ঢাকা ১০:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




“আমার হোস্টেল জীবন” চিকিৎসক ফারহানা মোবিন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৫১:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৯ ১০৭ বার পড়া হয়েছে

 

২০০২ সালের কথা । তখন আমি থাকতাম নগরীর শিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে ।
রাজধানীর রায়ের বাজার এ আমাদের মেডিকেল কলেজ । আমাদের মেডিকেল কলেজের campus টা তখন ছিল view card এর মতো সুন্দর । এখনো ভীষণ সুন্দর । তবে সেই সময় ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আরো বেশী ভরপুর ।

মেডিকেল কলেজের শিকদার apartment এর পেছনে দেখা যেত নদী । ছোট্ট বেলা থেকেই নদী আমার ভীষণ প্রিয় । নতুন যখন হোস্টেলে উঠলাম, তখন কারো মা বাবা কে দেখলেই মনটা খারাপ হয়ে যেত । আমার মন চলে যেত রাজশাহীতে আমার মা আর ভাই বোনের কাছে ।

বৃহস্পতি বারে class করে অসংখ্য ছাত্রী বাসায় চলে যেত ।গভীর রাত পর্যন্ত কেউ পড়তো , কেউ গান শুনতো , আবার অনেকে তাদের বন্ধুদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতো । আমি অবসর পেলেই নেশার মতো লিখতাম । খুব মন খারাপ হলেই লিখতে বসতাম । লিখলে আমার মন ভালো হয়ে যেত ।

আমার হোস্টেল জীবনের প্রথম রুম মেট ছিল নীলা । আমরা সবাই ছিলাম জেড টেন batch এর । আমার অনেক উপকার সে করেছে । আবছা ভাবে মনে হচ্ছে, তার কাছে প্রথম চেয়েছিলাম মশারী বাধার ফিতা ।

একটা ছোট্ট বিছানা, একটা পড়ার টেবিল আর ছোট্ট একটা লকার নিয়ে শুরু হয়েছিল আমার সংসার । হোস্টেলের সংসার । আর সে সংসারের সংগী ছিল অনেক গুলো মোটা মোটা মেডিকেল কলেজের বই , ফুল এক সেট কংকাল । পড়ালেখার সুবিধার জন্য পুরো একটা মানুষের কংকাল ছিল আমাদের সবার সংগী ।

Anatomy দিয়ে শুরু হয় মেডিকেল কলেজের first year । দল বেঁধে সবাই মরা মানুষের হাড় নিয়ে পড়তে বসতাম ।

একসময় আমার রুমমেট হয়ে উঠল আরো পাঁচ জন । একেক টা রুমে আমরা ছয় জন একসাথে থাকতাম ।যে মানুষ গুলো ছিল আমার সুখ দুঃখের অংশীদার ।

আমার home district রাজশাহী । মেডিকেল কলেজের ছুটি ছাড়া আমি রাজশাহী যেতে পারতাম না ।আমার রুমমেট বাকি পাঁচ জনের বাসা ছিল ঢাকা আর নোয়াখালী তে ।

তখন আমি ঠিক মতো খেতে পেতাম না । হোস্টেলে অনেকেই রান্না করতো । আমরা রান্না করতে পারতাম
না ।

২৬৪ নং রুমে ছিল আমাদের সংসার ।

আমাদের সবার মাঝে ছিল মধুর সম্পর্ক । আমরা সবাই ভালো কোন খাবার ভাগ করে খেতাম । তখন ঢাকায় নতুন এসেছিলাম । সবাই একসাথে বেড়াতে যেতাম ।

ঠিক মতো খেতে পেতাম না । মহিলা হোস্টেলের অনেক কড়া নিরাপত্তা ছিল । তখন আমাদের মেডিকেল কলেজের পাশে এতো দোকান ছিল না । সন্ধ্যা হলেই হোস্টেলের পেছনের দিকে শুনতে পেতাম ঝি ঝি পোকার আওয়াজ ।

