ঢাকা ১০:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক, জরুরি সভায় কমিটি গঠন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪২:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০১৯ ১০৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক,

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবার বিকেলে জরুরি সভা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে এমন ৭ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) ডেকে নিয়ে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে এ সভায় যোগ দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। সভা শেষে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ খুঁজতে একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই সাতটি ব্যাংকের মধ্যে ৪টি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও ৩টি বেসরকারি। ব্যাংকগুলো হলো—সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রুপালী, আল-আরাফাহ, ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

জানা গেছে, তিন মাসেই দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এর ফলে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অবলোপনের হিসাব বাদে খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল। এর আগে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। আর এখন অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১০ জানুয়ারি সব ব্যাংকমালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেছিলেন, আজ থেকে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। আর জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসেই খেলাপি ঋণ এত বাড়ল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ খেলাপি ঋণ বাড়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর চাপে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল কয়েকটি ব্যাংকের এমডিকে ফোন দিয়ে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে চান। এরপর হঠাৎ করেই আজ বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সভার আয়োজন করা হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের উপস্থিতিতে এতে গভর্নর ফজলে কবিরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ব্যাংকগুলোকে যে কোনো উপায়ে চলতি জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ ও ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে ও খেলাপি ঋণ কমাতে কাজ করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে কয়েকটি ব্যাংকের এমডিকে ডাকা হয়েছিল। তাঁরা জানালেন, ডিসেম্বরে যেসব ঋণ আদালতের রিটের কারণে খেলাপি দেখানো যায়নি, এসব রিট (ভ্যাকেট) এখন শূন্য হয়ে গেছে। এ জন্য খেলাপি বেড়ে গেছে। আর অনেকে ঋণ পুনঃতফসিল করেও এখন কিস্তি পরিশোধ করছেন না।’

সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে ও কমিয়ে আনতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগ এ কমিটিতে থাকবে।’

তবে বৈঠকে উপস্থিত ব্যাংকের কোনো এমডিকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ ছাড়া দীর্ঘদিন আদায় করতে না পেরে ব্যাংকগুলোর অবলোপন করা ঋণের স্থিতি এখন প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে অবলোপন করা ঋণ যুক্ত করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। অথচ মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময়, ২০০৯ সালের শুরুতে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক, জরুরি সভায় কমিটি গঠন

আপডেট সময় : ১০:৪২:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক,

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবার বিকেলে জরুরি সভা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে এমন ৭ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) ডেকে নিয়ে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে এ সভায় যোগ দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। সভা শেষে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ খুঁজতে একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই সাতটি ব্যাংকের মধ্যে ৪টি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও ৩টি বেসরকারি। ব্যাংকগুলো হলো—সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রুপালী, আল-আরাফাহ, ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

জানা গেছে, তিন মাসেই দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এর ফলে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অবলোপনের হিসাব বাদে খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল। এর আগে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। আর এখন অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১০ জানুয়ারি সব ব্যাংকমালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেছিলেন, আজ থেকে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। আর জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসেই খেলাপি ঋণ এত বাড়ল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ খেলাপি ঋণ বাড়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর চাপে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল কয়েকটি ব্যাংকের এমডিকে ফোন দিয়ে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে চান। এরপর হঠাৎ করেই আজ বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সভার আয়োজন করা হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের উপস্থিতিতে এতে গভর্নর ফজলে কবিরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ব্যাংকগুলোকে যে কোনো উপায়ে চলতি জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ ও ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে ও খেলাপি ঋণ কমাতে কাজ করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে কয়েকটি ব্যাংকের এমডিকে ডাকা হয়েছিল। তাঁরা জানালেন, ডিসেম্বরে যেসব ঋণ আদালতের রিটের কারণে খেলাপি দেখানো যায়নি, এসব রিট (ভ্যাকেট) এখন শূন্য হয়ে গেছে। এ জন্য খেলাপি বেড়ে গেছে। আর অনেকে ঋণ পুনঃতফসিল করেও এখন কিস্তি পরিশোধ করছেন না।’

সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে ও কমিয়ে আনতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগ এ কমিটিতে থাকবে।’

তবে বৈঠকে উপস্থিত ব্যাংকের কোনো এমডিকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ ছাড়া দীর্ঘদিন আদায় করতে না পেরে ব্যাংকগুলোর অবলোপন করা ঋণের স্থিতি এখন প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে অবলোপন করা ঋণ যুক্ত করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। অথচ মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময়, ২০০৯ সালের শুরুতে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।