ঢাকা ০৪:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন Logo রাশিয়ায় কনসার্ট হলে বন্দুক হামলার নিহত ৬০, দায় স্বীকার আইএসের




শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে সাংবাদিক সহ আহত ৫০

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪০:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০১৯ ৯০ বার পড়া হয়েছে

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি; নারী এক শ্রমিককে মেরে হাত-পা বেঁধে তার লাশ বাথরুম থেকে গুম করা হয়েছে এ ধরনের গুজবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার টিপরদী এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের সংঘর্ষে এডিশনাল এসপি, সাংবাদিকসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন।

এ গুজবের কারণে বৃহস্পতিবার সকালে টিপরদী এলাকায় অবস্থিত চৈতি কম্পোজিটের শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে।

একপর্যায়ে শ্রমিকরা সহকর্মী নারী শ্রমিকের লাশ না দেখানোর প্রতিবাদে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ও যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো টিপরদী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এ সময় ৪১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ১০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মহাসড়কের দুই প্রান্তে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কবলে পড়ে এ সময় শতশত পরিবহন যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৭ জন পুলিশ সদস্য, ৩ সাংবাদিক ও শ্রমিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হন।পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ২ দিনের ছুটি ঘোষণা করে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোনারগাঁ পৌরসভার টিপরদী এলাকায় অবস্থিত পোশাক উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান চৈতি কম্পোজিটের বিভিন্ন সেকশনে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারকানার তৃতীয়তলায় সুইং সেকশনের নারী শ্রমিক রিনা আক্তারকে টয়লেটের ভেতরে পড়ে থাকতে দেখেন তার সহকর্মী কয়েকজন নারী শ্রমিক।

এ সময় রিনা আক্তারকে সেখানে পড়ে থাকতে দেখে অচেতন হয়ে পড়েন শেফালী আক্তার ও নাজমা আক্তার নামের দুই শ্রমিক। খবর পেয়ে ওই সেকশনের এজিএমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা টয়লেট থেকে নারী শ্রমিক রিনা আক্তারকে উদ্ধারের পর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।

এ ঘটনার পর নারী শ্রমিক রিনা আক্তারকে মেরে তার হাত-পা বেঁধে লাশ বাথরুম থেকে গুম করার উদ্দেশ্যে গাড়িতে তুলে অন্যত্র নেয়া হয়েছে। এ ধরনের গুজব পুরো কারখানা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে কারখানায় কর্মরত শত শত শ্রমিক তাদের কাজ বর্জন করে কারখানা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে ও ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সহকর্মী নারী শ্রমিকের লাশ না দেখানোর প্রতিবাদে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) মো. খোরশেদ আলম, সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আলমগীর হোসেন ও কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের নেতৃত্বে একাধিক পুলিশের দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা এ সময় কারখানা কর্তৃপক্ষের ১টি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে থাকা ১০-১৫টি যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো টিপরদী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এ সময় ৪১ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও ১০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

এ সময় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) মো. খোরশেদ আলম, সোনারগাঁ থানার ওসি (অপারেশন) আলমগীর হোসেন, এসআই আবুল হাসান, কনস্টেবল শাহ আলম, রাখাল সরকার, শিল্প পুলিশের কনস্টেবল হযরত, রুবেল, সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, ইউসুফ আলী, মোবারক হোসেন, কারখানা শ্রমিক রুমা আক্তার, বিথী আক্তার, শাহ-আলম মিয়া, শফিক, হৃদয় মিয়া, আলামিন, শহিদ মিয়াসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, কারখানার একজন কোয়ালিটি কন্ট্রোলার মাদকাসক্ত হয়ে অনেক সময় বিভিন্ন শ্রমিকের ওপর বিনা কারণে নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের শিকার হয়ে রিনা আক্তার নামে এক শ্রমিক মারা গেছে ও তার লাশ বাথরুমে পড়ে আছে এমন সংবাদের খবর পেয়ে শ্রমিকরা সেখানে দৌড়ে যান।

