ঢাকা ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




চট্টগ্রামে বাড়ছে করোনা রোগীর মৃত্যু, তীব্র আইসিইউ বেডের সংকট!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:১৩:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০ ১১৩ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রামে বাড়ছে করোনা রোগীর মৃত্যু, তীব্র আইসিইউ বেডের সংকট!

বিশেষ সংবাদদাতা; মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ বেড নেই। যে কারণে প্রতিদিনই করোনা রোগীদের মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে (৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যু) সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা খুবই সীমিত সংখ্যক থাকলেও পর্যায়ক্রমে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে এবং মৃত্যু সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে করোনার হটস্পট চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষিত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা মাত্র আটটি। এসব ডেডিকেটেড হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা রয়েছে মাত্র ৬৯৭টি। তার মধ্যে সরকারি চারটি হাসপাতালে ৪৮২টি এবং বেসরকারি চারটি হাসপাতালে ২১৫টি শয্যা রয়েছে।

সরকারি চারটি হাসপাতালে মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ২০০টি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস বা বিআইটিআইডিতে ৩২টি, ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১৫০ এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে ১০০টি শয্যা রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০০টি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ২৮টি, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ৪৭টি এবং ফিল্ড হাসপাতাল ৪০টি শয্যা রয়েছে।

তবে আক্রান্তের তুলনায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা না থাকায় হাসপাতালে রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের জন্য চট্টগ্রামে আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ৩৫টি। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মাত্র ১৬টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে মাত্র ১৯টি আইসিইউ বেড রয়েছে।

সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছয়টি, ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০টি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ছয়টি এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে তিনটি শয্যা রয়েছে।

এত অল্প সংখ্যক আইসিইউ বেড থাকার কারণে রোগীদের হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে। আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তারা। ফলে চট্টগ্রাম বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭০ জন। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ হাজার।

গতকাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ৬০৬ জন। একই সময়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬২১ জন।

মোট মৃতের হিসাবে বিভাগীয় পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪৫৪ জনের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে মাত্র দুজন কম ৪৫২ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরিসংখ্যানে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা-৩৯৪ জন।

অন্যান্য বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহে ৪৬ জন, রাজশাহীতে ৬৯ জন, রংপুরে ৪৪ জন, খুলনায় ৫০ জন, বরিশালে ৫৩ জন এবং সিলেটে ৫৯ জন মারা যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগ সংক্রমণের দিক দিয়ে অন্যতম হটস্পট হলেও আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলোতে সুচিকিৎসা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে আইসিইউ বেড সংকটে করোনা রোগীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে চট্টগ্রামে।

গত ২১ জানুয়ারি থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় (২৪ জুন সকাল আটটা থেকে ২৫ জুন সকাল আটটা পর্যন্ত) ১৭ হাজার ৯৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করে তিন হাজার ৯৪৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ২৬ হাজার ৬০৬ জন।

সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ৩৯ জনের মধ্যে ১০ জন ঢাকা বিভাগের, ১০ জন চট্টগ্রামের, পাঁচজন রাজশাহীর, পাঁচজন খুলনার, তিনজন ময়মনসিংহের, বরিশালে দুইজন ও রংপুরের চারজন রয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




চট্টগ্রামে বাড়ছে করোনা রোগীর মৃত্যু, তীব্র আইসিইউ বেডের সংকট!

আপডেট সময় : ০৩:১৩:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০

বিশেষ সংবাদদাতা; মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ বেড নেই। যে কারণে প্রতিদিনই করোনা রোগীদের মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে (৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যু) সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা খুবই সীমিত সংখ্যক থাকলেও পর্যায়ক্রমে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে এবং মৃত্যু সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে করোনার হটস্পট চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষিত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা মাত্র আটটি। এসব ডেডিকেটেড হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা রয়েছে মাত্র ৬৯৭টি। তার মধ্যে সরকারি চারটি হাসপাতালে ৪৮২টি এবং বেসরকারি চারটি হাসপাতালে ২১৫টি শয্যা রয়েছে।

সরকারি চারটি হাসপাতালে মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ২০০টি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস বা বিআইটিআইডিতে ৩২টি, ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১৫০ এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে ১০০টি শয্যা রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০০টি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ২৮টি, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ৪৭টি এবং ফিল্ড হাসপাতাল ৪০টি শয্যা রয়েছে।

তবে আক্রান্তের তুলনায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা না থাকায় হাসপাতালে রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের জন্য চট্টগ্রামে আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ৩৫টি। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মাত্র ১৬টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে মাত্র ১৯টি আইসিইউ বেড রয়েছে।

সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছয়টি, ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০টি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ছয়টি এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে তিনটি শয্যা রয়েছে।

এত অল্প সংখ্যক আইসিইউ বেড থাকার কারণে রোগীদের হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে। আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তারা। ফলে চট্টগ্রাম বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭০ জন। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ হাজার।

গতকাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ৬০৬ জন। একই সময়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬২১ জন।

মোট মৃতের হিসাবে বিভাগীয় পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগের সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪৫৪ জনের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে মাত্র দুজন কম ৪৫২ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরিসংখ্যানে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা-৩৯৪ জন।

অন্যান্য বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহে ৪৬ জন, রাজশাহীতে ৬৯ জন, রংপুরে ৪৪ জন, খুলনায় ৫০ জন, বরিশালে ৫৩ জন এবং সিলেটে ৫৯ জন মারা যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগ সংক্রমণের দিক দিয়ে অন্যতম হটস্পট হলেও আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলোতে সুচিকিৎসা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে আইসিইউ বেড সংকটে করোনা রোগীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে চট্টগ্রামে।

গত ২১ জানুয়ারি থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় (২৪ জুন সকাল আটটা থেকে ২৫ জুন সকাল আটটা পর্যন্ত) ১৭ হাজার ৯৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করে তিন হাজার ৯৪৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ২৬ হাজার ৬০৬ জন।

সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ৩৯ জনের মধ্যে ১০ জন ঢাকা বিভাগের, ১০ জন চট্টগ্রামের, পাঁচজন রাজশাহীর, পাঁচজন খুলনার, তিনজন ময়মনসিংহের, বরিশালে দুইজন ও রংপুরের চারজন রয়েছেন।