ঢাকা ১১:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




পাথরবিহীন রেলপথ ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৩০:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ৯২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদক;  

রাজধানীর প্রধান রেলস্টেশন কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইনের কোথাও কোথাও পাথরের ছিটেফোঁটাও নেই। স্লিপারের ফাঁকে মাটি দেখা যায়। এমনকি কোথাও কোথাও আগাছাও গজিয়েছে।

শুধু রেলপথের এ অংশেই এমন করুণ দশা নয়, দেশের গোটা রেললাইনেই এমন অবস্থা। আর এ কারণেই অহরহ ঘটছে ট্রেন দুর্ঘটনা।

নিয়ম অনুযায়ী রেলস্লিপারের উপরে চার ইঞ্চি পর্যন্ত পাথর থাকার কথা। দেশে রেলপথের প্রায় সর্বত্র পাথরের অস্তিত্ব ঠেকেছে স্লিপারের তলানিতে। ফলে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। দিন দিন এ অবস্থা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে।

তবে এ সমস্যা নিরসনে রেল মন্ত্রণালয় কোনো আশার বাণী শোনাতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাথর সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে ১০ থেকে ১৫ বছরেও এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। কারণ রেলপথে ব্যবহৃত পাথর শতভাগ আমদানিনির্ভর। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে পাথরের মজুদ কমছে।

প্রতিবছর রেলযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। বুলেট ও দ্রুতগামী ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেয়া হলেও যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো উদ্যোগ নেই। রেলপথ দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। পরিণত হচ্ছে মরণফাঁদে। পাথরবিহীন রেলপথে আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া ৮৮ শতাংশ যাত্রীবাহী বগি দিয়ে ট্রেন চলছে।

২ হাজার ৯৫৫ কিলোমিটার রেলপথে প্রতিবছর ১ কোটি সিএফটি পাথর প্রয়োজন।

কিন্তু সেখানে বছরে ৫ লাখ সিএফটি পাথর দেয়াও নিশ্চিত করতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ক্ষয় হয়ে যাওয়া লোহার পাত, ভেঙে বা খোয়া যাওয়া ক্লিপ-হুক, নাট-বল্টু, ফিসপ্লেট, স্লিপার পূরণে কোনো নজর নেই সংশ্লিষ্টদের। ফলে উনিশ থেকে বিশ হলেই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

আবার রেলপথে নামমাত্র পাথর দেয়া নিয়েও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। রেলওয়ের এক প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে পাথর ক্রয় ও ব্যবহারে অনিয়মে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন জানান, পাথর ক্রয় ও ব্যবহারে অনিয়ম করা হয়েছে- এমন একটি প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি।

রেলপথে পাথরের স্বল্পতা রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, পুরো রেলপথে যে পরিমাণ পাথর প্রয়োজন, সেই পরিমাণ পাথর দেয়া নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আমরা পুরো বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি হলে কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।

রেলপথ নিরাপদ না হলে রেলের কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা আসবে না। তিনি বলেন, রেলপথে যথাযথ পাথর দেয়া নিশ্চিত করতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।

রেলওয়ে মহাপরিচালক শামছুজ্জামান জানান, রেলপথে পাথর স্বল্পতা রয়েছে। এটি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। পাথর আমদানি করতে হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো অবহেলা-অনিয়ম থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছি। কমিটির সদস্যরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। পাথরসহ পুরো রেলপথের সমস্যা দেখে তারা প্রতিবেদন দেবেন। তিনি বলেন, বিষয়টি জেনে রেলপথমন্ত্রী জানিয়েছেন, যত টাকা লাগে লাগুক, রেলপথকে নিরাপদ করতে হবে। তবে পাথর পেতে বেশ কয়েক বছর লাগতে পারে।

রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে পাথরবিহীন রেলপথের কারণে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন-২ শাখার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রেলপথ ঠিক রাখতে পাথর ক্রয় ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

