ঢাকা ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




রোহিঙ্গাদের মধ্যে ‘হেপাটাইটিস সি’ মহামারী, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আক্রান্ত!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ৫২ বার পড়া হয়েছে
রোগটি বাংলাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ‘হেপাটাইটিস-সি’ আক্রান্তের হার ১৩ শতাংশের বেশি। যেখানে বাংলাদেশিদের মধ্যে আক্রান্তের হার ১ শতাংশেরও কম।

সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বিষয়টিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক মন্তব্য করে দেশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে গবেষক দল।
গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি ‘ইউরেশিয়ান জার্নাল অব হেপাটো-গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’তে প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাপানি চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবের নেতৃত্বে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে সংক্রমিত দশজনের নয় জনই জানেন না, তারা এই ভাইরাস বহন করছেন। হেপাটাইটিস-সি নিরাময় অযোগ্য রোগ।

এটি প্রধানত যকৃৎকে (লিভার) ক্ষতিগ্রস্ত করে। দীর্ঘমেয়াদে ৮০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে রোগটি লিভার ক্যান্সার ও লিভার সিরোসিস সৃষ্টি করে। যা রোগীকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে।

হেপাটাইটিস-সি আক্রান্ত ব্যক্তির যকৃৎ অকার্যকর, যকৃতের ক্যান্সার বা খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর শিরা স্ফীত হতে পারে, রক্তক্ষরণে মৃত্যুও হতে পারে। হেপাটাইটিস সংক্রমণে বাংলাদেশে বছরে ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

গবেষক দল রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরের একটিতে হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রকোপ মূল্যায়নের জন্য গবেষণা চালায়। শিবিরের নাম ‘লাম্বাসিয়া’।

এটি কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার অন্তর্গত। শিবিরে মোট ২৭৭ আশ্রিত রোহিঙ্গা রয়েছে। সরকারের অনুমতি নিয়ে ৭৫ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এইচবিভি এবং এইচসিভি পরীক্ষা করা হয়। হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেন (এইচবিএসএজি), অ্যান্টি হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (এইচসিভি) পরীক্ষা করে দেখা হয়।

পরবর্তীতে সংগৃহীত নমুনার এইচবিভি ডিএনএ এবং এইচসিভি আরএনএ নির্ধারণের জন্য রেফারেন্স ল্যাবরেটরিগুলোতে এইচবিভি এবং এইচসিভি- (নির্দিষ্ট প্রাইমার ব্যবহার করে) এবং একটি পলিমারেজ চেইন বিক্রিয়া (পিসিআর) করা হয়। এছাড়া নিউক্লিক অ্যাসিডের যথাযথ গুণমানটি ৫৩টি নমুনা থেকে পৃথক করে দেখা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে গড়ে ১৩ দশিমক ২ শতাংশই হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

গবেষণা বিষয়ে জাপানের ‘এহিমে ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব মেডিসিনে’র সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর বলেন, আমার যে তথ্য পেয়েছি, সেটি অত্যন্ত উদ্বেগের। কারণ এটি শুধু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়। এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানান, হেপাটাইটিস সংক্রমণ বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে ‘জন্ডিস’ হিসেবে পরিচিত।

প্রকৃত অর্থে হেপাটাইটিস হল ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’ স্বল্পমেয়াদি লিভার রোগ।

এটি বিশ্রাম নিলে এক পর্যায়ে সেরে ওঠে। তবে প্রাণঘাতী হচ্ছে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস। প্রধানত শিরায় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে রক্ত-থেকে-রক্তে সংযোগ, জীবাণুযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, যৌন সম্পর্ক ও রক্ত সঞ্চালনের ফলে হেপাটাইটিস-সি’র সংক্রমণ হয়।

পৃথিবী জুড়ে আনুমানিক ১৩০-১৭০ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস সি’তে আক্রান্ত। ৩০ বছরের ঊর্ধ্বের সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০-৩০ শতাংশ সিরোসিস হয়ে থাকে। সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যকৃতের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ২০ গুণ বেশি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, বাংলাদেশ ‘২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলে স্বাক্ষরকারী। তিনি দেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




রোহিঙ্গাদের মধ্যে ‘হেপাটাইটিস সি’ মহামারী, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আক্রান্ত!

