ঢাকা ০২:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




৪ বছর গর্তে আটকে থাকা রহস্যময় কাদেরের জীবন! 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:২৫:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০১৯ ৬০ বার পড়া হয়েছে

গাজী জাহিদুর রহমান, তালা (সাতক্ষীরা) 

বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই সমানে লিখতে পড়তে পারেন। শুদ্ধ সুন্দর করে কথা বলতে পারেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে হেঁটেছেন উচ্চশিক্ষার পথেও। অথচ ভাগ্যবিড়ম্বিত কাদেরের জীবন এখন আটকে গেছে একটি গর্ত ও তার ভেতরে পড়ে থাকা মেহগনি গাছের গুঁড়িতে।

আব্দুল কাদের একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। বয়স প্রায় ৫৩ বছর। বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শাহাজাতপুর গ্রামে। পাইকগাছার রাড়ুলি আর.কে.বি.কে হরিশচন্দ্র কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট থেকে ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। ১৯৮৫ সালে কপিলমুনি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর একই কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় আকস্মিক মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে তার।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তালা উপজেলার শাহাজাতপুর গ্রামের শওকত আলী মোড়লের তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে এম এম আব্দুল কাদের সবার বড়। একসময় পারিবারিক সচ্ছলতা ভালো না থাকলেও শওকতের বিদ্যানুরাগী মনোভাব সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত করে। তবে ভাগ্য বিড়ম্বিত আব্দুল কাদেরকে আর এগুতে দেয়নি নির্মম নিয়তি। জমি-জমা সংক্রান্ত একটি পারিবারিক বিরোধ আকস্মিক থমকে দেয় তার গতিময় জীবন। যার জের ধরে তারই এক চাচাতো ভাই তাকে হত্যার উদ্দেশে তাল কাঠের রুল দিয়ে নির্মম নির্যাতন করে। এতে সে প্রাণে বেঁচে গেলেও চরমভাবে মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে তার। এরপর সর্বস্ব বিক্রি করে চিকিত্সায় সেবারের মত প্রাণে বেঁচে গেলেও আর ভাল হয়ে ওঠেননি আব্দুল কাদের। বন্ধ হয়ে যায় তার পড়া-লেখা। এরপর কিছু দিন অন্তর অন্তর আকস্মিক মাথায় গণ্ডগোল, স্থানীয় চিকিত্সায় আবার ভাল হয়ে ওঠা। এলাকাবাসীর পরামর্শে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত আসে হয়তো দাম্পত্য জীবনে মস্তিষ্কের সফলতা অসতে পারে। বিয়েও দেয়া হয় তাছলিমা নামে এক মেয়ের সাথে। দাম্পত্য জীবনে এক মেয়ে ফাতেমার জন্ম হয়। তবে মেয়ের জন্মের কিছুদিন পর তাছলিমার মৃত্যু ঘটে। নিঃসঙ্গতায় ফের পাগলপ্রায় অবস্থা হয় তার। এরপর ফের তাকে জুলেখা নামে এক মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। নতুন করে দাম্পত্য জীবনে তাদের দু’কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। যার একজন আসমা খাতুন ও অপরজন ফাইম খাতুন।

