ঢাকা ০২:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন Logo রাশিয়ায় কনসার্ট হলে বন্দুক হামলার নিহত ৬০, দায় স্বীকার আইএসের




মতিঝিল আইডিয়ালের ভর্তি বাণিজ্যে শত কোটির টাকার মালিক আতিক

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ৮৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তিসহ সব বাণিজ্যের একক নিয়ন্ত্রক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আতিকুর রহমান খান। তিনি ‘ইঞ্জিনিয়ার আতিক’ হিসেবে পরিচিত। ২০০৪ সালে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতনে টেকনিশিয়ান হিসেবে ওই স্কুলে যোগ দেন। বর্তমানে তার বেতন প্রায় ২৫ হাজার টাকা। অথচ চাকরিজীবনের ১৫ বছরেই অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি।

জানা যায়, ভর্তিসহ অন্যান্য বাণিজ্য ছাড়াও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিনটি ক্যাম্পাসের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর ড্রেস (পোশাক), ক্যান্টিন, লাইব্রেরি সবই বেনামে তার নিয়ন্ত্রণে। এমনকি স্কুলের সামনে ফুটপাতে শতাধিক দোকান বসিয়েও তিনি আয় করেন মোটা অঙ্কের টাকা।

*এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে যত ধরনের কেনাকাটা, উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ হয় তার সবই করেন আতিক। দরপত্রেও অংশ নেয় নামে-বেনামে তারই প্রতিষ্ঠান। সেখানে চলে বড় ধরনের লুটপাট। গত ১২ বছরে প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং কর্মচারী নিয়োগে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। এর বেশির ভাগই হয়েছে আতিকের হাত ধরে। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আতিক বসেন এসি লাগানো বড় কক্ষে। অথচ স্কুলের মতিঝিল শাখায় শিক্ষকদের বসার স্থান সংকুলানও হয় না।

এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামোতে শিক্ষক ও কর্মচারী ছাড়া আর কোনো পদ নেই। তবে আতিক বর্তমানে ‘সহকারী ইঞ্জিনিয়ার’ পদের বেতন নিচ্ছেন।আতিকের বিষয়ে অধ্যক্ষ সব জেনেও না জানার ভান করেন। গভর্নিং বডির ব র্তমান সভাপতি সরকারের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানও নিশ্চুপ।

জানা যায়, আইডিয়ালের তিন শাখায় প্রতিবছরই হাজারখানেক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় অবৈধভাবে। ওই ধরনের ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। আর এই টাকার পুরোটাই লেনদেন হয় আতিকের হাত দিয়ে। তবে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাপে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে ঘষামাজা করে অবশ্য ধরাও পড়ে যান আতিকসহ ছয়জন। ঘষামাজা করে নতুনভাবে লিখে অবৈধভাবে ভর্তি করার বিষয়টি প্রমাণিত হয় ঢাকা জেলা প্রশাসনের তদন্তে। ওই জালিয়াতিতে জড়িত হিসেবে আতিকসহ ছয়জনের নাম উঠে আসে তদন্তে। এতে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের এমপিও কেন বন্ধ হবে না সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে এরই মধ্যে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আতিক নিজে চলাফেরা করেন একটি দামি নোয়া গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো চ-১৫-১৩৪৮)। স্কুলে বই পাঠ্য করে কমিশন বাণিজ্য এবং নিজের টেইলার্স দোকান থেকে পোশাক বানাতে বাধ্য করেন তিনি। আশিক ও বিশ্বাস লাইব্রেরি এবং আইডিয়াল স্কুলের প্রতিটি ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনও বেনামে তিনিই চালান। বনশ্রীর ‘ডি’ ব্লকের ১০ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকেন নিজের এক হাজার ৬০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটে। আফতাবনগর ‘বি’ ব্লকের ৩৪ নম্বর বাড়িটি তার স্ত্রীর নামে। বনশ্রীর ‘সি’ ব্লকের ১ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর বাড়িতে বিশাল শোরুম ভাড়া দিয়েছেন।

ওই এলাকায় আছে একাধিক দোকান। ভিশন-৭১ নামে আছে ‘ডেভেলপমেন্ট কম্পানি’। বনশ্রীর ‘সি’ ব্লকের ১৩ নম্বর রোডে তারই কম্পানি থেকে তৈরি করা বাড়িতে আছে একাধিক ফ্ল্যাট। মেরুল বাড্ডার আনন্দনগর হাজী ওয়াকিল উদ্দিন সড়কের ১ নম্বর রোডের ৭৪৭ নম্বর বাড়িটি আতিকের শ্বশুরের। তার টাকায় সেখানে উঠেছে সাততলা ভবন। গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন বাগানবাড়ি ও পিকনিক স্পট। একাধিক মাল্টিপারপাস সমিতির মালিকানা আছে তার। সেখানে নিজের অবৈধ টাকা খাটান তিনি। সম্প্রতি তার ভিশন-৭১ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির নৌবিহারে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের অধ্যক্ষও।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আতিকের স্কুলে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। তবে স্কুলের কাজকর্ম দেখে। স্কুলে তার কোনো রুম নেই। তবে একটি রুমে টেন্ডারসংক্রান্ত জিনিসপত্র রাখা হয়, সেখানে আতিকসহ নির্মাণসংক্রান্ত কমিটির লোকজন বসেন।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, আতিকের শ্বশুরের দুটো মেয়ে। তাদের বহু জায়গাজমি দিছে, যা আমার জানার ব্যাপার না। আতিকের বাবারও অনেক প্রপার্টিজ ছিল। চেষ্টা করলে সেগুলোও বাড়তে পারে।

