ঢাকা ০৯:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




ভারতীয়র মারধরে বাংলাদেশি নিহত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:০২:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মে ২০২০ ৭১ বার পড়া হয়েছে

ভয়াবহ সংকটেও হবিগঞ্জ জেলায় শিশু ধর্ষণসহ ১১ হত্যাকাণ্ড

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি; ভারতীয় নাগরিকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিক লোকমান হোসেন (৩২)। হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে ভারত। ফলে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়ার পরও মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে নিহতের স্বজনরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কখন আসবে লোকমানের লাশ? গরুচোর অপবাদ দিয়ে লোকমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। লোকমান হোসেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মালঞ্চপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে।

বিজিবি-৫৫ ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক লে.কর্নেল সামিউননবী জানান, ২৪ মের পর থেকেই আমরা চেষ্টা করছে মরদেহ দেশে ফেরত আনার জন্য। আমরা ভারতীয় পক্ষকে মরদেহের সঙ্গে এফআইআর, পোস্টমর্টেম ও কোভিড-১৯ পরীক্ষার কপি দেয়ার জন্য জানাই। বুধবার তারা পোস্টমর্টেম ছাড়া এবং এফআইআর এর আংশিক কপিসহ লাশ নিয়ে আসে। কিন্তু আমরা তা গ্রহণ না করে তিনটি কাগজ দেয়ার কথা জানাই। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুনরায় মরদেহ ফেরতের সময় নির্ধারণ করা হলেও এবার তারা এফআইআর ছাড়াই লাশ দেয়ার চেষ্টা করে। ফলে আমরা তা গ্রহণ করিনি।

তিনি আরও জানান, আমাদের পুলিশ বিভাগের লোকজন ধারণা করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই খুনের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাই এফআইআর এর কপি দিচ্ছে না। একটি এফআইআর করতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে লোকমানের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। তিনি আশাবাদী লাশ যথাশীঘ্র দেশে নিয়ে আসা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ মে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মোহনপুর এলাকায় তার ফুফুর বাড়ি যাচ্ছিলেন লোকমান। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গোপালনগর পৌঁছাতেই এক দল ভারতীয় নাগরিক লোকমান হোসেনকে পথরোধ করে গরুচোর সন্দেহে এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকে। এসময় সে চোর না; বেড়াতে এসেছে এমন আকুতি বার বার জানালেও পাষণ্ডদের মন গলেনি। এলোপাথাড়ি পিটুনিতে তার মৃত্যু হয়। ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে লোকমানের আকুতির ভিডিও প্রচার হয়েছে। তবে গরুচোর সন্দেহ গণপিটুনিতে তার মৃত্যুর খবর ত্রিপুরার গণমাধ্যম সম্প্রচার করে। মৃত ভেবে ভারতীয়রা লোকমানকে বাংলাদেশ সীমান্তের অদূরে একটি জঙ্গলে ফেলে রাখে।

খবর পেয়ে পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যের সিধাই থানা পুলিশ মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে লোকমানের মৃত্যু হয়। বুধবার বিকেলে বিজিবি-বিএসএফ এর পতাকা বৈঠক হয় ১৯৯৪/৪ এস পিলারে কাছে বাংলাদেশের মোহনপুর নামক স্থানে। ভারতের পক্ষে বিএসএফ এর ১২০ ব্যাটালিয়নের মোহনপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ইন্সপেক্টর শশি কান্ত ও বাংলাদেশের পক্ষে নেত্বত্ব দেন ৫৫ বিজিবির ধর্মঘর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার দেলোয়ার হোসেন। বৈঠকে জানানো হয়, বুধবারই ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যের মোহনপুর সীমান্ত দিয়ে মরদেহ হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশ ময়নাতদন্ত, সুরতহাল রিপোর্ট আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র ছাড়া মরদেহ হস্তান্তর করতে চাইলে বাংলাদেশের বিজিবি -পুলিশের প্রতিনিধিরা অস্বীকৃতি জানায়।

বৃহস্পতিবার বিজিবির ধর্মঘর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার দেলোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় লোকমানের মরদেহ ভারত আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। কিন্তু এফআইআর এর কপি না থাকায় আমরা মরদেহ গ্রহণ করতে পারছি না। তবে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি সন্ধ্যা নাগাদ ভারতীয় পক্ষ আমাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করবে।

নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, লোকমান মিয়া বাড়ির পাশ দিয়ে অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মোহনপুরে তার ফুফুর বাড়ি যাচ্ছিলেন। পতিমধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের রোষানলে পরে নির্মমভাবে খুন হয় তিনি।

নিহতের ছোট ভাই হুমায়ুন মিয়া বলেন, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। অথচ তারা কাগজপত্র ছাড়া মরদেহ ফেরত দিতে চায়। এ ব্যাপারে হত্যাকারীদের যেন বিচার হয় তার দাবি করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, আমরা লোকমানের মরদেহের জন্য প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু মরদেহ আসছে না। বৃহস্পতিবার আমরা সারাদিন বৃষ্টির মাঝেও বসে বসে অপেক্ষা করছি কখন আসবে লাশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ভারতীয়র মারধরে বাংলাদেশি নিহত

