ঢাকা ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




১৯ বছর ডিম বিক্রির জমানো টাকায় হজ্ব করলেন এক দরিদ্র মা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১২:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯ ১৩৫ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম ডেস্ক; 

সেদিন আমরা মক্কাতুল মুকাররমায়। হিজরা রোডের এক হোটেলে। মসজিদুল হারামের খুব কাছেই। একদল বসে আছি। বাংলাদেশ থেকে ৪১৯ হজযাত্রী নিয়ে একটি বিমান জেদ্দায় পৌঁছেছে। তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর অপেক্ষায়।

হাজী সাহেবরা এলেন। তাদেরকে কয়েকটি দলে ভাগ করে আমাদের কয়েকজনের মাঝে বণ্টন করে দেয়া হলো। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পরই ওমরা করতে নিয়ে যেতে হবে। তামাত্তু হজ। সকলেই ওমরা করে হালাল হবেন। যথাসময়ে সকলেই যার যার কাফেলা নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন। ওমরা আদায়ের পর পুনরায় ফিরেও এসেছেন।

এবার একটু অবসর সময়। বিশ্রাম আর গল্প করছি। সকলে হাজিদের নিয়ে অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করছে। হাজিদের হজসংক্রান্ত বিষয়ে জানার কমতি, তাওয়াফ ও সায়ীতে ভুল করা, তাওয়াফ অবস্থায় অযু চলে যাওয়া, কাফেলা একসাথে না থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাকার সমস্যাগুলো তুলে ধরছেন।

তবে এক ভাই আমাকে ভিন্ন কিছু শোনালেন। তিনি যা শোনালেন, শতাব্দীকাল ধরে তা আমার হৃদয়তন্ত্রীতে চির জাগরুক থাকবে। তিনি বললেন- “হাজীদের কাফেলাকে নিয়ে মসজিদুল হারামের দিকে যাচ্ছি। নারী-পুরুষ সকলেই আছে। আমি বারবার সকলকে বিক্ষিপ্ত না হয়ে একসাথে থাকার ব্যাপারে সতর্ক করছি।

এরপর মাতাফে ( কাবা ঘরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করার জন্য যে খালি স্থান) গেলাম। তখনও মাতাফে তেমন একটা ভিড় নেই। সকলকে নিয়ে তাওয়াফ শুরু করার আগে কিছু কথা বলছি।

হঠাৎ একজন মহিলা দাঁড়ানো থেকে পড়ে গিয়ে বসে গেছেন। দেখলাম, তিনি কাবার দিকে তাকিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছেন। ছুটে গেলাম। নাহ! কিছুটা স্বাভাবিকই আছেন মনে হলো। জানতে চাইলাম, কি হয়েছে আপনার?
হোটেলে ফিরে যাবেন?

তিনি অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। আর বললেন, “শুধু কাবা ঘরকে একনজর দেখবো বলে, শুধু একবার নিজ চোখে দেখবো বলে, আমি ১৯ বছর ধরে ডিম বিক্রি করে টাকা জমিয়েছি! আজ সেই দিন এসেছে!! আমি কাবাকে দেখেছি!! তাই দেখামাত্রই আমি আর থাকতে পরিনি। শরীর নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে যাই। চলো, এবার তাওয়াফ শুরু করি!” এরপর শীর্ণ দেহের মানুষটি অসীম দৃঢ়তা নিয়েই ওমরার কাজ সম্পন্ন করেন।

“ভাবলাম, একটি জীর্ণ শরীরের নরম হাড্ডিগুলোতে কি পরিমাণ শক্তিমত্তা বিরাজ করছে? কি পরিমাণ গতিবেগে তিনি ১৯টি বছর ধরে ছুটে চলেছেন? সংকল্পের এ দৃঢ়তা কি সুুউচ্চ পর্বতকেও হার মানাবে না?”-ইসলামটাইমস

কুরআন আল্লাহর কিতাব। আল্লাহ তাআলা এ কিতাব দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিশ্বমানবতার কল্যাণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম এ কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ ধারক ও বাহক। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু।

