ঢাকা ০৪:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




আমজাদ হোসেনের অপূর্ব সৃষ্টি ও অর্জন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৪৫:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪২ বার পড়া হয়েছে

 

 

বিনোদন ডেস্কঃ দেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও লেখক আমজাদ হোসেন। পরিবার পরিজন ও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে যিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটার দিকে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক সহায়তায় গত কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তার পরিচালনা জীবন শুরু করেছিলেন ১৯৬১ সালে। ওই বছর তার নির্মিত ‘তোমার আমার’ ছবিটি মুক্তি পায়। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে বাংলা চলচ্চিত্রকে তিনি হৃদয় উজাড় করে পরিপূর্ণ করেছেন। পেয়েছেনও দুহাত ভরে। ১২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ ছয়টি বাচসাস পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে।

সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের (১৩টি) পর তিনি সর্বাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘একুশে পদক’। সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার।

এতসব অর্জনের পেছনে আমজাদ হোসেনের ছিল অক্লান্ত পরিশ্রম। রূপালি পর্দার দর্শকদের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্র তিনি নির্মাণ করে গেছেন। তিনি নেই কিন্তু তার সেসব সৃষ্টির কথা অনন্তকাল ধরে সিনেপ্রেমী মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হবে। তবে শুধু নির্মাতা হিসেবে নয়, চিত্রনাট্যকার ও গীতিকার হিসেবেও তার ছিল সমান সাফল্য।

১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেন নির্মাণ করেছিলেন ‘নয়নমনি’ ছবিটি। তিনটি বিভাগে এটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল। সেগুলো হলো শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (প্রযোজক) ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার। সত্তরের দশকের সুপারহিট এই ছবির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফারুক ও ববিতা। আরও ছিলেন আনোয়ার হোসেন, রওশন জামিল, সৈয়দ হাসান ইমাম, আনোয়ারা, এটিএম শামসুজ্জামান, সুলতানা জামান ও টেলি সামাদ।

১৯৭৮ সালে রূপালি পর্দায় ওঠে তার আর এক সৃষ্টি ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’। এই ছবির জন্যও তিনটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন প্রয়াত আমজাদ হোসেন। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার। এই ছবিটিরও প্রধান চরিত্রে ছিলেন ফারুক-ববিতা। এমনকি আনোয়ার হোসেন, রওশন জামিল ও এটিএম শামসুজ্জামানরাও ছিলেন।

ঠিক তার পরের বছর আরও দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তোলেন আমজাদ হোসেন। সৌজন্য তার ‘সুন্দরী’ ছবিটি। ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা ও শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পুরস্কার লাভ করেন। নির্মাতার ‘সুন্দরী’র সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন চিত্রনায়িকা ববিতা। তবে এবার নায়ক হিসেবে আনেন ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ খ্যাত ইলিয়াস কাঞ্চনকে। আরও ছিলেন জসিম, আনোয়ার হোসেন ও আনোয়ারা। এই ছবিটি মোট সাতটি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল।

‘ভাত দে’। এটি চিত্রনায়িকা সাবানার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি। যেটি পরিচালনা করে তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন আমজাদ হোসেন। শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন সাবানাও। তার বিপরীতে নায়ক ছিলেন আলমগীর। ১৯৮৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রথম ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’-এ অংশ নিয়েছিল আমজাদ হোসেনের এই ‘ভাত দে’ ছবিটি।

নির্মাতা তার ক্যারিয়ারের শেষ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটি পান ২০০৪ সালে। ওই বছর ‘জয়যাত্রা’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনিকারের পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। যদিও এটির চিত্রনাট্য লেখা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আর এক গুণি অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। এটিতে অভিনয় করেছিলেন বিপাশা হায়াত, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান ও আবুল হায়াতের মতো অভিনয়শিল্পীরা।

এতসব সৃষ্টি ও অর্জন রেখে ৭৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমজাদ হোসেন। সব সৃষ্টি ও অর্জন এখন শুধুই স্মৃতি। তার মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন পরিবার পরিজন ও নির্মাতার অধিকাংশ পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবির নায়িকা ববিতাসহ সকলে। প্রয়াত এই নির্মাতার মরদেহ আজ ব্যাংকক থেকে দেশে আসার কথা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




