ঢাকা ০৬:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




যে কারণে সম্রাটের গ্রেফতার ধুম্রজাল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১০:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ৮১ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক; 
ঢাকায় ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতারের বিষয়ে লুকোচুরি খেলা চলছে। কয়েকদিন ধরেই তিনি গোয়েন্দাজালে আটকে আছেন।

এরপরও তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও কেউ মুখ খুলছেন না। আবার তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি সরাসরি এমন কথাও কেউ বলছেন না। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজালের।

সম্রাট আটক হয়েছেন কিনা সেটি নিশ্চিত হতে গত দুদিন ডিএমপি ও ডিবি কার্যালয়ে মিডিয়া কর্মীদের ভিড় ছিল। কিন্তু পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা সংস্থা কেউ-ই এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্রাটকে গ্রেফতার করা হবে কিনা সেটি নিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনী এমনকি প্রশাসন এখনও পরিস্কার নয়। সাধারণত রাজনৈতিক নেতা গ্রেফতারের আগে উপরের মহলের একটা ইশারা লাগে। এখনও সেই সবুজ সংকেত পায়নি আইনশৃংখলা বাহিনী। এ কারণে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

তবে এই ইঙ্গিতটি নাকচ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এসব ক্ষেত্রে নতুন করে সবুজ সংকেতের প্রয়োজন নেই। সব সংকেত নিয়েই তারা মাঠে নেমেছেন। সম্রাট তাদের নজরেই আছেন। তিনি গোয়েন্দাজালে আটকা পড়েছেন। এখন এই জাল কেটে বের হওয়ার সুযোগ অনেক কম।

এদিকে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৭ টি মামলা হয়েছে। মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে হওয়া এসব মামলা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এগুলোর প্রায় প্রতি ঘটনার সঙ্গে যুবলীগের আলোচিত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো মামলাতেই তাকে আসামি করা হয়নি। এ ছাড়া সম্রাটোর বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসা, বিদেশে অর্থ পাচারসহ আটটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পাওয়া গেছে। তবু এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। সম্রাট দেশে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হলেও তাকে ধরা হচ্ছে না।

জানা গেছে, সম্রাটকে গ্রেফতার করা হলে এসব অভিযোগই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হবে। সবকিছু প্রস্তুত কিন্তু তার গ্রেফতার বা আটকের বিষয়ে নেই কেবল সুনির্দিষ্ট কোনো বার্তা।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্রাটের গ্রেফতারের প্রশ্নের কৌশলী উত্তর দিচ্ছেন। রোববার ওবায়দুল কাদের অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন ‘প্লিজ, ওয়েট অ্যান্ড সি’। ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পর সম্রাটকে গ্রেফতারের গ্রিন সিগন্যালের বিষয়ে অস্পষ্টতা আরও বাড়ে।

এদিকে সম্রাটের গ্রেফতারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কিছু বলছেন না। এমন পরিস্থিতিতে সম্রাটকে আদৌ গ্রেফতার করা হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে সেই পুরনো সন্দেহ ফের উঁকি দিচ্ছে।

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, খালেদ ও জিকে শামীম গ্রেফতারের পর নড়ে বসেন সম্রাট। গ্রেফতার এড়াতে নানা মহলে লবিং শুরু করেন। যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বোঝাতে চান যে, তাকে ছাড়া ঢাকায় যুবলীগের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার মতো কেউ নেই। এভাবে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকেই এসব করেন সম্রাট।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামে সম্রাটের পক্ষে তদবির চলছে। কয়েকজন নেতা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, সম্রাট গ্রেফতার হলে ঢাকায় সংগঠন ‍দুর্বল হয়ে পড়বে। বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করাটা কঠিন হয়ে পড়বে। বিষয়টি কিছুটা আমলে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এ কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। যুবলীগের অপর নেতা খালেদ মাহমুদের গ্রেফতারের পরই তাকে গ্রেফতারের কথা ছিল।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্রাট গ্রেফতার এড়াতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন। তিনি সব সময় নিজেকে একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন।

এজন্য অকাতরে অর্থ বিলিয়েছেন চারদিকে। তবে নিজের পদ পাওয়ার জন্য তেমন কিছুই করেননি বলে দাবি তার ঘনিষ্ঠদের। তারা বলেন, অর্থের বিনিময়ে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে নয়, নিজের যোগ্যতার কারণেই তিনি যুবলীগে এত বড় পদ পেয়েছেন।

তাদের মতে, এতদিন আওয়ামী লীগসহ যুবলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনে নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করেছেন সম্রাট। এ কারণেই এখনও তাকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি।

তারা বলেন, সম্রাট বিশ্বাস করে তার কারণেই দলের বিভিন্ন কর্মসূচি সফল হয়েছে। এর প্রতিদান তিনি পাবেন। এক ধরনের অহংবোধ থেকেই অভিযান শুরুর পরও নেতাকর্মীদের নিয়ে কাকরাইলে ভূঁইয়া ম্যানশনে যুবলীগের কার্যালয়ে অবস্থান করেছেন।

