্রতিষ্ঠানের নিদর্শনগুলো।

বিশ্বের অনেক দেশে ওয়ালমার্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চীনে ও কানাডায় দোকান চালু করার পর তা সে সব দেশে খুবই জনপ্রিয় হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তারা জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ায়ও শাখা খোলে। কিন্তু সেখানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। আর তাই সেখান থেকে একসময় দোকান গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় ওয়ালমার্ট।

শ্বশুরের দেওয়া বিশ হাজার ডলার আর তার নিজের কাছে থাকা ৫ হাজার ডলার ছিল তার সম্বল।

একনজরে

১৯৬২ সালের ২ জুলাই প্রথম ওয়ালমার্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৬৭ সালের মধ্যে ২৪টি চেইন শপ চালু হয় ওয়ালমার্টের।

১৯৬৯ সালে কোম্পানির নাম হয় ওয়ালমার্ট স্টোরস ইঙ্ক।

১৯৭০ সালে এটা পাবলিক ট্রেডিং কোম্পানিতে পরিণত হয় ও শেয়ার বাজারে ছাড়ে।

১৯৭১ সালে প্রথম ডিসট্রিবিশন অফিস স্থাপন করা হয়।

১৯৭২ সালে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে রেকর্ড পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করে।

১৯৭৯ সালে ওয়ালমার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮০ সালে ওয়ালটন পরিবার প্রতিষ্ঠা করে ওয়ালটন ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন।

১৯৮০ সালে বাৎসরিক ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হয়। যা সেই সময় অন্য সব কোম্পানি থেকে দ্রুত।

১৯৮২ সালে বিশ্বসেরা ধনীর তালিকায় নাম লেখান ওয়ালটন।

১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম খেতাব পান ওয়ালটন।

১৯৯২ সালে ক্যানসারে মারা যান ওয়ালটন।

১৯৯৩ সালে সপ্তাহে ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রির রেকর্ড করে ওয়ালমার্ট।

১৯৯৪ সালে কানাডায় স্টোর চালু করে ওয়ালমার্ট।

১৯৯৬ সালে চীনে শাখা চালু হয়।

১৯৯৭ সালে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি উদযাপন করা হয়।

২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ফরচুনের তালিকায় সব কোম্পানির শীর্ষে জায়গা করে নেয় ওয়ালমার্ট।

২০০৫ সালে ঘূর্ণিঝড় হারিকেনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ১৮ মিলিয়ন ডলার সাহায্য করে।

২০০৯ সালে মাইক ডিউক সিইওর দায়িত্ব নেন। ওই সালেই বছরে ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি উদযাপন করে ওয়ালমার্ট।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




হকার থেকে ওয়ালমার্টের মালিক

আপডেট সময় : ১০:৪৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক;

বর্তমানে বিশ্বের সব থেকে ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস- এ কথা সবাই জানেন। তার আগে ছিলেন বিল গেটস। কিন্তু তার আগে কে ছিলেন সেটা কি জানেন? তিনি স্যাম ওয়ালটন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিশ্বের সব থেকে ধনী ব্যক্তি। তার মৃত্যুর পর বিল গেটস তার জায়গা দখল করেন। ওয়ালটন প্রতিষ্ঠা করেন বিখ্যাত ওয়ালমার্ট। সাধারণ একজন মানুষ থেকে তার বিলিয়নেয়ার হওয়ার গল্প নিয়ে এবারের আয়োজন।

