ঢাকা ০৭:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




মা কেন কাঁদে! মা-মায়ের অনুভূতি; রেবেকা সুলতানা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ১০৮ বার পড়া হয়েছে

 

মা, কি অদ্ভুত চরিত্র, তাইনা? কতো কারনে যে মায়ের চোখে জল আসে ভেবে পাইনা। যখন অনেক ছোট ছিলাম মা কে দেখতাম কারনে অকারনে চোখ মুছে চলে। ভাই বোন বাড়িতে এলে কাদে, বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় কাদে, চাকরিতে প্রমোশন পেলেও কাদে, এলোমেলো জায়গায় পোস্টিং পেলেও কাদে, নাতি পুতিদের পরীক্ষার ফল খারাপ হলেও কাদে আবার সাফল্যেও অশ্রুসজল হয়। অবাক হয়ে ভাবি কেন কাদে এ মহিলা সবকিছুতে! মানুষ তো আনন্দের ঘটনায় হাসবে আর বিষাদে কাদবে, তাইনা? মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে – আনন্দে কান্না আসে। আনন্দে আবার কেউ কাদে নাকি? কি বলেন আম্মা!!

– দিন যায় অভিজ্ঞতা বদলে যায়। একদিন শৈশব ছিল- কড়া শাসন কিংবা যা চাচ্ছি তা না হলে কান্না আসতো! আস্তে আস্তে বড় হয়েছি জীবনের নানান সময়ে নানান ঘটনায় কখনো হেসেছি কখনো কেদেছি। হাসি এবং কান্নার মাঝেই তো জীবন, তাইনা? কিন্তু! যতোই মা হয়ে উঠছি কারনে অকারনে চোখে জল চলে আসে। আজ হয়তো বুঝি- মা কেন কাদে সন্তানের ভালো মন্দে।

– প্রায় দশ বছর আগে চাকুরির প্রয়োজনে ছেলেদের নিয়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসি। ছোট ছোট বাচ্চা তিনটা ছেলে আমার। সপ্তাহের ছুটির দিনে ওদের বাবা কে পাওয়া হয় আজ অবধি। বাকিটা সময় মা ওদের দিন রাতের চলার সাথী। চাকুরি করে বেলা অবেলায় যত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠছে আমার সন্তানেরা। আমি ওদের দিকে তাকাই ওদের বড় হওয়া, পরিবর্তন খেয়াল করি। আর অবাক হই। ছোট ছোট ছেলেগুলার বড় হয়ে উঠা আর আমার নিয়ত ছুটে চলা জীবনের সাথে ওদের মানিয়ে নেওয়া আমাকে মুগ্ধ করে। আমার ছোট ছেলেটা যখন থিয়েটারের মঞ্চে সংলাপ ছুড়ে চোখ ভিজে যায়। চোখ ভিজে যায় মেঝ ছেলে যখন স্কুলের জার্সি পরে এসে বলে আম্মু আন্তঃস্কুল ক্রিকেটে আমাকে নিয়েছে। আমি অবাক হয়ে শুনি আমার বড় ছেলের হাতে গিটারের সুর আর আড়ালে চোখ মুছি। যখন দেখি আমার কোলে নিয়ে ফেরা ছোট বাচ্চাটা আজ মায়ের ব্যস্ততার জন্য একা একাই স্কুলে যায় আমার চোখ ভিজে যায়। কতো সকালে অফিস যাওয়ার তাড়ায় আমার মেঝ ছেলেটা যে আম্মু না তুলে দিলে বা বেড়ে দিলে খেতে পারেনা সে অভিমানে না খেয়ে স্কুলে চলে যায়। আমার এই ব্যস্ততাজনিত অপারগতায় সারাদিন অফিস কাজের ফাকেও চোখ মুছে যাই। আমার বড় ছেলেটার বেড়ে উঠা, তার দায়িত্ববোধ, তার স্থিরতা আমাকে ভেতর থেকে ভালো থাকতে শেখায়। মাত্র একটি সাবজেক্টে জিপিএ-৪ পাওয়ায় যখন মেঝ ছেলে এপ্লাস হারিয়ে আমায় পা ছুয়ে বলে আম্মু ক্ষমা করে দাও, সামনে ভাল করবো- ভেতরে হাসি আসে আর চোখে জল। অবুঝ এই ছেলেটা আমার অনেক বুঝে কিন্তু কিছুই বুঝেনা। ওর এই ছেলেমানুষী আমাকে ভাবায়, কাদায় আবার কখনো হাসায়। মা কেন কাদে আজ বুঝি!!

