ঢাকা ০৪:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন Logo রাশিয়ায় কনসার্ট হলে বন্দুক হামলার নিহত ৬০, দায় স্বীকার আইএসের




রোহিঙ্গা সংকটের মাত্রা বিশ্বকে বুঝতে হবে: শেখ হাসিনা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৫২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ৬৪ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্কঃ 

মিয়ানমারের দমন অভিযানে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অনিশ্চয়তা যে আঞ্চলিক সংকটের মাত্রা পেতে যাচ্ছে, তা বিশ্বকে উপলব্ধি করার আহ্বান জানালেন বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা।

শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “এটি বাস্তবিকপক্ষেই দুঃখজনক যে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান না হওয়ায় আজ এই মহান সভায় এ বিষয়টি আমাকে পুনরায় উত্থাপন করতে হচ্ছে।”

২০১৭ সালের অগাস্টে রোহিঙ্গা জনস্রোত যখন নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে তার এক মাসের মাথায় এই জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে সংকটের সমাধানে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমার সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় গত বছর জাতিসংঘ অধিবেশনে হতাশা প্রকাশ করে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়েছিল তাকে।

হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও পেছনে ফেলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী জীবনের আরও একটি বছর পার হয়ে গেছে। মিয়ানমারের মনোভাব খুব একটা বদলায়নি, সমাধানও আসেনি।
বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি অনুরোধ করব, এই সমস্যার অনিশ্চয়তার বিষয়টি যেন সকলে অনুধাবন করেন। এই সমস্যা এখন আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না।”

১১ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু ক্রমবর্ধমান স্থান সঙ্কট এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে এই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।”

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় রাখাইনে নিজ গৃহে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান এবং তা মিয়ানমারকেই করতে হবে বলে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়নের দুই বছর পূর্তিতে গত ২৫ অগাস্ট কক্সবাজারে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। ছবি: কেএম আসাদমিয়ানমার থেকে বিতাড়নের দুই বছর পূর্তিতে গত ২৫ অগাস্ট কক্সবাজারে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা।

হাসিনা বলেন, “আমরা এমন একটি সমস্যার বোঝা বহন করে চলেছি যা মিয়নামারের তৈরি। এটি সম্পূর্ণ মিয়ানমার এবং তার নিজস্ব নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যকার একটি সমস্যা। তাদের নিজেদেরই এর সমাধান করতে হবে।”
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও তার বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। দুই দফায় প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ ঠিক হলেও তা পিছিয়ে যায় এখনও সেখানে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের অনীহায়।

এই বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যদিও রোহিঙ্গা সমস্যা প্রলম্বিত হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পন করেছে, কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি।”

রোহিঙ্গাদের স্ব-ভূমে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে জাতিসংঘে চারটি প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

তার প্রস্তাবগুলো হল:

# রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে।
# বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে।
# আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হতে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
# আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লংঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশন, এসডিজি বাস্তবায়ন, বাংলাদেশের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের স্থানীয় দোসরদের পরিচালিত গণহত্যায় ৩০ লাখ নিরাপরাধ মানুষ নিহত এবং দুই লাখ নারী নির্যাতনের শিকার হন।

“আমাদের এই নির্মম অভিজ্ঞতাই সব সময় আমাদের নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে সাহস যুগিয়েছে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ সংগ্রাম সফল না হচ্ছে, ততদিন তাদের পক্ষে আমাদের দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত থাকবে।”

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী যোগানদাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী মোতায়েনে জাতিসংঘের আহ্বানে নিয়মিতভাবে সাড়া দিয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এতে মানুষের মনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

নিরাপদ, সুষ্ঠু ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যা। যার মূলে রয়েছে জটিল ও সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র। জাতীয় পর্যায়ে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন এবং মানবপাচার সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি আমরা মানবপাচার বিষয়ক ‘পালেরমো প্রোটোকল’-এ যোগদান করেছি।”

অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতি সামলে নেওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অর্থ-প্রযুক্তিগত, সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