হার না মানা ছেলেটি

পুরো নাম স্যামুয়েল মুর ওয়ালটন। ওকলোহামার কিংফিশার এলাকায় ১৯১৮ সালে তার জন্ম। শৈশবে তিনি অর্থকষ্টের মধ্যে বড় হয়েছেন। তার বাবার ছিল একটি খামার। কিন্তু সেটা দিয়ে তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ ঠিক মতো করতে পারবেন না তার বাবা। পরে সেটা বন্ধক রেখে বিভিন্ন জায়গায় পরিবার নিয়ে ঘুরেছেন। শেষ পর্ন্ত তিনি থিতু হন কলম্বিয়ার মিসৌরিতে। শৈশব থেকেই অর্থকষ্ট দেখে বড় হয়েছেন স্যাম ওয়ালটন আর তাই তিনি খুব হিসেব করে টাকা-পয়সা খরচ করতেন। সেই থেকে তার মধ্যেও একটা হিসেবি প্রবণতা লক্ষ করা যায় ছোটবেলা থেকেই। শৈশবে তিনি খুব মেধাবী ছিলেন। দুধ বিক্রি, হকারসহ নানা ধরনের কাজ করেছেন স্কুলে থাকাকালীন।

এত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরি থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে তিনি প্রথম চাকরি নিলেন একটি দোকানের সেলসম্যান হিসেবে। তারপর করেছেন ব্যবসাও। হার না মানা এক ছেলে তিনি সব সময় তার নিজের সেরাটা দিতে চাইতেন। আর সেই জন্যই কখনো হার মানতেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি চেষ্টা করতেন। আর শুধুমাত্র এই কারণেই তিনি ব্যর্থ হননি। সদিচ্ছাকে পুঁজি করে শুরু করেছিলেন ওয়ালমার্ট। শৈশব থেকেই তার সব কাজের ক্ষেত্রে এই সদিচ্ছাটাই ছিল। পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন, তিনি হার মানতেন না। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে একবার বাজি ধরেছিলেন যে তিনি সবার আগে বয়স্কাউটের ‘ঈগল ব্যাচ’ জিতবেন। এবং ১৩ বছর বয়সে ঈগল ব্যাচ জিতে নেন তিনি। সেই সময়ের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে ঈগল ব্যাচ জেতা ছাত্র ছিলেন তিনি। যখন তিনি স্কুলে পড়তেন তখন এক পত্রিকায় হকারের কাজ করতেন। পত্রিকার নাম ছিল কলম্বিয়া ডেইলি নিউজ পেপার। একবার কোম্পানি থেকে বলা হলো, যে বিক্রেতা এক দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যাগাজিন সাবক্রিপশন করাতে পারবে তাকে ১০ ডলার দেওয়া হবে। ১৯৩০ সালের দিকে ১০ ডলার মানে অনেক টাকা ছিল তার কাছে। স্যাম সেই ১০ ডলার না জিতে ঘরে ফেরেননি।

অল্প দাম, বেশি বিক্রি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সুপারস্টোর ওয়ালমার্ট। বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এটি। এ ছাড়া আয়ের দিক থেকেও খুচরা পণ্য বিক্রি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। এই স্টোরে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায়। সপ্তাহে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ আমেরিকার ওয়ালমার্ট স্টোরগুলোতে আসে। তাছাড়া পণ্য বিক্রির মাধ্যমে সব থেকে বেশি রেভিনিউ করা কোম্পানির তালিকায় রয়েছে এর নাম। ২০১৭ সালে ওয়ালমার্টের রেভিনিউ ছিল ৪৮৬ বিলিয়ন ডলার। ওই একই বছর স্টিভ জবসের এ্যাপলের আয় ছিল ২৫৫ বিলিয়ন ডলার। ভাবতে পারেন ওয়ালমার্টের জনপ্রিয়তা তাহলে কতটুকু।

কিন্তু ওয়ালটন যখন ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন তখন কিন্তু পুঁজি বলতে সদিচ্ছা আর চেষ্টা ছাড়া তেমন কিছুই ছিল না। প্রাথমিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পণ্য ক্রয়ের জন্য স্যাম ওয়ালটন তার শ্বশুরের থেকে ২৫ হাজার ডলার ঋণ নেন। তারপর নানা ধাপ পেরিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ওয়ালমার্ট। ১৯৬২ সালে চালু হওয়ার পর ১৯৭৬ সালের মধ্যেই এই প্রতিষ্ঠানটির মূল্য দাঁড়ায় ১৭৬ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তার সাফল্যের মূলমন্ত্র ছিল অল্প দাম, বেশি বিক্রি।

