ঢাকা ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




আন্দোলনের প্রস্তুতি শিক্ষকদের, অনিশ্চয়তায় সমাপনী পরীক্ষা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪২:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০১৯ ১১৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেতন-বৈষম্য নিরসনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশের ৬৫ হাজার ৯৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় তিন লক্ষাধিক শিক্ষক। এ জন্য কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষকদের এ কর্মসূচির কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা।

জানা গেছে, চলতি মাসের ১৪ থেকে ১৭ অক্টোবর কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করবেন শিক্ষকরা। পরে ২৭ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে।

সূত্র জানায়, ১৪ অক্টোবর এক ঘণ্টা কর্মবিরতি, ১৫ অক্টোবর দুই ঘণ্টা, ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস এবং ১৭ অক্টোবর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। এছাড়া ২৭ অক্টোবর সহকারী শিক্ষকরা ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং সেখান থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।

অপরদিকে, ২৭ নভেম্বর থেকে সারাদেশে একযোগে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে। সমাপনী পরীক্ষার মাত্র এক মাস আগে শিক্ষকদের এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

অভিভাবকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন শুরু হলেই সমাপনী পরীক্ষায় বিরূপ প্রভাব পড়বে।

মনিপুর স্কুলের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক মিথুন আক্তার বলেন, পরীক্ষার আগে কৌশলে শিক্ষকরা আন্দোলনের ডাক দিয়ে সন্তানদের পড়ালেখা হুমকিতে ফেলেছেন। আন্দোলন পরীক্ষার পরও করা যায়। পরীক্ষার আগে করে ৩০ লাখ বাচ্চাকে ঝুঁকিতে ফেলা শিক্ষকদের জন্য শোভনীয় নয়।

কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া, চাওয়া পাওয়া আলোচনার টেবিলেই সমাধান হওয়া উচিৎ।

এদিকে, বেতন-বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের মোট ১৪ সংগঠন এক হয়ে সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ নামে জোট গড়েছেন।

এ জোটের সমন্বয়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, বেতন বৈষম্য নিরসনের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয় থেকে নাকচ হওয়ার পর এখন বসে থাকলে হবে না। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের প্রায় সব সংগঠন এক হয়ে ‘ঐক্য পরিষদ’ গঠন করা হয়েছে।

তিনি জানান, ঐক্য পরিষদ নেতাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে ১৪ থেকে ১৭ অক্টোবর কর্মবিরতী পালন হবে এবং ২৭ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ।

তিনি আরও জানান, ৬ অক্টোবর রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য পরিষদের আত্মপ্রকাশ এবং সেখানেই বেতন বৈষম্য নিরসনে পরবর্তী করণীয় তুলে ধরা হবে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও মহাসমাবেশের ঘোষণা আসবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিই) মহাপরিচালকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, মন্ত্রণালয় বা ডিপিই থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে, আমরা (ঐক্য পরিষদ) যোগাযোগের চেষ্টা কবরো। এ জন্য ঢাকায় আসছি।

তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয়ের সচিব শিক্ষকদের আন্দোলনে না যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। বেতন বৈষম্যের প্রস্তাব নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর অর্থসচিবের সঙ্গে তার বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা এর কোনো অগ্রগতি জানি না। বৈঠক হয়েছে কিনা তাও অবগত করা হয়নি।

এদিকে, গত ২৯ জুলাই সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের সুষ্পষ্ট প্রস্তাব সকল যৌক্তিক কারণ বর্ণনা দিয়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ৮ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রণালয় তা নাকচ করে। এতে শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে জোট গঠন এবং কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়।

সহকারী শিক্ষক নেতারা বলেন, দাবি ছিল প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপের স্কেল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তা না করে ১২তম গ্রেড অর্থাৎ প্রধান শিক্ষকের দুই ধাপ পরের গ্রেডের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু এটিও যেহেতু অর্থমন্ত্রণালয় নাকচ করলো, তখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, বর্তমানে সারাদেশে ৬৫ হাজার ৯৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন লাখ ২৫ হাজার সহকারী শিক্ষক ও ৪২ হাজার প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন দশম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডের দাবি জানিয়ে আসছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