এ সময় কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তা রিনা আক্তার নামের ওই শ্রমিককে কারখানার ভেতর থেকে সরিয়ে অন্যত্র একটি গাড়িযোগে নিয়ে যায়। এ সময় শ্রমিকরা তাদের কাজ বর্জন করে ওই শ্রমিককে দেখানোর দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

চৈতি কম্পোজিটের ডিজিএম (প্রশাসন) মিজানুর রহমান জানান, সকালে নাশতা না খেয়ে সুইং সেকশনের নারী শ্রমিক রিনা আক্তার কারখানায় কাজে যোগদান করে। টয়লেটে যাওয়ার পর সুগার ফল্ট হলে সে সেখানে পড়ে যায়। এ ঘটনা দুই নারী শ্রমিক দেখার দেখার পর রিনা আক্তার মারা গেছেন মনে করে তারা অচেতন হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, রিনা আক্তারকে মেরে হাত-পা বেঁধে তার লাশ গুম করা হয়েছে এমন গুজবে শ্রমিকরা তাদের কাজ বর্জন করে মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। উত্তেজিত শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও তারা তা শুনেনি।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনার খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা ও র‌্যাব পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা কারখানা এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়া টয়লেটের সেই নারী শ্রমিক রিনা আক্তারের সঙ্গে তারা কথা বলেন ও ঘটনাটি যে একটা গুজবের কারণে হয়েছে তা তারা প্রমাণ পান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাৎক্ষণিক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কারখানার শ্রমিক হালিম মিয়া ও রুবি ইসলাম জানান, নারী শ্রমিক রিনা আক্তারকে মেরে তার লাশ গুম করা হয়েছে এ খবরে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটনা হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই।

সোনারগাঁ থানার ওসি অপারেশন আলমগীর হোসেন জানান, চৈতি কম্পোজিটের শত শত শ্রমিকরা বেলা ১১টার দিকে মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন যানবহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্ট করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পুলিশ ৪১ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও ১০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) মো. খোরশেদ আলম জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুরো ঘটনাটি একটা গুজবের কারণে ঘটেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজানক। এ ঘটনায় তিনিসহ আরও ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে সাংবাদিক সহ আহত ৫০

আপডেট সময় : ১০:৪০:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০১৯

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি; নারী এক শ্রমিককে মেরে হাত-পা বেঁধে তার লাশ বাথরুম থেকে গুম করা হয়েছে এ ধরনের গুজবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার টিপরদী এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের সংঘর্ষে এডিশনাল এসপি, সাংবাদিকসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন।

এ গুজবের কারণে বৃহস্পতিবার সকালে টিপরদী এলাকায় অবস্থিত চৈতি কম্পোজিটের শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে।

একপর্যায়ে শ্রমিকরা সহকর্মী নারী শ্রমিকের লাশ না দেখানোর প্রতিবাদে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ও যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো টিপরদী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এ সময় ৪১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ১০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মহাসড়কের দুই প্রান্তে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কবলে পড়ে এ সময় শতশত পরিবহন যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৭ জন পুলিশ সদস্য, ৩ সাংবাদিক ও শ্রমিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হন।পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ২ দিনের ছুটি ঘোষণা করে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোনারগাঁ পৌরসভার টিপরদী এলাকায় অবস্থিত পোশাক উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান চৈতি কম্পোজিটের বিভিন্ন সেকশনে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারকানার তৃতীয়তলায় সুইং সেকশনের নারী শ্রমিক রিনা আক্তারকে টয়লেটের ভেতরে পড়ে থাকতে দেখেন তার সহকর্মী কয়েকজন নারী শ্রমিক।

এ সময় রিনা আক্তারকে সেখানে পড়ে থাকতে দেখে অচেতন হয়ে পড়েন শেফালী আক্তার ও নাজমা আক্তার নামের দুই শ্রমিক। খবর পেয়ে ওই সেকশনের এজিএমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা টয়লেট থেকে নারী শ্রমিক রিনা আক্তারকে উদ্ধারের পর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।