ভালো লাগেনি চাকরি

পড়াশুনা শেষ করে তিনি একটি দোকানের সেলসম্যানের চাকরি নেন। চাকরিতে তিনি ভালোই করছিলেন। সেখানে বেতন পেতেন মাসে ৭৫ ডলার। কিছুদিন চাকরি করার পর ১৯৪২ সালে তিনি সেখান থেকে ইস্তফা দিলেন। ইচ্ছে ছিল স্বাধীন কিছু করার। আর সেই জন্য শুরু করলেন ব্যবসা।

সেই সময় বেন ফ্রাঙ্কলিন খুবই জনপ্রিয় চেইন শপ ছিল। ১৯৪৫ সালে তিনি সেই চেইনশপের একটি দোকানের ফ্র্যাঞ্চাইজি ভাড়া নেন কয়েক বছরের জন্য। দোকানটি যখন তিনি ভাড়া নেন তখন সেটি এত জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু তিনি নিজের চেষ্টায় সেটা দাঁড় করালেন। কিন্তু দোকানটি যখন ভাড়া নেন তখন ওয়ালটনের সঙ্গে একটু চাতুরী করা হয়েছিল। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল লাভ হোক বা না হোক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ওয়ালটনকে প্রতিমাসে ভাড়ার বাইরেও দিতে হবে। আর দোকানের ৮০ শতাংশ পণ্য কিনতে হবে তাদের কাছ থেকেই। কিন্তু ওয়ালটন দেখলেন তাদের কাছ থেকে পণ্য না নিয়ে বাইরে থেকে পণ্য নিলে আরও বেশি লাভ হচ্ছে। তাই তিনি বাইরে থেকেই পণ্য নিচ্ছিলেন বেশিরভাগ কিন্তু ফ্রাঙ্কলিনকে টাকা ঠিকই পরিশোধ করছিলেন।

মাত্র তিন বছরের মধ্যে আরকানসের নিউ পোর্ট এলাকার দোকানটি থেকে মাসে আয় হতে লাগল আশি হাজার ডলারের কাছাকাছি। ততদিনে দোকান ভাড়া নেওয়ার মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে। তিনি গেলেন দোকানের চুক্তি নবায়ন করতে। কিন্তু

কর্তৃপক্ষ আর রাজি হলেন না। দোকানের এত জনপ্রিয়তা দেখে তারা নিজেরাই সেটা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।

ওয়ালটন তখন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি আরেকটি ফ্রাঞ্চাইজি ভাড়া নেবেন। তবে সেটা শহর থেকে দূরে আরকানসের বেনটনভিলে। ১৯৫০ সালে বেন ফ্রাঙ্কলিনের আরেকটি চেইন খুললেন তিনি আগের দোকান থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে। সেই দোকানও জনপ্রিয় হতে লাগল। ১৯৫৪ সালে ওয়ালটন তার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে খুলে ফেললেন আরও একটি শাখা। এরপর ঠিক করলেন আর ভাড়া নয় এবার নিজেই কিনে নেবেন দোকান।