তার ধারণা ছিল, যদি কোনো কারণে তাকে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে আসে তবে নেতাকর্মীরা প্রতিহত করবে। এর মাধ্যমে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন।

বর্তমানে নিরাপদ কোনো স্থানে আত্মগোপনে আছেন ক্যাসিনো সম্রাট। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা জানান, সম্রাট কিছুটা চাপে আছেন। তাকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হবে কিনা, বিষয়টি এখনও তিনি নিশ্চিত নন। তবে তাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে চাপ বাড়ছে। এ কারণে নিজেকে আড়ালে রেখেছেন তিনি।

মাদকবিরোধী সরকারের কঠোর মনোভাবে অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। শুরুতেই ঘন ঘন অবস্থানও পরিবর্তন করেন। যুবলীগের কার্যালয় থেকে ‘ছদ্মবেশ’ নিয়ে বেরিয়ে আসেন।

এর পর দুটি ঠিকানা বদলের পর তিনি নির্ভরযোগ্য স্থানে চলে আসেন। বর্তমানে তিনি এখানেই পালিয়ে আছেন। কারও কারও মতে, সম্রাট কাকরাইলের অফিস থেকে বের হয়ে ঢাকার বাইরে চলে গেছেন।

সীমান্তবর্তী কোনো এক জেলা থেকে তিনি দেশ ছাড়বেন। তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলোর দাবি, সম্রাট দেশেই আছেন। ঢাকায়ই অবস্থান করছেন। তাদের নজরদারিতেই আছেন তিনি।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ১৮ সেপ্টেম্বর রাত থেকে সম্রাটের ওপর নজরদারি শুরু করে।

যুবলীগ অফিস থেকে বের হওয়ার পর প্রথম দিকে তার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি থাকলেও গত কয়েক দিন একাই ঠিকানা বদল করেছেন। প্রভাবশালী নেতার বাসায় তিনি একাই গেছেন। ঘনিষ্ঠ কাউকে কিছুই জানতে দেননি। এতকিছুর পরও তিনি গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি।

বিশেষ করে তিন-চার দিন ধরে সম্রাটের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আছে একাধিক সংস্থার কাছে। এখন সরকারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলেই গ্রেফতার করা হবে সম্রাটকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




যে কারণে সম্রাটের গ্রেফতার ধুম্রজাল

আপডেট সময় : ০৬:১০:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক; 
ঢাকায় ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতারের বিষয়ে লুকোচুরি খেলা চলছে। কয়েকদিন ধরেই তিনি গোয়েন্দাজালে আটকে আছেন।

এরপরও তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও কেউ মুখ খুলছেন না। আবার তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি সরাসরি এমন কথাও কেউ বলছেন না। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজালের।

সম্রাট আটক হয়েছেন কিনা সেটি নিশ্চিত হতে গত দুদিন ডিএমপি ও ডিবি কার্যালয়ে মিডিয়া কর্মীদের ভিড় ছিল। কিন্তু পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা সংস্থা কেউ-ই এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্রাটকে গ্রেফতার করা হবে কিনা সেটি নিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনী এমনকি প্রশাসন এখনও পরিস্কার নয়। সাধারণত রাজনৈতিক নেতা গ্রেফতারের আগে উপরের মহলের একটা ইশারা লাগে। এখনও সেই সবুজ সংকেত পায়নি আইনশৃংখলা বাহিনী। এ কারণে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

তবে এই ইঙ্গিতটি নাকচ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এসব ক্ষেত্রে নতুন করে সবুজ সংকেতের প্রয়োজন নেই। সব সংকেত নিয়েই তারা মাঠে নেমেছেন। সম্রাট তাদের নজরেই আছেন। তিনি গোয়েন্দাজালে আটকা পড়েছেন। এখন এই জাল কেটে বের হওয়ার সুযোগ অনেক কম।

এদিকে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৭ টি মামলা হয়েছে। মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে হওয়া এসব মামলা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এগুলোর প্রায় প্রতি ঘটনার সঙ্গে যুবলীগের আলোচিত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো মামলাতেই তাকে আসামি করা হয়নি। এ ছাড়া সম্রাটোর বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসা, বিদেশে অর্থ পাচারসহ আটটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পাওয়া গেছে। তবু এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। সম্রাট দেশে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হলেও তাকে ধরা হচ্ছে না।