সন্তানের মুখের দিকে তাকালে ভেসে উঠে ওদের জন্ম থেকে শুরু করে অদ্যবধি চলা সংগ্রাম- আর এই সংগ্রামের সফলতা, ব্যর্থতা। সন্তান বড় করার পেছনে মা-বাবা দুজনের ই সংগ্রাম থাকে। দুজনের বোধ আলাদা হয়। আমি জানি একইভাবে হয়তো আড়ালে ওদের জ্যামিতিক বিশ্লেষণে আমারই মতো কান্নার জল মুছেন ওদের জনক।

আসলে কিছু অনুভুতি লিখে রাখি সময়টাকে ধরে রাখার জন্যই। সময় বয়ে যায় খুব দ্রুত। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা বড় হয়ে যাচ্ছে। আকারে ওরা দুজন আমাকে ছাড়িয়ে গেছে বহু আগেই। আজ বড় ছেলেটা এসএসসি দিতে বসেছে। ওকে স্কুল ক্যাম্পাসে দেয়ার সময় ভাবছিলাম- এইতো আমার সংগ্রামের সফলতা। বড় হও বাবা! জ্ঞানে-গুনে-মানবিকতায় সমৃদ্ধ হও!! ওকে পৌছে দিয়ে যখন পিছু ফিরে হাটছি সেই চিরচেনা চোখের জল গড়াচ্ছে!! আজ তাই আমার মা কে বলতে চাই, আমি মা হয়েছি আজ আমি তোমার চোখের জলের অর্থ বুঝি মা!!

– চলমান এসএসসি পরীক্ষায় আমার ছেলের সাথে আরও যারা পরীক্ষায় বসেছে সবাই সফল হোক, খুব ভাল ফল আসুক। আমার মতো সব মায়েদের চোখ ভিজে উঠুক বারবার, মমতায়-ভালোবাসায়-আদরে-শাসনে-বারনে আমাদের সন্তানেরা সমাজে উদাহরন হয়ে উঠুক এটুকুই চাওয়া।

লেখকঃ রেবেকা সুলতানা, 
উন্নয়ন কর্মী, নির্বাহী পরিচালক, অন্যচিত্র উন্নয়ন সংস্থা ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




মা কেন কাঁদে! মা-মায়ের অনুভূতি; রেবেকা সুলতানা

আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

 

মা, কি অদ্ভুত চরিত্র, তাইনা? কতো কারনে যে মায়ের চোখে জল আসে ভেবে পাইনা। যখন অনেক ছোট ছিলাম মা কে দেখতাম কারনে অকারনে চোখ মুছে চলে। ভাই বোন বাড়িতে এলে কাদে, বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় কাদে, চাকরিতে প্রমোশন পেলেও কাদে, এলোমেলো জায়গায় পোস্টিং পেলেও কাদে, নাতি পুতিদের পরীক্ষার ফল খারাপ হলেও কাদে আবার সাফল্যেও অশ্রুসজল হয়। অবাক হয়ে ভাবি কেন কাদে এ মহিলা সবকিছুতে! মানুষ তো আনন্দের ঘটনায় হাসবে আর বিষাদে কাদবে, তাইনা? মাকে জিজ্ঞেস করলে বলে – আনন্দে কান্না আসে। আনন্দে আবার কেউ কাদে নাকি? কি বলেন আম্মা!!

– দিন যায় অভিজ্ঞতা বদলে যায়। একদিন শৈশব ছিল- কড়া শাসন কিংবা যা চাচ্ছি তা না হলে কান্না আসতো! আস্তে আস্তে বড় হয়েছি জীবনের নানান সময়ে নানান ঘটনায় কখনো হেসেছি কখনো কেদেছি। হাসি এবং কান্নার মাঝেই তো জীবন, তাইনা? কিন্তু! যতোই মা হয়ে উঠছি কারনে অকারনে চোখে জল চলে আসে। আজ হয়তো বুঝি- মা কেন কাদে সন্তানের ভালো মন্দে।