বাংলাদেশ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলেও পারমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে তার অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মূলনীতিকে উপজীব্য করে আমরা রূপপুরে আমাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি। পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রতি অঙ্গীকার মূলত পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানেরই বলিষ্ঠ প্রতিফলন।”

প্রযুক্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মানবসম্পদে ব্যাপক বিনিয়োগ করার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

অধিবেশনের সভাপতির উদ্দেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন সামনে রেখে দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানসম্মত শিক্ষা, জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ এবং অন্তর্ভুক্তির জন্য মাল্টিলেটারিজম বা বহুপাক্ষিকতাকে উজ্জীবিত করার যে আহ্বান আপনি করেছেন তা খুবই প্রাসঙ্গিক।

“বিশ্বের বহুপাক্ষিক ফোরামের কর্ণধার হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদই এই আহ্বানকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে এবং এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তাকে এগিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য রাখে।”

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছেন নাইজেরিয়ার তিজানি মুহাম্মদ-বান্দে।

শেখ হাসিনা বলেন, “টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নে আমাদের যে অঙ্গীকার ও যৌথ আকাঙ্ক্ষা তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে, যা আমাদের জনগণের আস্থা অর্জনে সাহায্য করেছে এবং আমরা টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছি। আমাদের ২১ দফার রাজনৈতিক অঙ্গীকার মূলত জনগণের কল্যাণের নিমিত্ত গৃহীত অঙ্গীকার।”

সারা দেশে ৫ হাজার ৮০০ ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৬০০ সরকারি ই-সেবা দেওয়া, সব নাগরিককে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং প্রতিবন্ধী, অটিজম ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সম্পৃক্ত করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ ধরনের প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ ব্যক্তিকে নিয়মিত সরকারি ভাতা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা, শোভন কর্ম পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বৈষম্য দূরীকরণ বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন কৌশল।

“নারী-পুরুষ সমতা এবং বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তির মাইলফলক অর্জনের পর আমরা এখন মানসম্মত শিক্ষার প্রসারে মনোনিবেশ করেছি।”

তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে ই-শিক্ষা এবং যোগ্য শিক্ষক তৈরির উপর গুরুত্ব দেওয়ায় বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়ার হার ৫০ শতাংশ হতে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

দারিদ্র্য ও অসমতা- এ দুটি বিষয় উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “দ্রুততম সময়ে দারিদ্র্য হ্রাসকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। ২০০৬ সালে আমাদের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২১ শতাংশ।”

‘আমার গ্রাম আমার শহর’, ‘আশ্রায়ণ’, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’র মতো নিজস্ব ও গ্রামবান্ধব উদ্যোগগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে অবদান রাখছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আজ প্রায়শই ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা নানাবিধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া উন্নয়ন কৌশল হিসেবে আমরা মনোনিবেশ করেছি দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সুরক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো বিষয়গুলোতে।”

রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে পৌঁছানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়াসহ অর্থনীতির নানা সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা মনে করি বহুপাক্ষিকতাবাদ বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান এবং সর্বজনীন মঙ্গলের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।

“বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিসংঘই আমাদের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই আশাই ব্যক্ত করেছিলেন।”

একটি শক্তিশালী বহুপাক্ষিক ফোরাম হিসেবে জাতিসংঘের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন সর্বদা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এর সংগঠন এবং সনদে বর্ণিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সদা প্রস্তুত থাকব।”

আগামী শতকের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সক্ষমতার জন্য আগামী বছর জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মানব সভ্যতার জন্য একটি শক্তিশালী জাতিসংঘ তৈরি করতে সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবের বিভিন্ন উদ্যোগ বিশেষত জাতিসংঘ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গৃহীত সংস্কার উদ্যোগগুলোকে সাধুবাদ জানান।

“আমরা আশা করছি, নতুন প্রজন্মের জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম এবং নতুনরূপে সজ্জিত জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী ব্যবস্থার দ্বারা জাতিসংঘ স্বাগতিক রাষ্ট্রের জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