জানা গেছে, সম্রাটকে গ্রেফতার করা হলে এসব অভিযোগই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হবে। সবকিছু প্রস্তুত কিন্তু তার গ্রেফতার বা আটকের বিষয়ে নেই কেবল সুনির্দিষ্ট কোনো বার্তা।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্রাটের গ্রেফতারের প্রশ্নের কৌশলী উত্তর দিচ্ছেন। রোববার ওবায়দুল কাদের অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন ‘প্লিজ, ওয়েট অ্যান্ড সি’। ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পর সম্রাটকে গ্রেফতারের গ্রিন সিগন্যালের বিষয়ে অস্পষ্টতা আরও বাড়ে।

এদিকে সম্রাটের গ্রেফতারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কিছু বলছেন না। এমন পরিস্থিতিতে সম্রাটকে আদৌ গ্রেফতার করা হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে সেই পুরনো সন্দেহ ফের উঁকি দিচ্ছে।

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, খালেদ ও জিকে শামীম গ্রেফতারের পর নড়ে বসেন সম্রাট। গ্রেফতার এড়াতে নানা মহলে লবিং শুরু করেন। যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বোঝাতে চান যে, তাকে ছাড়া ঢাকায় যুবলীগের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার মতো কেউ নেই। এভাবে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকেই এসব করেন সম্রাট।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামে সম্রাটের পক্ষে তদবির চলছে। কয়েকজন নেতা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, সম্রাট গ্রেফতার হলে ঢাকায় সংগঠন ‍দুর্বল হয়ে পড়বে। বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করাটা কঠিন হয়ে পড়বে। বিষয়টি কিছুটা আমলে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এ কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। যুবলীগের অপর নেতা খালেদ মাহমুদের গ্রেফতারের পরই তাকে গ্রেফতারের কথা ছিল।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্রাট গ্রেফতার এড়াতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন। তিনি সব সময় নিজেকে একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন।

এজন্য অকাতরে অর্থ বিলিয়েছেন চারদিকে। তবে নিজের পদ পাওয়ার জন্য তেমন কিছুই করেননি বলে দাবি তার ঘনিষ্ঠদের। তারা বলেন, অর্থের বিনিময়ে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে নয়, নিজের যোগ্যতার কারণেই তিনি যুবলীগে এত বড় পদ পেয়েছেন।

তাদের মতে, এতদিন আওয়ামী লীগসহ যুবলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনে নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করেছেন সম্রাট। এ কারণেই এখনও তাকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি।

তারা বলেন, সম্রাট বিশ্বাস করে তার কারণেই দলের বিভিন্ন কর্মসূচি সফল হয়েছে। এর প্রতিদান তিনি পাবেন। এক ধরনের অহংবোধ থেকেই অভিযান শুরুর পরও নেতাকর্মীদের নিয়ে কাকরাইলে ভূঁইয়া ম্যানশনে যুবলীগের কার্যালয়ে অবস্থান করেছেন।

তার ধারণা ছিল, যদি কোনো কারণে তাকে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে আসে তবে নেতাকর্মীরা প্রতিহত করবে। এর মাধ্যমে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন।

বর্তমানে নিরাপদ কোনো স্থানে আত্মগোপনে আছেন ক্যাসিনো সম্রাট। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা জানান, সম্রাট কিছুটা চাপে আছেন। তাকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হবে কিনা, বিষয়টি এখনও তিনি নিশ্চিত নন। তবে তাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে চাপ বাড়ছে। এ কারণে নিজেকে আড়ালে রেখেছেন তিনি।

মাদকবিরোধী সরকারের কঠোর মনোভাবে অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। শুরুতেই ঘন ঘন অবস্থানও পরিবর্তন করেন। যুবলীগের কার্যালয় থেকে ‘ছদ্মবেশ’ নিয়ে বেরিয়ে আসেন।

এর পর দুটি ঠিকানা বদলের পর তিনি নির্ভরযোগ্য স্থানে চলে আসেন। বর্তমানে তিনি এখানেই পালিয়ে আছেন। কারও কারও মতে, সম্রাট কাকরাইলের অফিস থেকে বের হয়ে ঢাকার বাইরে চলে গেছেন।

সীমান্তবর্তী কোনো এক জেলা থেকে তিনি দেশ ছাড়বেন। তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলোর দাবি, সম্রাট দেশেই আছেন। ঢাকায়ই অবস্থান করছেন। তাদের নজরদারিতেই আছেন তিনি।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ১৮ সেপ্টেম্বর রাত থেকে সম্রাটের ওপর নজরদারি শুরু করে।

যুবলীগ অফিস থেকে বের হওয়ার পর প্রথম দিকে তার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি থাকলেও গত কয়েক দিন একাই ঠিকানা বদল করেছেন। প্রভাবশালী নেতার বাসায় তিনি একাই গেছেন। ঘনিষ্ঠ কাউকে কিছুই জানতে দেননি। এতকিছুর পরও তিনি গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি।

বিশেষ করে তিন-চার দিন ধরে সম্রাটের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আছে একাধিক সংস্থার কাছে। এখন সরকারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলেই গ্রেফতার করা হবে সম্রাটকে।