ঢাকা ০৭:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




বিএনপিকে দিয়ে সহিংসতা করাচ্ছে পুলিশ!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:০৮:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০১৯ ৭৮ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী ব্যুরো; চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৪ মার্চ। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এরপর থেকেই বিভিন্ন স্থানে দলটির পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী মো. মহসীন মিয়ার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মহসীনের অভিযোগ, বিএনপির নেতাকর্মীদের দিয়ে নির্বাচন-পরবর্তী এই সহিংসতা করাচ্ছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এই অভিযোগ করেছেন।

মহসীন মিয়া বলেছেন, সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাই সৈয়দ নুরুল ইসলাম কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি)। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসপি টিএম মোজাহিদুল ইসলাম তার ব্যাচমেট। তাই দূর থেকে তিনিই পুলিশকে তার ভাইয়ের পক্ষে ব্যবহার করছেন। আর শিবগঞ্জ থানা পুলিশ ব্যবহার করছে বিএনপিকে। অবশ্য পুলিশ এবং বিএনপি মহসীন মিয়ার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে মহসীন মিয়া বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই পুলিশ নৌকার প্রার্থীর পক্ষ নেয়। এ নিয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসপিকে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য দায়িত্ব থেকে সরিয়ে একজন অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শককে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু তারপরেও ভোট কারচুপি হয়েছে। ভোটের দিন দুপুরের পর কেন্দ্রে কেন্দ্রে পুলিশের সহায়তায় নৌকার সমর্থকরা ভোট ডাকাতি করেছে। এখন তার ‘আনারস’ প্রতীকের সমর্থকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। বিনা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

পরাজিত এই স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, শিবগঞ্জের ৭-৮টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা। তাদের বিরুদ্ধে ২০-৩০টি করে নাশকতার মামলা চলমান। এদের ভোট নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ভোটের আগে শিবগঞ্জ থানার ওসি শিকদার মশিউর রহমান তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি তাদের নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন। তা না হলে গ্রেফতারের হুমকি দেন। এর ফলে তারাও নৌকার পক্ষে কাজ করেন। এখন ভোটের পরে বিভিন্ন স্থানে তার কর্মী-সমর্থকদের পিটিয়ে আহত করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, হামলাকারীরা বিএনপির লোকজন। নৌকার প্রার্থীর কথামতো পুলিশের দেয়া নির্দেশনায় তারা হামলায় জড়াচ্ছে।

জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও নয়নাভাঙা ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আলী বলেন, ওসি কল দিয়েছেন দেখলেই তো ভয় পাই। গাছতলায়-আমতলায় লুকিয়ে থাকি। কত বছর যে থানা দেখিনি তারও কোনো হিসাব নেই। আমরা ভোট বর্জন করেছি, আমরা কেন হামলা করতে যাব? বিএনপির লোকজন হামলা করছে এমন অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। অপপ্রচার। তবে হামলা-মামলার কারণে নিজের সমর্থকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি মহসীন মিয়া বলেন, গত ২৬ মার্চ রশিকনগর গ্রামে পাঁচু নামে তার এক কর্মীর বাম হাত ও ডান পা ভেঙে দেয়া হয়েছে। তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি। এ ঘটনায় তার স্ত্রী থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ নেয়নি। আগের দিন একই গ্রামের রুবেল হোসেন নামে আরেক ব্যক্তিকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনাতেও মামলা নেয়া হয়নি। এ ছাড়া শুক্রবার রাতে বোগলাবাড়ি গ্রাম থেকে আবদুর রহিম, কাওসার হোসেন ও ফারুক হোসেন নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিনা কারণে। কুমিল্লার এসপির ইঙ্গিতে এসব হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জের ওসি শিকদার মশিউর রহমান বলেন, শিবগঞ্জে ভোটের পরে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে মহসীন মিয়া মিথ্যা অভিযোগ করছেন। ভোটের আগে বিএনপির ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগও অস্বীকার করেন ওসি।

তিনজনকে গ্রেফতারের বিষয়ে ওসি বলেন, তারা নৌকার প্রার্থীর এক সমর্থককে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়েছিলেন। সেই মামলায় তারা এজাহারভুক্ত আসামি। তাই গ্রেফতার হয়েছেন।

এলাকায় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে শনিবার দুপুরে কুমিল্লার এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হয়। তবে তিনি ফোনকল ধরেননি। তাই এ ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসপি টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লায় থেকে শিবগঞ্জে প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ নেই। কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সে বিষয়ে মামলা নেয়া হবে। মামলা নেয়া হচ্ছে না- এমন অভিযোগ আমার কাছে করা হলে আমি বিষয়টি দেখব।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বিএনপিকে দিয়ে সহিংসতা করাচ্ছে পুলিশ!