 

 

সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




মতিঝিল আইডিয়ালের ভর্তি বাণিজ্যে শত কোটির টাকার মালিক আতিক

আপডেট সময় : ০৮:৩৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তিসহ সব বাণিজ্যের একক নিয়ন্ত্রক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আতিকুর রহমান খান। তিনি ‘ইঞ্জিনিয়ার আতিক’ হিসেবে পরিচিত। ২০০৪ সালে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতনে টেকনিশিয়ান হিসেবে ওই স্কুলে যোগ দেন। বর্তমানে তার বেতন প্রায় ২৫ হাজার টাকা। অথচ চাকরিজীবনের ১৫ বছরেই অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি।

জানা যায়, ভর্তিসহ অন্যান্য বাণিজ্য ছাড়াও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিনটি ক্যাম্পাসের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর ড্রেস (পোশাক), ক্যান্টিন, লাইব্রেরি সবই বেনামে তার নিয়ন্ত্রণে। এমনকি স্কুলের সামনে ফুটপাতে শতাধিক দোকান বসিয়েও তিনি আয় করেন মোটা অঙ্কের টাকা।

*এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে যত ধরনের কেনাকাটা, উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ হয় তার সবই করেন আতিক। দরপত্রেও অংশ নেয় নামে-বেনামে তারই প্রতিষ্ঠান। সেখানে চলে বড় ধরনের লুটপাট। গত ১২ বছরে প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং কর্মচারী নিয়োগে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। এর বেশির ভাগই হয়েছে আতিকের হাত ধরে। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আতিক বসেন এসি লাগানো বড় কক্ষে। অথচ স্কুলের মতিঝিল শাখায় শিক্ষকদের বসার স্থান সংকুলানও হয় না।

এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামোতে শিক্ষক ও কর্মচারী ছাড়া আর কোনো পদ নেই। তবে আতিক বর্তমানে ‘সহকারী ইঞ্জিনিয়ার’ পদের বেতন নিচ্ছেন।আতিকের বিষয়ে অধ্যক্ষ সব জেনেও না জানার ভান করেন। গভর্নিং বডির ব র্তমান সভাপতি সরকারের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানও নিশ্চুপ।

জানা যায়, আইডিয়ালের তিন শাখায় প্রতিবছরই হাজারখানেক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় অবৈধভাবে। ওই ধরনের ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। আর এই টাকার পুরোটাই লেনদেন হয় আতিকের হাত দিয়ে। তবে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাপে ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে ঘষামাজা করে অবশ্য ধরাও পড়ে যান আতিকসহ ছয়জন। ঘষামাজা করে নতুনভাবে লিখে অবৈধভাবে ভর্তি করার বিষয়টি প্রমাণিত হয় ঢাকা জেলা প্রশাসনের তদন্তে। ওই জালিয়াতিতে জড়িত হিসেবে আতিকসহ ছয়জনের নাম উঠে আসে তদন্তে। এতে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের এমপিও কেন বন্ধ হবে না সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে এরই মধ্যে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আতিক নিজে চলাফেরা করেন একটি দামি নোয়া গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো চ-১৫-১৩৪৮)। স্কুলে বই পাঠ্য করে কমিশন বাণিজ্য এবং নিজের টেইলার্স দোকান থেকে পোশাক বানাতে বাধ্য করেন তিনি। আশিক ও বিশ্বাস লাইব্রেরি এবং আইডিয়াল স্কুলের প্রতিটি ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনও বেনামে তিনিই চালান। বনশ্রীর ‘ডি’ ব্লকের ১০ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকেন নিজের এক হাজার ৬০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটে। আফতাবনগর ‘বি’ ব্লকের ৩৪ নম্বর বাড়িটি তার স্ত্রীর নামে। বনশ্রীর ‘সি’ ব্লকের ১ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর বাড়িতে বিশাল শোরুম ভাড়া দিয়েছেন।

ওই এলাকায় আছে একাধিক দোকান। ভিশন-৭১ নামে আছে ‘ডেভেলপমেন্ট কম্পানি’। বনশ্রীর ‘সি’ ব্লকের ১৩ নম্বর রোডে তারই কম্পানি থেকে তৈরি করা বাড়িতে আছে একাধিক ফ্ল্যাট। মেরুল বাড্ডার আনন্দনগর হাজী ওয়াকিল উদ্দিন সড়কের ১ নম্বর রোডের ৭৪৭ নম্বর বাড়িটি আতিকের শ্বশুরের। তার টাকায় সেখানে উঠেছে সাততলা ভবন। গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন বাগানবাড়ি ও পিকনিক স্পট। একাধিক মাল্টিপারপাস সমিতির মালিকানা আছে তার। সেখানে নিজের অবৈধ টাকা খাটান তিনি। সম্প্রতি তার ভিশন-৭১ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির নৌবিহারে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের অধ্যক্ষও।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আতিকের স্কুলে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। তবে স্কুলের কাজকর্ম দেখে। স্কুলে তার কোনো রুম নেই। তবে একটি রুমে টেন্ডারসংক্রান্ত জিনিসপত্র রাখা হয়, সেখানে আতিকসহ নির্মাণসংক্রান্ত কমিটির লোকজন বসেন।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, আতিকের শ্বশুরের দুটো মেয়ে। তাদের বহু জায়গাজমি দিছে, যা আমার জানার ব্যাপার না। আতিকের বাবারও অনেক প্রপার্টিজ ছিল। চেষ্টা করলে সেগুলোও বাড়তে পারে।

 

 

সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি।