ঢাকা ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




নেতারা অন্ধকারে, দল ও জোটে ক্ষোভ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:০৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০১৯ ৯১ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদক;

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোন যুক্তিতে দলীয় এমপিদের সংসদে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাও এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কিছু জানেন না। তাদের অন্ধকারে রেখে হুট করে সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তারেক রহমানের ওপর অসন্তুষ্ট অনেকে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির দুই জোট ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলের শীর্ষ নেতারাও। যদিও প্রকাশ্যে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা বা সমালোচনা করছেন না কেউ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য সমকালকে বলেন, এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দলে আগুন জ্বলছে! কারণ নেতাকর্মীরা মনে করেন, বিএনপির এমপিদের শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘ভোট ডাকাতি’র নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মনে করেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপির চার এমপি দাবি করেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তে তারা শপথ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির ওই নেতা উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘কোথায় হয়েছে দলীয় সিদ্ধান্ত?’

এ ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেছেন বিএনপির আরও একাধিক নেতা। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা জানতেন- যারা শপথ নেবে, তাদের দল থেকে বহিস্কার করা হবে। এর ঘণ্টাখানেক বাদেই তারেক রহমানের নির্দেশে এমপিরা সংসদে গিয়েছেন শুনে বিস্মিত হয়েছেন সবাই। হঠাৎ কীভাবে সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল- এখনও তা জানা নেই কারও। সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় সিদ্ধান্তে এমপিদের সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তার পাশে বিএনপির সিনিয়র কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কাউকে ওই সংবাদ সম্মেলনে ডাকাও হয়নি। এ নিয়েও জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের শরিক নেতারাও বিএনপির সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে একাট্টা হয়ে ভোট করেছেন। বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানও করেছেন। তাদের না জানিয়ে তারেক রহমান একক সিদ্ধান্তে কেন দলের এমপিদের সংসদে পাঠিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে বৈধতা দিলেন তা বোধগম্য নয় জোটের নেতাদের। অবশ্য খালেদা জিয়ার কারামুক্তির ‘শর্তে’ সংসদে গিয়ে থাকলে বিএনপির সিদ্ধান্ত মানতে রাজি দল ও জোটের নেতারা।

তারপরও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দুই জোটের শীর্ষ নেতারা জানতে চান, তারেক রহমানের নির্দেশে চার এমপি সংসদে গেলেও মির্জা ফখরুল কেন শপথ নিলেন না? একই সঙ্গে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এমপি জাহিদুর রহমান শপথ নেওয়ায় তাকে দল থেকে কেন বহিস্কার করা হলো?

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য সমকালকে বলেন, তার ধারণা- দলীয় এমপিরা শপথ নিতে উদগ্রীব ছিলেন। তারেক রহমান অনুমতি না দিলেও তারা শপথ নিতেন। এতে দলে পক্ষ-বিপক্ষ সৃষ্টি হতো। সংসদে আরেকটি ‘বিএনপির’ জন্ম হতো! দলের ভাঙন ঠেকাতে এবং মুখরক্ষার জন্য তারেক রহমান বাধ্য হয়ে শপথের অনুমতি দিয়েছেন। সংসদে গিয়ে সমালোচিত হলেও দলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ নেই- এমন বদনাম এড়ানোর জন্যও তারেক শপথের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

বিএনপি সূত্র জানায়, সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে দলের কোনো স্তরের নেতাকর্মীই রাজি ছিলেন না। এমপিদের সংসদে যাওয়ার পথ বন্ধের উপায়ও খুঁজছিল হাইকমান্ড। গত শনিবার দলের আইনজীবীরা বৈঠক করেছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ সংসদে গেলে কীভাবে তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করা যায় সেই আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। ২৫ এপ্রিল শপথ নেওয়া জাহিদুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্পিকারকে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতিও চলছিল। এমন পরিস্থিতিতে তারেক রহমান সংসদে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি নেতাকর্মীদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো খবর!