– প্রায় দশ বছর আগে চাকুরির প্রয়োজনে ছেলেদের নিয়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসি। ছোট ছোট বাচ্চা তিনটা ছেলে আমার। সপ্তাহের ছুটির দিনে ওদের বাবা কে পাওয়া হয় আজ অবধি। বাকিটা সময় মা ওদের দিন রাতের চলার সাথী। চাকুরি করে বেলা অবেলায় যত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠছে আমার সন্তানেরা। আমি ওদের দিকে তাকাই ওদের বড় হওয়া, পরিবর্তন খেয়াল করি। আর অবাক হই। ছোট ছোট ছেলেগুলার বড় হয়ে উঠা আর আমার নিয়ত ছুটে চলা জীবনের সাথে ওদের মানিয়ে নেওয়া আমাকে মুগ্ধ করে। আমার ছোট ছেলেটা যখন থিয়েটারের মঞ্চে সংলাপ ছুড়ে চোখ ভিজে যায়। চোখ ভিজে যায় মেঝ ছেলে যখন স্কুলের জার্সি পরে এসে বলে আম্মু আন্তঃস্কুল ক্রিকেটে আমাকে নিয়েছে। আমি অবাক হয়ে শুনি আমার বড় ছেলের হাতে গিটারের সুর আর আড়ালে চোখ মুছি। যখন দেখি আমার কোলে নিয়ে ফেরা ছোট বাচ্চাটা আজ মায়ের ব্যস্ততার জন্য একা একাই স্কুলে যায় আমার চোখ ভিজে যায়। কতো সকালে অফিস যাওয়ার তাড়ায় আমার মেঝ ছেলেটা যে আম্মু না তুলে দিলে বা বেড়ে দিলে খেতে পারেনা সে অভিমানে না খেয়ে স্কুলে চলে যায়। আমার এই ব্যস্ততাজনিত অপারগতায় সারাদিন অফিস কাজের ফাকেও চোখ মুছে যাই। আমার বড় ছেলেটার বেড়ে উঠা, তার দায়িত্ববোধ, তার স্থিরতা আমাকে ভেতর থেকে ভালো থাকতে শেখায়। মাত্র একটি সাবজেক্টে জিপিএ-৪ পাওয়ায় যখন মেঝ ছেলে এপ্লাস হারিয়ে আমায় পা ছুয়ে বলে আম্মু ক্ষমা করে দাও, সামনে ভাল করবো- ভেতরে হাসি আসে আর চোখে জল। অবুঝ এই ছেলেটা আমার অনেক বুঝে কিন্তু কিছুই বুঝেনা। ওর এই ছেলেমানুষী আমাকে ভাবায়, কাদায় আবার কখনো হাসায়। মা কেন কাদে আজ বুঝি!!

সন্তানের মুখের দিকে তাকালে ভেসে উঠে ওদের জন্ম থেকে শুরু করে অদ্যবধি চলা সংগ্রাম- আর এই সংগ্রামের সফলতা, ব্যর্থতা। সন্তান বড় করার পেছনে মা-বাবা দুজনের ই সংগ্রাম থাকে। দুজনের বোধ আলাদা হয়। আমি জানি একইভাবে হয়তো আড়ালে ওদের জ্যামিতিক বিশ্লেষণে আমারই মতো কান্নার জল মুছেন ওদের জনক।

আসলে কিছু অনুভুতি লিখে রাখি সময়টাকে ধরে রাখার জন্যই। সময় বয়ে যায় খুব দ্রুত। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা বড় হয়ে যাচ্ছে। আকারে ওরা দুজন আমাকে ছাড়িয়ে গেছে বহু আগেই। আজ বড় ছেলেটা এসএসসি দিতে বসেছে। ওকে স্কুল ক্যাম্পাসে দেয়ার সময় ভাবছিলাম- এইতো আমার সংগ্রামের সফলতা। বড় হও বাবা! জ্ঞানে-গুনে-মানবিকতায় সমৃদ্ধ হও!! ওকে পৌছে দিয়ে যখন পিছু ফিরে হাটছি সেই চিরচেনা চোখের জল গড়াচ্ছে!! আজ তাই আমার মা কে বলতে চাই, আমি মা হয়েছি আজ আমি তোমার চোখের জলের অর্থ বুঝি মা!!

– চলমান এসএসসি পরীক্ষায় আমার ছেলের সাথে আরও যারা পরীক্ষায় বসেছে সবাই সফল হোক, খুব ভাল ফল আসুক। আমার মতো সব মায়েদের চোখ ভিজে উঠুক বারবার, মমতায়-ভালোবাসায়-আদরে-শাসনে-বারনে আমাদের সন্তানেরা সমাজে উদাহরন হয়ে উঠুক এটুকুই চাওয়া।

লেখকঃ রেবেকা সুলতানা, 
উন্নয়ন কর্মী, নির্বাহী পরিচালক, অন্যচিত্র উন্নয়ন সংস্থা ।