এ ঘটনার পর নারী শ্রমিক রিনা আক্তারকে মেরে তার হাত-পা বেঁধে লাশ বাথরুম থেকে গুম করার উদ্দেশ্যে গাড়িতে তুলে অন্যত্র নেয়া হয়েছে। এ ধরনের গুজব পুরো কারখানা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে কারখানায় কর্মরত শত শত শ্রমিক তাদের কাজ বর্জন করে কারখানা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে ও ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সহকর্মী নারী শ্রমিকের লাশ না দেখানোর প্রতিবাদে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) মো. খোরশেদ আলম, সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আলমগীর হোসেন ও কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের নেতৃত্বে একাধিক পুলিশের দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা এ সময় কারখানা কর্তৃপক্ষের ১টি ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে থাকা ১০-১৫টি যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো টিপরদী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এ সময় ৪১ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও ১০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

এ সময় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) মো. খোরশেদ আলম, সোনারগাঁ থানার ওসি (অপারেশন) আলমগীর হোসেন, এসআই আবুল হাসান, কনস্টেবল শাহ আলম, রাখাল সরকার, শিল্প পুলিশের কনস্টেবল হযরত, রুবেল, সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, ইউসুফ আলী, মোবারক হোসেন, কারখানা শ্রমিক রুমা আক্তার, বিথী আক্তার, শাহ-আলম মিয়া, শফিক, হৃদয় মিয়া, আলামিন, শহিদ মিয়াসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, কারখানার একজন কোয়ালিটি কন্ট্রোলার মাদকাসক্ত হয়ে অনেক সময় বিভিন্ন শ্রমিকের ওপর বিনা কারণে নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের শিকার হয়ে রিনা আক্তার নামে এক শ্রমিক মারা গেছে ও তার লাশ বাথরুমে পড়ে আছে এমন সংবাদের খবর পেয়ে শ্রমিকরা সেখানে দৌড়ে যান।

এ সময় কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তা রিনা আক্তার নামের ওই শ্রমিককে কারখানার ভেতর থেকে সরিয়ে অন্যত্র একটি গাড়িযোগে নিয়ে যায়। এ সময় শ্রমিকরা তাদের কাজ বর্জন করে ওই শ্রমিককে দেখানোর দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

চৈতি কম্পোজিটের ডিজিএম (প্রশাসন) মিজানুর রহমান জানান, সকালে নাশতা না খেয়ে সুইং সেকশনের নারী শ্রমিক রিনা আক্তার কারখানায় কাজে যোগদান করে। টয়লেটে যাওয়ার পর সুগার ফল্ট হলে সে সেখানে পড়ে যায়। এ ঘটনা দুই নারী শ্রমিক দেখার দেখার পর রিনা আক্তার মারা গেছেন মনে করে তারা অচেতন হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, রিনা আক্তারকে মেরে হাত-পা বেঁধে তার লাশ গুম করা হয়েছে এমন গুজবে শ্রমিকরা তাদের কাজ বর্জন করে মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। উত্তেজিত শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও তারা তা শুনেনি।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনার খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা ও র‌্যাব পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা কারখানা এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়া টয়লেটের সেই নারী শ্রমিক রিনা আক্তারের সঙ্গে তারা কথা বলেন ও ঘটনাটি যে একটা গুজবের কারণে হয়েছে তা তারা প্রমাণ পান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাৎক্ষণিক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কারখানার শ্রমিক হালিম মিয়া ও রুবি ইসলাম জানান, নারী শ্রমিক রিনা আক্তারকে মেরে তার লাশ গুম করা হয়েছে এ খবরে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটনা হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই।

সোনারগাঁ থানার ওসি অপারেশন আলমগীর হোসেন জানান, চৈতি কম্পোজিটের শত শত শ্রমিকরা বেলা ১১টার দিকে মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন যানবহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্ট করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পুলিশ ৪১ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও ১০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) মো. খোরশেদ আলম জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুরো ঘটনাটি একটা গুজবের কারণে ঘটেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজানক। এ ঘটনায় তিনিসহ আরও ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।