আপডেট সময় : ১০:০২:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মে ২০২০

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি; ভারতীয় নাগরিকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিক লোকমান হোসেন (৩২)। হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে ভারত। ফলে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়ার পরও মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে নিহতের স্বজনরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কখন আসবে লোকমানের লাশ? গরুচোর অপবাদ দিয়ে লোকমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। লোকমান হোসেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মালঞ্চপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে।

বিজিবি-৫৫ ব্যাটালিয়ান অধিনায়ক লে.কর্নেল সামিউননবী জানান, ২৪ মের পর থেকেই আমরা চেষ্টা করছে মরদেহ দেশে ফেরত আনার জন্য। আমরা ভারতীয় পক্ষকে মরদেহের সঙ্গে এফআইআর, পোস্টমর্টেম ও কোভিড-১৯ পরীক্ষার কপি দেয়ার জন্য জানাই। বুধবার তারা পোস্টমর্টেম ছাড়া এবং এফআইআর এর আংশিক কপিসহ লাশ নিয়ে আসে। কিন্তু আমরা তা গ্রহণ না করে তিনটি কাগজ দেয়ার কথা জানাই। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুনরায় মরদেহ ফেরতের সময় নির্ধারণ করা হলেও এবার তারা এফআইআর ছাড়াই লাশ দেয়ার চেষ্টা করে। ফলে আমরা তা গ্রহণ করিনি।

তিনি আরও জানান, আমাদের পুলিশ বিভাগের লোকজন ধারণা করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এই খুনের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাই এফআইআর এর কপি দিচ্ছে না। একটি এফআইআর করতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে লোকমানের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। তিনি আশাবাদী লাশ যথাশীঘ্র দেশে নিয়ে আসা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ মে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মোহনপুর এলাকায় তার ফুফুর বাড়ি যাচ্ছিলেন লোকমান। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গোপালনগর পৌঁছাতেই এক দল ভারতীয় নাগরিক লোকমান হোসেনকে পথরোধ করে গরুচোর সন্দেহে এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকে। এসময় সে চোর না; বেড়াতে এসেছে এমন আকুতি বার বার জানালেও পাষণ্ডদের মন গলেনি। এলোপাথাড়ি পিটুনিতে তার মৃত্যু হয়। ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে লোকমানের আকুতির ভিডিও প্রচার হয়েছে। তবে গরুচোর সন্দেহ গণপিটুনিতে তার মৃত্যুর খবর ত্রিপুরার গণমাধ্যম সম্প্রচার করে। মৃত ভেবে ভারতীয়রা লোকমানকে বাংলাদেশ সীমান্তের অদূরে একটি জঙ্গলে ফেলে রাখে।

খবর পেয়ে পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যের সিধাই থানা পুলিশ মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে লোকমানের মৃত্যু হয়। বুধবার বিকেলে বিজিবি-বিএসএফ এর পতাকা বৈঠক হয় ১৯৯৪/৪ এস পিলারে কাছে বাংলাদেশের মোহনপুর নামক স্থানে। ভারতের পক্ষে বিএসএফ এর ১২০ ব্যাটালিয়নের মোহনপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ইন্সপেক্টর শশি কান্ত ও বাংলাদেশের পক্ষে নেত্বত্ব দেন ৫৫ বিজিবির ধর্মঘর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার দেলোয়ার হোসেন। বৈঠকে জানানো হয়, বুধবারই ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যের মোহনপুর সীমান্ত দিয়ে মরদেহ হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশ ময়নাতদন্ত, সুরতহাল রিপোর্ট আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র ছাড়া মরদেহ হস্তান্তর করতে চাইলে বাংলাদেশের বিজিবি -পুলিশের প্রতিনিধিরা অস্বীকৃতি জানায়।

বৃহস্পতিবার বিজিবির ধর্মঘর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার দেলোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় লোকমানের মরদেহ ভারত আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। কিন্তু এফআইআর এর কপি না থাকায় আমরা মরদেহ গ্রহণ করতে পারছি না। তবে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি সন্ধ্যা নাগাদ ভারতীয় পক্ষ আমাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করবে।

নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, লোকমান মিয়া বাড়ির পাশ দিয়ে অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মোহনপুরে তার ফুফুর বাড়ি যাচ্ছিলেন। পতিমধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের রোষানলে পরে নির্মমভাবে খুন হয় তিনি।

নিহতের ছোট ভাই হুমায়ুন মিয়া বলেন, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। অথচ তারা কাগজপত্র ছাড়া মরদেহ ফেরত দিতে চায়। এ ব্যাপারে হত্যাকারীদের যেন বিচার হয় তার দাবি করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, আমরা লোকমানের মরদেহের জন্য প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু মরদেহ আসছে না। বৃহস্পতিবার আমরা সারাদিন বৃষ্টির মাঝেও বসে বসে অপেক্ষা করছি কখন আসবে লাশ।