ঢাকা ০৪:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




আবারো অনশনে সেই চাঁদের কণা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:০১:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৪৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শারীরিক অক্ষমতা জয় করলেও জীবনযুদ্ধে হারতে বসেছে চাঁদের কণা। সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও জোটেনি একটি চাকরি; চান প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে মাহবুবা হক চাঁদের কণা। নয় মাস বয়সে পোলিও আক্রান্ত হওয়ায় তার দুটি পা অচল হয়ে যায়। বাবা-মায়ের চেষ্টায় দুই হাতে ভর করেই তিনি প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে নেন। রাজশাহীর মাদারবক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাশ করেছেন এবং ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর করেছেন ২০১৩ সালে।

স্নাতকোত্তর অর্জনের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পাওয়ায় চাকরির জন্য এই তরুণী প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করেন গত ২৬ জুন। অনশন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। এবং চাকরির আশ্বাস পেয়ে অনশন ভেঙে স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন চাঁদের কণা। তবে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির আশ্বাস পেলেও পরে সেটি দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। চাঁদের কণা জানান, ‘আমাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। যে চাকরি এসএসসি পাস করেও সম্ভব।

আমি বেশি কিছু চাই না যোগত্য অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরি চাই। আমি বারবার গণভবনে গিয়ে চেষ্টা করেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখার করার সুযোগ পাইনি। আমি আমার মা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাই। আমার মা নেই প্রধানমন্ত্রীই আমার মা। তিনি আমার দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন। আমি আশা করি, তার সাথে দেখা হলে, আমার কথাগুলো বলতে পারলে, তিনি একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। মেয়ের কষ্ট শুনে মা কখনো মুখ বুঝে বসে থাকবে না। মা মেয়ের বাঁচার পদ তৈরি করে দিবেন। আমি আমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।’

অশ্রুজ্বলে মায়ের সাথে দেখা করার আর্তনাদ করে কথাগুলো বলেন প্রতিবন্ধী তরুণী চাঁদের কণা। মমতাময়ী মায়ের কাছে বলতে চান তার সংগ্রামী জীবন-যাপনের কথা। আজ চাঁদের কণার জন্মদিন। তবে এখনও যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকরি না পাওয়ায় আবারো আজ প্রেসক্লাবে আমরণ অনশনে বসেন সেই চাঁদের কণা।

চাঁদের কণা যখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তখন তার মা মারা যান। কয়েক বছর পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। ছোট দুই ভাই আছে। চরম দারিদ্র্য সত্ত্বেও তিনি থেমে থাকেননি। টেলিভিশনের জন্য অনুষ্ঠান গ্রন্থনা এবং কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজকর্ম করে জীবিকা চালিয়েছেন। শিক্ষা জীবনের সংগ্রামমুখর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি যখন মাদার বক্স কলেজে পড়তাম, পঞ্চম তলায় আমার ক্লাস হত। ৯টার ক্লাসের জন্য আমি কলেজে যেতাম সকাল ৭টার দিকে।

কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে দেড় ঘণ্টার মত সময় লাগত। স্কুলজীবন থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত এমন লক্ষ্য-কোটি বাধা পেরিয়ে প্রতিবন্ধিতা জয় করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া।’ অনশনে বসার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করার পর যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পার হতে আর চার মাস বাকি ছিল। তাই বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছিলাম।’

পরিশেষে নিরাশ হয়ে গণমাধ্যমের স্বরপন্ন হলেন চাঁদের কণা। গণমাধ্যমের সহযোগীতায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার স্বপ্নের বার্তা পৌঁছে দিতে চান। এখন তার একমাত্র ভরশা দুর্দিনের সাথী গণমাধ্যম। এখন দেখার অপেক্ষায় চাঁদের কণার স্বপ্নের চাঁকা ঘুরে দাঁড়াবে না-কি স্বপ্নের অপমৃত্যু হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




আবারো অনশনে সেই চাঁদের কণা

আপডেট সময় : ১১:০১:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শারীরিক অক্ষমতা জয় করলেও জীবনযুদ্ধে হারতে বসেছে চাঁদের কণা। সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও জোটেনি একটি চাকরি; চান প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে মাহবুবা হক চাঁদের কণা। নয় মাস বয়সে পোলিও আক্রান্ত হওয়ায় তার দুটি পা অচল হয়ে যায়। বাবা-মায়ের চেষ্টায় দুই হাতে ভর করেই তিনি প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে নেন। রাজশাহীর মাদারবক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাশ করেছেন এবং ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর করেছেন ২০১৩ সালে।

স্নাতকোত্তর অর্জনের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পাওয়ায় চাকরির জন্য এই তরুণী প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করেন গত ২৬ জুন। অনশন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। এবং চাকরির আশ্বাস পেয়ে অনশন ভেঙে স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন চাঁদের কণা। তবে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির আশ্বাস পেলেও পরে সেটি দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। চাঁদের কণা জানান, ‘আমাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। যে চাকরি এসএসসি পাস করেও সম্ভব।

আমি বেশি কিছু চাই না যোগত্য অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরি চাই। আমি বারবার গণভবনে গিয়ে চেষ্টা করেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখার করার সুযোগ পাইনি। আমি আমার মা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাই। আমার মা নেই প্রধানমন্ত্রীই আমার মা। তিনি আমার দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন। আমি আশা করি, তার সাথে দেখা হলে, আমার কথাগুলো বলতে পারলে, তিনি একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। মেয়ের কষ্ট শুনে মা কখনো মুখ বুঝে বসে থাকবে না। মা মেয়ের বাঁচার পদ তৈরি করে দিবেন। আমি আমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।’

অশ্রুজ্বলে মায়ের সাথে দেখা করার আর্তনাদ করে কথাগুলো বলেন প্রতিবন্ধী তরুণী চাঁদের কণা। মমতাময়ী মায়ের কাছে বলতে চান তার সংগ্রামী জীবন-যাপনের কথা। আজ চাঁদের কণার জন্মদিন। তবে এখনও যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকরি না পাওয়ায় আবারো আজ প্রেসক্লাবে আমরণ অনশনে বসেন সেই চাঁদের কণা।

চাঁদের কণা যখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তখন তার মা মারা যান। কয়েক বছর পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। ছোট দুই ভাই আছে। চরম দারিদ্র্য সত্ত্বেও তিনি থেমে থাকেননি। টেলিভিশনের জন্য অনুষ্ঠান গ্রন্থনা এবং কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজকর্ম করে জীবিকা চালিয়েছেন। শিক্ষা জীবনের সংগ্রামমুখর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি যখন মাদার বক্স কলেজে পড়তাম, পঞ্চম তলায় আমার ক্লাস হত। ৯টার ক্লাসের জন্য আমি কলেজে যেতাম সকাল ৭টার দিকে।

কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে দেড় ঘণ্টার মত সময় লাগত। স্কুলজীবন থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত এমন লক্ষ্য-কোটি বাধা পেরিয়ে প্রতিবন্ধিতা জয় করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া।’ অনশনে বসার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করার পর যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পার হতে আর চার মাস বাকি ছিল। তাই বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছিলাম।’

পরিশেষে নিরাশ হয়ে গণমাধ্যমের স্বরপন্ন হলেন চাঁদের কণা। গণমাধ্যমের সহযোগীতায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার স্বপ্নের বার্তা পৌঁছে দিতে চান। এখন তার একমাত্র ভরশা দুর্দিনের সাথী গণমাধ্যম। এখন দেখার অপেক্ষায় চাঁদের কণার স্বপ্নের চাঁকা ঘুরে দাঁড়াবে না-কি স্বপ্নের অপমৃত্যু হবে।