ঢাকা ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




বয়সের ভারে মরতে বসেছে বিজেএমসির ২৬ পাটকল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪২:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ৮৩ বার পড়া হয়েছে

শফিক শান্ত;
বয়সের ভারে ধুঁকে ধুঁকে মরতে বসেছে সরকারি পাটকলগুলো। বাংলাদেশ জুটমিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন এসব কারখানার বয়স অর্ধশতাব্দীর বেশি। এদের কোনো কোনোটি প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছরই কাটিয়ে দিয়েছে কেবল চটের বস্তা বানিয়ে। পুরনো হতে হতে উৎপাদন ক্ষমতা নেমে এসেছে মাত্র ৩০ শতাংশে। আর্থিক কারণে এসব কারখানা ভারসাম্যতা, আধুনিকীকরণ, সংস্কার ও সম্প্রসারণ (বিএমআরই) করার উদ্যোগ নিয়েও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ফলে স্বাধীনতার ৪৭ বছরের ৪৫ বছরই লোকসান দিয়েছে বিজেএমসি। ঋণের ভারে জর্জরিত এসব কারখানা শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারে না। পরিশোধ করতে পারে না কৃষকের বকেয়া। এসব কারণে কথা উঠেছে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে থাকা এসব পাটকলের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিজেএমসির অধীন সরকারি ২৬টি পাটকলের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খুলনার খালিশপুর জুট মিল ও ক্রিসেন্ট জুট মিল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালে। এরপর ১৯৫৩ সালে ঢাকার ডেমরায় প্রতিষ্ঠিত হয় লতিফ বাওয়ানি জুট মিলস লিমিটেড। ১৯৫৪ সালে ডেমরায় করিম জুট মিলস লিমিটেড, চট্টগ্রামের আমিন জুট মিলস এবং খুলনার প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া খুলনার খালিশপুরে স্টার জুট মিলস ১৯৫৬ সালে, সিরাজগঞ্জের রায়পুরে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় জুট মিলস লিমিটেড, ১৯৬২ সালে নরসিংদীতে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএমসি জুট মিল ও বাংলাদেশ জুট মিল, ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় গুল আহমেদ জুট মিলস লিমিটেড। অন্যগুলো প্রতিষ্ঠিত হয় দেশ স্বাধীনের দু-এক বছর আগে ও পরে।
জানা যায়, বেশির ভাগ মেশিনারিজ পুরনো হয়ে যাওয়ায় সরকারি পাটকলগুলোর উৎপাদন কমে বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে নেমেছে। ফলে লোকসানের কবল থেকে বের হতে পারছে না বিজেএমসির পাটকলগুলো। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মধ্যে মাত্র দুই বছর লাভের মুখ দেখে বিজেএমসি। বাকি ৪৫ বছরই লোকসান গুনেছে সরকারি পাটকলগুলো। অথচ বেসরকারি মিলগুলো ৯০ শতাংশ উৎপাদনে সক্ষম এবং প্রতিনিয়ত লাভ করছে।

এ দিকে পাটকলগুলোর মেশিনারিজ পুরনো হয়ে যাওয়ায় তার সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৪ সালে। সিদ্ধান্ত হয় কারখানাগুলো ভারসাম্যতা, আধুনিকীকরণ, সংস্কার ও সম্প্রসারণ (বিএমআরই) করার। ২৪টি মিল বিএমআরই করতে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে গত পাঁচ বছরে সে কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। আশার কথা, কারখানা বিএমআরই করার বিষয়ে আবারও নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রামের আমিন জুট মিল, ঢাকার করিম জুট মিল ও খুলনার প্লাটিনাম জুট মিল আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে নতুন করে। এ লক্ষ্যে চীন সরকারের মালিকানাধীন ‘চায়না টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিয়াল করপোরেশন ফর ফরেন ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের সাথে চুক্তি করেছে বিজেএমসি।