ওয়ালমার্ট

আগের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপলব্ধি করেন বড় শহরের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে না। তাই তিনি বেছে নেন ছোট শহরগুলোকে। ৪২ বছর বয়সে আরকানসাস অঙ্গরাজ্যে আরকানসাস অঙ্গরাজ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন ওয়ালমার্ট। সেটা ১৯৬২ সালে। ওয়ালমার্টের প্রথম শাখা আরকানসাসের আউটপোস্টে সফলতা পেলে কানসাস সিটিতে আরেকটি আউটপোস্ট চালু করেন তিনি। এক বছরের মধ্যে তিনি মোট ১৬টি দোকান চালু করেন আর এই সবগুলোকে একটি চেইনের আওতায় নিয়ে আসলেন। নাম দিলেন ‘ওয়ালমার্ট ডিসকাউন্ট সিটি স্টোর’। তারপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। সফলতার একের পর এক ধাপ পেরিয়েছেন। স্থাপন করেছেন নজিরবিহীন ইতিহাস। ১৯৯২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওয়ালটন। তার আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিশে^র সেরা ধনী। ব্যক্তিগত জীবনে চার সন্তানের জনক ওয়ালটন। এর মধ্যে জন থমাস নামে এক ছেলে ২০০৫ সালে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যায়।

বর্তমানে এমন কোনো জিনিস নেই যেটা ওয়ালমার্টে পাওয়া যায় না। ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪.৭ শতাংশ মুদি মালামাল একাই বিক্রি করেছে ওয়ালমার্ট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিক্রি করেছে ৭ শতাংশ।

প্রচ- রকম মেধাবী ও বিনয়ী ওয়ালটন প্রতিনিয়ত শিখেছেন। দোকানকে জনপ্রিয় করতে তিনি বেছে নিতেন নানা ধরনের কৌশল। যেমন বিভিন্ন বিক্রয় সম্পর্কিত সেমিনারে তিনি প্রতিনিয়তই যেতেন। সেখান থেকে যা শিখতেন তা তার ব্যবসায় কাজে লাগাতেন। পড়তেন ব্যবসার ওপর বিভিন্ন বই। একবার এক দোকানের সামনে বসিয়েছিলেন পপকর্ন আর আইসক্রিমের মেশিন। এতে করে প্রচুর মানুষ ভিড় করত। সেই সঙ্গে তিনি পণ্য বিক্রিও করতে লাগলেন অন্য দোকানের থেকে অনেক কম দামে। এর ফলে বিক্রি হতো বেশি। এতো কম দাম আর বিভিন্ন ডিসকাউন্ট অফারের কারণেই এক সময় শহরের সব থেকে জনপ্রিয় চেইনশপে পরিণত হয়ে গেল ওয়ালমার্ট। বর্তমানে বিশ্বের ২৭টা দেশে এর প্রায় ১১ হাজার ৩০০ স্টোর রয়েছে। তবে সব দেশে ওয়ালমার্ট নামে স্টোর নেই। ৫৮টি ভিন্ন ভিন্ন নামে রয়েছে এই শাখা। যেমনÑ ব্রিটেনে আসডা, ভারতে বেস্ট প্রাইস, জাপানে সেইয়ু। বতর্মানে ২২ লাখেরও বেশি মানুষ কাজ করছে এই ওয়ালমার্টে।

বেলজিয়ামের চেয়েও সম্পদ বেশি

একটি দেশ ছোট হলেও কোনো একটি কোম্পানির চেয়ে এর সম্পদ কম হবে এটা শুনতে অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। বিশ্বাস করতে কঠিন হলেও ওয়ালমার্টের বাৎসরিক আয় এত বেশি যা বেলজিয়ামের জিডিপিকেও ছাড়িয়ে যায়। ২০১৭ সালে এই কোম্পানিটির বার্ষিক মুনাফা ছিল ৪৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সম্পদের দিক থেকে এই কোম্পানি বেলজিয়ামকে (জিডিপি ৪৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পেছনে ফেলে দেয়। যদি ওয়ালমার্ট কোনো দেশ হতো, তাহলে বৈশ্বিক সূচকে এটি ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হতো।

