ঢাকা ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




বরিশালের কাউন্সিলর মান্নার নেতৃত্বে প্রেসক্লাব সম্পাদকের কার্যালয় গুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা! 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯ ৮৫ বার পড়া হয়েছে

 

বরিশাল অফিসঃ

সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করার জেরে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের নির্মাণাধীন ভবন ভাংচুরের চেষ্টা চালানো হয়েছে। আজ (৭ অক্টোবর) সোমবার বিকেল চারটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নগরীর ২০ নং ওয়ার্ডের কলেজ রো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কিছু জানতেন না বলে জানিয়েছেন। এমনকি ভবন ভাঙ্গারও কোন নির্দেশ সিটি কর্পোরেশন থেকে দেওয়া হয়নি। দুই দফায় ভবন ভাংচুরের চেষ্টা চালালেও র‌্যাব ও পুলিশের হস্তক্ষেপে ভাংচুর করতে পারেনি মান্নার অনুসারীরা। এ ঘটনায় ওই এলাকায় সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি নিন্দনীয় বলেও জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। পাশাপাশি ব্যাক্তিগত ক্ষোভের কারণে সাংবাদিক নেতার বাসভবন ভাংচুরের অপচেষ্টার বিষয়ে মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নেতারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেল চারটার দিকে হঠাৎ করেই সিটি কর্পোরেশনের দুটি ময়লা বহনের গাড়ি ও একটি বুলডোজার কলেজ রো-তে প্রবেশ করে। ময়লা বহনের গাড়ির একটি আরিফ মেমোরিয়াল হসপিটালের পূর্ব পাশের মোড়ে, অন্যটি কলেজ রো’র পূর্ব মাথায় অবস্থান নিয়ে যান ও মানুষ চলাচল আটকে দেয়। রোড ইন্সপেক্টর অনিক ও মোঃ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনের বাসা ভাঙ্গার প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে এসএম জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে এসে উচ্ছেদের নির্দেশপত্র দেখতে চান রোড ইন্সপেক্টরদের কাছে।

কিন্তু কোন ধরণের উচ্ছেদের নির্দেশপত্র দেখাতে না পারায় বুলডোজার দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনটি না ভাঙ্গতে অনুরোধ করেন। তখন রোড ইন্সপেক্টররা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং দফায় দফায় ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে থাকেন। কলেজ রো-তে বুলডোজার দেখে এলাকাবাসী জড়ো হলে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া, কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নূরুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মোঃ আসাদুজ্জামানসহ পুলিশ ফোর্স। পুলিশ কর্মকর্তারা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ও স্থানীয়দের উত্তেজিত না হতে অনুরোধ করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া উচ্ছেদের নির্দেশনামা দেখতে চান। সিটি কর্পোরেশনের রোড ইন্সপেক্টররা নির্দেশপত্র দেখাতে না পেরে জানান, বিষয়টি কাউন্সিলর মান্না জানেন। তখন বিধানমত নোটিশ দিয়ে ভবন ভাঙ্গার অনুরোধ করেন উপ পুলিশ কমিশনার। একইসাথে সবাইকে চলে যেতে বলেন।

উপ পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে বুলডোজার ও ময়লা বহনের গাড়ি নিয়ে কলেজ রো এলাকা ত্যাগ করেন নগর ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সবাই চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাঈদ আহম্মেদ মান্না। তিনি অকথ্য ভাষায় গালি দিতে দিতে বলেন, তাদের হাত ভেঙ্গে ফেলবো যারা সিটি কর্পোরেশনের স্টাফদের মারধর করেছে। মান্নার পরপরই মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শতাধিক ছাত্রলীগকর্মীরা।

মান্না মোবাইলে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল, স্টেট অফিসার দীপক লাল মৃধা ও বিভিন্ন পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তাদের ডেকে আনেন। একইসাথে আরও দুটি বুলডোজার, ময়লা বহনের চারটি গাড়ি আনেন। উত্তেজিত কাউন্সিলর মান্নার হুংকারে আবারও এলাকাবাসী জড়ো হন। মান্না বুলডোজারের ওপর দাড়িয়ে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনের নির্মাণাধীন ভবন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