বিজেএমসি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিজেএমসি প্রতিষ্ঠাকালে এর অধীন জাতীয়করণকৃত পাটকলের সংখ্যা ছিল ৭৬টি। বর্তমানে ২৬টি পাটকল এর অধীন। এর মধ্যে নন-জুট কারখানা রয়েছে তিনটি। লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখার কারণ ব্যাখ্যা করে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, বিজেএমসি বর্তমানে পাট উৎপাদিত এলাকাগুলোতে সর্বমোট ১৬০টি পাটক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করছে। বৃহত্তম পাটপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিজেএমসি প্রধানত হেসিয়ান কাপড়, ব্যাগ, বস্তার কাপড়, বস্তা, সুতা, জিও-জুট, কম্বল, মোটা কাপড়, সিবিসি ইত্যাদি প্রস্তুত করে থাকে, যা সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক তন্তুজাত। বিজেএমসির বিক্রয় বিভাগ এসব পণ্য দেশী ও বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। এভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিজেএমসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জনবলের দিক থেকে বিজেএমসি বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ সংস্থায় প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক এবং সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি নিযুক্ত রয়েছেন। পরোক্ষভাবে তাদের মাধ্যমে প্রায় ৬০ লাখ কৃষি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ দেশের পাঁচ কোটিরও অধিক মানুষ পাট ও পাটশিল্পের ওপর নির্ভরশীল বলে দাবি বিজেএমসির।

এ দিকে সোনালি আঁশখ্যাত পাটের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে সময়ের উপযোগী বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণে ব্যর্থতায় এ শিল্পের আশানুরূপ সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি পাটকলগুলোর আধুনিকায়নের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার আহ্বান জানান তারা। তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের পাটপণ্যের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে হবে। গত ছয় বছরে ভারতের চেয়ে আমাদের পাটপণ্যের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, এ অগ্রগতিগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে বাজারমূল্য ঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিজেএমসিকে লাভজনক করতে হলে এর খোলনলচে পাল্টে ফেলতে হবে। ৬০ থেকে ৭০ বছরের পুরনো মেশিনারিজ দিয়ে এখন আর মিল চলতে পারে না। তা ছাড়া সরকারি মিলগুলো এখনো তাদের উৎপাদন চটের বস্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। অথচ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের বহুমুখী পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বেসরকারি মিলমালিকরা যেখানে এসব বহুমুখী পাটপণ্য রফতানি করে কুলাতে পারছেন না, সেখানে সরকারি মিলে এসব পণ্য উৎপাদনের কোনো উদ্যোগ নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বয়সের ভারে মরতে বসেছে বিজেএমসির ২৬ পাটকল

আপডেট সময় : ১১:৪২:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৯

শফিক শান্ত;
বয়সের ভারে ধুঁকে ধুঁকে মরতে বসেছে সরকারি পাটকলগুলো। বাংলাদেশ জুটমিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন এসব কারখানার বয়স অর্ধশতাব্দীর বেশি। এদের কোনো কোনোটি প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছরই কাটিয়ে দিয়েছে কেবল চটের বস্তা বানিয়ে। পুরনো হতে হতে উৎপাদন ক্ষমতা নেমে এসেছে মাত্র ৩০ শতাংশে। আর্থিক কারণে এসব কারখানা ভারসাম্যতা, আধুনিকীকরণ, সংস্কার ও সম্প্রসারণ (বিএমআরই) করার উদ্যোগ নিয়েও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ফলে স্বাধীনতার ৪৭ বছরের ৪৫ বছরই লোকসান দিয়েছে বিজেএমসি। ঋণের ভারে জর্জরিত এসব কারখানা শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারে না। পরিশোধ করতে পারে না কৃষকের বকেয়া। এসব কারণে কথা উঠেছে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে থাকা এসব পাটকলের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিজেএমসির অধীন সরকারি ২৬টি পাটকলের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খুলনার খালিশপুর জুট মিল ও ক্রিসেন্ট জুট মিল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালে। এরপর ১৯৫৩ সালে ঢাকার ডেমরায় প্রতিষ্ঠিত হয় লতিফ বাওয়ানি জুট মিলস লিমিটেড। ১৯৫৪ সালে ডেমরায় করিম জুট মিলস লিমিটেড, চট্টগ্রামের আমিন জুট মিলস এবং খুলনার প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া খুলনার খালিশপুরে স্টার জুট মিলস ১৯৫৬ সালে, সিরাজগঞ্জের রায়পুরে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় জুট মিলস লিমিটেড, ১৯৬২ সালে নরসিংদীতে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএমসি জুট মিল ও বাংলাদেশ জুট মিল, ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় গুল আহমেদ জুট মিলস লিমিটেড। অন্যগুলো প্রতিষ্ঠিত হয় দেশ স্বাধীনের দু-এক বছর আগে ও পরে।
জানা যায়, বেশির ভাগ মেশিনারিজ পুরনো হয়ে যাওয়ায় সরকারি পাটকলগুলোর উৎপাদন কমে বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে নেমেছে। ফলে লোকসানের কবল থেকে বের হতে পারছে না বিজেএমসির পাটকলগুলো। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মধ্যে মাত্র দুই বছর লাভের মুখ দেখে বিজেএমসি। বাকি ৪৫ বছরই লোকসান গুনেছে সরকারি পাটকলগুলো। অথচ বেসরকারি মিলগুলো ৯০ শতাংশ উৎপাদনে সক্ষম এবং প্রতিনিয়ত লাভ করছে।