যার তেলাওয়াত শুনলেই বিশ্বিনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাঁদতেন। সাহাবায়ে কেরামের হৃদয়ে বহন করা কুরআন আজো অক্ষত অবিকৃত অবস্থায় বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর কাছে বিরাজমান। তারা ছিলেন কুরআনের একান্ত অনুরাগী। কুরআনের ভাব-মর্মে তাদের ঈমান বেড়ে যেত।

তাদের তেলাওয়াতে অস্রুসিক্ত হতো মুমিন মুসলমান। এসব সাহাবিদের মধ্যে অন্যতম হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তুলে ধরা হলো তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়- বিশ্বনবির হিজরতের ৩৭ বছর আগে পবিত্র নগরী মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রায়িাল্লাহু আনহু।

ইসলাম গ্রহণের তালিকায় তার নাম ৬ নম্বরে। তিনি বদর, ওহুদ, খন্দক, বায়আতে রেদওয়ানসহ অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসুলের প্রিয় সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ কুরআনের সাধক হিসেবে আজো বিশ্ববিখ্যাত। তার ব্যাখ্যা এবং মতামত এখনো সবার শীর্ষে গ্রহণযোগ্য। তিনি ছিলেন কুরআনুল কারিমের একনিষ্ঠ সেবক ও গবেষক।

জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় তিনি কুরআন গবেষণায় ব্যয় করেছেন। হয়েছেন রইসুল মুফাসসিরিনদের একজন। ইতিহাস সাক্ষী, কটু কথা ও নির্যাতনকে উপেক্ষা করে অসীম সাহসী কুরআনের সাধক আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ কাবা শরিফে সুরা আর-রাহমানের কিছু অংশ তেলাওয়াত করে হিংস্র কুরাইশ নেতাদের হতবাক করে দেন।

হিজরতে আগে মক্কার কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্বনবির পর তিনিই সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে পবিত্র কুরআনুল কারিম তেলওয়াত করেন। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ নিজেই বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত করতে বলতেন এবং তাঁর তেলাওয়াত শুনে তিনি অস্রুসিক্ত হতেন।’

বিশ্বনবি তাঁর তেলাওয়াতের প্রশংসা করে বলতেন, ‘কুরআন যেভাবে নাজিল হয়েছে ঠিক তেমন ও সুন্দরভাবে তেলাওয়াত করে খুশি হতে চায়, সে যেন ইবনে উম্মে আবদ (অবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ)-এর মতো কুরআন তেলাওয়াত করেন।’ (মুসনাদে আহমদ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাহাবাদেরকে) তাঁর কাছ থেকে কুরআন শেখার নির্দেশ দিতেন।’ (বুখারি)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বিশ্বনবির ঘরেই লালিত-পালিত হন। তাঁকে অনুসরণ করে জীবনাচার ও চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করেন। এ কারণেই বিশ্বনবি বলতেন- ‘হেদায়াত প্রাপ্তি, আচার-আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তিনিই (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ) হচ্ছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে নিকটতম উত্তম ব্যক্তি।’

তিনি বিশ্বনবির শিক্ষালয়ে শিক্ষা লাভ করেন। এ কারণেই সাহাবিদের মধ্যে যারা কুরআনের সবচেয়ে ভালো পাঠক, ভাব ও অর্থের সবচেয়ে বেশি বুঝদার এবং আল্লাহর আইন ও বিধি-বিধানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ, তিনি ছিলেন তাঁদেরই একজন। ইবনে মাসউদকে নিয়ে হজরত ওমরের বর্ণনা ‘একবার হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করছিলেন।

এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আমি কুফা থেকে এসেছি। সেখানে আমি দেখে এসছি, এক ব্যক্তি নিজের স্মৃতি থেকেই মানুষকে কুরআন শিখাচ্ছেন।’ একথা শুনে তিনি এত রাগান্বিত হলেন যে, সচরাচর তাঁকে এমন রাগ করতে দেখা যায় না। তিনি উটের হাওদার অভ্যন্তরে রাগে ফুলতে থাকেন। তারপর প্রশ্ন করেন, তোমার ধ্বংস হোক! কে সে লোকটি?’