এ প্রসঙ্গে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরপ্রতীক বলেছেন, বিএনপির এমপিরা শপথ নেবেন- এ সিদ্ধান্ত নিতে ২০ দলীয় জোটের কোনো বৈঠক ডাকা হয়নি। এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে জোট শরিকদের কিছু জানানোও হয়নি। নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে সংসদে না যাওয়ার কথা বলে আবার শপথ নেওয়ার এই ঘটনাকে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করেন অলি আহমদ।

বিএনপির এমপিদের শপথ নেওয়ার ব্যাপারে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, পাঁচ-ছয়জন এমপি শপথ নিলেই সংসদ বৈধতা পাবে না। এতে গণতন্ত্র-ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; বরং গণতান্ত্রিক শক্তি আরও ঐক্যবদ্ধ হবে, নতুন করে পুনর্গঠিত হবে। জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক ঘটনা ঘটবে। শেষ পর্যন্ত জনতারই বিজয় হবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না  বলেন, বিএনপি শপথ নেবে- এ নিয়ে তার সঙ্গে কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিবের উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তাকে উদ্দেশ করে মান্না বলেন, আপসকামিতায়-সহযোগিতায়-সহমর্মিতায়-সমঝোতায় জিততে পারবেন না। যদি সমঝোতা হয়, তাহলে খোলাখুলি বলেন কী সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতার ঘুঁটি আপনার কাছে আছে। তবে আপনারা আগেই তো কাজ সেরে ফেলেছেন। খেলতে বসে দাবার চাল দিয়ে দিয়েছেন। এবার ওই পক্ষ চাল দেবে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির একজন সদস্য সমকালকে বলেন, বিএনপি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে এমনটা তিনি আগেই ধারণা করেছেন। কিন্তু শপথ নিয়ে বিএনপির এমপিরা সংসদে যাবে, তা ভাবতে পারেননি। বিএনপির এই সিদ্ধান্তের কারণে খালেদা জিয়ার আপসহীন ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে মন্তব্য করে ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, এতে আন্দোলনের ক্ষীণ সম্ভাবনাটিও আর থাকল না।

তবে বিএনপির সংসদে যাওয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। দলটির দুই এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও মোকাব্বির খান আগেই শপথ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সুলতান মনসুরকে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বহিস্কার করা হয়েছে এবং মোকাব্বিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিএনপি সংসদে যাওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না; বরং শপথ নিয়ে এত দিনের টানাপড়েনের শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, গণফোরামের দুর্ভাগ্য যে দলের দুই এমপিকে শপথ নেওয়ার ব্যাপারে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা ধৈর্য ধরতে পারেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




নেতারা অন্ধকারে, দল ও জোটে ক্ষোভ

আপডেট সময় : ১১:০৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০১৯

বিশেষ প্রতিবেদক;

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোন যুক্তিতে দলীয় এমপিদের সংসদে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাও এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কিছু জানেন না। তাদের অন্ধকারে রেখে হুট করে সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তারেক রহমানের ওপর অসন্তুষ্ট অনেকে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির দুই জোট ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলের শীর্ষ নেতারাও। যদিও প্রকাশ্যে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা বা সমালোচনা করছেন না কেউ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য সমকালকে বলেন, এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দলে আগুন জ্বলছে! কারণ নেতাকর্মীরা মনে করেন, বিএনপির এমপিদের শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘ভোট ডাকাতি’র নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মনে করেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপির চার এমপি দাবি করেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তে তারা শপথ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির ওই নেতা উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘কোথায় হয়েছে দলীয় সিদ্ধান্ত?’

এ ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেছেন বিএনপির আরও একাধিক নেতা। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা জানতেন- যারা শপথ নেবে, তাদের দল থেকে বহিস্কার করা হবে। এর ঘণ্টাখানেক বাদেই তারেক রহমানের নির্দেশে এমপিরা সংসদে গিয়েছেন শুনে বিস্মিত হয়েছেন সবাই। হঠাৎ কীভাবে সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল- এখনও তা জানা নেই কারও। সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় সিদ্ধান্তে এমপিদের সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তার পাশে বিএনপির সিনিয়র কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কাউকে ওই সংবাদ সম্মেলনে ডাকাও হয়নি। এ নিয়েও জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের শরিক নেতারাও বিএনপির সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে একাট্টা হয়ে ভোট করেছেন। বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানও করেছেন। তাদের না জানিয়ে তারেক রহমান একক সিদ্ধান্তে কেন দলের এমপিদের সংসদে পাঠিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে বৈধতা দিলেন তা বোধগম্য নয় জোটের নেতাদের। অবশ্য খালেদা জিয়ার কারামুক্তির ‘শর্তে’ সংসদে গিয়ে থাকলে বিএনপির সিদ্ধান্ত মানতে রাজি দল ও জোটের নেতারা।

তারপরও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দুই জোটের শীর্ষ নেতারা জানতে চান, তারেক রহমানের নির্দেশে চার এমপি সংসদে গেলেও মির্জা ফখরুল কেন শপথ নিলেন না? একই সঙ্গে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এমপি জাহিদুর রহমান শপথ নেওয়ায় তাকে দল থেকে কেন বহিস্কার করা হলো?

