ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




মাঠে ফসলের হাসি ফুটানো কৃষকের মুখে কান্না

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০১৯ ১২৪ বার পড়া হয়েছে

হাবিবুর রহমান;

চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হবে, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় এটা সম্ভব হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে এবং তারা দুধেভাতে থাকবে এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ধানের বাজারমূল্য কৃষকের হাসির বদলে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন এক মণ ধান মাত্র ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে এক মণ ধান ফলাতে কৃষককে প্রায় ৬০০ টাকা ব্যয় করতে হয়। ফলে প্রতি মণ ধানে কৃষককে ১০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

যারা আমাদের খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে, তাদের দুর্দশা নগরীর মানুষকে স্পর্শ করছে না। আমরা জানতেও চাই না তাদের হালহকিকত। বাস্তবতা হল, বাংলাদেশের কৃষকদের এখন চরম অবস্থা। শুধু কৃষিকাজ করে আর তাদের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নগর অভিমুখী মানুষের ঢল কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের গ্রামগুলো জনশূন্য হয়ে পড়বে।

প্রসঙ্গত নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই। উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু জমি থাকায় কৃষির সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক। নিজের জমিতে ধান উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াগত ঝামেলা এড়াতে চাল কিনে খাই। আমি যে চাল কিনি তার পোশাকি নাম নাজিরশাইল, ৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ ১০ কেজি চালের দাম এক মণ ধানের সমান। কিন্তু এক মণ ধান ছাঁটলে প্রায় ৩০ কেজি চাল পাওয়া যায়।

তাহলে বাকি ২০ কেজি চাল যাচ্ছে কোথায়? এর উত্তর হল- মধ্যস্বত্বভোগী, দালাল, ফড়িয়া, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেটে। বাস্তবতা হল, কৃষকের শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগের দুই ভাগই খেয়ে ফেলছে ফড়িয়ার দল। কী ভয়ংকর! জেনে রাখা ভালো, বাজারে মিনিকেট বা নাজিরশাইল নামে যেসব চাল পাওয়া যায়, তা আদতে ইরি চাল উন্নত মেশিনে কাটা ও মোমপালিশ করা। ফলে এগুলো এত ঝা চকচকে। প্রাকৃতিক চাল এত উজ্জ্বল হয় না।

এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের কৃষকদের ভারতীয় কৃষকদের মতো গণআত্মহত্যা করতে হবে। শহুরে অর্থনীতিবিদরা শুধু প্রবৃদ্ধির কাগুজে হিসাব-নিকাশ করে বিরাট পাণ্ডিত্য ফলান। যে দেশের মেরুদণ্ড এখন অবধি কৃষি, সেই বিষয়ে তাদের অনাগ্রহ হতাশাজনক। ফলে কৃষি অনাদর-অবহেলায় তলিয়ে যাচ্ছে পাতালের তলদেশে। রাষ্ট্রের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহায়তা কোনোকালেই এদেশের কৃষককুল পায়নি।

ফলে কৃষিকে সবসময় দুয়োরানী হয়ে থাকতে হয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্রের ধারাবাহিক অবহেলার কারণে বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ থেকে শ্রমিক তৈরির দেশে পরিণত হয়েছে। এটা আমাদের দেশের জন্য কতখানি সম্মানের? শুধু বিদেশে ও দেশের কারখানায় মজুরি বিক্রি করে বাংলাদেশ কি উন্নত জাতি হিসেবে পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে?
হাবিবুর রহমান : উন্নয়নকর্মী

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




মাঠে ফসলের হাসি ফুটানো কৃষকের মুখে কান্না

আপডেট সময় : ১১:৩২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০১৯

হাবিবুর রহমান;

চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হবে, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় এটা সম্ভব হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে এবং তারা দুধেভাতে থাকবে এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ধানের বাজারমূল্য কৃষকের হাসির বদলে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন এক মণ ধান মাত্র ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে এক মণ ধান ফলাতে কৃষককে প্রায় ৬০০ টাকা ব্যয় করতে হয়। ফলে প্রতি মণ ধানে কৃষককে ১০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

যারা আমাদের খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে, তাদের দুর্দশা নগরীর মানুষকে স্পর্শ করছে না। আমরা জানতেও চাই না তাদের হালহকিকত। বাস্তবতা হল, বাংলাদেশের কৃষকদের এখন চরম অবস্থা। শুধু কৃষিকাজ করে আর তাদের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নগর অভিমুখী মানুষের ঢল কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের গ্রামগুলো জনশূন্য হয়ে পড়বে।

প্রসঙ্গত নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই। উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু জমি থাকায় কৃষির সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক। নিজের জমিতে ধান উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াগত ঝামেলা এড়াতে চাল কিনে খাই। আমি যে চাল কিনি তার পোশাকি নাম নাজিরশাইল, ৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ ১০ কেজি চালের দাম এক মণ ধানের সমান। কিন্তু এক মণ ধান ছাঁটলে প্রায় ৩০ কেজি চাল পাওয়া যায়।

তাহলে বাকি ২০ কেজি চাল যাচ্ছে কোথায়? এর উত্তর হল- মধ্যস্বত্বভোগী, দালাল, ফড়িয়া, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেটে। বাস্তবতা হল, কৃষকের শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগের দুই ভাগই খেয়ে ফেলছে ফড়িয়ার দল। কী ভয়ংকর! জেনে রাখা ভালো, বাজারে মিনিকেট বা নাজিরশাইল নামে যেসব চাল পাওয়া যায়, তা আদতে ইরি চাল উন্নত মেশিনে কাটা ও মোমপালিশ করা। ফলে এগুলো এত ঝা চকচকে। প্রাকৃতিক চাল এত উজ্জ্বল হয় না।

এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের কৃষকদের ভারতীয় কৃষকদের মতো গণআত্মহত্যা করতে হবে। শহুরে অর্থনীতিবিদরা শুধু প্রবৃদ্ধির কাগুজে হিসাব-নিকাশ করে বিরাট পাণ্ডিত্য ফলান। যে দেশের মেরুদণ্ড এখন অবধি কৃষি, সেই বিষয়ে তাদের অনাগ্রহ হতাশাজনক। ফলে কৃষি অনাদর-অবহেলায় তলিয়ে যাচ্ছে পাতালের তলদেশে। রাষ্ট্রের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহায়তা কোনোকালেই এদেশের কৃষককুল পায়নি।

ফলে কৃষিকে সবসময় দুয়োরানী হয়ে থাকতে হয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্রের ধারাবাহিক অবহেলার কারণে বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ থেকে শ্রমিক তৈরির দেশে পরিণত হয়েছে। এটা আমাদের দেশের জন্য কতখানি সম্মানের? শুধু বিদেশে ও দেশের কারখানায় মজুরি বিক্রি করে বাংলাদেশ কি উন্নত জাতি হিসেবে পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে?
হাবিবুর রহমান : উন্নয়নকর্মী