যুক্তরাষ্ট্রের ধনী পরিবার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী পরিবারের তালিকায় রয়েছে ওয়ালটন পরিবারের নাম। ওয়ালমার্টই তাদের আয়ের মূল উৎস। ওয়ালটন পরিবার এই সংস্থার প্রায় ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এতেই তাদের অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫২ বিলিয়ন ডলারে। স্যাম ওয়ালটনের মেয়ে অ্যালিস ওয়ালটন ও ছেলে জিম ওয়ালটন ছিলেন ফোর্বস ম্যাগাজিনের সেরা ধনীর তালিকায়। বর্তমানে অ্যালিস ওয়ালটনের সম্পদের পরিমাণ ৪৬. ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর তার ভাই জিম ওয়ালটনের সম্পদ রয়েছে ৪৭. ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বর্তমানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী নারীও অ্যালিস। স্যান অনটোনিওর ট্রিনিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যালিস অর্থনীতি ও ফিন্যান্স বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তাছাড়া অ্যালিস বেশ কয়েকটি জাদুঘর ও চিত্র সংগ্রহশালার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

জাদুঘরে ওয়ালমার্টের দরজা

ওয়ালমার্ট প্রথমে এত বড় ছিল না। ওয়ালমার্টের প্রথম যুগে চালু হওয়া স্টোরের মধ্যে আরাকানসাসের আউটপোস্ট ছিল অন্যতম। সেখানে ব্যবহৃত দরজাগুলো দান করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান’স ন্যাশনাল মিউজিয়ামে। সেখানেই প্রদর্শিত হচ্ছে মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম সফল এ প্রতিষ্ঠানের নিদর্শনগুলো।

বিশ্বের অনেক দেশে ওয়ালমার্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চীনে ও কানাডায় দোকান চালু করার পর তা সে সব দেশে খুবই জনপ্রিয় হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তারা জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ায়ও শাখা খোলে। কিন্তু সেখানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। আর তাই সেখান থেকে একসময় দোকান গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় ওয়ালমার্ট।

শ্বশুরের দেওয়া বিশ হাজার ডলার আর তার নিজের কাছে থাকা ৫ হাজার ডলার ছিল তার সম্বল।

একনজরে

১৯৬২ সালের ২ জুলাই প্রথম ওয়ালমার্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৬৭ সালের মধ্যে ২৪টি চেইন শপ চালু হয় ওয়ালমার্টের।

১৯৬৯ সালে কোম্পানির নাম হয় ওয়ালমার্ট স্টোরস ইঙ্ক।

১৯৭০ সালে এটা পাবলিক ট্রেডিং কোম্পানিতে পরিণত হয় ও শেয়ার বাজারে ছাড়ে।

১৯৭১ সালে প্রথম ডিসট্রিবিশন অফিস স্থাপন করা হয়।

১৯৭২ সালে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে রেকর্ড পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করে।

১৯৭৯ সালে ওয়ালমার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮০ সালে ওয়ালটন পরিবার প্রতিষ্ঠা করে ওয়ালটন ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন।

১৯৮০ সালে বাৎসরিক ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হয়। যা সেই সময় অন্য সব কোম্পানি থেকে দ্রুত।

১৯৮২ সালে বিশ্বসেরা ধনীর তালিকায় নাম লেখান ওয়ালটন।

১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম খেতাব পান ওয়ালটন।

১৯৯২ সালে ক্যানসারে মারা যান ওয়ালটন।

১৯৯৩ সালে সপ্তাহে ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রির রেকর্ড করে ওয়ালমার্ট।

১৯৯৪ সালে কানাডায় স্টোর চালু করে ওয়ালমার্ট।

১৯৯৬ সালে চীনে শাখা চালু হয়।

১৯৯৭ সালে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি উদযাপন করা হয়।

২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ফরচুনের তালিকায় সব কোম্পানির শীর্ষে জায়গা করে নেয় ওয়ালমার্ট।

২০০৫ সালে ঘূর্ণিঝড় হারিকেনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ১৮ মিলিয়ন ডলার সাহায্য করে।

২০০৯ সালে মাইক ডিউক সিইওর দায়িত্ব নেন। ওই সালেই বছরে ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি উদযাপন করে ওয়ালমার্ট।