আড়ংয়ে চেঞ্জরুমে গোপনে ভিডিও : সিরাজুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
- আপডেট সময় : ১০:৩২:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক; আড়ংয়ের চেঞ্জরুমে গোপনে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগে গ্রেফতার প্রতিষ্ঠানটির চাকরিচ্যুত কর্মী সিরাজুল ইসলাম সজীব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার একদিনের রিমান্ড শেষে সিরাজুলকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম। এসময় সিরাজুল স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডল তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ২৫ জানুয়ারি মিরপুরের পূর্ব শেওড়াপাড়া থেকে সজীবকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে একদিনের রিমান্ডে নেয় ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম বিভাগ। তদন্তের সময় সজীবের কাছ থেকে ৩৭টি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। এগুলো আড়ংয়ের বনানী শাখার তরুণী স্টাফদের পোশাক পরিবর্তনের সময় ধারণ করা হয়।
তদন্ত সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত ৩৭টি ভিডিও ৮-১০ জন তরুণীর। তারা ডিউটির শুরুতে স্টাফ চেঞ্জরুমে নিজেদের সাধারণ পোশাক পরিবর্তন করে আড়ংয়ের নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরেন। আবার ডিউটি শেষে ইউনিফর্ম বদলে নিজেদের কাপড় পরে বের হন। ওই সময়ই গোপনে রুমে স্থাপিত ক্যামেরায় ভিডিও করতেন সজীব।
এক সহকর্মীর ভিডিও ধারণ ও সামাজিক মাধ্যমে আপলোডের অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বরে তাকে চাকরিচ্যুত করে আড়ং। তবে এর পরপরই জানুয়ারিতে সজীব ২২ বছর বয়সী এক তরুণী স্টাফের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে তার কাপড় পরিবর্তনের ভিডিও পাঠিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করেন। ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দেন ওই তরুণীকে।
যে ভিডিও উদ্ধার হয়েছে, সেখানে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার তরুণী ছাড়া আরও চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তারা।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগ থেকে সজীব বিভিন্ন কৌশলে স্টাফদের চেঞ্জরুমে মোবাইলের ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও করতেন। এ পর্যন্ত তিনি অনেকের ভিডিও ধারণ করলেও একজন তরুণীই শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সজীব ওই তরুণীর ম্যাসেঞ্জারে ছবি পাঠিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন এবং চাঁদা দাবি করেন।
সজীবের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আড়ংয়ের বনানী শাখায় কর্মরত এক তরুণীকে ১১ জানুয়ারি রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে সজীব তার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার থেকে বার্তা পাঠিয়ে সীমান্ত সৈকত নামে আরেক ফেসবুক আইডি থেকে পাঠানো একটি ভিডিও দেখতে বলেন। ওই তরুণী ভিডিওতে দেখেন, আড়ংয়ের বনানী শাখার চতুর্থ তলার কর্মচারীদের চেঞ্জরুমে তার পোশাক পরিবর্তনের দৃশ্য এটি। এসময় সজীব তাকে ভিডিও করে শরীর দেখাতে বলেন এবং তার কথামতো কাজ না করলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন।
এ বিষয়ে আড়ংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, সিরাজুল ইসলাম সজীবের বিরুদ্ধে বনানী আউটলেটের একজন বিক্রয় প্রতিনিধি ১৬ জানুয়ারি বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। এ ব্যাপারে অভিযোগকারীকে শুরু থেকেই সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, আড়ং যৌন হয়রানিমূলক যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে সর্বদা কঠোর অবস্থানে থাকে এবং এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত আড়ং-সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কঠোর হস্তে দমনের জন্য তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সিরাজুল ইসলাম সজীবের বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরে যৌন হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্তের মাধ্যমে তাকে তৎক্ষণাৎ চাকরিচ্যুত করা হয়। বর্তমানে চলমান মামলাটির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কর্তৃপক্ষকে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।