ঢাকা ১১:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




বিপাকে লবণ চাষীরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:২৩:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯ ১০৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক;
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের কাঠালিয়া পাহাড় গ্রামে হাজারো লবণ চাষীর বাস। তাদের একজন তানভীর হাসান। তার চার কানি (১ কানি সমান ৩৯ শতাংশ) জমিতে লবণ রয়েছে প্রায় ৪ লাখ মণ। সম্প্রতি কয়েকটি বড় বড় কোম্পানি লবণ কেনা বন্ধ করে দেয়ায় কমে গেছে লবণের দাম। হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তানভীর হাসানের মতো চাষীরা।

তিনি জাগো নিউজকে জানান, যে লবণ বিক্রি হতো ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা মণ, এখন সেটার দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। এই টাকায় লবণ বিক্রি করলে যে আয় হবে, তাতে শ্রমিকের খরচই উঠবে না।

বুধবার (২২ মে) কাঠালিয়া পাহাড় গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেতের পাশে গর্ত করে শত শত চাষী তাদের লবণ সংরক্ষণ করে রেখে দিয়েছেন। তানভীরের মতো এসব চাষীও হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় লবণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে জানান।

লবণ চাষীরা জানান, শীতকাল থেকে তারা লবণ চাষ শুরু করেন। বৃষ্টি শুরু হলে চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদ ও কম বৃষ্টিপাত থাকায় তাদের লবণ উৎপাদন ভালো হয়েছে। বর্ষা আসছে, সবাই এখন লবণ বিক্রি শেষ করবেন। কিন্তি এমন সময় হঠাৎ লবণের দাম কমে যাওয়ায় ডিলাররা লবণের দাম প্রায় অর্ধেক বলছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদেরকে বড় ধরনের ঘাটতির মধ্যে পড়তে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে। গত ১২ মে সংবাদ সম্মেলন করে এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল রয়েছে বলে জানায় বিএসটিআই। পরে ওই ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এসব পণ্যের মধ্যে ৯টি লবণ কোম্পানিও রয়েছে। সেগুলো হলো- এসিআই, মোল্লা সল্ট, তীর, মধুমতি, মদিনা, দাদা সুপার, স্টারশিপ, নূর স্পেশাল ও তাজ। এ রকম পরিস্থিতিতে এই লবণ কোম্পানিগুলো লবণ কেনা বন্ধ করে দেয়ায় চাষীদের উৎপাদিত লবণের দাম কমে গেছে।

এ বিষয়ে এসিআই সল্ট লিমিটেডের বিসনেস ডিরেক্টর মো. কামরুল হাসান বলেন, আমাদের কারখানার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকায় খুচরা বাজার থেকে এ লবণ কেনা বন্ধ করে দিয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার লবণ কিনব।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার সদরসহ কক্সবাজারের উপকূল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলায় লবণ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত আছে প্রায় ৪ লাখের বেশি কৃষক ও শ্রমিক। চলতি মৌসুমে দেশে লবণের ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টনের চাহিদা পূরণ করবে এসব কৃষক ও শ্রমিকরা। আর ভোক্তা ও শিল্পখাতের এ চাহিদার বিপরীতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত লবণ উৎপাদন ১৮ লাখ টন ছাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী বলেন, ডিসেম্বর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে তা আরও বাড়তে পারে।

লবণ চাষীদের দাবি, তারা যাতে লবণের ন্যায্যমূল্য পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। সেই সঙ্গে লবণ শিল্পকে বাঁচাতে হলে কক্সবাজারে লবণ বোর্ড গঠন করতে হবে। চাষীরা যাতে লবণের সঠিক দাম পায়, বিষয়টি দেখভাল করবে লবণ বোর্ড।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বিপাকে লবণ চাষীরা

আপডেট সময় : ১০:২৩:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক;
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের কাঠালিয়া পাহাড় গ্রামে হাজারো লবণ চাষীর বাস। তাদের একজন তানভীর হাসান। তার চার কানি (১ কানি সমান ৩৯ শতাংশ) জমিতে লবণ রয়েছে প্রায় ৪ লাখ মণ। সম্প্রতি কয়েকটি বড় বড় কোম্পানি লবণ কেনা বন্ধ করে দেয়ায় কমে গেছে লবণের দাম। হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তানভীর হাসানের মতো চাষীরা।

তিনি জাগো নিউজকে জানান, যে লবণ বিক্রি হতো ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা মণ, এখন সেটার দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। এই টাকায় লবণ বিক্রি করলে যে আয় হবে, তাতে শ্রমিকের খরচই উঠবে না।

বুধবার (২২ মে) কাঠালিয়া পাহাড় গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেতের পাশে গর্ত করে শত শত চাষী তাদের লবণ সংরক্ষণ করে রেখে দিয়েছেন। তানভীরের মতো এসব চাষীও হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় লবণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে জানান।

লবণ চাষীরা জানান, শীতকাল থেকে তারা লবণ চাষ শুরু করেন। বৃষ্টি শুরু হলে চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদ ও কম বৃষ্টিপাত থাকায় তাদের লবণ উৎপাদন ভালো হয়েছে। বর্ষা আসছে, সবাই এখন লবণ বিক্রি শেষ করবেন। কিন্তি এমন সময় হঠাৎ লবণের দাম কমে যাওয়ায় ডিলাররা লবণের দাম প্রায় অর্ধেক বলছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদেরকে বড় ধরনের ঘাটতির মধ্যে পড়তে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে। গত ১২ মে সংবাদ সম্মেলন করে এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল রয়েছে বলে জানায় বিএসটিআই। পরে ওই ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এসব পণ্যের মধ্যে ৯টি লবণ কোম্পানিও রয়েছে। সেগুলো হলো- এসিআই, মোল্লা সল্ট, তীর, মধুমতি, মদিনা, দাদা সুপার, স্টারশিপ, নূর স্পেশাল ও তাজ। এ রকম পরিস্থিতিতে এই লবণ কোম্পানিগুলো লবণ কেনা বন্ধ করে দেয়ায় চাষীদের উৎপাদিত লবণের দাম কমে গেছে।

এ বিষয়ে এসিআই সল্ট লিমিটেডের বিসনেস ডিরেক্টর মো. কামরুল হাসান বলেন, আমাদের কারখানার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকায় খুচরা বাজার থেকে এ লবণ কেনা বন্ধ করে দিয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার লবণ কিনব।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, কক্সবাজার সদরসহ কক্সবাজারের উপকূল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলায় লবণ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত আছে প্রায় ৪ লাখের বেশি কৃষক ও শ্রমিক। চলতি মৌসুমে দেশে লবণের ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টনের চাহিদা পূরণ করবে এসব কৃষক ও শ্রমিকরা। আর ভোক্তা ও শিল্পখাতের এ চাহিদার বিপরীতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত লবণ উৎপাদন ১৮ লাখ টন ছাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী বলেন, ডিসেম্বর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে তা আরও বাড়তে পারে।

লবণ চাষীদের দাবি, তারা যাতে লবণের ন্যায্যমূল্য পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। সেই সঙ্গে লবণ শিল্পকে বাঁচাতে হলে কক্সবাজারে লবণ বোর্ড গঠন করতে হবে। চাষীরা যাতে লবণের সঠিক দাম পায়, বিষয়টি দেখভাল করবে লবণ বোর্ড।