আব্দুর কাদেরর দাম্পত্য জীবন শুরু হলেও সুখের হয়নি। ছোট মেয়ে ফাইমার জন্মের পরেই একেবারেই বিগড়ে যান কাদের। স্বজনদের ধরে মারপিট, ভাঙচুর ও প্রতিবেশীদের ক্ষতিসাধন শুরু করতে থাকেন। প্রতিদিন বাড়তে থাকে তার পাগলামি। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে তাকে প্রথমে বারান্দায় হাতে-পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা শুরু করেন। তবে, সারাক্ষণ উচ্চস্বরে চিত্কার ও অশ্লীল বাক্যবাণে বিরক্ত হয়ে পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে বাগানের মধ্যে গাছে বেঁধে রাখা শুরু করেন। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের ফেলে এখন তার ঠাঁই হয়েছে বাড়ির পাশের বাগানের মধ্যে অন্ধকার গর্তে। রাত-দিন ঝড়-বৃষ্টিতে এক হাত ও পায়ে শিকলে বাঁধা পড়েছে তার গদ্যময় নিঃসঙ্গ জীবন। সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-সাধ আটকে গেছে আঁটসাঁট একটি গর্ত ও তার উপর পড়ে থাকা একটি ছোট মেহগনি গাছের উপর। এভাবেই গত প্রায় চারটি বছর অন্ধকার গর্তেই নিঃসঙ্গতায় কাটছে তার জীবন।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে চিরাচরিত স্বভাবেই দেখা যায় তাকে। তবে কথোপকথনে মোটেও মস্তিষ্ক বিকৃত বলে মনে হয়নি। প্রথম দেখাতেই সাংবাদিকদের দেখে সালাম দেন তিনি। তারপর একে একে তার জীবনের সব ঘটনার নির্ভুল বর্ণনা দিতে থাকেন। কখনো পুরনোকে মনে করে আবেগ আপ্লুত হতে দেখা যায় তাকে। এ সময় তিনি তার শৈশব-কৈশোরের সব স্মৃতির রোমন্থন করতে থাকেন। তবে তাকে করা সব প্রশ্নের উত্তর দেন মধুর কণ্ঠে সুরে সুরে। তবে কথার ফাঁকে ফাঁকে নিজের শিকলে বাঁধা জীবন থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও মুক্তির আকুতি জানান।

আব্দুল কাদের বলেন, আপনারা জানেন? আমি আমার ৪ বছরের মেয়ে ফাইমাকে কখনো কোলে নেয়নি, আদর করা হয়নি কখনো তাকে। আমাকে দূর থেকে দেখেও ভয়ে পালিয়ে যায় বলে ফের কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

একপর্যায়ে তার সরল স্বীকারোক্তির নির্ভুলতা যাচাই করতে তার ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি মুখে সুরে সুরে বলার পাশাপাশি খাতা-কলম চান লিখে দিতে। এরপর ইংরেজিতে লেখেন তার বায়োডাটা। তবে কেন একজন সুস্থ-সবল মানুষকে ৪ বছর এভাবেই বেঁধে রাখা? এমন প্রশ্ন করতেই কাদেরের মা ও স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় চোখাচোখি, কানাকানিসহ নানা ইশারা। যেন, কিছু একটা গোপন করতে চাওয়া। তবে কেন তাদের এই গোপনীয়তা? নাকি নীরবতা? মুহূর্তে নানান কেন বার বার উঁকি দিতে থাকে।

একপর্যায়ে কাদেরের মা রহিমা বেগম (৭০) ছেলের উপর ঘটে যাওয়া নানা নির্যাতনের বর্ণনা শুরু করলে স্ত্রী জুলেখা তাতে বাঁধ সাধেন। যেন তাদের চোখে-মুখে তখন অন্য রকম এক ভীতি কাজ করছিল। কিছু একটা গোপন করতে চাইছেন তারা। তবে কথোপকথনের একপর্যায়ে মৃতপ্রায় কাদেরের একেবারে মৃত্যুর শঙ্কাটি বার বার সামনে এসে দাঁড়ায়। তবে কিসের সেই শঙ্কা ? ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানে উঠে আসতে পারে তা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক রাজিব হোসেন রাজু বলেন, এমন অবস্থায় একজন মানুষ তার ইউনিয়নে নির্মম জীবন-যাপন করছেন তা তার জানা ছিল না। সম্প্রতি স্থানীয় এক ফায়ার সার্ভিস কর্মীর সহযোগিতায় দেখতে যান তাকে। তাৎক্ষণিক সহযোগিতাও করেন। আব্দুল কাদেরের জন্য ভবিষ্যতে কিছু করার মানসিকতাও পোষণ করেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর পাশাপাশি পরিবারের দাবি, সুচিকিৎসায় স্মৃতি ফিরতে পারে আব্দুল কাদেরের। ফিরে পেতে পারে তার স্বাভাবিক জীবন। তবে সে জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা। এ জন্য তারা বিত্তবানদের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




৪ বছর গর্তে আটকে থাকা রহস্যময় কাদেরের জীবন! 

