ঢাকা ১২:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




‘চেইন অব কমান্ড’ রক্ষায় কঠোর বিএনপি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১৫:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০১৯ ৮২ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদ; 

গয়েশ্বরকে সতর্ক করলেন তারেক রহমান, দলীয় ফোরামে কথা বলার পরামর্শ ফখরুলের

দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। যে কোনো পরিস্থিতিতে ‘চেইন অব কমান্ড’ মেনে চলার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি সুনির্দিষ্ট বার্তা দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে টেলিফোনে সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গয়েশ্বর চন্দ্রকে দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে তা দলীয় ফোরামে বলার অনুরোধ জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলামও।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। ওই সূত্রের মতে, নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে বিএনপির আকস্মিকভাবে সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্ত ছিল অনিবার্য। একই সঙ্গে দলের মির্জা ফখরুলের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বা কৌশলও নেওয়া হয়েছে সময়ের প্রয়োজনে। উদ্ভূত পরিস্থিতি অনুধাবন না করে দলের যে কোনো নেতা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে তাকে বহিস্কারের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তে বিএনপির চার এমপিকে শপথ নিতে বলা এবং মির্জা ফখরুলের শপথ না নেওয়ার ঘটনায় দলের ভেতর তোলপাড় চলছে। ক্ষোভ-অসন্তোষও রয়েছে নেতাকর্মীর মধ্যে। এ অবস্থায় পরস্পরকে দোষারোপ করছেন শীর্ষ নেতারা। তাদের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। অধিকাংশ নেতা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে চার এমপি শপথ নিলেও মির্জা ফখরুল কেন শপথ নেননি প্রকাশ্যে তার ব্যাখ্যার দাবি করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র। তার এ বক্তব্য নিয়ে নতুন করে আলোচনার ঢেউ ওঠে। এ পরিস্থিতিতে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল রাখতে কঠোর মনোভাব দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংবাদ মাধমকে বলেন, সংসদে এমপিদের যোগদান এবং মহাসচিবকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত দলের গঠনতন্ত্রে দেওয়া ক্ষমতাবলেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিয়েছেন। তারপরও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক চলাকালে নেতাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে অনুমতি নিয়েছেন। এরপরও কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতা যদি গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন- তাতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে।

সূত্র জানিয়েছে, আগামী দু’একদিনের মধ্যেই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে তারেক রহমান স্কাইপেতে শীর্ষ নেতাদের অবহিত করবেন। একই সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও বৈঠকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন। এতে দলের ভেতর ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে বলে মনে করে হাইকমান্ড।

নাম প্রকাশ না করে বিএনপির এক নেতা গতকাল রোববার সংবাদ মাধমকে বলেন, গত শনিবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে লন্ডন থেকে স্কাইপেতে যোগাযোগ করেন তারেক রহমান। সে সময় গয়েশ্বরকে বৃহত্তর স্বার্থে গঠনতন্ত্র ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দেওয়া ক্ষমতাবলে চার এমপিকে সংসদে যোগ দেওয়া এবং মহাসচিবকে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা জানান তারেক রহমান। দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা হয়ে গয়েশ্বরের এ নিয়ে প্রকাশ্যে মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করা ঠিক হয়নি বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ভবিষ্যতে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে দলীয় ফোরামের বাইরে বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয় গয়েশ্বরকে।

এদিকে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল না তা স্বীকার করে গতকাল এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আমরা অতীতে বলেছিলাম যে, আমরা যাব না (সংসদে), সেই সিদ্ধান্তটা ওই মুহূর্তে সঠিক ছিল না- এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। একই সঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ইঙ্গিত করে দলের বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে তা দলীয় ফোরামের বাইরে না বলার জন্য অনুরোধ রাখেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা জানান, দলের ভাঙনরোধেই চার এমপিকে শপথ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তা না হলে দলের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ত। নানা সমীকরণ মাথায় রেখে ওই এমপিরা শপথ নেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের কোনোভাবেই দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করা যাচ্ছিল না। জাহিদুর রহমানের মতো তারাও সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী বহিস্কার করতে হতো। এতেও তারা বিএনপির এমপি হিসেবেই সংসদে যেতেন। সংসদের ভেতরে ও বাইরে দুটি বিএনপি তৎপরতা চলত। এমনকি ওই এমপিরা পাল্টা বিএনপি নামে দলীয় কার্যক্রম চালানোও শুরু করতে পারতেন। পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের নেতৃত্ব কেউ মানছেন না বলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতো।