দরপত্র অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১০ জুন থেকে ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বরের মধ্যে পাঁচ লাখ সিএফটি পাথর রেলপথে দেয়ার কথা। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে মাত্র ৬৯ হাজার সিএফটি পাথর কেনা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আহমেদ মোর্শেদ ও উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। এ সময় পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন আবদুল জলিল। বর্তমানে তিনি পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাথর কেনায় বরাদ্দ বাজেটের মাত্র এক দশমিক ৫৮ শতাংশ পাথর ক্রয় করা হয়। বাকি বরাদ্দ অর্থ কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, সেটির কোনো প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়- পুরো রেলপথেই পর্যাপ্ত পাথর দেখা যায়নি। পাথর স্বল্পতা ছিল ভয়ংকর।

পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তাগীন জানান, পূর্বাঞ্চল রেলপথে পাথরের স্বল্পতা রয়েছে। রেলের দুই অঞ্চলে (পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল) প্রায় এক কোটি সিএফটি পাথরের প্রয়োজন। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে পাঁচ লাখ সিএফটি পাথরও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

নিরাপদ রেলপথ নিশ্চিত করতে হলে যথাযথ পাথর থাকা চাই। তিনি বলেন, ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে পাথর আমদানি করতে হয়। দেশে একসময় পর্যাপ্ত পাথর ছিল। দেশি পাথরের চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি দামে পাথর আমদানি করতে হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলপথে সবচেয়ে কম পাথর রয়েছে। মাইলের পর মাইল রেলপথে নামমাত্র পাথর আছে। সম্প্রতি রেললাইনে পাথর দেয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এসব অভিযোগ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও দুদকেও দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পাথর না দিয়ে বিল পরিশোধ, নিম্নমানের পাথর কেনার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মাঠপর্যায়ে থাকা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রেলপথে পাথর আছে কি না, তা দেখারই লোক নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বছরে ১-২ বার ট্রলি দিয়ে রেলপথ পরির্দশন করেই দায়িত্ব শেষ করেন।

ট্রেনচালক অ্যাসোসিয়েশনের বেশ কয়েকজন সিনিয়র চালক জানান, পাথরবিহীন লাইন দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। ইঞ্জিনসহ পুরো ট্রেন প্রচণ্ড শব্দ নিয়ে চলে। এতে উনিশ থেকে বিশ হলেই লাইনচ্যুতসহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এজন্য তাদের দায়ী করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




পাথরবিহীন রেলপথ ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ

আপডেট সময় : ১০:৩০:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

বিশেষ প্রতিবেদক;  

রাজধানীর প্রধান রেলস্টেশন কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইনের কোথাও কোথাও পাথরের ছিটেফোঁটাও নেই। স্লিপারের ফাঁকে মাটি দেখা যায়। এমনকি কোথাও কোথাও আগাছাও গজিয়েছে।

শুধু রেলপথের এ অংশেই এমন করুণ দশা নয়, দেশের গোটা রেললাইনেই এমন অবস্থা। আর এ কারণেই অহরহ ঘটছে ট্রেন দুর্ঘটনা।

নিয়ম অনুযায়ী রেলস্লিপারের উপরে চার ইঞ্চি পর্যন্ত পাথর থাকার কথা। দেশে রেলপথের প্রায় সর্বত্র পাথরের অস্তিত্ব ঠেকেছে স্লিপারের তলানিতে। ফলে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। দিন দিন এ অবস্থা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে।

তবে এ সমস্যা নিরসনে রেল মন্ত্রণালয় কোনো আশার বাণী শোনাতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাথর সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে ১০ থেকে ১৫ বছরেও এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। কারণ রেলপথে ব্যবহৃত পাথর শতভাগ আমদানিনির্ভর। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে পাথরের মজুদ কমছে।

প্রতিবছর রেলযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। বুলেট ও দ্রুতগামী ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেয়া হলেও যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো উদ্যোগ নেই। রেলপথ দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। পরিণত হচ্ছে মরণফাঁদে। পাথরবিহীন রেলপথে আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া ৮৮ শতাংশ যাত্রীবাহী বগি দিয়ে ট্রেন চলছে।

২ হাজার ৯৫৫ কিলোমিটার রেলপথে প্রতিবছর ১ কোটি সিএফটি পাথর প্রয়োজন।

কিন্তু সেখানে বছরে ৫ লাখ সিএফটি পাথর দেয়াও নিশ্চিত করতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ক্ষয় হয়ে যাওয়া লোহার পাত, ভেঙে বা খোয়া যাওয়া ক্লিপ-হুক, নাট-বল্টু, ফিসপ্লেট, স্লিপার পূরণে কোনো নজর নেই সংশ্লিষ্টদের। ফলে উনিশ থেকে বিশ হলেই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

