ঢাকা ০৭:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হওয়ার ৪৭ বছরেও ভাতা বঞ্চিত লিয়াকতের পরিবার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১৯:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০ ৫৬ বার পড়া হয়েছে

মুকসুদপুর গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:

১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকসেনার নির্মম বুলেটে যুদ্ধক্ষেত্রেই শহীদ হন মুকসুদপুর উপজেলার ভাবড়াশুর গ্রামের কুবাদ আলী দেওয়ানের ছেলে লিয়াকত আলী দেওয়ান।

তার কাগজপত্র সব ঠিকঠাক থাকার পরে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মানী ভাতা গ্রহণের মাত্র ১ দিন আগেই শহীদের পিতা ইন্তেকাল করায় তাদের সেই টাকা আজও পায়নি উত্তোরাধিকারগণ। বর্তমান উত্তোরাধিকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ২১ বছর ধরেই।
মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হওয়া লিয়াকত আলীর ছোটভাই কেরামত আলী সাংবাদিকদের জানান যুদ্ধ শুরু হলে সে গাজীপুরের বদিউল আলম কলেজের আইএ ২য় বর্ষের ছাত্র ছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য বাড়িতে এসে যুবকদের সংঘটিত করে ট্রেনিংয়ের জন্য ৭১সালের এপ্রিল মাসে ভারত যান। সেখান থেকে ৩ মাস ট্রেনিং শেষে ২২ জুলাই ভারত সীমান্ত পার হন। এর পরে অংশ নেন কয়েকটি যুদ্ধে। স্বাধীন করেন যশোরের কয়েকটি অঞ্চল। তার গ্রুপ কমান্ডার ফারুক আহম্মদ তালুকদারের অধীনে পাক বাহিনীর সাথে যশোর নারিকেলবাড়ী, বুনাগাতী স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ওই সময় পাকসেনার বুলেটে ঘটনাস্থল্ইে সে সহ কয়েকজন শহীদ হন লিয়াকত আলী দেওয়ান। অন্যান্য যোদ্ধারা জীবন নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে এলেও লিয়াকত আলী‘র গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকে বুনাগাতি গ্রামেই। যুদ্ধ শেষে গ্রামবাসী তাকে ওই গ্রামেই গণকবরে তার দাফন করেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে শহীদের পিতা কোবাদ আলী দেওয়ান শহীদ মুক্তিযোদ্ধার উত্তারাধিকারী হিসাবে ১৯৯৬ সালের ২৪ আগষ্ট ঢাকাস্থ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভক্ত করা এবং রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা প্রাপ্তির আবেদন করে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই ফরমে পুলিশের এসআই লোকমান হোসেন ও মুকসুদপুরের সহকারি কমিশনার মোস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ‘আবেদনকারি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত পিতা, তার ছেলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন মর্মে স্থানীয় তদন্তে সঠিক পাওয়া গেল’। এর পরে তার নামে সনদপত্র, বরাদ্দপত্র, যাবতীয় দাপ্তরিক কার্যাদি শেষ হয়। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্টের উপ – মহাব্যবস্থাপক, কল্যাণের মোহাম্মদ হামিদুর রহমান স্বাক্ষরিত ৮ নভেম্বর ৯৯ তারিখে এক পত্রে উল্লেখ করেন যে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসাবে ১৯৯৯ সনের জানুয়ারী মাস হতে কোবাদ আলী দেওয়ানের নামে রাষ্ট্রীয় সন্মানী ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এর পরে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট্রের পরিচালক মাহমুদুল মাসুদ জেলা প্রশাসক গোপালগঞ্জের কাছে এক অতীব গুরুত্বপুর্ণ ও জরুরী চিঠিতে শহীদ লিয়াকত আলী দেওয়ানের পরিবারসহ ৪ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০ জানুয়ারি ১৯৯৯ তারিখে নিজ হাতে রাস্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার তাদের অনুষ্ঠানের একদিন আগে পৌছানোর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। কিন্তু ৯ জানুয়ারি শহীদের পিতা কোবাদ আলী দেওয়ান পরোলক গমন করায় আর সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করা হয়নি। রাস্ট্রীয় সম্মাননা ও ভাতার টাকা গ্রহণ করার আগেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত পিতা বৃদ্ধ কোবাদ আলী দেওয়ান মারা যাওয়ার পরে তাঁর ওয়ারিশ হিসাবে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে যান। এর মধ্যে সবাই এফিডেভিটের মাধ্যমে কেরামত আলী দেওয়ানকে এ বিষয়ে ‘পাওয়ার অব এর্টর্নি দেয়া হয়। এ সকল কাগজপত্র নিয়ে কেরামত আলী দেওয়ান ঘুরে বেড়াচ্ছেন সকল দপ্তরে। তার ভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলীর নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভুক্তি করে গেজেট প্রকাশসহ রাষ্ট্রীয় সন্মানী ভাতা প্রাপ্তিসহ রাস্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য। এব্যপারে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জাফর আহমেদ মল্লিক জানান লিয়াকত সম্মুখ সমরে নিহত হওয়ায় রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছিল। কিন্তু এক দিন আগেই তার পিতা পরোলক গমন করায় তার রাস্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণ করা হয়নি। সদাসয় ও মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব এই সরকার ওই পরিবারকে সন্মাননা দিলে এই অসহায় পরিবারটি সচ্ছলাতা মুখ দেখবে। আমি অতি দ্রুত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে তার প্রাপ্যতম রাস্ট্রীয় সম্মানী শহীদ ভাতা দেওয়ার জোর আবেদন জানাচ্ছি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হওয়ার ৪৭ বছরেও ভাতা বঞ্চিত লিয়াকতের পরিবার

