ঢাকা ১১:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০২০ ১৩০ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা;

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ১৮তম অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি।

জাতীয় পরামশর্ক কমিটির সকল সদস্যের অংশগ্রহণে সভায় নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ক) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলা প্রসঙ্গে

১. শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে পরামর্শক কমিটির মতামত জানতে চান। তিনি উল্লেখ করেন, কমিটির পরামর্শ তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করবেন এবং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

২. শিক্ষামন্ত্রী কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে ও শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ কমিটির সামনে উপস্থাপন করেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হয় যা বর্তমানেও বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের যেন পড়াশোনার ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ২৯ মার্চ থেকে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। সরকার অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা আরও উন্নত করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও হটলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে যেন শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে লক্ষ্য রেখে কারিকুলাম সমন্বয়সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রস্তুতি চলছে।

৩. কোভিড-১৯ মহামারির বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাব্যতা ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠান বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের সকল দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়, পরবর্তীতে কিছু কিছু দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে অনেক দেশেই কোভিড-১৯ সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মচারী-অভিভাবকদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া। ফলশ্রুতিতে ওই সকল দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি শারীরিক উপস্থিতির বদলে অনলাইনের মাধ্যমে তাদের দূরশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৪. শিশুদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কম বলে মনে হলেও পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, শিশুদের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ একবারে কম নয়। আইইডিসিআরের বয়সভিত্তিক তথ্য বিভাজনে দেখা যায়- আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৭-৮ ভাগ স্কুলগামী বয়সের। এছাড়াও আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির যৌথভাবে পরিচালিত জরিপে দেখা যায় শতকরা ৪-৫ ভাগ শিশু সংক্রমিত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের মাঝে সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম, কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তাদের সামাজিক মেলামেশা থেকে দূরে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সামাজিক মেলামেশা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে না। পরিবহন ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও একটি বড় ঝুঁকি হলো শিশুরা সংক্রমিত হলে তাদের মাধ্যমে বাড়িতে বড়দের মধ্যে বিশেষ করে পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের মাঝে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সংক্রমিত ব্যক্তি উপসর্গহীন হওয়ায় তাদের আইসোলেশন নিশ্চিত করাও সম্ভবপর হয় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলে শিশুদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অভিভাবকরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন।

৫. বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত শিশুদের মাঝে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেশন সিন্ড্রোম (এমআইএস) নামক জটিলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা আশঙ্কাজনক এবং তা শিশুমৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা গেছে, মৃদু সংক্রমণের কারণেও দেহের বিভিন্ন অঙ্গ দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য।

৬. উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা একটি এক মাসব্যাপী দীর্ঘ কার্যক্রম যা দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে জড়িত করে। এর ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটি এ সিদ্ধান্তে আসে যে, এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। এমতাবস্থায় জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটি এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার বিষয়ে মতামত প্রদান করে এবং পরবর্তীতে পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

খ) কোভিড-১৯ টিকা প্রসঙ্গে

কোভিড-১৯ টিকার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর উভয়পক্ষ থেকেই পদক্ষেপ জোরদার করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রকল্পে ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখার নির্দেশনা রয়েছে যেন বাজারে ভ্যাকসিন আসামাত্রই তা ক্রয় করা যায়। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পাওয়ার পর তা সারাদেশে বিতরণের পরিকল্পনা নিয়ে ইপিআই কাজ করছে। তবে যেহেতু প্রথমেই হয়তো দেশের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে, তাই উচ্চঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বাছাই করে পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন প্রদান করা যেতে পারে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণের ব্যাপারে ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপের (নাইট্যাগ) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণের বিষয়ে গাইডলাইন প্রস্তুতের প্রস্তাব করা হয়।

গ) কোভিড-১৯ শনাক্তে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা

এ সভা অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে খুব শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করছে। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে কী কী অ্যান্টিজেন পাওয়া যায় এবং কোন কোন কোম্পানির কাছে তা পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে পর্যালোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যেসব জেলায় কোভিড-১৯ পিসিআর টেস্টের সুবিধা নেই এবং গত দুই সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বেশি সেসব জেলায় অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করা যায় বলে এ সভা মনে করে। এছাড়াও যেখানে চিকিৎসা বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন সেসব হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্ট করা যেতে পারে। সভায় এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়।

ঘ) কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইন প্রসঙ্গে

সম্মুখ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটির পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত দেয়া হয়েছে।

সম্মুখ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি এ সভা থেকে পুনরায় আহ্বান জানানো হয়। স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটি মনে করে। স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা ও ডিউটি রোস্টার যেন স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে পরামর্শ দেয়া হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই

আপডেট সময় : ১২:১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০২০

বিশেষ সংবাদদাতা;

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ১৮তম অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি।

জাতীয় পরামশর্ক কমিটির সকল সদস্যের অংশগ্রহণে সভায় নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ক) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলা প্রসঙ্গে

১. শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে পরামর্শক কমিটির মতামত জানতে চান। তিনি উল্লেখ করেন, কমিটির পরামর্শ তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করবেন এবং এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

২. শিক্ষামন্ত্রী কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে ও শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ কমিটির সামনে উপস্থাপন করেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হয় যা বর্তমানেও বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের যেন পড়াশোনার ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ২৯ মার্চ থেকে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। সরকার অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা আরও উন্নত করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও হটলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে যেন শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে লক্ষ্য রেখে কারিকুলাম সমন্বয়সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রস্তুতি চলছে।

৩. কোভিড-১৯ মহামারির বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাব্যতা ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠান বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের সকল দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়, পরবর্তীতে কিছু কিছু দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে অনেক দেশেই কোভিড-১৯ সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মচারী-অভিভাবকদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া। ফলশ্রুতিতে ওই সকল দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরাসরি শারীরিক উপস্থিতির বদলে অনলাইনের মাধ্যমে তাদের দূরশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

৪. শিশুদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কম বলে মনে হলেও পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, শিশুদের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ একবারে কম নয়। আইইডিসিআরের বয়সভিত্তিক তথ্য বিভাজনে দেখা যায়- আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৭-৮ ভাগ স্কুলগামী বয়সের। এছাড়াও আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির যৌথভাবে পরিচালিত জরিপে দেখা যায় শতকরা ৪-৫ ভাগ শিশু সংক্রমিত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের মাঝে সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম, কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তাদের সামাজিক মেলামেশা থেকে দূরে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সামাজিক মেলামেশা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে না। পরিবহন ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও একটি বড় ঝুঁকি হলো শিশুরা সংক্রমিত হলে তাদের মাধ্যমে বাড়িতে বড়দের মধ্যে বিশেষ করে পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের মাঝে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সংক্রমিত ব্যক্তি উপসর্গহীন হওয়ায় তাদের আইসোলেশন নিশ্চিত করাও সম্ভবপর হয় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলে শিশুদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অভিভাবকরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন।

৫. বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত শিশুদের মাঝে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেশন সিন্ড্রোম (এমআইএস) নামক জটিলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা আশঙ্কাজনক এবং তা শিশুমৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা গেছে, মৃদু সংক্রমণের কারণেও দেহের বিভিন্ন অঙ্গ দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য।

৬. উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা একটি এক মাসব্যাপী দীর্ঘ কার্যক্রম যা দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে জড়িত করে। এর ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটি এ সিদ্ধান্তে আসে যে, এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। এমতাবস্থায় জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটি এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার বিষয়ে মতামত প্রদান করে এবং পরবর্তীতে পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

খ) কোভিড-১৯ টিকা প্রসঙ্গে

কোভিড-১৯ টিকার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর উভয়পক্ষ থেকেই পদক্ষেপ জোরদার করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রকল্পে ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখার নির্দেশনা রয়েছে যেন বাজারে ভ্যাকসিন আসামাত্রই তা ক্রয় করা যায়। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পাওয়ার পর তা সারাদেশে বিতরণের পরিকল্পনা নিয়ে ইপিআই কাজ করছে। তবে যেহেতু প্রথমেই হয়তো দেশের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে, তাই উচ্চঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বাছাই করে পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন প্রদান করা যেতে পারে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণের ব্যাপারে ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপের (নাইট্যাগ) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ ও বিতরণের বিষয়ে গাইডলাইন প্রস্তুতের প্রস্তাব করা হয়।

গ) কোভিড-১৯ শনাক্তে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা

এ সভা অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে খুব শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করছে। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে কী কী অ্যান্টিজেন পাওয়া যায় এবং কোন কোন কোম্পানির কাছে তা পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে পর্যালোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যেসব জেলায় কোভিড-১৯ পিসিআর টেস্টের সুবিধা নেই এবং গত দুই সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বেশি সেসব জেলায় অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করা যায় বলে এ সভা মনে করে। এছাড়াও যেখানে চিকিৎসা বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন সেসব হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্ট করা যেতে পারে। সভায় এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়।

ঘ) কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইন প্রসঙ্গে

সম্মুখ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটির পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত দেয়া হয়েছে।

সম্মুখ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি এ সভা থেকে পুনরায় আহ্বান জানানো হয়। স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটি মনে করে। স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা ও ডিউটি রোস্টার যেন স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে পরামর্শ দেয়া হয়।