ওই নেতা জানান, কার্যত বাধ্য হয়েই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চার এমপিকে শপথ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ক্ষেত্রে তা ছিল না। এতে দল ও জোটের শপথ না নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত সেটিও বজায় রাখা গেছে। পাশাপাশি ‘কারচুপি’র নির্বাচনকে পুরোপুরি বৈধতা না দেওয়ার দাবিও দেশি-বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার কৌশল বহাল রয়েছে।

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমপিদের শপথ নিতে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে কেউ একমত হননি। এ পরিস্থিতিতে শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে দলের ঐক্য ও নেতৃত্ব অটুট রাখার স্বার্থে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে একক সিদ্ধান্তটি নেন। অবশ্য তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে জরুরি প্রয়োজনে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি নিয়ে রাখেন। তারপরও নিতান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থেই নেতাদের কেউ কেউ এ নিয়ে বিষোদ্গার করছেন বলে জানান ওই নেতা। তাদের এসব কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে দলের ক্রান্তিলগ্নে সিদ্ধান্ত অমান্য করে চাপ দিয়ে শপথ নেওয়ার অনুমতি আদায় করে নেওয়া এমপিদের ভবিষ্যতে ঠিক ওইভাবেই মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান ওই নেতা।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান জাহিদ দলের সিদ্ধান্ত না মেনে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এর পর ২৯ এপ্রিল শপথ নিয়ে অধিবেশনে যোগ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত মির্জা ফখরুলই কেবল সংসদের বাইরে থেকে যান। শেষপর্যন্ত তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




‘চেইন অব কমান্ড’ রক্ষায় কঠোর বিএনপি

আপডেট সময় : ১২:১৫:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০১৯

সকালের সংবাদ; 

গয়েশ্বরকে সতর্ক করলেন তারেক রহমান, দলীয় ফোরামে কথা বলার পরামর্শ ফখরুলের

দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। যে কোনো পরিস্থিতিতে ‘চেইন অব কমান্ড’ মেনে চলার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি সুনির্দিষ্ট বার্তা দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে টেলিফোনে সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গয়েশ্বর চন্দ্রকে দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে তা দলীয় ফোরামে বলার অনুরোধ জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলামও।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। ওই সূত্রের মতে, নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে বিএনপির আকস্মিকভাবে সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্ত ছিল অনিবার্য। একই সঙ্গে দলের মির্জা ফখরুলের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বা কৌশলও নেওয়া হয়েছে সময়ের প্রয়োজনে। উদ্ভূত পরিস্থিতি অনুধাবন না করে দলের যে কোনো নেতা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে তাকে বহিস্কারের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তে বিএনপির চার এমপিকে শপথ নিতে বলা এবং মির্জা ফখরুলের শপথ না নেওয়ার ঘটনায় দলের ভেতর তোলপাড় চলছে। ক্ষোভ-অসন্তোষও রয়েছে নেতাকর্মীর মধ্যে। এ অবস্থায় পরস্পরকে দোষারোপ করছেন শীর্ষ নেতারা। তাদের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। অধিকাংশ নেতা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তবে দলীয় সিদ্ধান্তে চার এমপি শপথ নিলেও মির্জা ফখরুল কেন শপথ নেননি প্রকাশ্যে তার ব্যাখ্যার দাবি করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র। তার এ বক্তব্য নিয়ে নতুন করে আলোচনার ঢেউ ওঠে। এ পরিস্থিতিতে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল রাখতে কঠোর মনোভাব দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংবাদ মাধমকে বলেন, সংসদে এমপিদের যোগদান এবং মহাসচিবকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত দলের গঠনতন্ত্রে দেওয়া ক্ষমতাবলেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিয়েছেন। তারপরও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক চলাকালে নেতাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে অনুমতি নিয়েছেন। এরপরও কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতা যদি গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন- তাতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে।

