ঢাকা ০৩:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




ডিপিডিসির গুলশান জোনের পিডি প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের অবৈধ সম্পদের পাহাড় (পর্ব-১) 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ৭৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি- ডিপিডিসির প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ২য় স্ত্রীর নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে সরকার ও দেশের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ডিপিডিসিতে বহাল থেকেই নিজের নামে ও তার ২য় স্ত্রীর নামে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। গড়ে তুলেছেন কলকারখানা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নামে বেনামে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, নতুন ভবন নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ীর মালিকদেরকে জিম্মি করে বৈদ্যুতিক মালামাল সরবরাহ করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ থাকাট পরও তিনি ডিপিডিসির গুলশান জোনের পিডি হিসেবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

ডিপিসির এক কর্মকর্তা নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ডিপিডিসিকে তার ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করেছেন। কোন কর্মকর্তা তার এমন কর্মকান্ড ও দুর্নীতির বিষয়ে কথা বললেই তাকে বদলী ও চাকুরি থেকে অপসারণের হুমকি দেয়। তাই এখন আর কেউ তার অপকর্ম নিয়ে কথা বলে না! বলা চলে এই প্রতিষ্ঠানে তার কথাই শেষ কথা! ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তার কথায় উঠাবস করে। উর্ধতন কর্মকর্তা যেখানে অসহায় সেখানে আমরা তো ছোটখাট কর্তা! এই কর্মকর্তার কথা শুনলেই বুঝা যায় প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক কত বড় ক্ষমতাসীন ব্যক্তি। ঠিক এ কথার প্রমান মিলেছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি তার নাম জাহির করে বলেন, আমি গোপালগঞ্জের ছেলে! সাংবাদিক অনেক নেতা আমার পকেটে! তার এমন কথা শুনলে কার মাথা চরক মারবে না? তিনি সাধারণ মানুষের কাছে কতটা না ক্ষমতাধর ব্যক্তি তা অনেকেরই অজানা! সত্যিই তিনি ক্ষমতাধর ব্যক্তি বটে! তার দুর্নীতি ও অপকর্ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ পরলেও তার তদন্ত রহস্যজনকভাবে ধামাচাপা পড়ে যায়।

আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘ চাকরি জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিধায় একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রকৌশলী আবু জাফর ১৬ ফেব্রুয়ারি-২০১৭ সালে দুদকে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ক্ষমতাধর আব্দুর রাজ্জাক দুর্নীতি দমন কমিশনের সেই তদন্ত কার্যক্রম ধামাচাপা দিয়েছেন বলে ডিপিডিসি’র অফিসে সকলের মাঝে গুঞ্জন শোনা যায়। এই নিয়ে ডিপিডিসির অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সিদ্ধিরগঞ্জ এনওসিএস (নেটওয়ার্ক অপারেশন এন্ড কাস্টমার সার্ভিস)-এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে একই প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সাবেক ডেসা (ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই অথরিটি) থেকে বদলে যাওয়া ডিপিডিসি (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি)-এর বিদ্যুৎ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থেকে বিদ্যুৎ বিষয়ক পণ্যের একচ্ছত্র ব্যবসা করে আসছে। এই লক্ষ্যে ১৫২/২/এম (৩য় তলা), পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫ ঠিকানায় ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ নামের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে নিজের ২য় স্ত্রীকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে। যেখানে বিদ্যুতের তার, ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি বিক্রয় করে থাকেন। ব্যবসায়ী ও হাইরাইজ ভবনের মালিক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এইচ-টি (হাই টেনশন-৪৯ কিলোওয়াট তদূর্ধ্ব) সংযোগের নিজস্ব সাব-স্টেশন প্রয়োজন। কিন্তু ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’কে সাব-স্টেশনের কাজ দেওয়া না হলে এধরনের কোনো গ্রাহককেই তিনি সংযোগ প্রদান করনে না। ব্যবসায়ী ও হাইরাইজ ভবনের মালিকদের এক প্রকার জিম্মি করে প্রতি বছর ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক তার স্ত্রীর নামে পরিচালিত এই বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন তৈরির ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’-এর মুনাফা বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ডিপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিঃ জেঃ নজরুল হাসান খান (অব.) কে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে ডিপিডিসির মগবাজার এনওসিএস-এর সাব এসিস্ট্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে দুই ধাপ টপকে সরাসরি সিদ্ধিরগঞ্জ এর প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ লাভ করেন। তার এই নিয়োগ ছিলো সরাসরি ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক প্রদানকৃত। হানিফ ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি প্রতিনিয়তই নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন (এইট-টি) বিদ্যুৎ সংযোগ। তাই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমতির পূর্বে নিয়মানুযায়ী সাব স্টেশন তৈরি করে এনওসিএস-এর নির্বাহী পরিচালককে দেখাতে হয়। সুচতুর প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক এই সুযোগটি গ্রহন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকে মোটা টাকায় ম্যানেজ করে গ্রাহককে এসব সংযোগ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে ডিপিডিসির প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে হেড অফিসে কর্মরত আছেন। প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে তিনি ডিপিডিসির বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তার ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’-এর মাধ্যমে ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে আসছে।২০১৬ সালের ওসাকা পাওয়ার লিমিটেডের মাধ্যমে একটি প্রকল্পে সরবরাহকৃত ৩শটি ট্রান্সফরমারের মধ্যে ১৯১টি ট্রান্সফরমারই মানহীন হিসেবে ধরা পড়ে। সেই প্রকল্পের সরবরাহকৃত ট্রান্সফরমারের বিল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম আটকে দেয়। এতেই প্রমাণিত হয় তিনি কীভাবে বেসরকারি ব্যক্তিদের ঠকিয়েছেন। সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে ওই প্রতিষ্ঠান বিষয়ক পণ্যের বিক্রয় বিপণন ব্যবসায় জড়িত থাকা কোনো কর্মকর্তা পক্ষেই আইনসিদ্ধ নয়। কেননা এতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহীতরা প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।

সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ডিপিডিসিতে কর্মরত থেকে দুর্নীতির মাধ্যম অর্জিত টাকা ব্যয় করে নিজ এলাকা গাজীপুরের শেরপুরে প্রতিষ্ঠা করেছে ‘সিসকো ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এন্ড টেকনোলজি’। যার মাধ্যমে করছে প্রচুর অর্থ। আব্দুর রাজ্জাক কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (আইইবি)-এর নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। গাজীপুরে তার নামে বেনামে রয়েছে শত একর জমি। বিলাশ বহুল বাড়ি। আত্মীয় স্বজনরাও তার হাত ধরে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত কোটিপতি।

প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানকে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘অতীতে যা হয়েছে তা বর্তমানে কেউ করতে পারবে না। আমার মন্ত্রণালয়ে কেউ কোনো অপরাধ করে ছাড় পাবে না। যার বিরুদ্ধেই দুর্নীতি পাওয়া যাবে তাকেই আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

আইইবি’র সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুস সবুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের ব্যাপারে অনেকদিন যাবৎ অভিযোগ শুনেছি, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ। আরো বিস্তারিত পরবর্তীতে!

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ডিপিডিসির গুলশান জোনের পিডি প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের অবৈধ সম্পদের পাহাড় (পর্ব-১) 

আপডেট সময় : ০৮:০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি- ডিপিডিসির প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ২য় স্ত্রীর নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে সরকার ও দেশের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ডিপিডিসিতে বহাল থেকেই নিজের নামে ও তার ২য় স্ত্রীর নামে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। গড়ে তুলেছেন কলকারখানা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নামে বেনামে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, নতুন ভবন নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ীর মালিকদেরকে জিম্মি করে বৈদ্যুতিক মালামাল সরবরাহ করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ থাকাট পরও তিনি ডিপিডিসির গুলশান জোনের পিডি হিসেবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

ডিপিসির এক কর্মকর্তা নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ডিপিডিসিকে তার ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করেছেন। কোন কর্মকর্তা তার এমন কর্মকান্ড ও দুর্নীতির বিষয়ে কথা বললেই তাকে বদলী ও চাকুরি থেকে অপসারণের হুমকি দেয়। তাই এখন আর কেউ তার অপকর্ম নিয়ে কথা বলে না! বলা চলে এই প্রতিষ্ঠানে তার কথাই শেষ কথা! ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তার কথায় উঠাবস করে। উর্ধতন কর্মকর্তা যেখানে অসহায় সেখানে আমরা তো ছোটখাট কর্তা! এই কর্মকর্তার কথা শুনলেই বুঝা যায় প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক কত বড় ক্ষমতাসীন ব্যক্তি। ঠিক এ কথার প্রমান মিলেছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি তার নাম জাহির করে বলেন, আমি গোপালগঞ্জের ছেলে! সাংবাদিক অনেক নেতা আমার পকেটে! তার এমন কথা শুনলে কার মাথা চরক মারবে না? তিনি সাধারণ মানুষের কাছে কতটা না ক্ষমতাধর ব্যক্তি তা অনেকেরই অজানা! সত্যিই তিনি ক্ষমতাধর ব্যক্তি বটে! তার দুর্নীতি ও অপকর্ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ পরলেও তার তদন্ত রহস্যজনকভাবে ধামাচাপা পড়ে যায়।

আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘ চাকরি জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিধায় একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রকৌশলী আবু জাফর ১৬ ফেব্রুয়ারি-২০১৭ সালে দুদকে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ক্ষমতাধর আব্দুর রাজ্জাক দুর্নীতি দমন কমিশনের সেই তদন্ত কার্যক্রম ধামাচাপা দিয়েছেন বলে ডিপিডিসি’র অফিসে সকলের মাঝে গুঞ্জন শোনা যায়। এই নিয়ে ডিপিডিসির অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সিদ্ধিরগঞ্জ এনওসিএস (নেটওয়ার্ক অপারেশন এন্ড কাস্টমার সার্ভিস)-এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে একই প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সাবেক ডেসা (ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই অথরিটি) থেকে বদলে যাওয়া ডিপিডিসি (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি)-এর বিদ্যুৎ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থেকে বিদ্যুৎ বিষয়ক পণ্যের একচ্ছত্র ব্যবসা করে আসছে। এই লক্ষ্যে ১৫২/২/এম (৩য় তলা), পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫ ঠিকানায় ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ নামের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে নিজের ২য় স্ত্রীকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে। যেখানে বিদ্যুতের তার, ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি বিক্রয় করে থাকেন। ব্যবসায়ী ও হাইরাইজ ভবনের মালিক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এইচ-টি (হাই টেনশন-৪৯ কিলোওয়াট তদূর্ধ্ব) সংযোগের নিজস্ব সাব-স্টেশন প্রয়োজন। কিন্তু ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’কে সাব-স্টেশনের কাজ দেওয়া না হলে এধরনের কোনো গ্রাহককেই তিনি সংযোগ প্রদান করনে না। ব্যবসায়ী ও হাইরাইজ ভবনের মালিকদের এক প্রকার জিম্মি করে প্রতি বছর ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক তার স্ত্রীর নামে পরিচালিত এই বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন তৈরির ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’-এর মুনাফা বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ডিপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিঃ জেঃ নজরুল হাসান খান (অব.) কে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে ডিপিডিসির মগবাজার এনওসিএস-এর সাব এসিস্ট্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে দুই ধাপ টপকে সরাসরি সিদ্ধিরগঞ্জ এর প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ লাভ করেন। তার এই নিয়োগ ছিলো সরাসরি ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক প্রদানকৃত। হানিফ ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি প্রতিনিয়তই নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন (এইট-টি) বিদ্যুৎ সংযোগ। তাই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমতির পূর্বে নিয়মানুযায়ী সাব স্টেশন তৈরি করে এনওসিএস-এর নির্বাহী পরিচালককে দেখাতে হয়। সুচতুর প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক এই সুযোগটি গ্রহন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকে মোটা টাকায় ম্যানেজ করে গ্রাহককে এসব সংযোগ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে ডিপিডিসির প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে হেড অফিসে কর্মরত আছেন। প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে তিনি ডিপিডিসির বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তার ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’-এর মাধ্যমে ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে আসছে।২০১৬ সালের ওসাকা পাওয়ার লিমিটেডের মাধ্যমে একটি প্রকল্পে সরবরাহকৃত ৩শটি ট্রান্সফরমারের মধ্যে ১৯১টি ট্রান্সফরমারই মানহীন হিসেবে ধরা পড়ে। সেই প্রকল্পের সরবরাহকৃত ট্রান্সফরমারের বিল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম আটকে দেয়। এতেই প্রমাণিত হয় তিনি কীভাবে বেসরকারি ব্যক্তিদের ঠকিয়েছেন। সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে ওই প্রতিষ্ঠান বিষয়ক পণ্যের বিক্রয় বিপণন ব্যবসায় জড়িত থাকা কোনো কর্মকর্তা পক্ষেই আইনসিদ্ধ নয়। কেননা এতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহীতরা প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।

সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ডিপিডিসিতে কর্মরত থেকে দুর্নীতির মাধ্যম অর্জিত টাকা ব্যয় করে নিজ এলাকা গাজীপুরের শেরপুরে প্রতিষ্ঠা করেছে ‘সিসকো ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এন্ড টেকনোলজি’। যার মাধ্যমে করছে প্রচুর অর্থ। আব্দুর রাজ্জাক কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (আইইবি)-এর নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। গাজীপুরে তার নামে বেনামে রয়েছে শত একর জমি। বিলাশ বহুল বাড়ি। আত্মীয় স্বজনরাও তার হাত ধরে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত কোটিপতি।

প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানকে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘অতীতে যা হয়েছে তা বর্তমানে কেউ করতে পারবে না। আমার মন্ত্রণালয়ে কেউ কোনো অপরাধ করে ছাড় পাবে না। যার বিরুদ্ধেই দুর্নীতি পাওয়া যাবে তাকেই আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

আইইবি’র সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুস সবুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের ব্যাপারে অনেকদিন যাবৎ অভিযোগ শুনেছি, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ। আরো বিস্তারিত পরবর্তীতে!