ঢাকা ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




অনন্ত জলিল সমাজের নোংরা ময়লা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০২০ ১৫৩ বার পড়া হয়েছে

সাদিয়া নাসরিন

 

অনন্ত জলিল নতুন কী বলেছে আমাকে একটু বলেন তো ? আমাদের সিনেমায় কি আমরা বছরের পর বছর নায়কের মুখে ধর্ষণাক্রান্ত নায়িকাকে উদ্ধার পূর্বক এইসব ওয়াজ শুনি নাই? আমাদের হুজুররা কি সারাদিন এইসব বয়ান তাদের ওয়াজে দেয়না? নারী ধর্ষণের শিকার হয় তার পোষাকের জন্য, চলাফেরার জন্য, এইসব কথা তো প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে এই ধর্ষকামী সমাজের নারী পুরুষদের কাছে বহুকাল ধরেই এইসব সিনেমা নাটক ওয়াজ মাহফিলের কল্যাণে।

আজকে অনন্ত জলিল যা বলেছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি নারীবিদ্বেষি, নারীর প্রতি সরাসরি সহিংসতা উস্কে দেওয়ার মতো কথা তো আমরা প্রতিনিয়ত হুজুরদের ওয়াজে শুনি। বছরের পর বছর ধরে, কোটি কোটি মানুষের মধ্যে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নারীবিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে হুজুররা তাদের ওয়াজের মাধ্যমে। রাষ্ট্র তাদের সবসময়ই স্নেহ প্রশ্রয় দিয়েছে। আজ পর্যন্ত কোন হুজুরের বিরুদ্ধে নারীর প্রতি সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অপরাধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

রাষ্ট্রে যে বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে “অনুভূতি সুরক্ষা” দেওয়ার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিট আইন আছে সেই আইন কি আজ পর্যন্ত কোনও নারীর অনুভূতিকে সুরক্ষা দিয়েছে? এই যে, হুজুরা, তাদের ওয়াজের মাধ্যমে নারীর অনুভূতিকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় প্রতিনিয়ত, কোনওদিন কি একটি ঘটনারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? আজকে এই যে অনন্ত জলিল ধর্ষণের পক্ষে ব্যপক জনমত তৈরী করলো, সেই অপরাধে কি তার বিরূদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? হবেনা।

তো, এইসব সিলেক্টিভ আইন প্রয়োগ, সিলেক্টিভ প্রতিবাদ, সিলেকটিভ এ্যাকশন এইসবের ভেতর দিয়ে যে বিশাল অডিয়েন্সের কাছে ধর্ষণ কোন না কারণে একসেপ্টেড হয়ে গেছে, অনন্ত জলিল সেই অডিয়েন্সেরই আইকন। একজন নায়ক তার অডিয়েন্সের পক্ষে কথা বলবে, রাজনীতিবিদ ভোটারের ভাষায় কথা বলবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কেউ তো তাদেরকে কোনওদিন চ্যালেন্জ করেনাই। কারণ, এই দেশে পিরালী চলে সবখানে। কি ধর্ম, কি ক্রিকেট, কি সিনেমা, কি রাজনীতি, কি এ্যাক্টিভিজম!

তাও তো, অনন্ত জলিলের বিরূদ্ধে একটা ম্যাসিভ প্রতিক্রিয়া অন্তত হয়েছে যার কারণে সে ভিডিওটি সরিয়ে নিতে এবং ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু কোনও হুজুরের বিরুদ্ধে তো এইরকম অরগানাইজড প্রতিক্রিয়াও করা যায়না যার ফলে কোনও হুজুর তার কোন নারীবিদ্বেষী বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। আমরাও জানি যে, কাকে ধরা যায়। দিনশেষে অনন্ত জলিল তো আর হুজুর না!!

তাছাড়া, ভিক্টিম ব্লেইমিং তো নতুন কিছুনা আমাদের কাছে। কি পোষাক, কি চলাফেরা, কি পেশা, কি স্থান কোন বিবেচনায় ভিক্টিম ব্লেইম করিনা আমরা? অনন্ত জলিলদের মতো সি গ্রেডের আইকনরা তো বলেই, আমাদের ভেতরের উদারনৈতিক এ্যাক্টিভিস্টরা পর্যন্তও কি ধর্ষণের শিকার মেয়ের দিকেই আঙ্গুল তুলে বলেনা, “তুমি বয়ফ্রেন্ডের সাথে পার্টিতে গেছো, মদ-গাঁজা খাইসো, সারারাত ঘুমাইসো, সকাল বেলা মনে হইলো রেইপড হইসো?”
তো, যে ফর্মেই বলেননা কেন, এই দেশে অনন্ত জলিলরাই মেজরিটি। এই মেজরিটির মনস্তত্ত্ব নির্মাণ করসে এই রাষ্ট্র, এই সমাজ, এই গণমাধ্যম, এই বিজ্ঞাপণ, এই আইন কানুন। এসবের মধ্য দিয়েই মাস পিপল ধর্ষণের কারণ তৈরী করে, ধর্ষণকে জাস্টিফাই করে এবং সমাজে ধর্ষণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। অনন্ত জলিল তো সমাজের একটা গার্বেজ প্রোডাক্ট মাত্র! (সাদিয়া নাসরিন, উন্নয়ন কর্মী)

 

 

 

এই বিভাগের সব লেখার আইনগত ও অন্যান্য সব দায় লেখকের। মতামত লেখকের নিজস্ব, সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




