ঢাকা ১১:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




করোনা আক্রান্ত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিএস, চেয়েছেন ক্ষতিপূরণও

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মে ২০২০ ৭৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক;

>> বিষয়টি গোপন রেখেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
>> ক্ষতিপূরণ বাবদ বাজেটে বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকা
>> আক্রান্ত হলে পাবেন ৫-১০ লাখ টাকা, মৃত্যুতে পাঁচগুণ

চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু করেছে সরকার। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি বলা হলেও ক্ষতিপূরণ পেতে মন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. ওয়াহেদুর রহমান আবেদন করেছেন। অর্থ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নানা কারণে প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। তবে মো. ওয়াহেদুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আবার সুস্থও হয়েছেন। তাই আক্রান্ত হলে যে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা, সেটার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন, তাদের কেউ আক্রান্ত হলে গ্রেডভেদে পাবেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। যদি সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান, তাহলে ক্ষতিপূরণ বাবদ এর পাঁচগুণ পাবেন। এ বিষয়ে গত ২৩ এপ্রিল একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

তাই যারা ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে শুরু করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) মো. ওয়াহেদুর রহমানও আবেদনের তালিকায় রয়েছেন। এদিকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য এ খাতে চলতি বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দও রেখেছে অর্থ বিভাগ।

এদিকে গত ২৫ মার্চ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দফতরের এক কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে যেতে বলা হয়েছে।

গত ২৬ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নাকচ করে দেন। সেদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পিএস, পিআরও বা কোনো কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত নন। এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

কিন্তু সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. ওয়াহেদুর রহমান (উপসচিব) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, তার নমুনা গ্রহণ করা হয় গত ২৪ মার্চ এবং ২৫ মার্চ রিপোর্ট প্রদান করলে তাতে কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে। তিনি পঞ্চম গ্রেডে বেতন পান।

এতে আরও বলা হয়, আবেদনকারী ব্যক্তি করোনা রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি নিয়োজিত ছিলেন। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত ছিলেন।

এ বিষয়ে শনিবার (২৩ মে) জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যখন বলেছিলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরের কেউ করোনায় আক্রান্ত নয়, তখন বিষয়টা গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সামাজিক মর্যাদা বা অস্থিরতার সৃষ্টি হবে, এটা ভেবে তখন খবরটা পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে মন্ত্রীর পিএস করোনা পজিটিভ ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নেগেটিভ হয়ে গেছেন। এ জন্য পিএস এর অনুকূলে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিএস ওয়াহেদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি করোনায় আক্রান্ত ছিলাম। পরবর্তীতে ‍সুস্থ হয়েছি। ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনও করেছি।’

এদিকে ২৩ এপ্রিল ক্ষতিপূরণ দেয়া সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরাসরি আর্থিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’

এক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হলে গ্রেডভেদে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পাবেন। আর সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এর পাঁচগুণ আর্থিক সহায়তা পাবেন।

পরিপত্রে আরও বলা হয়, ‘২০১৫ এর বেতনস্কেল অনুযায়ী ১৫-২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন পাঁচ লাখ টাকা, আর মারা গেলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং আর মারা গেলে পাবেন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রথম-নবম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ টাকা এবং মারা গেলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা।’

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বীমার ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রিমিয়াম দিতে হবে। এছাড়া বীমার টাকা পেতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন, তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

পরিপত্রে আরও বলা হয়, ক্ষতিপূরণের আওতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত মাঠপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

ক্ষতিপূরণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে-

>> কর্মকর্তা ও কর্মচারী করোনাভাইরাস পজিটিভের প্রমাণ বা মেডিকেল রিপোর্টসহ স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট ফরমে ক্ষতিপূরণের দাবিনামা পেশ করবেন।

>> করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরমে মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী/স্বামী/সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা/মা ক্ষতিপূরণের দাবি-সংবলিত আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করবেন।

>> আবেদনকারীর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রসমূহ যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে।

>> প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীরা কেবলমাত্র এ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।

>> করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সৃজনকৃত খাতে করোনা (কোভিড-১৯) সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে নির্বাহ করা হবে। অর্থ বিভাগ ক্ষতিপূরণের আবেদনপ্রাপ্তির পর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সরকারি আদেশ জারি করবে।

>> এ ক্ষতিপূরণ বর্তমান প্রচলিত অন্য যেকোনো প্রজ্ঞাপন/আদেশে বর্ণিত কর্মকালীন মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা বা অনুদানের অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে এ পরিপত্রের নির্দেশনা কার্যকর হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