লোকটি বললো- ‘আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের নাম শুনে তাঁর অবস্থা এমন হলো- যেন জ্বলন্ত আগুনে পানি ঢেলে দেয়া হলো। তাঁর রাগ পড়ে গেল। তিনি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেলেন। তারপর বললেন, তোমার ধ্বংস হোক! আল্লাহর কসম, এ কাজের জন্য তাঁর চেয়ে অধিক যোগ্য কোনো ব্যক্তি বেঁচে আছে কিনা আমি জানিনা।

এ ব্যাপারে তোমাকে আমি একটি ঘটনা বলছি- হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতে লাগলেন, ‘একদিন রাতের বেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকরের সাথে মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হলেন, ‘আমরাও তাঁর সাথে বের হলাম।

বেরিয়েই আমরা দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি মসজিদে দাঁড়িয়ে; কিন্তু আমরা তাঁকে চিনতে পারলাম না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর কুরআন তেলাওয়াত শুনলেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন- ‘যে ব্যক্তি বিশুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ করে আনন্দ পেতে চায়, যেমন তা অবতীর্ণ হয়েছে, সে যেন ইবনে উম্মু আবদের (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ) পাঠের অনুরূপ কুরআন পাঠ করে।’

এরপর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বসে দোয়া করা শুরু করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আস্তে আস্তে তাঁকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন, ‘চাও, দেয়া হবে, চাও, দেয়া হবে।’ এ কারণেই হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে খোলাফায়ে রাশেদার যুগে কুরআনের শিক্ষক হিসেবে কুফায় পাঠিয়ে দেন। তিনি কুফার কাজির দায়িত্বও পালন করেন।

রইসুল মুফাসসিরিন ও ফকিহুল উম্মাহ খ্যাত কুরআনের সাধক, বাহক ও প্রচারক হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ৩২ হিজরিতে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। তাঁর নেক আমলের ফায়েজ ও বরকত আমাদের দান করুন।

মুসলিম উম্মাহকে বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে নিজেদের ঈমান বাড়ানোসহ কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




১৯ বছর ডিম বিক্রির জমানো টাকায় হজ্ব করলেন এক দরিদ্র মা

আপডেট সময় : ১২:১২:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ জুলাই ২০১৯

ধর্ম ডেস্ক; 

সেদিন আমরা মক্কাতুল মুকাররমায়। হিজরা রোডের এক হোটেলে। মসজিদুল হারামের খুব কাছেই। একদল বসে আছি। বাংলাদেশ থেকে ৪১৯ হজযাত্রী নিয়ে একটি বিমান জেদ্দায় পৌঁছেছে। তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর অপেক্ষায়।

হাজী সাহেবরা এলেন। তাদেরকে কয়েকটি দলে ভাগ করে আমাদের কয়েকজনের মাঝে বণ্টন করে দেয়া হলো। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পরই ওমরা করতে নিয়ে যেতে হবে। তামাত্তু হজ। সকলেই ওমরা করে হালাল হবেন। যথাসময়ে সকলেই যার যার কাফেলা নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন। ওমরা আদায়ের পর পুনরায় ফিরেও এসেছেন।

এবার একটু অবসর সময়। বিশ্রাম আর গল্প করছি। সকলে হাজিদের নিয়ে অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করছে। হাজিদের হজসংক্রান্ত বিষয়ে জানার কমতি, তাওয়াফ ও সায়ীতে ভুল করা, তাওয়াফ অবস্থায় অযু চলে যাওয়া, কাফেলা একসাথে না থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাকার সমস্যাগুলো তুলে ধরছেন।

তবে এক ভাই আমাকে ভিন্ন কিছু শোনালেন। তিনি যা শোনালেন, শতাব্দীকাল ধরে তা আমার হৃদয়তন্ত্রীতে চির জাগরুক থাকবে। তিনি বললেন- “হাজীদের কাফেলাকে নিয়ে মসজিদুল হারামের দিকে যাচ্ছি। নারী-পুরুষ সকলেই আছে। আমি বারবার সকলকে বিক্ষিপ্ত না হয়ে একসাথে থাকার ব্যাপারে সতর্ক করছি।