দ্বিতীয় দফায় এসএম জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে না থাকলেও তার ভাই হায়দার মিয়া, স্ত্রী, সন্তানরা মেয়রের নির্দেশ ছাড়া ভবন ভাংচুরর না করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও মান্না শান্ত না হয়ে উল্টো দ্রুত ভবন ভাঙ্গার জন্য বলেন। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আবারও উপস্থিত হন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া, কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নূরুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মোঃ আসাদুজ্জামানসহ পুলিশ ফোর্স। উপ-কমিশনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশপত্র থাকলে ভবন ভাঙ্গতে বলেন। তাতে পুলিশ সহায়তা করবে। কিন্তু বিধি মোতাবেক না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায় পুলিশ নিবে না বলে জানান।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মান্না তখনও বারবার বুলডোজার চালু করে ভবন ভাংচুরের জন্য বলেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল তখন রোড ইন্সপেক্টরদের কাছ থেকে জেনে নিশ্চিত হন, অভিযান চালাতে আসা ভবনটি ভাঙ্গার জন্য মেয়র নির্দেশ দেননি বা রোড ইন্সপেক্টরদের কাছেও কোন নির্দেশপত্র নেই। শেষে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে কোন বক্তব্যও দিতে রাজি হননি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর পুলিশ সবাইকে চলে যেতে বললে মান্নার অনুসারীরা অভিযোগ করেন, সিটি কর্পোরেশনের রোড ইন্সপেক্টরকে মারধর করা হয়েছে। এমন অভিযোগ এনে কলেজ রো এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে থাকে মান্না।

এ পর্যায়ে উপ পুলিশ কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া ও কোতয়ালীর ওসি সবাইকে শান্ত হতে বলেন। হ্যান্ড মাইকে মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া তৃতীয় দফায় ভবন ভাঙ্গতে মেয়রের নির্দেশপত্র চান কাউন্সিলর মান্নার কাছে। তিনি তার জবাব না দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের শ্লোগান দিতে বলেন। একপর্যায়ে উপ পুলিশ কমিশনারের কাছে ‘কর্মচারী মারধরের’ অভিযোগ আনেন। প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, উপ পুলিশ কমিশনার নিজেই মান্নাকে বলেছেন, ‘আমি ঘটনার শুরু থেকেই ছিলাম। কিন্তু কারও ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে দেখিনি। সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের কেউ মারধর করবে আর পুলিশ তা নিরবে দেখবে-এমনটা বলা অযৌক্তিক।

তখন শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না পিছু হটেন। তবে ছাত্রলীগ নেতারা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বসিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে বলেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রথমে অস্বীকার করলে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে বসিয়ে ‘মারধরের’ অভিযোগ এনে শ্লোগান দিতে থাকে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ।

এতে করে ভবন ভাংচুর করতে পারে না মান্নার অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রলীগকর্মীরা।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু, প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন ও মহানগর আওয়ামী লীগের মৎস ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। তারা সড়কে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টাকারীদের দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করার জন্য বলেন। এরপর পৌনে নয়টার দিকে সড়ক ছেড়ে বুলডোজার, ময়লা বহনের গাড়ি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা চলে যান।

প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পদক এসএম জাকির হোসেন জানিয়েছেন, আমার নির্মাণাধীন ভবনের যে চেষ্টা চালানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ ব্যাক্তি আক্রোশে। আমি নিয়ম মেনেই ভবন নির্মাণ করেছি। তারপরও কোথাও সমস্যা হলে বিধানমত লিখিতভাবে জানাতে পারতো। কিন্তু তা না করে একজন কাউন্সিলর আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে এই কাজ করেছেন।

এ বিষয়ে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও প্রবীন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, কোন কর্মকর্তা ছাড়া প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন ভাংচুরের চেষ্টা চালানোটা অবৈধ বলে মনে করি। এটি আরও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত।

শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল বলেন, কেউই আইনের উর্ধে নয়। কিন্তু আইন প্রয়োগ করাটা নিয়ম মাফিক হওয়া উচিত। নিয়ম মেনে নোটিশ দিয়ে ভবন ভাঙ্গার প্রক্রিয়ায় এগোলে দৃষ্টি কটু হতো না। কিন্তু নিয়ম না মেনে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের বাসা ভাঙ্গার চেষ্টা অত্যান্ত গর্হিত কাজ।

বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি পুলক চ্যাটাজী বলেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের ভবনের বর্ধিতাংশ যদি সড়কের ওপর পরে তাহলে তাকে নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা উচিত ছিল। তাছাড়া বলা যেত যেন নিজ দায়িত্বে ভেঙ্গে ফেলেন। তারপরও যদি বর্ধিতাংশ না ভাঙ্গত তখন সিটি কর্পোরেশন ভাঙ্গতে পারতো। কিন্তু তা না করে যে চেষ্টা চালানো হয়েছে তাতে নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করি।

সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি গোপাল সরকার বলেছেন, সাংবাদিকদের ওপর এমন আচরণ লজ্জাজনক। যে কারও বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হতে পারে যদি অভিযোগ থাকে। কিন্তু কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না এমন বিধানতো কোথাও নেই। সংবাদ প্রকাশ হলে যে প্রতিশোধ নিতে হবে-এমন চেষ্টা যারা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

প্রসঙ্গত, ১৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানে ২৫০০ পিস ইয়াবা ও নগদ এক লাখ টাকাসহ দুইজনকে ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নার বাসার চতুর্থ তলা থেকে আটক করে। এই সংবাদ ১৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক মতবাদে প্রকাশ হওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ হন কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না। সেই ক্ষোভ থেকে গতকাল তার অনুসারী স্টাফদের দিয়ে ভবন ভাংচুরের চেষ্টা চালান মান্না।

উল্লেখ্য, শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না পুলিশের তালিকাভুক্ত বরিশাল নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন। ধীর্ঘদিন তিনি ভারতে পলাতক ছিলেন। টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, মাদকসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। কাউন্সিলর নির্বাচীত হওয়ার পর প্রকাশ্যে না হলেও মাদক ব্যবসায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ ছিল। মাদক সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ৯৬-এর পর এবারই প্রথম প্রকাশ্যে এলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বরিশালের কাউন্সিলর মান্নার নেতৃত্বে প্রেসক্লাব সম্পাদকের কার্যালয় গুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা! 

আপডেট সময় : ১১:১৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯

 

বরিশাল অফিসঃ

সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করার জেরে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের নির্মাণাধীন ভবন ভাংচুরের চেষ্টা চালানো হয়েছে। আজ (৭ অক্টোবর) সোমবার বিকেল চারটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নগরীর ২০ নং ওয়ার্ডের কলেজ রো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কিছু জানতেন না বলে জানিয়েছেন। এমনকি ভবন ভাঙ্গারও কোন নির্দেশ সিটি কর্পোরেশন থেকে দেওয়া হয়নি। দুই দফায় ভবন ভাংচুরের চেষ্টা চালালেও র‌্যাব ও পুলিশের হস্তক্ষেপে ভাংচুর করতে পারেনি মান্নার অনুসারীরা। এ ঘটনায় ওই এলাকায় সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি নিন্দনীয় বলেও জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। পাশাপাশি ব্যাক্তিগত ক্ষোভের কারণে সাংবাদিক নেতার বাসভবন ভাংচুরের অপচেষ্টার বিষয়ে মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নেতারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেল চারটার দিকে হঠাৎ করেই সিটি কর্পোরেশনের দুটি ময়লা বহনের গাড়ি ও একটি বুলডোজার কলেজ রো-তে প্রবেশ করে। ময়লা বহনের গাড়ির একটি আরিফ মেমোরিয়াল হসপিটালের পূর্ব পাশের মোড়ে, অন্যটি কলেজ রো’র পূর্ব মাথায় অবস্থান নিয়ে যান ও মানুষ চলাচল আটকে দেয়। রোড ইন্সপেক্টর অনিক ও মোঃ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনের বাসা ভাঙ্গার প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে এসএম জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে এসে উচ্ছেদের নির্দেশপত্র দেখতে চান রোড ইন্সপেক্টরদের কাছে।