আপডেট সময় : ০৬:১৯:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০

মুকসুদপুর গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:

১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকসেনার নির্মম বুলেটে যুদ্ধক্ষেত্রেই শহীদ হন মুকসুদপুর উপজেলার ভাবড়াশুর গ্রামের কুবাদ আলী দেওয়ানের ছেলে লিয়াকত আলী দেওয়ান।

তার কাগজপত্র সব ঠিকঠাক থাকার পরে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মানী ভাতা গ্রহণের মাত্র ১ দিন আগেই শহীদের পিতা ইন্তেকাল করায় তাদের সেই টাকা আজও পায়নি উত্তোরাধিকারগণ। বর্তমান উত্তোরাধিকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ২১ বছর ধরেই।
মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হওয়া লিয়াকত আলীর ছোটভাই কেরামত আলী সাংবাদিকদের জানান যুদ্ধ শুরু হলে সে গাজীপুরের বদিউল আলম কলেজের আইএ ২য় বর্ষের ছাত্র ছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য বাড়িতে এসে যুবকদের সংঘটিত করে ট্রেনিংয়ের জন্য ৭১সালের এপ্রিল মাসে ভারত যান। সেখান থেকে ৩ মাস ট্রেনিং শেষে ২২ জুলাই ভারত সীমান্ত পার হন। এর পরে অংশ নেন কয়েকটি যুদ্ধে। স্বাধীন করেন যশোরের কয়েকটি অঞ্চল। তার গ্রুপ কমান্ডার ফারুক আহম্মদ তালুকদারের অধীনে পাক বাহিনীর সাথে যশোর নারিকেলবাড়ী, বুনাগাতী স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ওই সময় পাকসেনার বুলেটে ঘটনাস্থল্ইে সে সহ কয়েকজন শহীদ হন লিয়াকত আলী দেওয়ান। অন্যান্য যোদ্ধারা জীবন নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে এলেও লিয়াকত আলী‘র গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকে বুনাগাতি গ্রামেই। যুদ্ধ শেষে গ্রামবাসী তাকে ওই গ্রামেই গণকবরে তার দাফন করেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে শহীদের পিতা কোবাদ আলী দেওয়ান শহীদ মুক্তিযোদ্ধার উত্তারাধিকারী হিসাবে ১৯৯৬ সালের ২৪ আগষ্ট ঢাকাস্থ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভক্ত করা এবং রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা প্রাপ্তির আবেদন করে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই ফরমে পুলিশের এসআই লোকমান হোসেন ও মুকসুদপুরের সহকারি কমিশনার মোস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ‘আবেদনকারি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত পিতা, তার ছেলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন মর্মে স্থানীয় তদন্তে সঠিক পাওয়া গেল’। এর পরে তার নামে সনদপত্র, বরাদ্দপত্র, যাবতীয় দাপ্তরিক কার্যাদি শেষ হয়। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্টের উপ – মহাব্যবস্থাপক, কল্যাণের মোহাম্মদ হামিদুর রহমান স্বাক্ষরিত ৮ নভেম্বর ৯৯ তারিখে এক পত্রে উল্লেখ করেন যে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসাবে ১৯৯৯ সনের জানুয়ারী মাস হতে কোবাদ আলী দেওয়ানের নামে রাষ্ট্রীয় সন্মানী ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এর পরে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট্রের পরিচালক মাহমুদুল মাসুদ জেলা প্রশাসক গোপালগঞ্জের কাছে এক অতীব গুরুত্বপুর্ণ ও জরুরী চিঠিতে শহীদ লিয়াকত আলী দেওয়ানের পরিবারসহ ৪ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০ জানুয়ারি ১৯৯৯ তারিখে নিজ হাতে রাস্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার তাদের অনুষ্ঠানের একদিন আগে পৌছানোর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। কিন্তু ৯ জানুয়ারি শহীদের পিতা কোবাদ আলী দেওয়ান পরোলক গমন করায় আর সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করা হয়নি। রাস্ট্রীয় সম্মাননা ও ভাতার টাকা গ্রহণ করার আগেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত পিতা বৃদ্ধ কোবাদ আলী দেওয়ান মারা যাওয়ার পরে তাঁর ওয়ারিশ হিসাবে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে যান। এর মধ্যে সবাই এফিডেভিটের মাধ্যমে কেরামত আলী দেওয়ানকে এ বিষয়ে ‘পাওয়ার অব এর্টর্নি দেয়া হয়। এ সকল কাগজপত্র নিয়ে কেরামত আলী দেওয়ান ঘুরে বেড়াচ্ছেন সকল দপ্তরে। তার ভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলীর নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভুক্তি করে গেজেট প্রকাশসহ রাষ্ট্রীয় সন্মানী ভাতা প্রাপ্তিসহ রাস্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য। এব্যপারে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জাফর আহমেদ মল্লিক জানান লিয়াকত সম্মুখ সমরে নিহত হওয়ায় রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছিল। কিন্তু এক দিন আগেই তার পিতা পরোলক গমন করায় তার রাস্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণ করা হয়নি। সদাসয় ও মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব এই সরকার ওই পরিবারকে সন্মাননা দিলে এই অসহায় পরিবারটি সচ্ছলাতা মুখ দেখবে। আমি অতি দ্রুত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে তার প্রাপ্যতম রাস্ট্রীয় সম্মানী শহীদ ভাতা দেওয়ার জোর আবেদন জানাচ্ছি।