অনন্ত জলিল সমাজের নোংরা ময়লা

আপডেট সময় : ১০:১১:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০২০

সাদিয়া নাসরিন

 

অনন্ত জলিল নতুন কী বলেছে আমাকে একটু বলেন তো ? আমাদের সিনেমায় কি আমরা বছরের পর বছর নায়কের মুখে ধর্ষণাক্রান্ত নায়িকাকে উদ্ধার পূর্বক এইসব ওয়াজ শুনি নাই? আমাদের হুজুররা কি সারাদিন এইসব বয়ান তাদের ওয়াজে দেয়না? নারী ধর্ষণের শিকার হয় তার পোষাকের জন্য, চলাফেরার জন্য, এইসব কথা তো প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে এই ধর্ষকামী সমাজের নারী পুরুষদের কাছে বহুকাল ধরেই এইসব সিনেমা নাটক ওয়াজ মাহফিলের কল্যাণে।

আজকে অনন্ত জলিল যা বলেছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি নারীবিদ্বেষি, নারীর প্রতি সরাসরি সহিংসতা উস্কে দেওয়ার মতো কথা তো আমরা প্রতিনিয়ত হুজুরদের ওয়াজে শুনি। বছরের পর বছর ধরে, কোটি কোটি মানুষের মধ্যে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নারীবিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে হুজুররা তাদের ওয়াজের মাধ্যমে। রাষ্ট্র তাদের সবসময়ই স্নেহ প্রশ্রয় দিয়েছে। আজ পর্যন্ত কোন হুজুরের বিরুদ্ধে নারীর প্রতি সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অপরাধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

রাষ্ট্রে যে বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে “অনুভূতি সুরক্ষা” দেওয়ার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিট আইন আছে সেই আইন কি আজ পর্যন্ত কোনও নারীর অনুভূতিকে সুরক্ষা দিয়েছে? এই যে, হুজুরা, তাদের ওয়াজের মাধ্যমে নারীর অনুভূতিকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় প্রতিনিয়ত, কোনওদিন কি একটি ঘটনারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? আজকে এই যে অনন্ত জলিল ধর্ষণের পক্ষে ব্যপক জনমত তৈরী করলো, সেই অপরাধে কি তার বিরূদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? হবেনা।

তো, এইসব সিলেক্টিভ আইন প্রয়োগ, সিলেক্টিভ প্রতিবাদ, সিলেকটিভ এ্যাকশন এইসবের ভেতর দিয়ে যে বিশাল অডিয়েন্সের কাছে ধর্ষণ কোন না কারণে একসেপ্টেড হয়ে গেছে, অনন্ত জলিল সেই অডিয়েন্সেরই আইকন। একজন নায়ক তার অডিয়েন্সের পক্ষে কথা বলবে, রাজনীতিবিদ ভোটারের ভাষায় কথা বলবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কেউ তো তাদেরকে কোনওদিন চ্যালেন্জ করেনাই। কারণ, এই দেশে পিরালী চলে সবখানে। কি ধর্ম, কি ক্রিকেট, কি সিনেমা, কি রাজনীতি, কি এ্যাক্টিভিজম!

তাও তো, অনন্ত জলিলের বিরূদ্ধে একটা ম্যাসিভ প্রতিক্রিয়া অন্তত হয়েছে যার কারণে সে ভিডিওটি সরিয়ে নিতে এবং ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু কোনও হুজুরের বিরুদ্ধে তো এইরকম অরগানাইজড প্রতিক্রিয়াও করা যায়না যার ফলে কোনও হুজুর তার কোন নারীবিদ্বেষী বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। আমরাও জানি যে, কাকে ধরা যায়। দিনশেষে অনন্ত জলিল তো আর হুজুর না!!

তাছাড়া, ভিক্টিম ব্লেইমিং তো নতুন কিছুনা আমাদের কাছে। কি পোষাক, কি চলাফেরা, কি পেশা, কি স্থান কোন বিবেচনায় ভিক্টিম ব্লেইম করিনা আমরা? অনন্ত জলিলদের মতো সি গ্রেডের আইকনরা তো বলেই, আমাদের ভেতরের উদারনৈতিক এ্যাক্টিভিস্টরা পর্যন্তও কি ধর্ষণের শিকার মেয়ের দিকেই আঙ্গুল তুলে বলেনা, “তুমি বয়ফ্রেন্ডের সাথে পার্টিতে গেছো, মদ-গাঁজা খাইসো, সারারাত ঘুমাইসো, সকাল বেলা মনে হইলো রেইপড হইসো?”
তো, যে ফর্মেই বলেননা কেন, এই দেশে অনন্ত জলিলরাই মেজরিটি। এই মেজরিটির মনস্তত্ত্ব নির্মাণ করসে এই রাষ্ট্র, এই সমাজ, এই গণমাধ্যম, এই বিজ্ঞাপণ, এই আইন কানুন। এসবের মধ্য দিয়েই মাস পিপল ধর্ষণের কারণ তৈরী করে, ধর্ষণকে জাস্টিফাই করে এবং সমাজে ধর্ষণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। অনন্ত জলিল তো সমাজের একটা গার্বেজ প্রোডাক্ট মাত্র! (সাদিয়া নাসরিন, উন্নয়ন কর্মী)

 

 

 

এই বিভাগের সব লেখার আইনগত ও অন্যান্য সব দায় লেখকের। মতামত লেখকের নিজস্ব, সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।