ঢাকা ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




চা বিক্রেতা খালেকের টাকায় স্থাপিত স্কুলটি এবার এমপিওভুক্ত হয়েছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৫:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০১৯ ১০৪ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা

এবারের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়। এমপিওভুক্তির তালিকার (মাধ্যমিক) ৮৭৪ নম্বরে রয়েছে ওই স্কুলের নাম।

ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চা বিক্রেতা আবদুল খালেক। ষাটের দশকে চা বিক্রি করে ৭ হাজার টাকা জমিয়ে ৫২ শতক জমি কেনেন আবদুল খালেক। এরপর ওই জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। গত সপ্তাহে তার স্বপ্নের বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। এ খবর পেয়ে খালেক (৯১) আনন্দে আত্মহারা। খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীও।

স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি জেলার বরুড়া উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৬ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী রয়েছে। এছাড়াও খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন আরও ৪ জন। শিক্ষার্থী আছে প্রায় সাড়ে ৪শ। বিদ্যালয়ে বর্তমানে জায়গার পরিমাণ ৯৩ দশমিক ৫০ শতক। বিদ্যালয়ের টিনশেডের ঘরটি জরাজীর্ণ। তবে নতুন করে একটি চারতলা ও একটি একতলা ভবন হবে বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আবদুল খালেক লাঠিতে ভর করে শিক্ষক মিলনায়তনে আসছেন। তার পেছনে একদল খুদে শিক্ষার্থী। শিক্ষকেরা তাকে এগিয়ে আনেন।

এমপিওভুক্তির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আবদুল খালেক বলেন, এ এলাকা শিক্ষাদীক্ষায় মেঘাচ্ছন্ন ছিল। আমি শিক্ষার আলো ছড়াতে জমি দিয়েছি। কেবল আমি নই, পুরো এলাকাবাসী ও শিক্ষক এবং এলাকাবাসী এমপিওভুক্তিতে খুশি। আমি এ এলাকার ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছাতে পেরেছি। এটাই আমার সার্থকতা।

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গল্প শোনান আবদুল খালেক। তিনি বলেন, এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষায় নিমজ্জিত। মানুষের মধ্যে কিছুটা কুসংস্কারও রয়েছে। এর মধ্যেও এলাকার হাতে গোণা কয়েকজন শিক্ষিত তরুণ বিএ পাস করেছে। গ্রামের মানুষজন ওদের নাম বিকৃত করে উচ্চারণ করতো। বিষয়টি আমার মতো একজন নগণ্য চা দোকানদারের মনে দাগ কাটে। চা বানাতে গিয়ে একদিন প্রতিজ্ঞা করলাম, গ্রামের মানুষদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ভাবনা থেকেই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিই। তাই তো, নিজের কেনা ৫২ শতক জমি বিলিয়ে দিই প্রতিষ্ঠানের জন্য। এখন আমার ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শত শত শিক্ষার্থী। প্রতিদিন বিদ্যালয়ের সামনে বসে চা বানাই, আর শিক্ষার্থীদের হই-হুল্লোড় দেখি।

এসব দেখে পরান জুড়িয়ে যায়। মনে শান্তি পাই। মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে দুষ্টুমি করে। আমার স্ত্রী, সন্তান না থাকায় ওদেরই আমার সন্তান এবং নাতি-নাতনির মতো মনে হয়।

আবদুল খালেক আরও বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল দেখে যাওয়া। সেটি দেখেছি। এখন চাই একদিন এখানে কলেজ হবে।

নলুয়া চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফখরুদ্দিন বলেন, তিনি (আবদুল খালেক) আমার বাবার সহপাঠী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি তিনি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেন। তার অবদান এলাকাবাসী সারা জীবন মনে রাখবে।

নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আবদুল খালেক সরলমনা ও উদার মানসিকতার লোক।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মজিদ বলেন, আবদুল খালেকের ত্যাগ এলাকাবাসী মনে রাখবে। তার মতো শিক্ষাবান্ধব লোক প্রতিটি এলাকায় থাকা দরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