আবার রেলপথে নামমাত্র পাথর দেয়া নিয়েও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। রেলওয়ের এক প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে পাথর ক্রয় ও ব্যবহারে অনিয়মে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন জানান, পাথর ক্রয় ও ব্যবহারে অনিয়ম করা হয়েছে- এমন একটি প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি।

রেলপথে পাথরের স্বল্পতা রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, পুরো রেলপথে যে পরিমাণ পাথর প্রয়োজন, সেই পরিমাণ পাথর দেয়া নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আমরা পুরো বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি হলে কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।

রেলপথ নিরাপদ না হলে রেলের কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা আসবে না। তিনি বলেন, রেলপথে যথাযথ পাথর দেয়া নিশ্চিত করতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।

রেলওয়ে মহাপরিচালক শামছুজ্জামান জানান, রেলপথে পাথর স্বল্পতা রয়েছে। এটি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। পাথর আমদানি করতে হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো অবহেলা-অনিয়ম থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছি। কমিটির সদস্যরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। পাথরসহ পুরো রেলপথের সমস্যা দেখে তারা প্রতিবেদন দেবেন। তিনি বলেন, বিষয়টি জেনে রেলপথমন্ত্রী জানিয়েছেন, যত টাকা লাগে লাগুক, রেলপথকে নিরাপদ করতে হবে। তবে পাথর পেতে বেশ কয়েক বছর লাগতে পারে।

রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে পাথরবিহীন রেলপথের কারণে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন-২ শাখার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রেলপথ ঠিক রাখতে পাথর ক্রয় ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

দরপত্র অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১০ জুন থেকে ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বরের মধ্যে পাঁচ লাখ সিএফটি পাথর রেলপথে দেয়ার কথা। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে মাত্র ৬৯ হাজার সিএফটি পাথর কেনা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আহমেদ মোর্শেদ ও উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। এ সময় পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন আবদুল জলিল। বর্তমানে তিনি পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাথর কেনায় বরাদ্দ বাজেটের মাত্র এক দশমিক ৫৮ শতাংশ পাথর ক্রয় করা হয়। বাকি বরাদ্দ অর্থ কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, সেটির কোনো প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়- পুরো রেলপথেই পর্যাপ্ত পাথর দেখা যায়নি। পাথর স্বল্পতা ছিল ভয়ংকর।

পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তাগীন জানান, পূর্বাঞ্চল রেলপথে পাথরের স্বল্পতা রয়েছে। রেলের দুই অঞ্চলে (পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল) প্রায় এক কোটি সিএফটি পাথরের প্রয়োজন। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে পাঁচ লাখ সিএফটি পাথরও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

নিরাপদ রেলপথ নিশ্চিত করতে হলে যথাযথ পাথর থাকা চাই। তিনি বলেন, ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে পাথর আমদানি করতে হয়। দেশে একসময় পর্যাপ্ত পাথর ছিল। দেশি পাথরের চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি দামে পাথর আমদানি করতে হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলপথে সবচেয়ে কম পাথর রয়েছে। মাইলের পর মাইল রেলপথে নামমাত্র পাথর আছে। সম্প্রতি রেললাইনে পাথর দেয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এসব অভিযোগ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও দুদকেও দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পাথর না দিয়ে বিল পরিশোধ, নিম্নমানের পাথর কেনার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মাঠপর্যায়ে থাকা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রেলপথে পাথর আছে কি না, তা দেখারই লোক নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বছরে ১-২ বার ট্রলি দিয়ে রেলপথ পরির্দশন করেই দায়িত্ব শেষ করেন।

ট্রেনচালক অ্যাসোসিয়েশনের বেশ কয়েকজন সিনিয়র চালক জানান, পাথরবিহীন লাইন দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। ইঞ্জিনসহ পুরো ট্রেন প্রচণ্ড শব্দ নিয়ে চলে। এতে উনিশ থেকে বিশ হলেই লাইনচ্যুতসহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এজন্য তাদের দায়ী করা হয়।