আপডেট সময় : ১২:২৫:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০১৯

গাজী জাহিদুর রহমান, তালা (সাতক্ষীরা) 

বাংলা-ইংরেজি দুই ভাষাতেই সমানে লিখতে পড়তে পারেন। শুদ্ধ সুন্দর করে কথা বলতে পারেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে হেঁটেছেন উচ্চশিক্ষার পথেও। অথচ ভাগ্যবিড়ম্বিত কাদেরের জীবন এখন আটকে গেছে একটি গর্ত ও তার ভেতরে পড়ে থাকা মেহগনি গাছের গুঁড়িতে।

আব্দুল কাদের একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। বয়স প্রায় ৫৩ বছর। বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শাহাজাতপুর গ্রামে। পাইকগাছার রাড়ুলি আর.কে.বি.কে হরিশচন্দ্র কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট থেকে ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। ১৯৮৫ সালে কপিলমুনি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর একই কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় আকস্মিক মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে তার।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তালা উপজেলার শাহাজাতপুর গ্রামের শওকত আলী মোড়লের তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে এম এম আব্দুল কাদের সবার বড়। একসময় পারিবারিক সচ্ছলতা ভালো না থাকলেও শওকতের বিদ্যানুরাগী মনোভাব সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত করে। তবে ভাগ্য বিড়ম্বিত আব্দুল কাদেরকে আর এগুতে দেয়নি নির্মম নিয়তি। জমি-জমা সংক্রান্ত একটি পারিবারিক বিরোধ আকস্মিক থমকে দেয় তার গতিময় জীবন। যার জের ধরে তারই এক চাচাতো ভাই তাকে হত্যার উদ্দেশে তাল কাঠের রুল দিয়ে নির্মম নির্যাতন করে। এতে সে প্রাণে বেঁচে গেলেও চরমভাবে মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটে তার। এরপর সর্বস্ব বিক্রি করে চিকিত্সায় সেবারের মত প্রাণে বেঁচে গেলেও আর ভাল হয়ে ওঠেননি আব্দুল কাদের। বন্ধ হয়ে যায় তার পড়া-লেখা। এরপর কিছু দিন অন্তর অন্তর আকস্মিক মাথায় গণ্ডগোল, স্থানীয় চিকিত্সায় আবার ভাল হয়ে ওঠা। এলাকাবাসীর পরামর্শে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত আসে হয়তো দাম্পত্য জীবনে মস্তিষ্কের সফলতা অসতে পারে। বিয়েও দেয়া হয় তাছলিমা নামে এক মেয়ের সাথে। দাম্পত্য জীবনে এক মেয়ে ফাতেমার জন্ম হয়। তবে মেয়ের জন্মের কিছুদিন পর তাছলিমার মৃত্যু ঘটে। নিঃসঙ্গতায় ফের পাগলপ্রায় অবস্থা হয় তার। এরপর ফের তাকে জুলেখা নামে এক মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। নতুন করে দাম্পত্য জীবনে তাদের দু’কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। যার একজন আসমা খাতুন ও অপরজন ফাইম খাতুন।

