ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




টার্গেট ৭০১ নারী স্বীকার, ২৮৬ জনের সর্বনাশ করে শ্রীঘরে ভয়ংকর জাকির!   

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩১:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৩১ বার পড়া হয়েছে

হাফিজুর রহমান শফিক;   

ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার রসু খা’র নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই? যার ইচ্ছা ছিলো ধর্ষণ আর খুন করা। সেই রসু খার ভয়ংকর ভয়াবহতাও ছাড়িয়ে গেছে প্রতারক জাকিরের নারী লোভী হিংস্রতা।
কখনো তিনি পরিচয় দেন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের এমডি হিসেবে, কখনো বা নামিদামি করপোরেট হাউসের জিএম। চলাফেরায় বেশ ধুপদুরস্ত ভিআইপি । আসলে সে পৃথিবীর ভয়ংকর প্রতারকদের ছাড়িয়ে যাওয়ার দারপ্রান্তেই পৌঁছে গিয়েছিল। কথাবার্তায় ঝলকে উঠে হাই ক্লাস সোসাইটির ফুলঝুরি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম রাব্বী হোসেন চৌধুরী। তবে পরিচয়পত্রটি নকল; নিজের মর্জি মতো নাম-তথ্যাদি যুক্ত করে বানিয়ে নেওয়া। আর এ সব অভিজাত ও ধনাঢ্য পোশাকের নাম-ধাম-পরিচয় ও চাল-চলনের নেপথ্য উদ্দেশ্যটি খুবই কুৎসিত।

তার টার্গেটে ছিল সমাজের প্রতিষ্ঠিত নারীরা। কথার মোহে ফেলে এ ব্যক্তি প্রথমে তরুণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ। এখানেই শেষ নয়। এরপর শুরু হতো দ্বিতীয় পর্বভয়ভীতি দেখিয়ে ভূক্তভোগীর কাছ থেকে অর্থসহ মূল্যবান সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া। একজন বা দুজন নয়, ২৮৬ তরুণীর সর্বনাশ করে তাদের সর্বশান্ত করে ছেড়েছেন এই সিরিয়াল নারী লোভী প্রতারক । আর তার লক্ষ্যটি শুনলে থ বনে যেতে হয়। লক্ষ্য ছিল ৭শ তরুণীকে ধর্ষণের পর সৌদি আরবে যাবেন হজ্ব করে পরিশুদ্ধ হতে।

বিকৃত মানসিকতার প্রচ- ধূর্ত এ প্রতারকের প্রকৃত নাম জাকির হোসেন বেপারি। গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেদিনই ধর্ষণের অভিযোগে এক তরুণী মিরপুর মডেল থানায় জাকিরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ সময় থানায় উপস্থিত ছিলেন জাকিরের প্রতারণার শিকার আরও চার নারী। তারা সবাই চাকরিজীবী। পরবর্তী সময়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জাকির তার প্রতারণার জালের সব কিছু খুলে বলেন।

পুলিশ জানায়, প্রতারণা ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে জাকিরের রয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সংঘবদ্ধ ওই চক্রে রয়েছে নকল কাজী ও ইমাম। এ ছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে জাকির তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এভাবে বিয়ের নামে গত এক বছরে সে ২১ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নারীকে ধর্ষণ করেছেন। এর পর অন্তরঙ্গ ছবি তুলে সেগুলো ইন্টারনেটে ছাড়ার হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ও ল্যাপটপ। সম্প্রতি ফেসবুকে বিয়ের নামে আরেকটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই প্রতারণার শিকার নারীরা তার কার্যক্রম বুঝে ফেলেন। তারা এ নিয়ে ফেসবুকে জাকিরের বিরুদ্ধে একত্রিতও হন। বিষয়টি বুঝতে পেরে সম্প্রতি জাকির দাড়ি কেটে ফেলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ৮ নভেম্বর ভুক্তভোগী কয়েকজন তরুণী এক হয়ে তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।

প্রতারণার শিকার এক তরুণী জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে চার মাস আগে জাকিরের সঙ্গে তার পরিচয়। এর পর ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার সঙ্গে জাকির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত ৫ অক্টোবর নিজস্ব সিন্ডিকেটের হুজুর ডেকে তাকে বিয়েও করেন। এর মধ্যেই নানা বিপদের কথা বলে জাকির তার কাছ থেকে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেন।

জাকিরের প্রতারণার শিকার রাজধানীর গুলশান, উত্তরা, মিরপুর, বারিধারা, মালিবাগ, দক্ষিণখান, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী ১৭ ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই জাকিরকে শনাক্ত করে তাকে প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভুক্তভোগী তরুণীদের মাধ্যমে পাওয়া গেছে জাকিরের তিনটি বিয়ের কাবিনসহ তার প্রতারণায় ব্যবহৃত অসংখ্য ছবি, ফেসবুকের চ্যাটবক্সে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ও ভিডিওক্লিপ। পুলিশের কাছেও বিয়ের নামে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন জাকির।

এদিকে জাকিরের বিরুদ্ধে যে তরুণী মামলা করেছেন, তিনি অভিযোগ করেনওই প্রতারকের সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্নভাবে তাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন। নইলে তার মুখ অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়া হবে এবং অন্তরঙ্গ ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা। বিষয়টি ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার এসআই জামিউর ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জাকির বিয়ের নামে বহু নারীর সঙ্গে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। যার কিছু তথ্যপ্রমাণও পাওয়া গেছে। আদালতের নির্দেশে জাকির বর্তমানে কারাগারে আছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




টার্গেট ৭০১ নারী স্বীকার, ২৮৬ জনের সর্বনাশ করে শ্রীঘরে ভয়ংকর জাকির!   