এরপর মাতাফে ( কাবা ঘরের চতুর্দিকে তাওয়াফ করার জন্য যে খালি স্থান) গেলাম। তখনও মাতাফে তেমন একটা ভিড় নেই। সকলকে নিয়ে তাওয়াফ শুরু করার আগে কিছু কথা বলছি।

হঠাৎ একজন মহিলা দাঁড়ানো থেকে পড়ে গিয়ে বসে গেছেন। দেখলাম, তিনি কাবার দিকে তাকিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছেন। ছুটে গেলাম। নাহ! কিছুটা স্বাভাবিকই আছেন মনে হলো। জানতে চাইলাম, কি হয়েছে আপনার?
হোটেলে ফিরে যাবেন?

তিনি অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। আর বললেন, “শুধু কাবা ঘরকে একনজর দেখবো বলে, শুধু একবার নিজ চোখে দেখবো বলে, আমি ১৯ বছর ধরে ডিম বিক্রি করে টাকা জমিয়েছি! আজ সেই দিন এসেছে!! আমি কাবাকে দেখেছি!! তাই দেখামাত্রই আমি আর থাকতে পরিনি। শরীর নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে যাই। চলো, এবার তাওয়াফ শুরু করি!” এরপর শীর্ণ দেহের মানুষটি অসীম দৃঢ়তা নিয়েই ওমরার কাজ সম্পন্ন করেন।

“ভাবলাম, একটি জীর্ণ শরীরের নরম হাড্ডিগুলোতে কি পরিমাণ শক্তিমত্তা বিরাজ করছে? কি পরিমাণ গতিবেগে তিনি ১৯টি বছর ধরে ছুটে চলেছেন? সংকল্পের এ দৃঢ়তা কি সুুউচ্চ পর্বতকেও হার মানাবে না?”-ইসলামটাইমস

কুরআন আল্লাহর কিতাব। আল্লাহ তাআলা এ কিতাব দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিশ্বমানবতার কল্যাণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম এ কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ ধারক ও বাহক। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু।

যার তেলাওয়াত শুনলেই বিশ্বিনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাঁদতেন। সাহাবায়ে কেরামের হৃদয়ে বহন করা কুরআন আজো অক্ষত অবিকৃত অবস্থায় বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর কাছে বিরাজমান। তারা ছিলেন কুরআনের একান্ত অনুরাগী। কুরআনের ভাব-মর্মে তাদের ঈমান বেড়ে যেত।

তাদের তেলাওয়াতে অস্রুসিক্ত হতো মুমিন মুসলমান। এসব সাহাবিদের মধ্যে অন্যতম হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তুলে ধরা হলো তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়- বিশ্বনবির হিজরতের ৩৭ বছর আগে পবিত্র নগরী মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রায়িাল্লাহু আনহু।

ইসলাম গ্রহণের তালিকায় তার নাম ৬ নম্বরে। তিনি বদর, ওহুদ, খন্দক, বায়আতে রেদওয়ানসহ অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসুলের প্রিয় সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ কুরআনের সাধক হিসেবে আজো বিশ্ববিখ্যাত। তার ব্যাখ্যা এবং মতামত এখনো সবার শীর্ষে গ্রহণযোগ্য। তিনি ছিলেন কুরআনুল কারিমের একনিষ্ঠ সেবক ও গবেষক।

জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় তিনি কুরআন গবেষণায় ব্যয় করেছেন। হয়েছেন রইসুল মুফাসসিরিনদের একজন। ইতিহাস সাক্ষী, কটু কথা ও নির্যাতনকে উপেক্ষা করে অসীম সাহসী কুরআনের সাধক আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ কাবা শরিফে সুরা আর-রাহমানের কিছু অংশ তেলাওয়াত করে হিংস্র কুরাইশ নেতাদের হতবাক করে দেন।

হিজরতে আগে মক্কার কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্বনবির পর তিনিই সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে পবিত্র কুরআনুল কারিম তেলওয়াত করেন। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ নিজেই বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত করতে বলতেন এবং তাঁর তেলাওয়াত শুনে তিনি অস্রুসিক্ত হতেন।’