আমজাদ হোসেনের অপূর্ব সৃষ্টি ও অর্জন

আপডেট সময় : ১২:৪৫:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

 

 

বিনোদন ডেস্কঃ দেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও লেখক আমজাদ হোসেন। পরিবার পরিজন ও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে যিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটার দিকে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক সহায়তায় গত কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তার পরিচালনা জীবন শুরু করেছিলেন ১৯৬১ সালে। ওই বছর তার নির্মিত ‘তোমার আমার’ ছবিটি মুক্তি পায়। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে বাংলা চলচ্চিত্রকে তিনি হৃদয় উজাড় করে পরিপূর্ণ করেছেন। পেয়েছেনও দুহাত ভরে। ১২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ ছয়টি বাচসাস পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে।

সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের (১৩টি) পর তিনি সর্বাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘একুশে পদক’। সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার।

এতসব অর্জনের পেছনে আমজাদ হোসেনের ছিল অক্লান্ত পরিশ্রম। রূপালি পর্দার দর্শকদের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্র তিনি নির্মাণ করে গেছেন। তিনি নেই কিন্তু তার সেসব সৃষ্টির কথা অনন্তকাল ধরে সিনেপ্রেমী মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হবে। তবে শুধু নির্মাতা হিসেবে নয়, চিত্রনাট্যকার ও গীতিকার হিসেবেও তার ছিল সমান সাফল্য।

১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেন নির্মাণ করেছিলেন ‘নয়নমনি’ ছবিটি। তিনটি বিভাগে এটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল। সেগুলো হলো শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (প্রযোজক) ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার। সত্তরের দশকের সুপারহিট এই ছবির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফারুক ও ববিতা। আরও ছিলেন আনোয়ার হোসেন, রওশন জামিল, সৈয়দ হাসান ইমাম, আনোয়ারা, এটিএম শামসুজ্জামান, সুলতানা জামান ও টেলি সামাদ।

১৯৭৮ সালে রূপালি পর্দায় ওঠে তার আর এক সৃষ্টি ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’। এই ছবির জন্যও তিনটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন প্রয়াত আমজাদ হোসেন। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার। এই ছবিটিরও প্রধান চরিত্রে ছিলেন ফারুক-ববিতা। এমনকি আনোয়ার হোসেন, রওশন জামিল ও এটিএম শামসুজ্জামানরাও ছিলেন।

ঠিক তার পরের বছর আরও দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তোলেন আমজাদ হোসেন। সৌজন্য তার ‘সুন্দরী’ ছবিটি। ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা ও শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পুরস্কার লাভ করেন। নির্মাতার ‘সুন্দরী’র সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন চিত্রনায়িকা ববিতা। তবে এবার নায়ক হিসেবে আনেন ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ খ্যাত ইলিয়াস কাঞ্চনকে। আরও ছিলেন জসিম, আনোয়ার হোসেন ও আনোয়ারা। এই ছবিটি মোট সাতটি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল।

‘ভাত দে’। এটি চিত্রনায়িকা সাবানার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি। যেটি পরিচালনা করে তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন আমজাদ হোসেন। শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন সাবানাও। তার বিপরীতে নায়ক ছিলেন আলমগীর। ১৯৮৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রথম ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’-এ অংশ নিয়েছিল আমজাদ হোসেনের এই ‘ভাত দে’ ছবিটি।

নির্মাতা তার ক্যারিয়ারের শেষ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটি পান ২০০৪ সালে। ওই বছর ‘জয়যাত্রা’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনিকারের পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। যদিও এটির চিত্রনাট্য লেখা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আর এক গুণি অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। এটিতে অভিনয় করেছিলেন বিপাশা হায়াত, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান ও আবুল হায়াতের মতো অভিনয়শিল্পীরা।

এতসব সৃষ্টি ও অর্জন রেখে ৭৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমজাদ হোসেন। সব সৃষ্টি ও অর্জন এখন শুধুই স্মৃতি। তার মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন পরিবার পরিজন ও নির্মাতার অধিকাংশ পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবির নায়িকা ববিতাসহ সকলে। প্রয়াত এই নির্মাতার মরদেহ আজ ব্যাংকক থেকে দেশে আসার কথা রয়েছে।