রোহিঙ্গা সংকটের মাত্রা বিশ্বকে বুঝতে হবে: শেখ হাসিনা

আপডেট সময় : ০৮:৫২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অনলাইন ডেস্কঃ 

মিয়ানমারের দমন অভিযানে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অনিশ্চয়তা যে আঞ্চলিক সংকটের মাত্রা পেতে যাচ্ছে, তা বিশ্বকে উপলব্ধি করার আহ্বান জানালেন বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা।

শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “এটি বাস্তবিকপক্ষেই দুঃখজনক যে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান না হওয়ায় আজ এই মহান সভায় এ বিষয়টি আমাকে পুনরায় উত্থাপন করতে হচ্ছে।”

২০১৭ সালের অগাস্টে রোহিঙ্গা জনস্রোত যখন নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে তার এক মাসের মাথায় এই জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে সংকটের সমাধানে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমার সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় গত বছর জাতিসংঘ অধিবেশনে হতাশা প্রকাশ করে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়েছিল তাকে।

হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও পেছনে ফেলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী জীবনের আরও একটি বছর পার হয়ে গেছে। মিয়ানমারের মনোভাব খুব একটা বদলায়নি, সমাধানও আসেনি।
বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি অনুরোধ করব, এই সমস্যার অনিশ্চয়তার বিষয়টি যেন সকলে অনুধাবন করেন। এই সমস্যা এখন আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না।”

১১ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু ক্রমবর্ধমান স্থান সঙ্কট এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে এই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।”

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় রাখাইনে নিজ গৃহে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান এবং তা মিয়ানমারকেই করতে হবে বলে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়নের দুই বছর পূর্তিতে গত ২৫ অগাস্ট কক্সবাজারে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। ছবি: কেএম আসাদমিয়ানমার থেকে বিতাড়নের দুই বছর পূর্তিতে গত ২৫ অগাস্ট কক্সবাজারে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা।

হাসিনা বলেন, “আমরা এমন একটি সমস্যার বোঝা বহন করে চলেছি যা মিয়নামারের তৈরি। এটি সম্পূর্ণ মিয়ানমার এবং তার নিজস্ব নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যকার একটি সমস্যা। তাদের নিজেদেরই এর সমাধান করতে হবে।”
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও তার বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। দুই দফায় প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণ ঠিক হলেও তা পিছিয়ে যায় এখনও সেখানে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের অনীহায়।

এই বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যদিও রোহিঙ্গা সমস্যা প্রলম্বিত হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পন করেছে, কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি।”

রোহিঙ্গাদের স্ব-ভূমে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে জাতিসংঘে চারটি প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

তার প্রস্তাবগুলো হল:

# রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে।
# বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে।
# আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হতে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
# আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লংঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশন, এসডিজি বাস্তবায়ন, বাংলাদেশের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের স্থানীয় দোসরদের পরিচালিত গণহত্যায় ৩০ লাখ নিরাপরাধ মানুষ নিহত এবং দুই লাখ নারী নির্যাতনের শিকার হন।

“আমাদের এই নির্মম অভিজ্ঞতাই সব সময় আমাদের নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে সাহস যুগিয়েছে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ সংগ্রাম সফল না হচ্ছে, ততদিন তাদের পক্ষে আমাদের দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত থাকবে।”

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী যোগানদাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী মোতায়েনে জাতিসংঘের আহ্বানে নিয়মিতভাবে সাড়া দিয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এতে মানুষের মনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

নিরাপদ, সুষ্ঠু ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যা। যার মূলে রয়েছে জটিল ও সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র। জাতীয় পর্যায়ে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন এবং মানবপাচার সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি আমরা মানবপাচার বিষয়ক ‘পালেরমো প্রোটোকল’-এ যোগদান করেছি।”

অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতি সামলে নেওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অর্থ-প্রযুক্তিগত, সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