চা বিক্রেতা খালেকের টাকায় স্থাপিত স্কুলটি এবার এমপিওভুক্ত হয়েছে

আপডেট সময় : ১১:১৫:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০১৯

জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা

এবারের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়। এমপিওভুক্তির তালিকার (মাধ্যমিক) ৮৭৪ নম্বরে রয়েছে ওই স্কুলের নাম।

ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চা বিক্রেতা আবদুল খালেক। ষাটের দশকে চা বিক্রি করে ৭ হাজার টাকা জমিয়ে ৫২ শতক জমি কেনেন আবদুল খালেক। এরপর ওই জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। গত সপ্তাহে তার স্বপ্নের বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। এ খবর পেয়ে খালেক (৯১) আনন্দে আত্মহারা। খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীও।

স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি জেলার বরুড়া উপজেলার নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৬ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী রয়েছে। এছাড়াও খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন আরও ৪ জন। শিক্ষার্থী আছে প্রায় সাড়ে ৪শ। বিদ্যালয়ে বর্তমানে জায়গার পরিমাণ ৯৩ দশমিক ৫০ শতক। বিদ্যালয়ের টিনশেডের ঘরটি জরাজীর্ণ। তবে নতুন করে একটি চারতলা ও একটি একতলা ভবন হবে বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আবদুল খালেক লাঠিতে ভর করে শিক্ষক মিলনায়তনে আসছেন। তার পেছনে একদল খুদে শিক্ষার্থী। শিক্ষকেরা তাকে এগিয়ে আনেন।

এমপিওভুক্তির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আবদুল খালেক বলেন, এ এলাকা শিক্ষাদীক্ষায় মেঘাচ্ছন্ন ছিল। আমি শিক্ষার আলো ছড়াতে জমি দিয়েছি। কেবল আমি নই, পুরো এলাকাবাসী ও শিক্ষক এবং এলাকাবাসী এমপিওভুক্তিতে খুশি। আমি এ এলাকার ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছাতে পেরেছি। এটাই আমার সার্থকতা।

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গল্প শোনান আবদুল খালেক। তিনি বলেন, এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষায় নিমজ্জিত। মানুষের মধ্যে কিছুটা কুসংস্কারও রয়েছে। এর মধ্যেও এলাকার হাতে গোণা কয়েকজন শিক্ষিত তরুণ বিএ পাস করেছে। গ্রামের মানুষজন ওদের নাম বিকৃত করে উচ্চারণ করতো। বিষয়টি আমার মতো একজন নগণ্য চা দোকানদারের মনে দাগ কাটে। চা বানাতে গিয়ে একদিন প্রতিজ্ঞা করলাম, গ্রামের মানুষদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ভাবনা থেকেই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিই। তাই তো, নিজের কেনা ৫২ শতক জমি বিলিয়ে দিই প্রতিষ্ঠানের জন্য। এখন আমার ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শত শত শিক্ষার্থী। প্রতিদিন বিদ্যালয়ের সামনে বসে চা বানাই, আর শিক্ষার্থীদের হই-হুল্লোড় দেখি।

এসব দেখে পরান জুড়িয়ে যায়। মনে শান্তি পাই। মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে দুষ্টুমি করে। আমার স্ত্রী, সন্তান না থাকায় ওদেরই আমার সন্তান এবং নাতি-নাতনির মতো মনে হয়।

আবদুল খালেক আরও বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল দেখে যাওয়া। সেটি দেখেছি। এখন চাই একদিন এখানে কলেজ হবে।

নলুয়া চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফখরুদ্দিন বলেন, তিনি (আবদুল খালেক) আমার বাবার সহপাঠী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি তিনি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেন। তার অবদান এলাকাবাসী সারা জীবন মনে রাখবে।

নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আবদুল খালেক সরলমনা ও উদার মানসিকতার লোক।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মজিদ বলেন, আবদুল খালেকের ত্যাগ এলাকাবাসী মনে রাখবে। তার মতো শিক্ষাবান্ধব লোক প্রতিটি এলাকায় থাকা দরকার।