ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




‘লকডাউন’ শিথিল করায় দেশে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:১৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মে ২০২০ ১৩৩ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক;

ঢিলেঢালা ‘লকডাউন’ আরও শিথিল করায় দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার-এমনটি মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, যখন প্রথম দফায় ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হল এবং সেটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হল না। পরে যখন তা শিথিল করা হল, তখনই অনুমান করা গেছে, এ ধরনের পরিস্থিতি (সংক্রমণ বৃদ্ধি) আসতে পারে।

বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে লকডাউনের মেয়াদ অন্তত ঈদ পর্যন্ত রাখা জরুরি-এমন মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, দেশে করোনা সংক্রমণের হার যেহেতু ঊর্ধ্বমুখী, তাই এখনই শিথিল করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই শিথিল তো নয়ই, বরং চলমান ‘লকডাউন’ কীভাবে শতভাগ কার্যকর করা যায়, সেদিকেই সংশ্লিষ্ট সবার নজর দেয়া জরুরি।

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। যাকে ‘লকডাউন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। চলমান এই ছুটিতে গণপরিবহন, দোকানপাট, শপিং মল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।

পাশাপাশি মসজিদগুলোয় জামাতে নামাজ পড়ার ওপর এতদিন নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকে তা তুলে দেয়া হয়েছে। আর ঈদের কেনাকাটার জন্য দোকানপাট ১০ মে থেকে সীমিত আকারে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে ২৬ এপ্রিল থেকে তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়। অন্য কারখানাগুলোও খুলতে শুরু করেছে। এ ছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল। এখন তা দুই ঘণ্টা কমিয়ে রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা করা হয়েছে।

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা পদক্ষেপের পরও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না এই ‘লকডাউন’। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মানা হচ্ছে না সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত দু’মাসে দেশে ১২,৪২৫ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৯৯ জন। এ ছাড়া একই সময়ে বেসরকারি হিসাবে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৩১৭ জন।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অকার্যকর লকডাউনের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

আর হাসপাতালে চিকিৎসকদের দায়িত্বহীন আচরণের কারণেই রোগীদের মৃত্যু বাড়ছে। তিনি লকডাউন আরও কঠোর করার পরামর্শ দেন, পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও উন্নত করারও অনুরোধ জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, যেহেতু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাই মৃত্যুও বাড়ছে।

প্রথমেই রোগীদের শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারলে মৃত্যুহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব হতো। এখন লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক ও বিশিষ্ট মাইক্রোবায়োলজিস্ট অধ্যাপক ডা. এসএম শহীদ উল্লাহ  বলেন, করোনায় মৃত্যুহার বাড়ে রোগীদের ধরনের ওপর। কিন্তু হঠাৎ মৃত্যুহার বাড়া কোনো ভালো লক্ষণ নয়।

এটি দুশ্চিন্তার কারণ। ঢিলেঢালা লকডাউন আরও শিথিল করায় দেশে বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার। বর্তমানে যেহারে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে আগামী ঈদ পর্যন্ত লকডাউন থাকা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে জীবন থাকলে অর্থ উপার্জন করা যাবে।

কিন্তু করোনায় এভাবে মৃত্যু চলতে থাকলে সেটা দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই এ অবস্থায় ব্যক্তি পরিবার থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের (স্বাস্থ্যকর্মী, সংবাদকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য) পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান বলেন, এভাবে যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে এটা আমাদের আশঙ্কা ছিল।

কেননা যখন দেশে সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে, তখন লকডাউন শিথিল করা হল, কলকারখানা-মসজিদ খুলে দেয়া হল। এমনকি কেনাকাটার জন্য শপিং মলও খুলে দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বাড়াই স্বাভাবিক।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




‘লকডাউন’ শিথিল করায় দেশে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার

আপডেট সময় : ০৮:১৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মে ২০২০

অনলাইন ডেস্ক;

ঢিলেঢালা ‘লকডাউন’ আরও শিথিল করায় দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার-এমনটি মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, যখন প্রথম দফায় ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হল এবং সেটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হল না। পরে যখন তা শিথিল করা হল, তখনই অনুমান করা গেছে, এ ধরনের পরিস্থিতি (সংক্রমণ বৃদ্ধি) আসতে পারে।

বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে লকডাউনের মেয়াদ অন্তত ঈদ পর্যন্ত রাখা জরুরি-এমন মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, দেশে করোনা সংক্রমণের হার যেহেতু ঊর্ধ্বমুখী, তাই এখনই শিথিল করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই শিথিল তো নয়ই, বরং চলমান ‘লকডাউন’ কীভাবে শতভাগ কার্যকর করা যায়, সেদিকেই সংশ্লিষ্ট সবার নজর দেয়া জরুরি।

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। যাকে ‘লকডাউন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। চলমান এই ছুটিতে গণপরিবহন, দোকানপাট, শপিং মল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।

পাশাপাশি মসজিদগুলোয় জামাতে নামাজ পড়ার ওপর এতদিন নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকে তা তুলে দেয়া হয়েছে। আর ঈদের কেনাকাটার জন্য দোকানপাট ১০ মে থেকে সীমিত আকারে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে ২৬ এপ্রিল থেকে তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়। অন্য কারখানাগুলোও খুলতে শুরু করেছে। এ ছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল। এখন তা দুই ঘণ্টা কমিয়ে রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা করা হয়েছে।

কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা পদক্ষেপের পরও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না এই ‘লকডাউন’। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মানা হচ্ছে না সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত দু’মাসে দেশে ১২,৪২৫ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৯৯ জন। এ ছাড়া একই সময়ে বেসরকারি হিসাবে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৩১৭ জন।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অকার্যকর লকডাউনের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

আর হাসপাতালে চিকিৎসকদের দায়িত্বহীন আচরণের কারণেই রোগীদের মৃত্যু বাড়ছে। তিনি লকডাউন আরও কঠোর করার পরামর্শ দেন, পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও উন্নত করারও অনুরোধ জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, যেহেতু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাই মৃত্যুও বাড়ছে।

প্রথমেই রোগীদের শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারলে মৃত্যুহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব হতো। এখন লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের দফতর সম্পাদক ও বিশিষ্ট মাইক্রোবায়োলজিস্ট অধ্যাপক ডা. এসএম শহীদ উল্লাহ  বলেন, করোনায় মৃত্যুহার বাড়ে রোগীদের ধরনের ওপর। কিন্তু হঠাৎ মৃত্যুহার বাড়া কোনো ভালো লক্ষণ নয়।

এটি দুশ্চিন্তার কারণ। ঢিলেঢালা লকডাউন আরও শিথিল করায় দেশে বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার। বর্তমানে যেহারে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে আগামী ঈদ পর্যন্ত লকডাউন থাকা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে জীবন থাকলে অর্থ উপার্জন করা যাবে।

কিন্তু করোনায় এভাবে মৃত্যু চলতে থাকলে সেটা দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই এ অবস্থায় ব্যক্তি পরিবার থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের (স্বাস্থ্যকর্মী, সংবাদকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য) পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান বলেন, এভাবে যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে এটা আমাদের আশঙ্কা ছিল।

কেননা যখন দেশে সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে, তখন লকডাউন শিথিল করা হল, কলকারখানা-মসজিদ খুলে দেয়া হল। এমনকি কেনাকাটার জন্য শপিং মলও খুলে দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বাড়াই স্বাভাবিক।