চোখ বন্ধ করলেই আমি সেই শব্দ আজও শুনতে পাই । আজো দেখতে পাই , হোস্টেল সুপার ‘ উন্নতি আপা ‘ র তদারকি ।

চোখের নিমেষেই বয়ে গেল অনেক গুলো বছর ।তবু যেন মনে হয় , আমি এখনো হোস্টেলের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি । এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য ।

বন্ধু তোদের কে আমি খুব মিশ করি । এখনো মাঝে মাঝে দেখতে পাই , আমার রুমমেট কেউ ওয়াটার হিটার দিয়ে চা বানাচ্ছে । কেউ নামাজ পড়ছে । আর কেউ tired হয়ে গাইছে , ” পড়ার নাম বেদনা, একথা বুঝিনি আগে ……….। ”

হোস্টেলের পেছনের রেলিং ধরে আমি প্রায়ই দাড়িয়ে থাকতাম । নদীর ঢেউ দেখলেই আমার মন ভালো হয়ে যেত ।

আজকের এই আমি টা ভীষণ যান্ত্রিক । নদীর ঢেউ দেখার আর ঝি ঝি পোকার আওয়াজ শোনার সময় নেই ।

তবু খুব ইচ্ছে করে, ওয়াটার হিটার আর টি pack দিয়ে বানানো চা খাওয়ার জন্য । বন্ধু তোদের কে আমি খুব খুব miss করি ।

২০১৯ এর ডানায় ভর করে , আমার মন উড়ে চলে যায় ২০০২ এর হোস্টেল জীবনে ।

আমার মনের মন্দিরে এখনো আমার সেই রুমমেট, আমার মেডিকেল কলেজের campus, আমার সেই প্রিয় নদীর ঢেউ ।

চোখ বন্ধ করলেই , আমি এখনো দেখি , আমি দাঁড়িয়েই আছি হোস্টেলের রেলিং ধরে ।

আমি প্রিয় মেডিকেল কলেজ , তোমার প্রতিটি ইট পাথরের সাথে জড়িয়ে আছে আমার অনেক আনন্দ বেদনার গল্প ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




“আমার হোস্টেল জীবন” চিকিৎসক ফারহানা মোবিন

আপডেট সময় : ১১:৫১:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৯

 

২০০২ সালের কথা । তখন আমি থাকতাম নগরীর শিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে ।
রাজধানীর রায়ের বাজার এ আমাদের মেডিকেল কলেজ । আমাদের মেডিকেল কলেজের campus টা তখন ছিল view card এর মতো সুন্দর । এখনো ভীষণ সুন্দর । তবে সেই সময় ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আরো বেশী ভরপুর ।

মেডিকেল কলেজের শিকদার apartment এর পেছনে দেখা যেত নদী । ছোট্ট বেলা থেকেই নদী আমার ভীষণ প্রিয় । নতুন যখন হোস্টেলে উঠলাম, তখন কারো মা বাবা কে দেখলেই মনটা খারাপ হয়ে যেত । আমার মন চলে যেত রাজশাহীতে আমার মা আর ভাই বোনের কাছে ।

বৃহস্পতি বারে class করে অসংখ্য ছাত্রী বাসায় চলে যেত ।গভীর রাত পর্যন্ত কেউ পড়তো , কেউ গান শুনতো , আবার অনেকে তাদের বন্ধুদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতো । আমি অবসর পেলেই নেশার মতো লিখতাম । খুব মন খারাপ হলেই লিখতে বসতাম । লিখলে আমার মন ভালো হয়ে যেত ।

আমার হোস্টেল জীবনের প্রথম রুম মেট ছিল নীলা । আমরা সবাই ছিলাম জেড টেন batch এর । আমার অনেক উপকার সে করেছে । আবছা ভাবে মনে হচ্ছে, তার কাছে প্রথম চেয়েছিলাম মশারী বাধার ফিতা ।

