ঢাকা ০১:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




অসহায় মানুষের সাহায্যে জমানো টাকার ভল্ট পুলিশের কাছে দিল ছোট্ট আয়ান

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০ ১২১ বার পড়া হয়েছে

জাহিদ হাঁসান রেহানঃ 

৮ বছর বয়সের ছোট্ট আয়ান। করোনাভাইরাসে স্থবির বাংলাদেশের মানুষের কষ্ট দেখে আর সইছিল না তার। প্লাস্টিকের একটি ইলেকট্রিক ভল্টে টাকা জমাত সে। করোনা আক্রান্তদের জন্য সেই ভল্টের পুরো টাকাই পুলিশকে দিল সে।

ঘটনাটি আজকের (বৃহস্পতিবার)। রাতে ছোট্ট আয়ানের বড়মানুষী এই গল্পটি তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুকের ভেরিফাইড পেজ থেকে পোস্টটি করা হয়েছে। পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

‘শফিকুল দম্পতির আদরের ছেলে আকিদুল ইসলাম আয়ান। বয়স ৮ বছর। রাজধানীর প্রিমিয়ার স্কুল ঢাকার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির পুরো দেশ। এতে আরও কষ্টে আছে রাজধানী থাকা খেটে খাওয়া মানুষগুলো। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরের কারণে যেসব মানুষের কষ্টের কথা জেনেছে আয়ান।

মানুষের এমন কষ্ট ছুঁয়ে গেছে ছোট্ট আয়ানের মন। এমন দুর্দিনে আয়ানের মা-বাবাও সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। অসহায় মানুষকে খাদ্যসহায়তা দিচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে আয়ান তার বাবাকে বলে, ‘বাবা, আমি আমার ভল্টের জমানো টাকাগুলো অসহায় মানুষদের দিতে চাই। আর এগুলো পুলিশ আঙ্কেলদের মাধ্যমে দিতে চাই। কারণ পুলিশ আঙ্কেলরা মানুষের বাড়ি-বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছে।’

ছেলের এ কথা শুনে শফিকুল সাহেব খুবই খুশি হলেন। কিন্তু আয়ানের ইলেকট্রিক ভল্টটা তার খুবই প্রিয়। গত দুই বছর ধরে ভল্টটি কী পরম মায়ায় আঁকড়ে রেখেছে সে! এটি নিয়ে কত শত পরিকল্পনা তার! যখনই টাকা জমানোর সুযোগ পেত, এনে ভল্টে জমা করত। ঈদের সালামি। টিফিনের টাকা। আত্মীয়-স্বজনের দেয়া উপহারের টাকা। সব ভল্টে রেখেছে সে। আর টাকা নিয়ে কী কী করবে, তা নিয়ে নিত্য নতুন পরিকল্পনা করে সে। কিন্তু ছেলে আজ সব পরিকল্পনা ছেড়ে দিয়ে তার ছোট্ট জীবনে সকল সঞ্চয় মানুষের কল্যাণে দিতে চায়। এসব ভাবতেই শফিক সাহেবের চোখে অজান্তেই চলে আসে আনন্দ-অশ্রু।

এরপর আয়ানের মায়ের পরামর্শে মিরপুর মডেল থানায় ফোন করেন বাবা শফিকুল। ছেলের ইচ্ছার কথা ওসিকে খুলে বলেন তিনি। সাদরে আমন্ত্রণ জানান ওসি। এরপর মা-বাবার সাথে প্রিয় ইলেকট্রিক ভল্ট নিয়ে থানায় আসে ছোট্ট আয়ান।

ছোট্ট আয়ান প্রিয় ইলেকট্রিক ভল্ট খুলে পরম মমতায় জমানো সবগুলো টাকা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ছোট্ট আয়ানের ইচ্ছা পূরণে আয়ানের জমানো টাকায় খাবার কিনে ১২টি অভুক্ত পরিবারের কাছে ইতোমধ্যেই পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ।

বেঁচে থাকুক বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি আয়ানদের এই আস্থা আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা। এই আয়ানদের জন্যই বারবার জিতে যায় মানবতা। এমন আয়ানদের জন্যই পুলিশ ঘরে নিজের সন্তান রেখে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার সাহস পায়। একটু কষ্ট হলেও আয়ানদের জন্য ঘরে থাকি। আসুন, সবাই মিলে একসাথে আয়ানদের জন্য সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে নিরাপদ এক বাংলাদেশ গড়ি। সর্বদাই জনগণের পাশে, বাংলাদেশ পুলিশ।’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) ভিক্ষাবৃত্তি করে নিজের বসতঘর মেরামতের জন্য দুই বছরে জমানো ১০ হাজার টাকা করোনায় বিপর্যস্ত কর্মহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ত্রাণ তহবিলে জমা দেন উপজেলার গান্ধিগাঁও এলাকার ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন।

এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। পরে বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা ও প্রধানমন্ত্রীর এসব উপহার দেয়া হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