কিন্তু কোন ধরণের উচ্ছেদের নির্দেশপত্র দেখাতে না পারায় বুলডোজার দিয়ে নির্মাণাধীন ভবনটি না ভাঙ্গতে অনুরোধ করেন। তখন রোড ইন্সপেক্টররা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং দফায় দফায় ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে থাকেন। কলেজ রো-তে বুলডোজার দেখে এলাকাবাসী জড়ো হলে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া, কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নূরুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মোঃ আসাদুজ্জামানসহ পুলিশ ফোর্স। পুলিশ কর্মকর্তারা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ও স্থানীয়দের উত্তেজিত না হতে অনুরোধ করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া উচ্ছেদের নির্দেশনামা দেখতে চান। সিটি কর্পোরেশনের রোড ইন্সপেক্টররা নির্দেশপত্র দেখাতে না পেরে জানান, বিষয়টি কাউন্সিলর মান্না জানেন। তখন বিধানমত নোটিশ দিয়ে ভবন ভাঙ্গার অনুরোধ করেন উপ পুলিশ কমিশনার। একইসাথে সবাইকে চলে যেতে বলেন।

উপ পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে বুলডোজার ও ময়লা বহনের গাড়ি নিয়ে কলেজ রো এলাকা ত্যাগ করেন নগর ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সবাই চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাঈদ আহম্মেদ মান্না। তিনি অকথ্য ভাষায় গালি দিতে দিতে বলেন, তাদের হাত ভেঙ্গে ফেলবো যারা সিটি কর্পোরেশনের স্টাফদের মারধর করেছে। মান্নার পরপরই মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শতাধিক ছাত্রলীগকর্মীরা।

মান্না মোবাইলে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল, স্টেট অফিসার দীপক লাল মৃধা ও বিভিন্ন পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তাদের ডেকে আনেন। একইসাথে আরও দুটি বুলডোজার, ময়লা বহনের চারটি গাড়ি আনেন। উত্তেজিত কাউন্সিলর মান্নার হুংকারে আবারও এলাকাবাসী জড়ো হন। মান্না বুলডোজারের ওপর দাড়িয়ে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনের নির্মাণাধীন ভবন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

দ্বিতীয় দফায় এসএম জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে না থাকলেও তার ভাই হায়দার মিয়া, স্ত্রী, সন্তানরা মেয়রের নির্দেশ ছাড়া ভবন ভাংচুরর না করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও মান্না শান্ত না হয়ে উল্টো দ্রুত ভবন ভাঙ্গার জন্য বলেন। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আবারও উপস্থিত হন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া, কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নূরুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মোঃ আসাদুজ্জামানসহ পুলিশ ফোর্স। উপ-কমিশনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশপত্র থাকলে ভবন ভাঙ্গতে বলেন। তাতে পুলিশ সহায়তা করবে। কিন্তু বিধি মোতাবেক না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায় পুলিশ নিবে না বলে জানান।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মান্না তখনও বারবার বুলডোজার চালু করে ভবন ভাংচুরের জন্য বলেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল তখন রোড ইন্সপেক্টরদের কাছ থেকে জেনে নিশ্চিত হন, অভিযান চালাতে আসা ভবনটি ভাঙ্গার জন্য মেয়র নির্দেশ দেননি বা রোড ইন্সপেক্টরদের কাছেও কোন নির্দেশপত্র নেই। শেষে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে কোন বক্তব্যও দিতে রাজি হননি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর পুলিশ সবাইকে চলে যেতে বললে মান্নার অনুসারীরা অভিযোগ করেন, সিটি কর্পোরেশনের রোড ইন্সপেক্টরকে মারধর করা হয়েছে। এমন অভিযোগ এনে কলেজ রো এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে থাকে মান্না।

এ পর্যায়ে উপ পুলিশ কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া ও কোতয়ালীর ওসি সবাইকে শান্ত হতে বলেন। হ্যান্ড মাইকে মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া তৃতীয় দফায় ভবন ভাঙ্গতে মেয়রের নির্দেশপত্র চান কাউন্সিলর মান্নার কাছে। তিনি তার জবাব না দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের শ্লোগান দিতে বলেন। একপর্যায়ে উপ পুলিশ কমিশনারের কাছে ‘কর্মচারী মারধরের’ অভিযোগ আনেন। প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, উপ পুলিশ কমিশনার নিজেই মান্নাকে বলেছেন, ‘আমি ঘটনার শুরু থেকেই ছিলাম। কিন্তু কারও ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে দেখিনি। সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের কেউ মারধর করবে আর পুলিশ তা নিরবে দেখবে-এমনটা বলা অযৌক্তিক।