আন্দোলনের প্রস্তুতি শিক্ষকদের, অনিশ্চয়তায় সমাপনী পরীক্ষা

আপডেট সময় : ০৯:৪২:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেতন-বৈষম্য নিরসনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশের ৬৫ হাজার ৯৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় তিন লক্ষাধিক শিক্ষক। এ জন্য কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষকদের এ কর্মসূচির কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা।

জানা গেছে, চলতি মাসের ১৪ থেকে ১৭ অক্টোবর কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করবেন শিক্ষকরা। পরে ২৭ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে।

সূত্র জানায়, ১৪ অক্টোবর এক ঘণ্টা কর্মবিরতি, ১৫ অক্টোবর দুই ঘণ্টা, ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস এবং ১৭ অক্টোবর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। এছাড়া ২৭ অক্টোবর সহকারী শিক্ষকরা ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং সেখান থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।

অপরদিকে, ২৭ নভেম্বর থেকে সারাদেশে একযোগে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে। সমাপনী পরীক্ষার মাত্র এক মাস আগে শিক্ষকদের এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

অভিভাবকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন শুরু হলেই সমাপনী পরীক্ষায় বিরূপ প্রভাব পড়বে।

মনিপুর স্কুলের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক মিথুন আক্তার বলেন, পরীক্ষার আগে কৌশলে শিক্ষকরা আন্দোলনের ডাক দিয়ে সন্তানদের পড়ালেখা হুমকিতে ফেলেছেন। আন্দোলন পরীক্ষার পরও করা যায়। পরীক্ষার আগে করে ৩০ লাখ বাচ্চাকে ঝুঁকিতে ফেলা শিক্ষকদের জন্য শোভনীয় নয়।

কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া, চাওয়া পাওয়া আলোচনার টেবিলেই সমাধান হওয়া উচিৎ।

এদিকে, বেতন-বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের মোট ১৪ সংগঠন এক হয়ে সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ নামে জোট গড়েছেন।

এ জোটের সমন্বয়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, বেতন বৈষম্য নিরসনের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয় থেকে নাকচ হওয়ার পর এখন বসে থাকলে হবে না। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের প্রায় সব সংগঠন এক হয়ে ‘ঐক্য পরিষদ’ গঠন করা হয়েছে।

তিনি জানান, ঐক্য পরিষদ নেতাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে ১৪ থেকে ১৭ অক্টোবর কর্মবিরতী পালন হবে এবং ২৭ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ।

তিনি আরও জানান, ৬ অক্টোবর রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য পরিষদের আত্মপ্রকাশ এবং সেখানেই বেতন বৈষম্য নিরসনে পরবর্তী করণীয় তুলে ধরা হবে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও মহাসমাবেশের ঘোষণা আসবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিই) মহাপরিচালকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, মন্ত্রণালয় বা ডিপিই থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে, আমরা (ঐক্য পরিষদ) যোগাযোগের চেষ্টা কবরো। এ জন্য ঢাকায় আসছি।

তিনি আরও জানান, মন্ত্রণালয়ের সচিব শিক্ষকদের আন্দোলনে না যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। বেতন বৈষম্যের প্রস্তাব নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর অর্থসচিবের সঙ্গে তার বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা এর কোনো অগ্রগতি জানি না। বৈঠক হয়েছে কিনা তাও অবগত করা হয়নি।

এদিকে, গত ২৯ জুলাই সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের সুষ্পষ্ট প্রস্তাব সকল যৌক্তিক কারণ বর্ণনা দিয়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ৮ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রণালয় তা নাকচ করে। এতে শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে জোট গঠন এবং কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়।

সহকারী শিক্ষক নেতারা বলেন, দাবি ছিল প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপের স্কেল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তা না করে ১২তম গ্রেড অর্থাৎ প্রধান শিক্ষকের দুই ধাপ পরের গ্রেডের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু এটিও যেহেতু অর্থমন্ত্রণালয় নাকচ করলো, তখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, বর্তমানে সারাদেশে ৬৫ হাজার ৯৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন লাখ ২৫ হাজার সহকারী শিক্ষক ও ৪২ হাজার প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন দশম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডের দাবি জানিয়ে আসছেন।