আব্দুর কাদেরর দাম্পত্য জীবন শুরু হলেও সুখের হয়নি। ছোট মেয়ে ফাইমার জন্মের পরেই একেবারেই বিগড়ে যান কাদের। স্বজনদের ধরে মারপিট, ভাঙচুর ও প্রতিবেশীদের ক্ষতিসাধন শুরু করতে থাকেন। প্রতিদিন বাড়তে থাকে তার পাগলামি। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়ে তাকে প্রথমে বারান্দায় হাতে-পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা শুরু করেন। তবে, সারাক্ষণ উচ্চস্বরে চিত্কার ও অশ্লীল বাক্যবাণে বিরক্ত হয়ে পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে বাগানের মধ্যে গাছে বেঁধে রাখা শুরু করেন। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানদের ফেলে এখন তার ঠাঁই হয়েছে বাড়ির পাশের বাগানের মধ্যে অন্ধকার গর্তে। রাত-দিন ঝড়-বৃষ্টিতে এক হাত ও পায়ে শিকলে বাঁধা পড়েছে তার গদ্যময় নিঃসঙ্গ জীবন। সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-সাধ আটকে গেছে আঁটসাঁট একটি গর্ত ও তার উপর পড়ে থাকা একটি ছোট মেহগনি গাছের উপর। এভাবেই গত প্রায় চারটি বছর অন্ধকার গর্তেই নিঃসঙ্গতায় কাটছে তার জীবন।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে চিরাচরিত স্বভাবেই দেখা যায় তাকে। তবে কথোপকথনে মোটেও মস্তিষ্ক বিকৃত বলে মনে হয়নি। প্রথম দেখাতেই সাংবাদিকদের দেখে সালাম দেন তিনি। তারপর একে একে তার জীবনের সব ঘটনার নির্ভুল বর্ণনা দিতে থাকেন। কখনো পুরনোকে মনে করে আবেগ আপ্লুত হতে দেখা যায় তাকে। এ সময় তিনি তার শৈশব-কৈশোরের সব স্মৃতির রোমন্থন করতে থাকেন। তবে তাকে করা সব প্রশ্নের উত্তর দেন মধুর কণ্ঠে সুরে সুরে। তবে কথার ফাঁকে ফাঁকে নিজের শিকলে বাঁধা জীবন থেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও মুক্তির আকুতি জানান।

আব্দুল কাদের বলেন, আপনারা জানেন? আমি আমার ৪ বছরের মেয়ে ফাইমাকে কখনো কোলে নেয়নি, আদর করা হয়নি কখনো তাকে। আমাকে দূর থেকে দেখেও ভয়ে পালিয়ে যায় বলে ফের কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

একপর্যায়ে তার সরল স্বীকারোক্তির নির্ভুলতা যাচাই করতে তার ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি মুখে সুরে সুরে বলার পাশাপাশি খাতা-কলম চান লিখে দিতে। এরপর ইংরেজিতে লেখেন তার বায়োডাটা। তবে কেন একজন সুস্থ-সবল মানুষকে ৪ বছর এভাবেই বেঁধে রাখা? এমন প্রশ্ন করতেই কাদেরের মা ও স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় চোখাচোখি, কানাকানিসহ নানা ইশারা। যেন, কিছু একটা গোপন করতে চাওয়া। তবে কেন তাদের এই গোপনীয়তা? নাকি নীরবতা? মুহূর্তে নানান কেন বার বার উঁকি দিতে থাকে।

একপর্যায়ে কাদেরের মা রহিমা বেগম (৭০) ছেলের উপর ঘটে যাওয়া নানা নির্যাতনের বর্ণনা শুরু করলে স্ত্রী জুলেখা তাতে বাঁধ সাধেন। যেন তাদের চোখে-মুখে তখন অন্য রকম এক ভীতি কাজ করছিল। কিছু একটা গোপন করতে চাইছেন তারা। তবে কথোপকথনের একপর্যায়ে মৃতপ্রায় কাদেরের একেবারে মৃত্যুর শঙ্কাটি বার বার সামনে এসে দাঁড়ায়। তবে কিসের সেই শঙ্কা ? ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানে উঠে আসতে পারে তা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক রাজিব হোসেন রাজু বলেন, এমন অবস্থায় একজন মানুষ তার ইউনিয়নে নির্মম জীবন-যাপন করছেন তা তার জানা ছিল না। সম্প্রতি স্থানীয় এক ফায়ার সার্ভিস কর্মীর সহযোগিতায় দেখতে যান তাকে। তাৎক্ষণিক সহযোগিতাও করেন। আব্দুল কাদেরের জন্য ভবিষ্যতে কিছু করার মানসিকতাও পোষণ করেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর পাশাপাশি পরিবারের দাবি, সুচিকিৎসায় স্মৃতি ফিরতে পারে আব্দুল কাদেরের। ফিরে পেতে পারে তার স্বাভাবিক জীবন। তবে সে জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা। এ জন্য তারা বিত্তবানদের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।