ঢাকা ০৮:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




শিশু ‘কবিরাজে’র ‌‌পানি পড়া নিয়ে তোলপাড়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:২৬:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ৬৮ বার পড়া হয়েছে

নওগাঁ প্রতিনিধি; 

নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার পশ্চিমে সরিষপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢোকার সময় চোখে পড়ল রাস্তার দু’ধারে মাইক্রোবাস, অটো ও ভ্যান সারি সারি রাখা। দীপু ‘কবিরাজে’র হাজিপাড়ার বাড়ি এখান থেকে আরও প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। এখান থেকেই তার বাড়ি পর্যন্ত মানুষের ভিড়।

হাজিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, আমবাগানের মধ্যে একটি টিনের ঘরের বারান্দায় বসে বিভিন্ন স্থান থেকে আগতদের পানি পড়া দিচ্ছে সে। তার সামনে একটি দানবাক্স মসজিদের জন্য এবং বাইরে আরেকটি দানবাক্স মন্দিরের জন্য রাখা আছে। যারা ‘চিকিৎসা’ নিচ্ছেন তারা নিজেদের ইচ্ছামতো দান করছেন।

নয় বছর বয়সী শিশু দীপুর যখন খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা, তখন তাকে করতে হচ্ছে ‘কবিরাজি’। তার দেওয়া পানি পড়ায় নিঃসন্তান নারী অন্তঃসত্ত্বা হন- এমন গুজবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অন্ধবিশ্বাসে প্রতিদিন শত শত দম্পতি ছুটে আসছেন তার কাছে। আর তাকে কবিরাজ সাজিয়ে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

হাজিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ওই টিনের ঘরের আশপাশে অন্তত দেড় হাজার নারী হাতে ব্যাগ নিয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। ব্যাগে আছে একটি করে পানির বোতল। সঙ্গে স্বামী বা আত্মীয় থাকায় এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়েছে। আমবাগানের মধ্যেই মাদুর পেতে অনেকে শুয়ে-বসে আছেন। অনেকেই আবার রান্নার জন্য খাসি, মুরগি জবাই করছেন। আবার অনেকে সেই রান্না জোগান দিতে পেঁয়াজ-রসুন বাছাই করছেন। ফজরের নামাজের পর শুরু হয় পানি পড়া দেওয়া। কবিরাজের দরজায় আলম নামে এক যুবক পাহারা দিচ্ছেন। নারীরা একে একে কবিরাজের কাছে যাচ্ছেন আর ২-৩ মিনিট পর পানি পড়া নিয়ে বেরিয়ে আসছেন। কিছু সময় সেখানে অবস্থান করে দেখা যায় মজার দৃশ্য। পানি পড়া দিতে দিতে ক্লান্ত দীপু কিছু সময় পর পর তার আসন ছেড়ে বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করছে। কখনও আবার দোকান থেকে খাবার কিনে খাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সন্তান নিয়ে অন্যের জমিতে টিনের কুঁড়েঘর তৈরি করে থাকেন দীপুর মা দেলেয়ারা বেগম। স্বামী অনেক আগে ছেড়ে চলে গেছে। বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন আর কাজ করতে হয় না। গ্রামের সমসের আলী হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে দীপু। তবে কোরআন পড়া এখনও শুরু হয়নি।

দীপুর বয়স নয় বছর হলেও ছয় বছর বয়স থেকে স্বল্প পরিসরে পানি পড়া দিয়ে আসছে সে। তবে তিন মাস ধরে তার কাছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত নারী-পুরুষ আসছেন। প্রতি শুক্রবার পানি পড়া দেওয়া হয়। একজন নারীকে তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ চিকিৎসা নিতে হয়। এর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হলে ডাক্তার দিয়ে কোনো চিকিৎসা বা আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো যাবে না বলেও নিষেধ করা হয়। কবিরাজি চিকিৎসা নিতে খরচ হয় তাবিজ ১৩০ টাকা এবং কবিরাজি ফি ১০ টাকা। যাদের মনোবাসনা পূরণ হয় তারা কবিরাজের বাড়িতে এসে খাসি জবাই করে উপস্থিত সবার মাঝে খাবার বিতরণ করেন।

দীপুর মা দেলেয়ারা বেগম জানান, দীপুর ওপর জিনের আসর আছে। তার প্রভাবেই সে চিকিৎসা দিতে পারে।

দুবলহাটী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, মানুষের সঙ্গে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। এলাকার একটা পক্ষ এটাকে সমর্থন দিচ্ছে, অন্যপক্ষ এর বিপক্ষে। এ নিয়ে যে কোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. মুমিনুল হক বলেন, পানি পড়া খেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই।

নওগাঁ সদর থানার ওসি আবদুল হাই বলেন, ছদ্মবেশে ঘটনাস্থলে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এসব বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




