ঢাকা ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা, ছাত্রীর মাকে একঘরে করেছে সমাজ!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৫:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০১৯ ৭৭ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুরঃ 
রংপুর মহানগরীর নজিরেরহাটে তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ২৫সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুটি বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক রহস্যজনকভাবে বিষক্রিয়ায় মারা গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর মা মা বাদী হয়ে হাজিরহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এলাকায় তাদের এখন থাকার জন্য ঘরভাড়াও দিচ্ছে না কেউ!

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হাজিরহাট থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম জানান, ভুক্তভোগী শিশুটির মা রংপুর মহানগরীর নজিরেরহাটের বাসিন্দা পাশ্ববর্তী জুয়েলের মালিকানাধীন সোনার বাংলা নার্সারি ও এগ্রোবাংলা লিমিটেডের কেয়ারটেকার তোফাজ্জল হোসেনের রান্নাবাড়ার কাজ করতেন। মায়ের কাজ করার সুবাদে তার কন্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সেখানে যাতায়াত করতো।

মায়ের সঙ্গে সেও ওই নার্সারিতে বিভিন্ন কাজকর্ম করতো। এরই মধ্যে সে অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেখা যায় সে ২৫ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা। এরপর মেয়েটিকে নজিরেরহাটে ল্যাপরোসি মিশনে ভর্তি করা হয়। মেয়ের মা ১৮আগস্ট হাজিরহাট থানায় অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে একটি ধর্ষণ মামলা করেন।

হাজিরহাট থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক অভিযোগ করা হয়েছে সে মারা গেছে। প্রাথমিকভাবে তার বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর বিষয়টি বলা হচ্ছে। তবে তার মৃত্যুটি স্বাভাবিক কি না বিষক্রিয়ায় হয়েছে সে বিষয়টি আমরা তদন্ত শুরু করেছি। হাসপাতালের কাগজপত্র নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটি ছোট ও অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। তাকে আমরা রিকভারি করার চেষ্টা করছি। তবে খুব শিগগিরই ধর্ষণ ও অভিযুক্ত ধর্ষকের মৃত্যুর বিষয়টির রহস্য উদঘাটন করা হবে।’

ল্যাপ্রসি মিশনের সুপারভাইজার সিস্টার নওমি জানান, শিশুটি এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাকে সেবা যত্ন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনার প্রকৃত বিচার হওয়া দরকার।

রাধাকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোবায়দা বেগম বলেন, ‘আমাদের স্কুলের শিশু মেয়েটির ওপর যে শারীরিক নির্যাতন করা হলো তা আদিম উদ্যমতাকেও হারা মানিয়েছে। আমরা এর যথাযথ বিচার চাই। বিষয়টি জানার পর পরই ল্যাপ্রসি মিশনের আমিসহ কয়েকজন শিক্ষক গিয়ে মেয়েটিকে দেখে এসেছি। শিশু বয়সে এখন তার পেটে আরেকটি শিশু। এই যন্ত্রণার ভার মেয়েটি সইতে পারছে না। আমরা এ ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানাই। স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা বিষয়টি আগে শুনিনি। মেয়েটির পরিবারও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। স্কুল খোলার পর পুলিশ এসেছিল। আমরা পুলিশকে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছি। সে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষাও দিয়েছিল। আমরা চাই, মেয়েটিকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে আগে মানসিকভাবে সুস্থ্য করা হোক।’

ভুক্তভোগী শিশুটির মা জানান, ‘সদরের চন্দনপাট ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর সরদারপাড়া গ্রামের মৃত খেতু শেখের পুত্র তোফাজ্জল হোসেন (৫৫) অনেক বছর থেকে সোনারবাংলা নার্সারি দেখাশুনার কাজ করতো। আমি তার রান্নাবান্নার কাজ করে দিতাম। আমার মেয়েও সেখানে আসা যাওয়া করতো। আমার মেয়ে আমাকে জানিয়েছে এরই মধ্যে তোফাজ্জল আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। আমি আমার কথা প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু মেয়ের পেট বড় হওয়ার পর বিষয়টি বুঝতে পেয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জানাজানি হওয়ার পর শুনেছি তোফাজ্জল নার্সারিতে দেওয়া কীটনাশক ওষুধ খেয়ে গত শুক্রবার অসুস্থ হয়। তাকে হাসাপাতালে নেওয়া হলে সে মারা যায়। আমি মামলা করেছি। এর পেছনে তোফাজ্জল নাকি আরও অন্য কেউ জড়িত আছে সেটা খুঁজে বের করবে পুলিশ।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমার এই মেয়েটার কি হবে? কি হবে পেটের বাচ্চাটার? সেটা আমি জানতে চাই। আমাকে এখন কেউ ঘর ভাড়াও দিচ্ছে না। সমাজে একঘরে করে রেখেছে আমাকে!’