তখন শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না পিছু হটেন। তবে ছাত্রলীগ নেতারা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বসিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে বলেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রথমে অস্বীকার করলে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে বসিয়ে ‘মারধরের’ অভিযোগ এনে শ্লোগান দিতে থাকে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ।

এতে করে ভবন ভাংচুর করতে পারে না মান্নার অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রলীগকর্মীরা।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন প্যানেল মেয়র-১ গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু, প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন ও মহানগর আওয়ামী লীগের মৎস ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। তারা সড়কে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টাকারীদের দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করার জন্য বলেন। এরপর পৌনে নয়টার দিকে সড়ক ছেড়ে বুলডোজার, ময়লা বহনের গাড়ি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা চলে যান।

প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পদক এসএম জাকির হোসেন জানিয়েছেন, আমার নির্মাণাধীন ভবনের যে চেষ্টা চালানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ ব্যাক্তি আক্রোশে। আমি নিয়ম মেনেই ভবন নির্মাণ করেছি। তারপরও কোথাও সমস্যা হলে বিধানমত লিখিতভাবে জানাতে পারতো। কিন্তু তা না করে একজন কাউন্সিলর আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে এই কাজ করেছেন।

এ বিষয়ে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও প্রবীন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, কোন কর্মকর্তা ছাড়া প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন ভাংচুরের চেষ্টা চালানোটা অবৈধ বলে মনে করি। এটি আরও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত।

শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাসির উদ্দিন বাবুল বলেন, কেউই আইনের উর্ধে নয়। কিন্তু আইন প্রয়োগ করাটা নিয়ম মাফিক হওয়া উচিত। নিয়ম মেনে নোটিশ দিয়ে ভবন ভাঙ্গার প্রক্রিয়ায় এগোলে দৃষ্টি কটু হতো না। কিন্তু নিয়ম না মেনে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের বাসা ভাঙ্গার চেষ্টা অত্যান্ত গর্হিত কাজ।

বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি পুলক চ্যাটাজী বলেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের ভবনের বর্ধিতাংশ যদি সড়কের ওপর পরে তাহলে তাকে নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা উচিত ছিল। তাছাড়া বলা যেত যেন নিজ দায়িত্বে ভেঙ্গে ফেলেন। তারপরও যদি বর্ধিতাংশ না ভাঙ্গত তখন সিটি কর্পোরেশন ভাঙ্গতে পারতো। কিন্তু তা না করে যে চেষ্টা চালানো হয়েছে তাতে নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করি।

সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি গোপাল সরকার বলেছেন, সাংবাদিকদের ওপর এমন আচরণ লজ্জাজনক। যে কারও বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হতে পারে যদি অভিযোগ থাকে। কিন্তু কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না এমন বিধানতো কোথাও নেই। সংবাদ প্রকাশ হলে যে প্রতিশোধ নিতে হবে-এমন চেষ্টা যারা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

প্রসঙ্গত, ১৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানে ২৫০০ পিস ইয়াবা ও নগদ এক লাখ টাকাসহ দুইজনকে ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নার বাসার চতুর্থ তলা থেকে আটক করে। এই সংবাদ ১৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক মতবাদে প্রকাশ হওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ হন কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না। সেই ক্ষোভ থেকে গতকাল তার অনুসারী স্টাফদের দিয়ে ভবন ভাংচুরের চেষ্টা চালান মান্না।

উল্লেখ্য, শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না পুলিশের তালিকাভুক্ত বরিশাল নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন। ধীর্ঘদিন তিনি ভারতে পলাতক ছিলেন। টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, মাদকসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। কাউন্সিলর নির্বাচীত হওয়ার পর প্রকাশ্যে না হলেও মাদক ব্যবসায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ ছিল। মাদক সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ৯৬-এর পর এবারই প্রথম প্রকাশ্যে এলো।