অসহায় মানুষের সাহায্যে জমানো টাকার ভল্ট পুলিশের কাছে দিল ছোট্ট আয়ান

আপডেট সময় : ১২:০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০

জাহিদ হাঁসান রেহানঃ 

৮ বছর বয়সের ছোট্ট আয়ান। করোনাভাইরাসে স্থবির বাংলাদেশের মানুষের কষ্ট দেখে আর সইছিল না তার। প্লাস্টিকের একটি ইলেকট্রিক ভল্টে টাকা জমাত সে। করোনা আক্রান্তদের জন্য সেই ভল্টের পুরো টাকাই পুলিশকে দিল সে।

ঘটনাটি আজকের (বৃহস্পতিবার)। রাতে ছোট্ট আয়ানের বড়মানুষী এই গল্পটি তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুকের ভেরিফাইড পেজ থেকে পোস্টটি করা হয়েছে। পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

‘শফিকুল দম্পতির আদরের ছেলে আকিদুল ইসলাম আয়ান। বয়স ৮ বছর। রাজধানীর প্রিমিয়ার স্কুল ঢাকার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির পুরো দেশ। এতে আরও কষ্টে আছে রাজধানী থাকা খেটে খাওয়া মানুষগুলো। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরের কারণে যেসব মানুষের কষ্টের কথা জেনেছে আয়ান।

মানুষের এমন কষ্ট ছুঁয়ে গেছে ছোট্ট আয়ানের মন। এমন দুর্দিনে আয়ানের মা-বাবাও সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। অসহায় মানুষকে খাদ্যসহায়তা দিচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে আয়ান তার বাবাকে বলে, ‘বাবা, আমি আমার ভল্টের জমানো টাকাগুলো অসহায় মানুষদের দিতে চাই। আর এগুলো পুলিশ আঙ্কেলদের মাধ্যমে দিতে চাই। কারণ পুলিশ আঙ্কেলরা মানুষের বাড়ি-বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছে।’

ছেলের এ কথা শুনে শফিকুল সাহেব খুবই খুশি হলেন। কিন্তু আয়ানের ইলেকট্রিক ভল্টটা তার খুবই প্রিয়। গত দুই বছর ধরে ভল্টটি কী পরম মায়ায় আঁকড়ে রেখেছে সে! এটি নিয়ে কত শত পরিকল্পনা তার! যখনই টাকা জমানোর সুযোগ পেত, এনে ভল্টে জমা করত। ঈদের সালামি। টিফিনের টাকা। আত্মীয়-স্বজনের দেয়া উপহারের টাকা। সব ভল্টে রেখেছে সে। আর টাকা নিয়ে কী কী করবে, তা নিয়ে নিত্য নতুন পরিকল্পনা করে সে। কিন্তু ছেলে আজ সব পরিকল্পনা ছেড়ে দিয়ে তার ছোট্ট জীবনে সকল সঞ্চয় মানুষের কল্যাণে দিতে চায়। এসব ভাবতেই শফিক সাহেবের চোখে অজান্তেই চলে আসে আনন্দ-অশ্রু।

এরপর আয়ানের মায়ের পরামর্শে মিরপুর মডেল থানায় ফোন করেন বাবা শফিকুল। ছেলের ইচ্ছার কথা ওসিকে খুলে বলেন তিনি। সাদরে আমন্ত্রণ জানান ওসি। এরপর মা-বাবার সাথে প্রিয় ইলেকট্রিক ভল্ট নিয়ে থানায় আসে ছোট্ট আয়ান।

ছোট্ট আয়ান প্রিয় ইলেকট্রিক ভল্ট খুলে পরম মমতায় জমানো সবগুলো টাকা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ছোট্ট আয়ানের ইচ্ছা পূরণে আয়ানের জমানো টাকায় খাবার কিনে ১২টি অভুক্ত পরিবারের কাছে ইতোমধ্যেই পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ।

বেঁচে থাকুক বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি আয়ানদের এই আস্থা আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা। এই আয়ানদের জন্যই বারবার জিতে যায় মানবতা। এমন আয়ানদের জন্যই পুলিশ ঘরে নিজের সন্তান রেখে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার সাহস পায়। একটু কষ্ট হলেও আয়ানদের জন্য ঘরে থাকি। আসুন, সবাই মিলে একসাথে আয়ানদের জন্য সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে নিরাপদ এক বাংলাদেশ গড়ি। সর্বদাই জনগণের পাশে, বাংলাদেশ পুলিশ।’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) ভিক্ষাবৃত্তি করে নিজের বসতঘর মেরামতের জন্য দুই বছরে জমানো ১০ হাজার টাকা করোনায় বিপর্যস্ত কর্মহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ত্রাণ তহবিলে জমা দেন উপজেলার গান্ধিগাঁও এলাকার ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন।

এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। পরে বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা ও প্রধানমন্ত্রীর এসব উপহার দেয়া হয়।