বিশ্বনবি তাঁর তেলাওয়াতের প্রশংসা করে বলতেন, ‘কুরআন যেভাবে নাজিল হয়েছে ঠিক তেমন ও সুন্দরভাবে তেলাওয়াত করে খুশি হতে চায়, সে যেন ইবনে উম্মে আবদ (অবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ)-এর মতো কুরআন তেলাওয়াত করেন।’ (মুসনাদে আহমদ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাহাবাদেরকে) তাঁর কাছ থেকে কুরআন শেখার নির্দেশ দিতেন।’ (বুখারি)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বিশ্বনবির ঘরেই লালিত-পালিত হন। তাঁকে অনুসরণ করে জীবনাচার ও চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করেন। এ কারণেই বিশ্বনবি বলতেন- ‘হেদায়াত প্রাপ্তি, আচার-আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তিনিই (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ) হচ্ছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে নিকটতম উত্তম ব্যক্তি।’

তিনি বিশ্বনবির শিক্ষালয়ে শিক্ষা লাভ করেন। এ কারণেই সাহাবিদের মধ্যে যারা কুরআনের সবচেয়ে ভালো পাঠক, ভাব ও অর্থের সবচেয়ে বেশি বুঝদার এবং আল্লাহর আইন ও বিধি-বিধানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ, তিনি ছিলেন তাঁদেরই একজন। ইবনে মাসউদকে নিয়ে হজরত ওমরের বর্ণনা ‘একবার হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করছিলেন।

এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আমি কুফা থেকে এসেছি। সেখানে আমি দেখে এসছি, এক ব্যক্তি নিজের স্মৃতি থেকেই মানুষকে কুরআন শিখাচ্ছেন।’ একথা শুনে তিনি এত রাগান্বিত হলেন যে, সচরাচর তাঁকে এমন রাগ করতে দেখা যায় না। তিনি উটের হাওদার অভ্যন্তরে রাগে ফুলতে থাকেন। তারপর প্রশ্ন করেন, তোমার ধ্বংস হোক! কে সে লোকটি?’

লোকটি বললো- ‘আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের নাম শুনে তাঁর অবস্থা এমন হলো- যেন জ্বলন্ত আগুনে পানি ঢেলে দেয়া হলো। তাঁর রাগ পড়ে গেল। তিনি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেলেন। তারপর বললেন, তোমার ধ্বংস হোক! আল্লাহর কসম, এ কাজের জন্য তাঁর চেয়ে অধিক যোগ্য কোনো ব্যক্তি বেঁচে আছে কিনা আমি জানিনা।

এ ব্যাপারে তোমাকে আমি একটি ঘটনা বলছি- হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতে লাগলেন, ‘একদিন রাতের বেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকরের সাথে মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছিলেন। আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হলেন, ‘আমরাও তাঁর সাথে বের হলাম।

বেরিয়েই আমরা দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি মসজিদে দাঁড়িয়ে; কিন্তু আমরা তাঁকে চিনতে পারলাম না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর কুরআন তেলাওয়াত শুনলেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন- ‘যে ব্যক্তি বিশুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ করে আনন্দ পেতে চায়, যেমন তা অবতীর্ণ হয়েছে, সে যেন ইবনে উম্মু আবদের (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ) পাঠের অনুরূপ কুরআন পাঠ করে।’

এরপর আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বসে দোয়া করা শুরু করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আস্তে আস্তে তাঁকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন, ‘চাও, দেয়া হবে, চাও, দেয়া হবে।’ এ কারণেই হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে খোলাফায়ে রাশেদার যুগে কুরআনের শিক্ষক হিসেবে কুফায় পাঠিয়ে দেন। তিনি কুফার কাজির দায়িত্বও পালন করেন।

রইসুল মুফাসসিরিন ও ফকিহুল উম্মাহ খ্যাত কুরআনের সাধক, বাহক ও প্রচারক হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ৩২ হিজরিতে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। তাঁর নেক আমলের ফায়েজ ও বরকত আমাদের দান করুন।

মুসলিম উম্মাহকে বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে নিজেদের ঈমান বাড়ানোসহ কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দান করুন। আমিন।