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য সমকালকে বলেন, তার ধারণা- দলীয় এমপিরা শপথ নিতে উদগ্রীব ছিলেন। তারেক রহমান অনুমতি না দিলেও তারা শপথ নিতেন। এতে দলে পক্ষ-বিপক্ষ সৃষ্টি হতো। সংসদে আরেকটি ‘বিএনপির’ জন্ম হতো! দলের ভাঙন ঠেকাতে এবং মুখরক্ষার জন্য তারেক রহমান বাধ্য হয়ে শপথের অনুমতি দিয়েছেন। সংসদে গিয়ে সমালোচিত হলেও দলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ নেই- এমন বদনাম এড়ানোর জন্যও তারেক শপথের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

বিএনপি সূত্র জানায়, সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে দলের কোনো স্তরের নেতাকর্মীই রাজি ছিলেন না। এমপিদের সংসদে যাওয়ার পথ বন্ধের উপায়ও খুঁজছিল হাইকমান্ড। গত শনিবার দলের আইনজীবীরা বৈঠক করেছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ সংসদে গেলে কীভাবে তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করা যায় সেই আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। ২৫ এপ্রিল শপথ নেওয়া জাহিদুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্পিকারকে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতিও চলছিল। এমন পরিস্থিতিতে তারেক রহমান সংসদে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি নেতাকর্মীদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো খবর!

এ প্রসঙ্গে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরপ্রতীক বলেছেন, বিএনপির এমপিরা শপথ নেবেন- এ সিদ্ধান্ত নিতে ২০ দলীয় জোটের কোনো বৈঠক ডাকা হয়নি। এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে জোট শরিকদের কিছু জানানোও হয়নি। নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে সংসদে না যাওয়ার কথা বলে আবার শপথ নেওয়ার এই ঘটনাকে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করেন অলি আহমদ।

বিএনপির এমপিদের শপথ নেওয়ার ব্যাপারে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, পাঁচ-ছয়জন এমপি শপথ নিলেই সংসদ বৈধতা পাবে না। এতে গণতন্ত্র-ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; বরং গণতান্ত্রিক শক্তি আরও ঐক্যবদ্ধ হবে, নতুন করে পুনর্গঠিত হবে। জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক ঘটনা ঘটবে। শেষ পর্যন্ত জনতারই বিজয় হবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না  বলেন, বিএনপি শপথ নেবে- এ নিয়ে তার সঙ্গে কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিবের উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তাকে উদ্দেশ করে মান্না বলেন, আপসকামিতায়-সহযোগিতায়-সহমর্মিতায়-সমঝোতায় জিততে পারবেন না। যদি সমঝোতা হয়, তাহলে খোলাখুলি বলেন কী সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতার ঘুঁটি আপনার কাছে আছে। তবে আপনারা আগেই তো কাজ সেরে ফেলেছেন। খেলতে বসে দাবার চাল দিয়ে দিয়েছেন। এবার ওই পক্ষ চাল দেবে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির একজন সদস্য সমকালকে বলেন, বিএনপি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে এমনটা তিনি আগেই ধারণা করেছেন। কিন্তু শপথ নিয়ে বিএনপির এমপিরা সংসদে যাবে, তা ভাবতে পারেননি। বিএনপির এই সিদ্ধান্তের কারণে খালেদা জিয়ার আপসহীন ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে মন্তব্য করে ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, এতে আন্দোলনের ক্ষীণ সম্ভাবনাটিও আর থাকল না।

তবে বিএনপির সংসদে যাওয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। দলটির দুই এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও মোকাব্বির খান আগেই শপথ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সুলতান মনসুরকে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বহিস্কার করা হয়েছে এবং মোকাব্বিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিএনপি সংসদে যাওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না; বরং শপথ নিয়ে এত দিনের টানাপড়েনের শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, গণফোরামের দুর্ভাগ্য যে দলের দুই এমপিকে শপথ নেওয়ার ব্যাপারে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা ধৈর্য ধরতে পারেননি।