আপডেট সময় : ১১:৩১:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

হাফিজুর রহমান শফিক;   

ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার রসু খা’র নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই? যার ইচ্ছা ছিলো ধর্ষণ আর খুন করা। সেই রসু খার ভয়ংকর ভয়াবহতাও ছাড়িয়ে গেছে প্রতারক জাকিরের নারী লোভী হিংস্রতা।
কখনো তিনি পরিচয় দেন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের এমডি হিসেবে, কখনো বা নামিদামি করপোরেট হাউসের জিএম। চলাফেরায় বেশ ধুপদুরস্ত ভিআইপি । আসলে সে পৃথিবীর ভয়ংকর প্রতারকদের ছাড়িয়ে যাওয়ার দারপ্রান্তেই পৌঁছে গিয়েছিল। কথাবার্তায় ঝলকে উঠে হাই ক্লাস সোসাইটির ফুলঝুরি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম রাব্বী হোসেন চৌধুরী। তবে পরিচয়পত্রটি নকল; নিজের মর্জি মতো নাম-তথ্যাদি যুক্ত করে বানিয়ে নেওয়া। আর এ সব অভিজাত ও ধনাঢ্য পোশাকের নাম-ধাম-পরিচয় ও চাল-চলনের নেপথ্য উদ্দেশ্যটি খুবই কুৎসিত।

তার টার্গেটে ছিল সমাজের প্রতিষ্ঠিত নারীরা। কথার মোহে ফেলে এ ব্যক্তি প্রথমে তরুণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ। এখানেই শেষ নয়। এরপর শুরু হতো দ্বিতীয় পর্বভয়ভীতি দেখিয়ে ভূক্তভোগীর কাছ থেকে অর্থসহ মূল্যবান সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া। একজন বা দুজন নয়, ২৮৬ তরুণীর সর্বনাশ করে তাদের সর্বশান্ত করে ছেড়েছেন এই সিরিয়াল নারী লোভী প্রতারক । আর তার লক্ষ্যটি শুনলে থ বনে যেতে হয়। লক্ষ্য ছিল ৭শ তরুণীকে ধর্ষণের পর সৌদি আরবে যাবেন হজ্ব করে পরিশুদ্ধ হতে।

বিকৃত মানসিকতার প্রচ- ধূর্ত এ প্রতারকের প্রকৃত নাম জাকির হোসেন বেপারি। গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেদিনই ধর্ষণের অভিযোগে এক তরুণী মিরপুর মডেল থানায় জাকিরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ সময় থানায় উপস্থিত ছিলেন জাকিরের প্রতারণার শিকার আরও চার নারী। তারা সবাই চাকরিজীবী। পরবর্তী সময়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জাকির তার প্রতারণার জালের সব কিছু খুলে বলেন।

পুলিশ জানায়, প্রতারণা ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে জাকিরের রয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সংঘবদ্ধ ওই চক্রে রয়েছে নকল কাজী ও ইমাম। এ ছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে জাকির তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এভাবে বিয়ের নামে গত এক বছরে সে ২১ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নারীকে ধর্ষণ করেছেন। এর পর অন্তরঙ্গ ছবি তুলে সেগুলো ইন্টারনেটে ছাড়ার হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ও ল্যাপটপ। সম্প্রতি ফেসবুকে বিয়ের নামে আরেকটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই প্রতারণার শিকার নারীরা তার কার্যক্রম বুঝে ফেলেন। তারা এ নিয়ে ফেসবুকে জাকিরের বিরুদ্ধে একত্রিতও হন। বিষয়টি বুঝতে পেরে সম্প্রতি জাকির দাড়ি কেটে ফেলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ৮ নভেম্বর ভুক্তভোগী কয়েকজন তরুণী এক হয়ে তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।

প্রতারণার শিকার এক তরুণী জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে চার মাস আগে জাকিরের সঙ্গে তার পরিচয়। এর পর ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার সঙ্গে জাকির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত ৫ অক্টোবর নিজস্ব সিন্ডিকেটের হুজুর ডেকে তাকে বিয়েও করেন। এর মধ্যেই নানা বিপদের কথা বলে জাকির তার কাছ থেকে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেন।

জাকিরের প্রতারণার শিকার রাজধানীর গুলশান, উত্তরা, মিরপুর, বারিধারা, মালিবাগ, দক্ষিণখান, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী ১৭ ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই জাকিরকে শনাক্ত করে তাকে প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভুক্তভোগী তরুণীদের মাধ্যমে পাওয়া গেছে জাকিরের তিনটি বিয়ের কাবিনসহ তার প্রতারণায় ব্যবহৃত অসংখ্য ছবি, ফেসবুকের চ্যাটবক্সে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ও ভিডিওক্লিপ। পুলিশের কাছেও বিয়ের নামে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন জাকির।

এদিকে জাকিরের বিরুদ্ধে যে তরুণী মামলা করেছেন, তিনি অভিযোগ করেনওই প্রতারকের সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্নভাবে তাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন। নইলে তার মুখ অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়া হবে এবং অন্তরঙ্গ ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা। বিষয়টি ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার এসআই জামিউর ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জাকির বিয়ের নামে বহু নারীর সঙ্গে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। যার কিছু তথ্যপ্রমাণও পাওয়া গেছে। আদালতের নির্দেশে জাকির বর্তমানে কারাগারে আছেন।