আপডেট সময় : ০৬:০৮:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০১৯

রাজশাহী ব্যুরো; চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৪ মার্চ। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এরপর থেকেই বিভিন্ন স্থানে দলটির পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী মো. মহসীন মিয়ার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মহসীনের অভিযোগ, বিএনপির নেতাকর্মীদের দিয়ে নির্বাচন-পরবর্তী এই সহিংসতা করাচ্ছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এই অভিযোগ করেছেন।

মহসীন মিয়া বলেছেন, সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাই সৈয়দ নুরুল ইসলাম কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি)। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসপি টিএম মোজাহিদুল ইসলাম তার ব্যাচমেট। তাই দূর থেকে তিনিই পুলিশকে তার ভাইয়ের পক্ষে ব্যবহার করছেন। আর শিবগঞ্জ থানা পুলিশ ব্যবহার করছে বিএনপিকে। অবশ্য পুলিশ এবং বিএনপি মহসীন মিয়ার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে মহসীন মিয়া বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই পুলিশ নৌকার প্রার্থীর পক্ষ নেয়। এ নিয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসপিকে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য দায়িত্ব থেকে সরিয়ে একজন অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শককে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু তারপরেও ভোট কারচুপি হয়েছে। ভোটের দিন দুপুরের পর কেন্দ্রে কেন্দ্রে পুলিশের সহায়তায় নৌকার সমর্থকরা ভোট ডাকাতি করেছে। এখন তার ‘আনারস’ প্রতীকের সমর্থকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। বিনা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

পরাজিত এই স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, শিবগঞ্জের ৭-৮টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা। তাদের বিরুদ্ধে ২০-৩০টি করে নাশকতার মামলা চলমান। এদের ভোট নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ভোটের আগে শিবগঞ্জ থানার ওসি শিকদার মশিউর রহমান তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি তাদের নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন। তা না হলে গ্রেফতারের হুমকি দেন। এর ফলে তারাও নৌকার পক্ষে কাজ করেন। এখন ভোটের পরে বিভিন্ন স্থানে তার কর্মী-সমর্থকদের পিটিয়ে আহত করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, হামলাকারীরা বিএনপির লোকজন। নৌকার প্রার্থীর কথামতো পুলিশের দেয়া নির্দেশনায় তারা হামলায় জড়াচ্ছে।

জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও নয়নাভাঙা ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আলী বলেন, ওসি কল দিয়েছেন দেখলেই তো ভয় পাই। গাছতলায়-আমতলায় লুকিয়ে থাকি। কত বছর যে থানা দেখিনি তারও কোনো হিসাব নেই। আমরা ভোট বর্জন করেছি, আমরা কেন হামলা করতে যাব? বিএনপির লোকজন হামলা করছে এমন অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। অপপ্রচার। তবে হামলা-মামলার কারণে নিজের সমর্থকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি মহসীন মিয়া বলেন, গত ২৬ মার্চ রশিকনগর গ্রামে পাঁচু নামে তার এক কর্মীর বাম হাত ও ডান পা ভেঙে দেয়া হয়েছে। তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি। এ ঘটনায় তার স্ত্রী থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ নেয়নি। আগের দিন একই গ্রামের রুবেল হোসেন নামে আরেক ব্যক্তিকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনাতেও মামলা নেয়া হয়নি। এ ছাড়া শুক্রবার রাতে বোগলাবাড়ি গ্রাম থেকে আবদুর রহিম, কাওসার হোসেন ও ফারুক হোসেন নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিনা কারণে। কুমিল্লার এসপির ইঙ্গিতে এসব হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জের ওসি শিকদার মশিউর রহমান বলেন, শিবগঞ্জে ভোটের পরে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে মহসীন মিয়া মিথ্যা অভিযোগ করছেন। ভোটের আগে বিএনপির ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগও অস্বীকার করেন ওসি।

তিনজনকে গ্রেফতারের বিষয়ে ওসি বলেন, তারা নৌকার প্রার্থীর এক সমর্থককে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়েছিলেন। সেই মামলায় তারা এজাহারভুক্ত আসামি। তাই গ্রেফতার হয়েছেন।

এলাকায় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে শনিবার দুপুরে কুমিল্লার এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হয়। তবে তিনি ফোনকল ধরেননি। তাই এ ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসপি টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লায় থেকে শিবগঞ্জে প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ নেই। কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সে বিষয়ে মামলা নেয়া হবে। মামলা নেয়া হচ্ছে না- এমন অভিযোগ আমার কাছে করা হলে আমি বিষয়টি দেখব।