একটা ছোট্ট বিছানা, একটা পড়ার টেবিল আর ছোট্ট একটা লকার নিয়ে শুরু হয়েছিল আমার সংসার । হোস্টেলের সংসার । আর সে সংসারের সংগী ছিল অনেক গুলো মোটা মোটা মেডিকেল কলেজের বই , ফুল এক সেট কংকাল । পড়ালেখার সুবিধার জন্য পুরো একটা মানুষের কংকাল ছিল আমাদের সবার সংগী ।

Anatomy দিয়ে শুরু হয় মেডিকেল কলেজের first year । দল বেঁধে সবাই মরা মানুষের হাড় নিয়ে পড়তে বসতাম ।

একসময় আমার রুমমেট হয়ে উঠল আরো পাঁচ জন । একেক টা রুমে আমরা ছয় জন একসাথে থাকতাম ।যে মানুষ গুলো ছিল আমার সুখ দুঃখের অংশীদার ।

আমার home district রাজশাহী । মেডিকেল কলেজের ছুটি ছাড়া আমি রাজশাহী যেতে পারতাম না ।আমার রুমমেট বাকি পাঁচ জনের বাসা ছিল ঢাকা আর নোয়াখালী তে ।

তখন আমি ঠিক মতো খেতে পেতাম না । হোস্টেলে অনেকেই রান্না করতো । আমরা রান্না করতে পারতাম
না ।

২৬৪ নং রুমে ছিল আমাদের সংসার ।

আমাদের সবার মাঝে ছিল মধুর সম্পর্ক । আমরা সবাই ভালো কোন খাবার ভাগ করে খেতাম । তখন ঢাকায় নতুন এসেছিলাম । সবাই একসাথে বেড়াতে যেতাম ।

ঠিক মতো খেতে পেতাম না । মহিলা হোস্টেলের অনেক কড়া নিরাপত্তা ছিল । তখন আমাদের মেডিকেল কলেজের পাশে এতো দোকান ছিল না । সন্ধ্যা হলেই হোস্টেলের পেছনের দিকে শুনতে পেতাম ঝি ঝি পোকার আওয়াজ ।

চোখ বন্ধ করলেই আমি সেই শব্দ আজও শুনতে পাই । আজো দেখতে পাই , হোস্টেল সুপার ‘ উন্নতি আপা ‘ র তদারকি ।

চোখের নিমেষেই বয়ে গেল অনেক গুলো বছর ।তবু যেন মনে হয় , আমি এখনো হোস্টেলের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি । এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য ।

বন্ধু তোদের কে আমি খুব মিশ করি । এখনো মাঝে মাঝে দেখতে পাই , আমার রুমমেট কেউ ওয়াটার হিটার দিয়ে চা বানাচ্ছে । কেউ নামাজ পড়ছে । আর কেউ tired হয়ে গাইছে , ” পড়ার নাম বেদনা, একথা বুঝিনি আগে ……….। ”

হোস্টেলের পেছনের রেলিং ধরে আমি প্রায়ই দাড়িয়ে থাকতাম । নদীর ঢেউ দেখলেই আমার মন ভালো হয়ে যেত ।

আজকের এই আমি টা ভীষণ যান্ত্রিক । নদীর ঢেউ দেখার আর ঝি ঝি পোকার আওয়াজ শোনার সময় নেই ।

তবু খুব ইচ্ছে করে, ওয়াটার হিটার আর টি pack দিয়ে বানানো চা খাওয়ার জন্য । বন্ধু তোদের কে আমি খুব খুব miss করি ।

২০১৯ এর ডানায় ভর করে , আমার মন উড়ে চলে যায় ২০০২ এর হোস্টেল জীবনে ।

আমার মনের মন্দিরে এখনো আমার সেই রুমমেট, আমার মেডিকেল কলেজের campus, আমার সেই প্রিয় নদীর ঢেউ ।

চোখ বন্ধ করলেই , আমি এখনো দেখি , আমি দাঁড়িয়েই আছি হোস্টেলের রেলিং ধরে ।

আমি প্রিয় মেডিকেল কলেজ , তোমার প্রতিটি ইট পাথরের সাথে জড়িয়ে আছে আমার অনেক আনন্দ বেদনার গল্প ।