বাংলাদেশ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলেও পারমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে তার অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মূলনীতিকে উপজীব্য করে আমরা রূপপুরে আমাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি। পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রতি অঙ্গীকার মূলত পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানেরই বলিষ্ঠ প্রতিফলন।”

প্রযুক্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মানবসম্পদে ব্যাপক বিনিয়োগ করার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

অধিবেশনের সভাপতির উদ্দেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন সামনে রেখে দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানসম্মত শিক্ষা, জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ এবং অন্তর্ভুক্তির জন্য মাল্টিলেটারিজম বা বহুপাক্ষিকতাকে উজ্জীবিত করার যে আহ্বান আপনি করেছেন তা খুবই প্রাসঙ্গিক।

“বিশ্বের বহুপাক্ষিক ফোরামের কর্ণধার হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদই এই আহ্বানকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে এবং এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তাকে এগিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য রাখে।”

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছেন নাইজেরিয়ার তিজানি মুহাম্মদ-বান্দে।

শেখ হাসিনা বলেন, “টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নে আমাদের যে অঙ্গীকার ও যৌথ আকাঙ্ক্ষা তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে, যা আমাদের জনগণের আস্থা অর্জনে সাহায্য করেছে এবং আমরা টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছি। আমাদের ২১ দফার রাজনৈতিক অঙ্গীকার মূলত জনগণের কল্যাণের নিমিত্ত গৃহীত অঙ্গীকার।”

সারা দেশে ৫ হাজার ৮০০ ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ৬০০ সরকারি ই-সেবা দেওয়া, সব নাগরিককে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং প্রতিবন্ধী, অটিজম ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সম্পৃক্ত করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ ধরনের প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ ব্যক্তিকে নিয়মিত সরকারি ভাতা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা, শোভন কর্ম পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বৈষম্য দূরীকরণ বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন কৌশল।

“নারী-পুরুষ সমতা এবং বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তির মাইলফলক অর্জনের পর আমরা এখন মানসম্মত শিক্ষার প্রসারে মনোনিবেশ করেছি।”

তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে ই-শিক্ষা এবং যোগ্য শিক্ষক তৈরির উপর গুরুত্ব দেওয়ায় বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়ার হার ৫০ শতাংশ হতে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

দারিদ্র্য ও অসমতা- এ দুটি বিষয় উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “দ্রুততম সময়ে দারিদ্র্য হ্রাসকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। ২০০৬ সালে আমাদের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২১ শতাংশ।”

‘আমার গ্রাম আমার শহর’, ‘আশ্রায়ণ’, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’র মতো নিজস্ব ও গ্রামবান্ধব উদ্যোগগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে অবদান রাখছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আজ প্রায়শই ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা নানাবিধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া উন্নয়ন কৌশল হিসেবে আমরা মনোনিবেশ করেছি দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সুরক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো বিষয়গুলোতে।”

রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে পৌঁছানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়াসহ অর্থনীতির নানা সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা মনে করি বহুপাক্ষিকতাবাদ বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান এবং সর্বজনীন মঙ্গলের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।

“বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিসংঘই আমাদের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই আশাই ব্যক্ত করেছিলেন।”

একটি শক্তিশালী বহুপাক্ষিক ফোরাম হিসেবে জাতিসংঘের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন সর্বদা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এর সংগঠন এবং সনদে বর্ণিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সদা প্রস্তুত থাকব।”

আগামী শতকের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সক্ষমতার জন্য আগামী বছর জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মানব সভ্যতার জন্য একটি শক্তিশালী জাতিসংঘ তৈরি করতে সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবের বিভিন্ন উদ্যোগ বিশেষত জাতিসংঘ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গৃহীত সংস্কার উদ্যোগগুলোকে সাধুবাদ জানান।

“আমরা আশা করছি, নতুন প্রজন্মের জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম এবং নতুনরূপে সজ্জিত জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী ব্যবস্থার দ্বারা জাতিসংঘ স্বাগতিক রাষ্ট্রের জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে।”