ঢাকা ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




দেশে প্রতি মিনিটে একজন করোনায় আক্রান্ত

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:২৪:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মে ২০২০ ১৪৫ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা;

৪/১, ৩০৬/৯, ১৬০২/২১। দেখলে মনে হবে যেন এটা কোনো ক্রিকেট খেলার ওয়ানডে, টি -২০ কিংবা টেস্ট ম্যাচের স্কোর বোর্ড। কিন্তু এটি বাস্তবে গত দু মাসের ব্যবধানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত রোগীর পরিসংখ্যান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৭ মার্চ (আগের ২৪ ঘণ্টার হিসাব) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চারজন, মৃত্যু হয় একজনের। একমাস পর ১৭ এপ্রিল আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০৬ এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯। এর ঠিক এক মাস পর আজ ১৮ মে (সোমবার) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল এক হাজার ৬০২-এ, এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে হলো ২১।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও ১৭ মার্চ প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। আর আজ সোমবার একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু রেকর্ড হয়।

সোমবারের পরিসংখ্যান অনুসারে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় প্রতি মিনিটে একজনেরও বেশি হারে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা করোনাভাইরাস সম্পর্কিত দৈনন্দিন হেলথ বুলেটিনে বক্তব্য দেয়ার শুরুতেই দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে, বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস পরতে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

কিন্তু সেই পরামর্শ যে মানা হয় না, তা দেশের সংবাদমাধ্যমে চোখ বুলালেই দেখা যায়। মানুষ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের তো বের হয়ই, এমন ক্রান্তিকালে শপিংমলেও ভিড় করছে ঈদের কেনাকাটার জন্য। ফলে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সেইসঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে আজ ১৮ মে পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে মোট এক লাখ ৮৫ হাজার ১৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৩ হাজার ৮৭০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৪৯ জনের।

দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ৮৫ শতাংশ রোগী ঢাকা বিভাগের। ঢাকা বিভাগের মধ্যে রাজধানী ঢাকাতে ৫০ শতাংশের বেশি রোগী। রাজধানী ঢাকার বাইরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীতে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবিকার তাগিদে সরকার লকডাউন এবং রাস্তাঘাটে মানুষ ও যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীর কিছু কিছু মার্কেট খুলে দেয়ার ফলে আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়ছে।

যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ‘জীবন না প্রয়োজন— কোনটি বড়?’, ‘নিজে বাঁচুন অপরজনকে বাঁচতে দিন’, ‘ঘরে থাকুন, করোনা মুক্ত থাকুন’- এমন সচেতনতামূলক ব্যানার লাগিয়ে মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যে, স্বাস্থ্যবিধি যেমন অমান্য হচ্ছে তেমনি ঈদকে সামনে রেখে মার্কেটগুলোতেও মানুষের ভিড় রয়েছে। যদিও দোকানিরা বলছেন, করোনার ভয়ে মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা নেই বললেই চলে। তবে জনসচেতনতা পুরোপুরি না এলে সামনের দিনগুলোতে আরও কঠোর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




দেশে প্রতি মিনিটে একজন করোনায় আক্রান্ত

আপডেট সময় : ০৯:২৪:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মে ২০২০

বিশেষ সংবাদদাতা;

৪/১, ৩০৬/৯, ১৬০২/২১। দেখলে মনে হবে যেন এটা কোনো ক্রিকেট খেলার ওয়ানডে, টি -২০ কিংবা টেস্ট ম্যাচের স্কোর বোর্ড। কিন্তু এটি বাস্তবে গত দু মাসের ব্যবধানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত রোগীর পরিসংখ্যান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৭ মার্চ (আগের ২৪ ঘণ্টার হিসাব) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চারজন, মৃত্যু হয় একজনের। একমাস পর ১৭ এপ্রিল আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০৬ এবং মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯। এর ঠিক এক মাস পর আজ ১৮ মে (সোমবার) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল এক হাজার ৬০২-এ, এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে হলো ২১।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও ১৭ মার্চ প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। আর আজ সোমবার একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু রেকর্ড হয়।

সোমবারের পরিসংখ্যান অনুসারে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় প্রতি মিনিটে একজনেরও বেশি হারে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা করোনাভাইরাস সম্পর্কিত দৈনন্দিন হেলথ বুলেটিনে বক্তব্য দেয়ার শুরুতেই দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে, বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস পরতে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

কিন্তু সেই পরামর্শ যে মানা হয় না, তা দেশের সংবাদমাধ্যমে চোখ বুলালেই দেখা যায়। মানুষ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের তো বের হয়ই, এমন ক্রান্তিকালে শপিংমলেও ভিড় করছে ঈদের কেনাকাটার জন্য। ফলে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সেইসঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে আজ ১৮ মে পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে মোট এক লাখ ৮৫ হাজার ১৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৩ হাজার ৮৭০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৪৯ জনের।

দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ৮৫ শতাংশ রোগী ঢাকা বিভাগের। ঢাকা বিভাগের মধ্যে রাজধানী ঢাকাতে ৫০ শতাংশের বেশি রোগী। রাজধানী ঢাকার বাইরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীতে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবিকার তাগিদে সরকার লকডাউন এবং রাস্তাঘাটে মানুষ ও যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীর কিছু কিছু মার্কেট খুলে দেয়ার ফলে আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়ছে।

যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ‘জীবন না প্রয়োজন— কোনটি বড়?’, ‘নিজে বাঁচুন অপরজনকে বাঁচতে দিন’, ‘ঘরে থাকুন, করোনা মুক্ত থাকুন’- এমন সচেতনতামূলক ব্যানার লাগিয়ে মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যে, স্বাস্থ্যবিধি যেমন অমান্য হচ্ছে তেমনি ঈদকে সামনে রেখে মার্কেটগুলোতেও মানুষের ভিড় রয়েছে। যদিও দোকানিরা বলছেন, করোনার ভয়ে মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা নেই বললেই চলে। তবে জনসচেতনতা পুরোপুরি না এলে সামনের দিনগুলোতে আরও কঠোর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।