সূত্র জানিয়েছে, আগামী দু’একদিনের মধ্যেই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে তারেক রহমান স্কাইপেতে শীর্ষ নেতাদের অবহিত করবেন। একই সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও বৈঠকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন। এতে দলের ভেতর ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে বলে মনে করে হাইকমান্ড।

নাম প্রকাশ না করে বিএনপির এক নেতা গতকাল রোববার সংবাদ মাধমকে বলেন, গত শনিবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে লন্ডন থেকে স্কাইপেতে যোগাযোগ করেন তারেক রহমান। সে সময় গয়েশ্বরকে বৃহত্তর স্বার্থে গঠনতন্ত্র ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দেওয়া ক্ষমতাবলে চার এমপিকে সংসদে যোগ দেওয়া এবং মহাসচিবকে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা জানান তারেক রহমান। দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা হয়ে গয়েশ্বরের এ নিয়ে প্রকাশ্যে মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করা ঠিক হয়নি বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ভবিষ্যতে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে দলীয় ফোরামের বাইরে বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয় গয়েশ্বরকে।

এদিকে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল না তা স্বীকার করে গতকাল এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আমরা অতীতে বলেছিলাম যে, আমরা যাব না (সংসদে), সেই সিদ্ধান্তটা ওই মুহূর্তে সঠিক ছিল না- এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। একই সঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ইঙ্গিত করে দলের বিষয়ে কোনো বক্তব্য থাকলে তা দলীয় ফোরামের বাইরে না বলার জন্য অনুরোধ রাখেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা জানান, দলের ভাঙনরোধেই চার এমপিকে শপথ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তা না হলে দলের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ত। নানা সমীকরণ মাথায় রেখে ওই এমপিরা শপথ নেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। তাদের কোনোভাবেই দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করা যাচ্ছিল না। জাহিদুর রহমানের মতো তারাও সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী বহিস্কার করতে হতো। এতেও তারা বিএনপির এমপি হিসেবেই সংসদে যেতেন। সংসদের ভেতরে ও বাইরে দুটি বিএনপি তৎপরতা চলত। এমনকি ওই এমপিরা পাল্টা বিএনপি নামে দলীয় কার্যক্রম চালানোও শুরু করতে পারতেন। পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের নেতৃত্ব কেউ মানছেন না বলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতো।

ওই নেতা জানান, কার্যত বাধ্য হয়েই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চার এমপিকে শপথ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ক্ষেত্রে তা ছিল না। এতে দল ও জোটের শপথ না নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত সেটিও বজায় রাখা গেছে। পাশাপাশি ‘কারচুপি’র নির্বাচনকে পুরোপুরি বৈধতা না দেওয়ার দাবিও দেশি-বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার কৌশল বহাল রয়েছে।

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমপিদের শপথ নিতে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে কেউ একমত হননি। এ পরিস্থিতিতে শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে দলের ঐক্য ও নেতৃত্ব অটুট রাখার স্বার্থে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে একক সিদ্ধান্তটি নেন। অবশ্য তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে জরুরি প্রয়োজনে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি নিয়ে রাখেন। তারপরও নিতান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থেই নেতাদের কেউ কেউ এ নিয়ে বিষোদ্গার করছেন বলে জানান ওই নেতা। তাদের এসব কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে দলের ক্রান্তিলগ্নে সিদ্ধান্ত অমান্য করে চাপ দিয়ে শপথ নেওয়ার অনুমতি আদায় করে নেওয়া এমপিদের ভবিষ্যতে ঠিক ওইভাবেই মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান ওই নেতা।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান জাহিদ দলের সিদ্ধান্ত না মেনে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এর পর ২৯ এপ্রিল শপথ নিয়ে অধিবেশনে যোগ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত মির্জা ফখরুলই কেবল সংসদের বাইরে থেকে যান। শেষপর্যন্ত তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।