করোনা আক্রান্ত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিএস, চেয়েছেন ক্ষতিপূরণও

আপডেট সময় : ০৫:৪৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মে ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক;

>> বিষয়টি গোপন রেখেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
>> ক্ষতিপূরণ বাবদ বাজেটে বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকা
>> আক্রান্ত হলে পাবেন ৫-১০ লাখ টাকা, মৃত্যুতে পাঁচগুণ

চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু করেছে সরকার। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি বলা হলেও ক্ষতিপূরণ পেতে মন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. ওয়াহেদুর রহমান আবেদন করেছেন। অর্থ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নানা কারণে প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। তবে মো. ওয়াহেদুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আবার সুস্থও হয়েছেন। তাই আক্রান্ত হলে যে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা, সেটার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন, তাদের কেউ আক্রান্ত হলে গ্রেডভেদে পাবেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। যদি সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান, তাহলে ক্ষতিপূরণ বাবদ এর পাঁচগুণ পাবেন। এ বিষয়ে গত ২৩ এপ্রিল একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

তাই যারা ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত বা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে শুরু করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) মো. ওয়াহেদুর রহমানও আবেদনের তালিকায় রয়েছেন। এদিকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য এ খাতে চলতি বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দও রেখেছে অর্থ বিভাগ।

এদিকে গত ২৫ মার্চ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের দফতরের এক কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে যেতে বলা হয়েছে।

গত ২৬ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নাকচ করে দেন। সেদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পিএস, পিআরও বা কোনো কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত নন। এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

কিন্তু সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. ওয়াহেদুর রহমান (উপসচিব) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, তার নমুনা গ্রহণ করা হয় গত ২৪ মার্চ এবং ২৫ মার্চ রিপোর্ট প্রদান করলে তাতে কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে। তিনি পঞ্চম গ্রেডে বেতন পান।

এতে আরও বলা হয়, আবেদনকারী ব্যক্তি করোনা রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি নিয়োজিত ছিলেন। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত ছিলেন।

এ বিষয়ে শনিবার (২৩ মে) জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যখন বলেছিলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরের কেউ করোনায় আক্রান্ত নয়, তখন বিষয়টা গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সামাজিক মর্যাদা বা অস্থিরতার সৃষ্টি হবে, এটা ভেবে তখন খবরটা পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে মন্ত্রীর পিএস করোনা পজিটিভ ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নেগেটিভ হয়ে গেছেন। এ জন্য পিএস এর অনুকূলে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পিএস ওয়াহেদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি করোনায় আক্রান্ত ছিলাম। পরবর্তীতে ‍সুস্থ হয়েছি। ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনও করেছি।’

এদিকে ২৩ এপ্রিল ক্ষতিপূরণ দেয়া সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরাসরি আর্থিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’

এক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হলে গ্রেডভেদে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পাবেন। আর সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এর পাঁচগুণ আর্থিক সহায়তা পাবেন।

পরিপত্রে আরও বলা হয়, ‘২০১৫ এর বেতনস্কেল অনুযায়ী ১৫-২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন পাঁচ লাখ টাকা, আর মারা গেলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং আর মারা গেলে পাবেন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রথম-নবম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ টাকা এবং মারা গেলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা।’

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বীমার ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রিমিয়াম দিতে হবে। এছাড়া বীমার টাকা পেতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন, তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

পরিপত্রে আরও বলা হয়, ক্ষতিপূরণের আওতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত মাঠপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

ক্ষতিপূরণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে-

>> কর্মকর্তা ও কর্মচারী করোনাভাইরাস পজিটিভের প্রমাণ বা মেডিকেল রিপোর্টসহ স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট ফরমে ক্ষতিপূরণের দাবিনামা পেশ করবেন।

>> করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরমে মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী/স্বামী/সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা/মা ক্ষতিপূরণের দাবি-সংবলিত আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করবেন।

>> আবেদনকারীর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রসমূহ যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে।

>> প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীরা কেবলমাত্র এ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।

>> করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সৃজনকৃত খাতে করোনা (কোভিড-১৯) সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে নির্বাহ করা হবে। অর্থ বিভাগ ক্ষতিপূরণের আবেদনপ্রাপ্তির পর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সরকারি আদেশ জারি করবে।

>> এ ক্ষতিপূরণ বর্তমান প্রচলিত অন্য যেকোনো প্রজ্ঞাপন/আদেশে বর্ণিত কর্মকালীন মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা বা অনুদানের অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে এ পরিপত্রের নির্দেশনা কার্যকর হবে।