সোনারবাংলা নার্সারি এন্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক জুয়েল বলেন, ‘তিন বছর থেকে তোফাজ্জল আমার নার্সারির সব বিষয় দেখাশুনা করে আসছে। আমি কখনও ব্যাংকে, কখনও হাতে হাতে তাকে প্রয়োজনীয় টাকাপয়সা দিতাম। ঈদের ছুটিতে আমি গ্রামের বাড়িতে যাই। ১৬ জুলাই শুক্রবার খবর পাই তোফাজ্জল বিষ খেয়েছে। সাথে সাথে আমি লোকপাঠিয়ে তাঁকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে হার্ট এ্যটাকে সে মারা যায়। এরপর তাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। আমার সাধ্য অনুযায়ী তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাবস্থাও করেছি।’

তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে একজন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না।’ পোস্টমোর্টেম ছাড়াই দাফনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘পরিবার চায়নি তাই পোস্ট মোর্টেম হয়নি।’

অন্যদিকে চন্দনপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ওই বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেনের বিষয়টি লোক মারফত জানতে পাই। সোনারবাংলা নার্সারিতে চাকরি করতো সে। সেখানেই সে বিষ পান করে। এরপর মালিক তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করলে তিনি সেখানেই মারা যায়। বিষয়টি জানার পর আমি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা পোস্টমোর্টেম না করার ব্যাপারে মতামত দেওয়ায় পোস্ট মোর্টেম ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই এখন বলছেন তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার ব্যাপারে একটি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। আসলে তিনি এই দোষে অভিযুক্ত কি না অন্য কেউ তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

তবে এলাকাবাসী ও পুলিশের বিভিন্ন সূত্র বলছে, ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তোফাজ্জল না কি অন্য কেউ আছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ তোফাজ্জলের বিষপানে মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক। তার বাড়ির লোকজনও সেভাবে কথা বলছে না। পুলিশ সূত্রের ধারণা একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী তোফাজ্জলের মৃত্যুর বিষয়টির মাধ্যমে নিজেদের নিরাপদ করার চক্রান্ত করে থাকতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা, ছাত্রীর মাকে একঘরে করেছে সমাজ!

আপডেট সময় : ০৬:৩৫:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০১৯

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুরঃ 
রংপুর মহানগরীর নজিরেরহাটে তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ২৫সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুটি বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক রহস্যজনকভাবে বিষক্রিয়ায় মারা গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর মা মা বাদী হয়ে হাজিরহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এলাকায় তাদের এখন থাকার জন্য ঘরভাড়াও দিচ্ছে না কেউ!

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হাজিরহাট থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম জানান, ভুক্তভোগী শিশুটির মা রংপুর মহানগরীর নজিরেরহাটের বাসিন্দা পাশ্ববর্তী জুয়েলের মালিকানাধীন সোনার বাংলা নার্সারি ও এগ্রোবাংলা লিমিটেডের কেয়ারটেকার তোফাজ্জল হোসেনের রান্নাবাড়ার কাজ করতেন। মায়ের কাজ করার সুবাদে তার কন্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সেখানে যাতায়াত করতো।

মায়ের সঙ্গে সেও ওই নার্সারিতে বিভিন্ন কাজকর্ম করতো। এরই মধ্যে সে অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেখা যায় সে ২৫ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা। এরপর মেয়েটিকে নজিরেরহাটে ল্যাপরোসি মিশনে ভর্তি করা হয়। মেয়ের মা ১৮আগস্ট হাজিরহাট থানায় অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে একটি ধর্ষণ মামলা করেন।

হাজিরহাট থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক অভিযোগ করা হয়েছে সে মারা গেছে। প্রাথমিকভাবে তার বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর বিষয়টি বলা হচ্ছে। তবে তার মৃত্যুটি স্বাভাবিক কি না বিষক্রিয়ায় হয়েছে সে বিষয়টি আমরা তদন্ত শুরু করেছি। হাসপাতালের কাগজপত্র নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটি ছোট ও অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। তাকে আমরা রিকভারি করার চেষ্টা করছি। তবে খুব শিগগিরই ধর্ষণ ও অভিযুক্ত ধর্ষকের মৃত্যুর বিষয়টির রহস্য উদঘাটন করা হবে।’

ল্যাপ্রসি মিশনের সুপারভাইজার সিস্টার নওমি জানান, শিশুটি এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাকে সেবা যত্ন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনার প্রকৃত বিচার হওয়া দরকার।

রাধাকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোবায়দা বেগম বলেন, ‘আমাদের স্কুলের শিশু মেয়েটির ওপর যে শারীরিক নির্যাতন করা হলো তা আদিম উদ্যমতাকেও হারা মানিয়েছে। আমরা এর যথাযথ বিচার চাই। বিষয়টি জানার পর পরই ল্যাপ্রসি মিশনের আমিসহ কয়েকজন শিক্ষক গিয়ে মেয়েটিকে দেখে এসেছি। শিশু বয়সে এখন তার পেটে আরেকটি শিশু। এই যন্ত্রণার ভার মেয়েটি সইতে পারছে না। আমরা এ ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানাই। স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা বিষয়টি আগে শুনিনি। মেয়েটির পরিবারও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। স্কুল খোলার পর পুলিশ এসেছিল। আমরা পুলিশকে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছি। সে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষাও দিয়েছিল। আমরা চাই, মেয়েটিকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে আগে মানসিকভাবে সুস্থ্য করা হোক।’

ভুক্তভোগী শিশুটির মা জানান, ‘সদরের চন্দনপাট ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর সরদারপাড়া গ্রামের মৃত খেতু শেখের পুত্র তোফাজ্জল হোসেন (৫৫) অনেক বছর থেকে সোনারবাংলা নার্সারি দেখাশুনার কাজ করতো। আমি তার রান্নাবান্নার কাজ করে দিতাম। আমার মেয়েও সেখানে আসা যাওয়া করতো। আমার মেয়ে আমাকে জানিয়েছে এরই মধ্যে তোফাজ্জল আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। আমি আমার কথা প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু মেয়ের পেট বড় হওয়ার পর বিষয়টি বুঝতে পেয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জানাজানি হওয়ার পর শুনেছি তোফাজ্জল নার্সারিতে দেওয়া কীটনাশক ওষুধ খেয়ে গত শুক্রবার অসুস্থ হয়। তাকে হাসাপাতালে নেওয়া হলে সে মারা যায়। আমি মামলা করেছি। এর পেছনে তোফাজ্জল নাকি আরও অন্য কেউ জড়িত আছে সেটা খুঁজে বের করবে পুলিশ।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমার এই মেয়েটার কি হবে? কি হবে পেটের বাচ্চাটার? সেটা আমি জানতে চাই। আমাকে এখন কেউ ঘর ভাড়াও দিচ্ছে না। সমাজে একঘরে করে রেখেছে আমাকে!’

সোনারবাংলা নার্সারি এন্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক জুয়েল বলেন, ‘তিন বছর থেকে তোফাজ্জল আমার নার্সারির সব বিষয় দেখাশুনা করে আসছে। আমি কখনও ব্যাংকে, কখনও হাতে হাতে তাকে প্রয়োজনীয় টাকাপয়সা দিতাম। ঈদের ছুটিতে আমি গ্রামের বাড়িতে যাই। ১৬ জুলাই শুক্রবার খবর পাই তোফাজ্জল বিষ খেয়েছে। সাথে সাথে আমি লোকপাঠিয়ে তাঁকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে হার্ট এ্যটাকে সে মারা যায়। এরপর তাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। আমার সাধ্য অনুযায়ী তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাবস্থাও করেছি।’

তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে একজন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না।’ পোস্টমোর্টেম ছাড়াই দাফনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘পরিবার চায়নি তাই পোস্ট মোর্টেম হয়নি।’

অন্যদিকে চন্দনপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ওই বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেনের বিষয়টি লোক মারফত জানতে পাই। সোনারবাংলা নার্সারিতে চাকরি করতো সে। সেখানেই সে বিষ পান করে। এরপর মালিক তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করলে তিনি সেখানেই মারা যায়। বিষয়টি জানার পর আমি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা পোস্টমোর্টেম না করার ব্যাপারে মতামত দেওয়ায় পোস্ট মোর্টেম ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই এখন বলছেন তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার ব্যাপারে একটি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। আসলে তিনি এই দোষে অভিযুক্ত কি না অন্য কেউ তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

তবে এলাকাবাসী ও পুলিশের বিভিন্ন সূত্র বলছে, ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তোফাজ্জল না কি অন্য কেউ আছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ তোফাজ্জলের বিষপানে মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক। তার বাড়ির লোকজনও সেভাবে কথা বলছে না। পুলিশ সূত্রের ধারণা একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী তোফাজ্জলের মৃত্যুর বিষয়টির মাধ্যমে নিজেদের নিরাপদ করার চক্রান্ত করে থাকতে পারে।