ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে
- আপডেট সময় : ১০:১৪:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ ৮১ বার পড়া হয়েছে
অনলাইন ডেস্ক; দেশে জেঁকে বসেছে শীত। শীতে পুরো দেশ যেন যুবুথুবু অবস্থা। শৈত্য প্রবাহের নাকানি চুবানি খেয়ে মানুষের নাভিস্বাস অবস্থা। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে এরকম শীতের মহরা বসবে তা বোধগম্য ছিলো না সাধারণ মানুষের। রাজধানীবাসী তো পুরো জানুয়ারি মাস লেপ কম্বল না গাঁয়ে দিয়েই ঘুমিয়েছে। কিন্তু, মাঘের শীত বাঘের গাঁয়েও লাগে একথা ভুললে তো চলবে না।
ঘন কুয়াশায় চারদিকে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। রাস্তা ঘাটে সুনশান নিরবতা। মানুষের আনাগোনা কম। দোকানগুলো বন্ধ। শীতে লেপ মুরি দিয়ে ঘুমাচ্ছে নগরবাসী। নগর জীবনে যেন একটা ঝিমুনি ভাব এসেছে।
শীতের পিঠা পুলি খেয়ে আবার শীত উদযাপন করছে সুখি মানুষেরা। খেজুর রসের নানা পদের পিঠা আর গুড়ের বাহারি সব খাবারে মানুষ শীতের আনন্দ খুঁজে নিয়েছে। কিন্তু, কেউ কি মনে রেখেছে খেটে খাওয়া করিমউদ্দিনদের কথা?
প্রতিদিনের মতো করিমউদ্দিন ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়েই বের হন কাজের খোঁজে। বাড্ডায় রাস্তার মোড়ে ঝুরি কোদাল নিয়ে কতগুলো অচেনা মুখ চাতক পাখির মত চেয়ে থাকে। কেউ একজন যদি ঢেকে নেয় কাজের জন্য তবেই জুটবে দুবেলা খাবার। নয়তো আধাপেট খেয়ে নাহয় নাখেয়ে দিনটা পার করতে হবে করিমউদ্দিনের।
ঘরে অসুস্থ স্ত্রী, স্বামী হারা কন্যা, বিবাহযোগ্য আরেক কন্যা, একমাত্র নাতি সবাই বসে থাকে করিমউদ্দিনের আশায়। কখন ফিরবে চাল ঢাল নিয়ে। মাছ মাংস তো দূরের কথা কোনদিন ডিম আর আলুই যেন তাদের উৎসবের খাবার হয়ে ওঠে।
সেই করিমউদ্দিনরা কেমন আছে এই মাঘের শীতে? আমাদের তো আরাম আয়েশের শেষ নেই। শীতের পিঠার উৎসব করি। বার-বি-কিউ পার্টি করি বাসার ছাদে কিংবা কোন নামিদামি রিসোর্টে। ঠান্ডা পানি সহ্য হয় না তাই গিজারে ঠাসা আমাদের বাথরুম গুলো। আলিসান ফ্লাটে হিটারে ঢাকা পড়ে শীত।
তাই আমাদের পক্ষে কি করিমউদ্দিনদের জীবনের কষ্ট বোঝা সম্ভব? মোটেই না। এই ঘন কুয়াশায়, হাড় কাপানো শীতে করিমউদ্দিনরা কেন রাস্তার মোড়ে এসে চাতক পাখির মত চেয়ে থাকে? একটু কাজের আশায়।
এই বৃদ্ধ বয়সেও শীতকে উপেক্ষা করে যেকোন কাজ করতে রাজি। কারন, একটাই। পেটের টান। ”কাজ না করলে খামু কি? কে দেখবো আমাগো? শীত, বৃষ্টি, ঝড় তুফান যাই থাউক, আমাগো কামের ছুটি নাই। ছুটি হইলে না খাইয়া থাকন লাগবো” বলছিলেন ষাটোর্ধো করিমউদ্দিন।
এ যেন মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ’পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের ওই প্রবাদটা, ‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’