শিশু ‘কবিরাজে’র ‌‌পানি পড়া নিয়ে তোলপাড়

আপডেট সময় : ১২:২৬:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

নওগাঁ প্রতিনিধি; 

নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার পশ্চিমে সরিষপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢোকার সময় চোখে পড়ল রাস্তার দু’ধারে মাইক্রোবাস, অটো ও ভ্যান সারি সারি রাখা। দীপু ‘কবিরাজে’র হাজিপাড়ার বাড়ি এখান থেকে আরও প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। এখান থেকেই তার বাড়ি পর্যন্ত মানুষের ভিড়।

হাজিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, আমবাগানের মধ্যে একটি টিনের ঘরের বারান্দায় বসে বিভিন্ন স্থান থেকে আগতদের পানি পড়া দিচ্ছে সে। তার সামনে একটি দানবাক্স মসজিদের জন্য এবং বাইরে আরেকটি দানবাক্স মন্দিরের জন্য রাখা আছে। যারা ‘চিকিৎসা’ নিচ্ছেন তারা নিজেদের ইচ্ছামতো দান করছেন।

নয় বছর বয়সী শিশু দীপুর যখন খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা, তখন তাকে করতে হচ্ছে ‘কবিরাজি’। তার দেওয়া পানি পড়ায় নিঃসন্তান নারী অন্তঃসত্ত্বা হন- এমন গুজবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অন্ধবিশ্বাসে প্রতিদিন শত শত দম্পতি ছুটে আসছেন তার কাছে। আর তাকে কবিরাজ সাজিয়ে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

হাজিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ওই টিনের ঘরের আশপাশে অন্তত দেড় হাজার নারী হাতে ব্যাগ নিয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। ব্যাগে আছে একটি করে পানির বোতল। সঙ্গে স্বামী বা আত্মীয় থাকায় এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়েছে। আমবাগানের মধ্যেই মাদুর পেতে অনেকে শুয়ে-বসে আছেন। অনেকেই আবার রান্নার জন্য খাসি, মুরগি জবাই করছেন। আবার অনেকে সেই রান্না জোগান দিতে পেঁয়াজ-রসুন বাছাই করছেন। ফজরের নামাজের পর শুরু হয় পানি পড়া দেওয়া। কবিরাজের দরজায় আলম নামে এক যুবক পাহারা দিচ্ছেন। নারীরা একে একে কবিরাজের কাছে যাচ্ছেন আর ২-৩ মিনিট পর পানি পড়া নিয়ে বেরিয়ে আসছেন। কিছু সময় সেখানে অবস্থান করে দেখা যায় মজার দৃশ্য। পানি পড়া দিতে দিতে ক্লান্ত দীপু কিছু সময় পর পর তার আসন ছেড়ে বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করছে। কখনও আবার দোকান থেকে খাবার কিনে খাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সন্তান নিয়ে অন্যের জমিতে টিনের কুঁড়েঘর তৈরি করে থাকেন দীপুর মা দেলেয়ারা বেগম। স্বামী অনেক আগে ছেড়ে চলে গেছে। বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন আর কাজ করতে হয় না। গ্রামের সমসের আলী হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে দীপু। তবে কোরআন পড়া এখনও শুরু হয়নি।

দীপুর বয়স নয় বছর হলেও ছয় বছর বয়স থেকে স্বল্প পরিসরে পানি পড়া দিয়ে আসছে সে। তবে তিন মাস ধরে তার কাছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত নারী-পুরুষ আসছেন। প্রতি শুক্রবার পানি পড়া দেওয়া হয়। একজন নারীকে তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ চিকিৎসা নিতে হয়। এর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হলে ডাক্তার দিয়ে কোনো চিকিৎসা বা আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো যাবে না বলেও নিষেধ করা হয়। কবিরাজি চিকিৎসা নিতে খরচ হয় তাবিজ ১৩০ টাকা এবং কবিরাজি ফি ১০ টাকা। যাদের মনোবাসনা পূরণ হয় তারা কবিরাজের বাড়িতে এসে খাসি জবাই করে উপস্থিত সবার মাঝে খাবার বিতরণ করেন।

দীপুর মা দেলেয়ারা বেগম জানান, দীপুর ওপর জিনের আসর আছে। তার প্রভাবেই সে চিকিৎসা দিতে পারে।

দুবলহাটী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, মানুষের সঙ্গে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। এলাকার একটা পক্ষ এটাকে সমর্থন দিচ্ছে, অন্যপক্ষ এর বিপক্ষে। এ নিয়ে যে কোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. মুমিনুল হক বলেন, পানি পড়া খেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই।

নওগাঁ সদর থানার ওসি আবদুল হাই বলেন, ছদ্মবেশে ঘটনাস্থলে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এসব বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।