আপডেট সময় : ১০:১৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রোগটি বাংলাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ‘হেপাটাইটিস-সি’ আক্রান্তের হার ১৩ শতাংশের বেশি। যেখানে বাংলাদেশিদের মধ্যে আক্রান্তের হার ১ শতাংশেরও কম।

সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বিষয়টিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক মন্তব্য করে দেশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে গবেষক দল।
গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি ‘ইউরেশিয়ান জার্নাল অব হেপাটো-গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’তে প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাপানি চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবের নেতৃত্বে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে সংক্রমিত দশজনের নয় জনই জানেন না, তারা এই ভাইরাস বহন করছেন। হেপাটাইটিস-সি নিরাময় অযোগ্য রোগ।

এটি প্রধানত যকৃৎকে (লিভার) ক্ষতিগ্রস্ত করে। দীর্ঘমেয়াদে ৮০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে রোগটি লিভার ক্যান্সার ও লিভার সিরোসিস সৃষ্টি করে। যা রোগীকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে।

হেপাটাইটিস-সি আক্রান্ত ব্যক্তির যকৃৎ অকার্যকর, যকৃতের ক্যান্সার বা খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর শিরা স্ফীত হতে পারে, রক্তক্ষরণে মৃত্যুও হতে পারে। হেপাটাইটিস সংক্রমণে বাংলাদেশে বছরে ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

গবেষক দল রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরের একটিতে হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রকোপ মূল্যায়নের জন্য গবেষণা চালায়। শিবিরের নাম ‘লাম্বাসিয়া’।

এটি কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার অন্তর্গত। শিবিরে মোট ২৭৭ আশ্রিত রোহিঙ্গা রয়েছে। সরকারের অনুমতি নিয়ে ৭৫ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এইচবিভি এবং এইচসিভি পরীক্ষা করা হয়। হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেন (এইচবিএসএজি), অ্যান্টি হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (এইচসিভি) পরীক্ষা করে দেখা হয়।

পরবর্তীতে সংগৃহীত নমুনার এইচবিভি ডিএনএ এবং এইচসিভি আরএনএ নির্ধারণের জন্য রেফারেন্স ল্যাবরেটরিগুলোতে এইচবিভি এবং এইচসিভি- (নির্দিষ্ট প্রাইমার ব্যবহার করে) এবং একটি পলিমারেজ চেইন বিক্রিয়া (পিসিআর) করা হয়। এছাড়া নিউক্লিক অ্যাসিডের যথাযথ গুণমানটি ৫৩টি নমুনা থেকে পৃথক করে দেখা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে গড়ে ১৩ দশিমক ২ শতাংশই হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

গবেষণা বিষয়ে জাপানের ‘এহিমে ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব মেডিসিনে’র সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর বলেন, আমার যে তথ্য পেয়েছি, সেটি অত্যন্ত উদ্বেগের। কারণ এটি শুধু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়। এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানান, হেপাটাইটিস সংক্রমণ বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে ‘জন্ডিস’ হিসেবে পরিচিত।

প্রকৃত অর্থে হেপাটাইটিস হল ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘ই’ স্বল্পমেয়াদি লিভার রোগ।

এটি বিশ্রাম নিলে এক পর্যায়ে সেরে ওঠে। তবে প্রাণঘাতী হচ্ছে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস। প্রধানত শিরায় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে রক্ত-থেকে-রক্তে সংযোগ, জীবাণুযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, যৌন সম্পর্ক ও রক্ত সঞ্চালনের ফলে হেপাটাইটিস-সি’র সংক্রমণ হয়।

পৃথিবী জুড়ে আনুমানিক ১৩০-১৭০ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস সি’তে আক্রান্ত। ৩০ বছরের ঊর্ধ্বের সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০-৩০ শতাংশ সিরোসিস হয়ে থাকে। সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যকৃতের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ২০ গুণ বেশি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, বাংলাদেশ ‘২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলে স্বাক্ষরকারী। তিনি দেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।