এ দিকে পাটকলগুলোর মেশিনারিজ পুরনো হয়ে যাওয়ায় তার সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৪ সালে। সিদ্ধান্ত হয় কারখানাগুলো ভারসাম্যতা, আধুনিকীকরণ, সংস্কার ও সম্প্রসারণ (বিএমআরই) করার। ২৪টি মিল বিএমআরই করতে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে গত পাঁচ বছরে সে কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। আশার কথা, কারখানা বিএমআরই করার বিষয়ে আবারও নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রামের আমিন জুট মিল, ঢাকার করিম জুট মিল ও খুলনার প্লাটিনাম জুট মিল আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে নতুন করে। এ লক্ষ্যে চীন সরকারের মালিকানাধীন ‘চায়না টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিয়াল করপোরেশন ফর ফরেন ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের সাথে চুক্তি করেছে বিজেএমসি।

বিজেএমসি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিজেএমসি প্রতিষ্ঠাকালে এর অধীন জাতীয়করণকৃত পাটকলের সংখ্যা ছিল ৭৬টি। বর্তমানে ২৬টি পাটকল এর অধীন। এর মধ্যে নন-জুট কারখানা রয়েছে তিনটি। লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখার কারণ ব্যাখ্যা করে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, বিজেএমসি বর্তমানে পাট উৎপাদিত এলাকাগুলোতে সর্বমোট ১৬০টি পাটক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করছে। বৃহত্তম পাটপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিজেএমসি প্রধানত হেসিয়ান কাপড়, ব্যাগ, বস্তার কাপড়, বস্তা, সুতা, জিও-জুট, কম্বল, মোটা কাপড়, সিবিসি ইত্যাদি প্রস্তুত করে থাকে, যা সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক তন্তুজাত। বিজেএমসির বিক্রয় বিভাগ এসব পণ্য দেশী ও বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। এভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিজেএমসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জনবলের দিক থেকে বিজেএমসি বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ সংস্থায় প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক এবং সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি নিযুক্ত রয়েছেন। পরোক্ষভাবে তাদের মাধ্যমে প্রায় ৬০ লাখ কৃষি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ দেশের পাঁচ কোটিরও অধিক মানুষ পাট ও পাটশিল্পের ওপর নির্ভরশীল বলে দাবি বিজেএমসির।

এ দিকে সোনালি আঁশখ্যাত পাটের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে সময়ের উপযোগী বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণে ব্যর্থতায় এ শিল্পের আশানুরূপ সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি পাটকলগুলোর আধুনিকায়নের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার আহ্বান জানান তারা। তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের পাটপণ্যের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে হবে। গত ছয় বছরে ভারতের চেয়ে আমাদের পাটপণ্যের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, এ অগ্রগতিগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে বাজারমূল্য ঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিজেএমসিকে লাভজনক করতে হলে এর খোলনলচে পাল্টে ফেলতে হবে। ৬০ থেকে ৭০ বছরের পুরনো মেশিনারিজ দিয়ে এখন আর মিল চলতে পারে না। তা ছাড়া সরকারি মিলগুলো এখনো তাদের উৎপাদন চটের বস্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। অথচ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের বহুমুখী পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বেসরকারি মিলমালিকরা যেখানে এসব বহুমুখী পাটপণ্য রফতানি করে কুলাতে পারছেন না, সেখানে সরকারি মিলে এসব পণ্য উৎপাদনের কোনো উদ্যোগ নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।