ঢাকা ০৭:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




বৃদ্ধ দাদা এখনও জানেন না আবরার নেই!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৯ ৬৮ বার পড়া হয়েছে

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের দাদা আবদুল গফুর বিশ্বাস এখনও জানেন না তার নাতি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন।

৮৭ বছরের এই বৃদ্ধের বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তি লোপ পেলেও আবরারকে নিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছে সেটি তিনি বুঝতে পারছেন।

বাড়িতে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে আবদুল গফুর বিশ্বাস জানতে চান- কী হয়েছে? কিন্তু পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সত্য আড়াল করে তাকে জানানো হয়, আবরার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং এখন ভালো আছেন।

আবদুল গফুর বিশ্বাসের পাঁচ ছেলে চাকরির সুবাদে বাড়ির বাইরে থাকেন। একসঙ্গে এত লোক কখনও তাদের বাড়িতে আসে না। অনেকে কান্নাকাটি করছেন, অনেকেই ভারাক্রান্ত। সব মিলিয়ে অজানা শঙ্কা আবদুল গফুরের মনে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে আবরার ফাহাদের লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যখন তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় তখনও আবদুল গফুর বিশ্বাসকে কিছুই জানানো হয়নি।

কিন্তু বাড়িতে এত আত্মীয়স্বজন আর মানুষ দেখে ব্যাকুল হয়ে জানতে চান- তোমরা না গতকালকে বললা আমার নাতি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে? আজকে বাড়ি আসবে। আমার নাতি বাড়িতে আসছে না কেন, আর আমার বাড়িতে এত লোকজন কেন? কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না। নির্বাক দর্শকদের ভূমিকা পালন করা ছাড়া খুব বেশি কিছু করা সম্ভব হয় না।

শুধু রায়ডাঙ্গা না, কুষ্টিয়া না, সারা দেশে যখন আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে, দেশি-বিদেশি মিডিয়াগুলো ফলাও করে আবরারকে ন্যক্কারজনকভাবে হত্যার সংবাদ পরিবেশন করছে, তখনও দাদা আবদুল গফুর বিশ্বাস আজানা শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করে আছেন, মেধাবী নাতি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।

আবদুল গফুর বিশ্বাসের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আবরার তাকে নিয়মিত দেখতে আসে কিনা। তিনি বলেছিলেন, ছুটিতে বাড়িতে এলেই গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসত আবরার। খোঁজখবরও নিত। মেধাবী নাতিকে নিয়ে গর্বিত এ বৃদ্ধ জীবনের শেষলগ্নে এসেও স্বপ্ন দেখেন তার নাতি অনেক বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। যদিও তার এবং পরিবারের একসময় চাওয়া ছিল আবরার ডাক্তার হবে।

কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছিলেন আবরার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। কিন্তু নিজের ইচ্ছাতেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। অত্যন্ত মেধাবী আবরার ফাহাদের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। আর বৃদ্ধ দাদা তো প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন- নাতি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। যে প্রতীক্ষার কোনো শেষ নেই…

প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বৃদ্ধ দাদা এখনও জানেন না আবরার নেই!

আপডেট সময় : ১১:৩৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০১৯

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের দাদা আবদুল গফুর বিশ্বাস এখনও জানেন না তার নাতি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন।

৮৭ বছরের এই বৃদ্ধের বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তি লোপ পেলেও আবরারকে নিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছে সেটি তিনি বুঝতে পারছেন।

বাড়িতে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে আবদুল গফুর বিশ্বাস জানতে চান- কী হয়েছে? কিন্তু পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ এবং শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সত্য আড়াল করে তাকে জানানো হয়, আবরার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং এখন ভালো আছেন।

আবদুল গফুর বিশ্বাসের পাঁচ ছেলে চাকরির সুবাদে বাড়ির বাইরে থাকেন। একসঙ্গে এত লোক কখনও তাদের বাড়িতে আসে না। অনেকে কান্নাকাটি করছেন, অনেকেই ভারাক্রান্ত। সব মিলিয়ে অজানা শঙ্কা আবদুল গফুরের মনে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে আবরার ফাহাদের লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যখন তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় তখনও আবদুল গফুর বিশ্বাসকে কিছুই জানানো হয়নি।

কিন্তু বাড়িতে এত আত্মীয়স্বজন আর মানুষ দেখে ব্যাকুল হয়ে জানতে চান- তোমরা না গতকালকে বললা আমার নাতি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে? আজকে বাড়ি আসবে। আমার নাতি বাড়িতে আসছে না কেন, আর আমার বাড়িতে এত লোকজন কেন? কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না। নির্বাক দর্শকদের ভূমিকা পালন করা ছাড়া খুব বেশি কিছু করা সম্ভব হয় না।

শুধু রায়ডাঙ্গা না, কুষ্টিয়া না, সারা দেশে যখন আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে, দেশি-বিদেশি মিডিয়াগুলো ফলাও করে আবরারকে ন্যক্কারজনকভাবে হত্যার সংবাদ পরিবেশন করছে, তখনও দাদা আবদুল গফুর বিশ্বাস আজানা শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করে আছেন, মেধাবী নাতি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।

আবদুল গফুর বিশ্বাসের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আবরার তাকে নিয়মিত দেখতে আসে কিনা। তিনি বলেছিলেন, ছুটিতে বাড়িতে এলেই গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসত আবরার। খোঁজখবরও নিত। মেধাবী নাতিকে নিয়ে গর্বিত এ বৃদ্ধ জীবনের শেষলগ্নে এসেও স্বপ্ন দেখেন তার নাতি অনেক বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে। যদিও তার এবং পরিবারের একসময় চাওয়া ছিল আবরার ডাক্তার হবে।

কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছিলেন আবরার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। কিন্তু নিজের ইচ্ছাতেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। অত্যন্ত মেধাবী আবরার ফাহাদের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। আর বৃদ্ধ দাদা তো প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন- নাতি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। যে প্রতীক্ষার কোনো শেষ নেই…

প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।